Click the image to explore all Offers

গল্প ।। সিঁদুরে মেঘ ।। রোহিত কুমার সরদার


    সিঁদুরে মেঘ 

রোহিত কুমার সরদার 
 

    নদীর উত্তাল তরঙ্গ না থাকলে নদী দিঘির কাছে হার মানে। সংসার রূপ তরীতে ঢেউয়ের দোলা না থাকলে ভালোবাসার গভীরতা হারায়, অভিমান মুখ লুকায়। এমনই সংসার পেতেছে অতনু আর রণিতা। মাঝে মধ্যে অতনুর ঘরের অন্দরে কলহের ঢেউ আসে, তবে সে যেমন তেমন ঢেউ নয় ; যতক্ষণ না চীনের প্রাচীর টপকায় ততক্ষণ চলতে থাকে। কিছু একটা অঘটন না ঘটলে ঝগড়া থামে না। এ-ই সেদিন সামান্য কারণে মোবাইল নিয়ে বাকবিতন্ডা শুরু হয়ে এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে মোবাইল একটা থেকে দুটো ভাগ হয়। তারপর সযতনে কুড়োতে কুড়োতে বিষাদের নিশ্বাস উত্তরের জানালা দিয়ে বেরিয়ে যায়। 

      বছরখানেক আগের ঘটনা, অতনু জমিয়ে বসে ভোটের টাটকা খবর দেখছিল। কিন্তু রণিতা এসব খবরের ধার ধারে না। তার চাই সিরিয়াল, ফেভিকলের আঠার মতো নেশা। এ নেশা লাগলে পরে ছাড়ে না।সে আর কে বোঝে। সুতরাং রঙ্গমঞ্চে বেজে ওঠে কনসার্ট। কথার খরশাণ তীরের বেগে ছোটে ব্যারিকেড ভেঙে। সংসারে এ পাটিগণিতের অঙ্ক, কার বংশে কতটা জল কতটা খাঁটি দুধ মেশানো সেই ঐতিহ্য লাউডস্পিকারে বাজতে থাকে। সেই সঙ্গে ডাইরির পাতা এক থেকে একশো আটানব্বই পাতা জমানো ব্যথা যতক্ষণ না সম্পূর্ণ হচ্ছে ততক্ষণ বাগদেবী শান্ত হোন না।ওদিকে অতনু তখন রুদ্ররূপী মহাদেব। তবে প্রলয় নৃত্য নয় বল হাতে উইকেট ফেলতে দক্ষ। কিন্তু এ মাঠে বল নেই উইকেটও নেই। গ্যালারীতে চলে তর্কবিতর্ক। আর যাকে নিয়ে সমুদ্র উত্তাল সে তখন ভোটে ছাপ্পার খবর দেখাতে ব্যস্ত। ছাপ্পার কপালে বাজ, রিমোট গিয়ে পড়ে টিভির স্কিনে। অজস্র ফাটলের যন্ত্রণা নিয়ে বন্ধ হল টিভির খবর। কালবৈশাখী ঝড় তাণ্ডবলীলা দেখানোর পর পরিবেশ হয় থমথমে। 

         তারপর দুজনের কথা বন্ধ থাকে টানা দুদিন। আর নয় চুলোর ছাই, এ সংসারে একটা রেখা টানতেই হবে। সমীকরণের সলতে যখন পাকাতে থাকে তখন আকাশে মেঘ সরে সূর্য ওঠে। ধীরে ধীরে বরফ গলতে শুরু করে। কুকুরের লেজের মতো সম্পর্ক আবার পেঁচাতে থাকে। দুজনেই অনুতপ্ত। 
-- তুমি ঠান্ডা হতে পারতে। ওইভাবে মাথা গরম করে? 
-- আমাকে তুমি ঠান্ডা থাকতে দিয়েছো? অনবরত বিছুটি পাতা ঘষছ। 
-- ঘাট হয়েছে আমাকে ক্ষমা কর।
এই বলে অতনুর বুকের কাছে ঢলে পড়ে। অতনু তাকে আর দূরে সরিয়ে দিতে পারে না। কাঙ্খিত ঠোঁট উষ্ণতা পায়। নির্লজ্জ চাঁদের আলো জানালা দিয়ে উঁকি মারে। 

      বিয়ের সাতবছর হল।রণিতা এখন পাকা গৃহিণী। ঝর্ণার জলের সেই ক্ষিপ্রতা নেই। তবে স্বচ্ছ জলধারায় সবুজ প্রাণের স্পন্দন ঘটেছে। শিকড় হয়েছে মজবুত। সংসারের আর্থিক স্বচ্ছলতা,মধুর সম্পর্ক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা যখন সরলরেখায় চলে তখন কোথায় যেন আশঙ্কার মেঘ পিছু নেয়। এখন সেটাই কপালে ভাঁজ ফেলেছে তাদের একমাত্র ছেলে পাঁচ বছরের টুপাইকে নিয়ে। কোন খেলনাই দু-তিন দিনের বেশি আস্ত থাকে না। রোখা মেজাজ। ওরা ভয় পায় কি জানি তাদের ধারাটা পাবে না তো!
.............................................................................
 

 
রোহিত কুমার সরদার 
নিবাস : পশ্চিম দিঘির পাড়,  ক্যানিং
দক্ষিণ ২৪ পরগণা 
পিন: ৭৪৩৩২৯

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.