আশিস ভট্টাচার্য্য
৮ই মার্চ,২০২২
আন্তর্জাতিক নারী দিবস ৪৭ বছর অতিক্রম করার পর ভাবার সময় এসেছে নারী দিবসের আদৌ কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা। ঐদিন একটি নামী দৈনিক পত্রিকায় একটি মহিলা কলেজের জনৈকা অধ্যক্ষার একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তিনি মনে করছেন নারীরা প্রবলভাবে পরাধীন, অমুকের বউ ও অমুখের মা বলে রাজনৈতিক এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে পরিচিত। নারী সমকাজে পুরুষের সমান বেতন পায় না, তাকে সব সময় বঞ্চিত করা হয়। একজন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষা মনে করেন ২০২২ এ পুরুষ এবং নারীর মধ্যে সর্বদাই বৈষম্য বিদ্যমান।
সমাজ, রাজ্য এবং রাষ্ট্রের সকল কর্মক্ষেত্রে যখন মহিলারা প্রবলভাবে উপস্থিত, বিভিন্ন শীর্ষ পদ গুলি যখন মহিলাদের করায়ত্তে, বিভিন্ন রাজ্যে রাজনৈতিক দল ও সরকারের নেতৃত্বে মহিলারা তখন কলেজ অধ্যক্ষার মতো উচ্চতম শিক্ষিতার কথায় বিস্ময় সৃষ্টি হয় ।
মহিলারা আজ শিক্ষায়, ক্রীড়াঙ্গনে, সরকারি কর্ম ক্ষেত্রে, চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতি জগতে ,রাজনৈতিক ক্ষমতায় যে গগনচুম্বী সাফল্য অর্জন করেছেন তাতে তাদের অবশ্যই কৃতিত্ব, দক্ষতা, পারদর্শিতা তারিফ যোগ্য কিন্তু অবশ্যই সর্বক্ষেত্রে একক এবং সমষ্টিগত পুরুষের যোগ্য সম্মত (সহায়তা দান) অনস্বীকার্য। মহিলাদের কানে যতই অপ্রিয় শব্দ হোক মহিলাদের যেকোনো সাফল্যের যেমন তাদের পরিশ্রম, নিরলস চেষ্টা, সাহস, সংগ্রাম রয়েছে তেমনি রয়েছে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ অনেক পুরুষের উদ্যম, সংগ্রাম, ত্যাগ , সহমর্মিতা আত্মদান। সাফল্যের মগডালে পৌঁছে গেলে কোন মহিলা যদি মনে রাখেন তার পিতা, পিতৃস্থানীয়েরা , তার প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষক তার লজ্জা নিবারণের বস্ত্র নির্মাতা, তার গাড়িচালক, তার খাদ্য উৎপাদক এবং এই ভাবে অসংখ্য পুরুষের ঘাম ,রক্ত, মেহনত মিশে আছে তবে তার সাফল্য সার্থক।
বাংলা চলচ্চিত্রে সর্বকালের সেরা গ্ল্যামার গার্ল সুচিত্রা সেন অনেক নায়কের সাথে অভিনয় করলেও তার সেরা জুটি গড়ে উঠেছিল উত্তম কুমারের সাথে। উত্তমের সাথে অভিনয় তাকে বাংলার আপামর মানুষের মনে স্থান দেয় । মহিলার সাফল্যের পেছনে শ্রেষ্ঠ পুরুষের অনবদ্য প্রয়াসকে অস্বীকার করা যায় না।
মহিলারা পায়ে পা দিয়ে পুরুষের সাথে ঝগড়া করবেন তাতে কেউ বিন্দুমাত্র সিদ্ধিলাভ করবেন না। পুরুষ শত্রু নয় সে সহযোগী, সে সাথী, সমব্যথী। বরং আমরা বেশিরভাগ জায়গায় দেখি মহিলারাই মহিলাদের শত্রু বা ক্ষতিকারক। মহিলারা অপর মহিলার বিরুদ্ধে কুৎসা রটান আমাদের সমাজে যাকে পি.এন.পি.সি বলে। পণপ্রথা এবং বধূ নির্যাতনের পেছনে মহিলাদের সক্রিয়তাও নতুন করে আলোচনা নিষ্প্রয়োজন। মহিলাদের একটি অংশ অপরাধ জগতের সাথে যুক্ত এটা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের ক্রাইম জাতীয় অনুষ্ঠানে দেখা যায়।
আজকের সমাজে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ধর্মীয় বিভিন্ন কারণে পুরুষ নিজেই অবহেলিত, উপেক্ষিত এবং সংসার পরিচালনার দায় বর্তায় পুরুষের কাঁধে। সে কারণে অর্থনৈতিক সক্ষমতায় মাপকাঠিতে মহিলারা কিছুটা পিছিয়ে থাকলেই গেল, গেল বলে কৃত্রিম সংকট তৈরি অনুসৃত এবং অনৈতিক।
সমাজ, রাষ্ট্র' সকল দিক থেকে এগিয়ে গেলে সবদিক থেকে সফল হবে পুরুষ এবং তার হাত ধরে নারী। তখন আর আলাদা করে নারী দিবস পালনের প্রয়োজন থাকবে না।
---------------------------------------------
আশিস ভট্টাচার্য্য
রামকানাই গোস্বামী রোড ,
শান্তিপুর নদীয়া-741404