একটু ছোঁয়া
ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়
সামনে পরীক্ষা, তাই প্রস্তুতি পর্ব চূড়ান্ত পর্যায়ে মিঠুর।যদিও আজ দিনটা আলাদা, আজ বাতাসে আবিরের গন্ধ, প্রকৃতিতে রঙের ছোঁয়া, প্রেমের আভাস..আজ দোল পূর্ণিমা।মিঠু নিজেকে রাঙিয়ে তোলে কবিতার ছন্দে, গানের সুরে, নাচের ছন্দে.. আবির রঙও খুব প্রিয় ওর।এ বছর বাইরে বের হওয়া নিষেধ, ঠান্ডা লেগে পরীক্ষা ভন্ডুল হতে পারে তাই। মিঠু নিজেও সহমত, তাই দোল খেলা যাবে না। সকাল থেকেই বইয়ের সামনে, কিন্তু পড়ায় মন নেই। আজ দেবাশীষের সাথে দেখা হয়নি, মিঠুর মন তাই বইয়ের পরিধি পেরিয়ে পাড়ি দিয়েছে চিন্তার রাজ্যে।মাঝে মাঝে অদ্ভুত লাগে ওর,ভাবে, একটা মুখ না দেখলে আর কারো কি এমন হয়? সব ফাঁকা লাগে? আবার পড়ার চেষ্টা করে মিঠু। যদিও কাল দেবাশীষ আসবে কিনা কথা হয়নি, প্রতিদিনের অভ্যাস মতো 'আসি,দেখা হবে 'কথা দুটো বলেই সোজা হেঁটে চলে গিয়েছিলো ও, তবুও মন বলছে দেবাশীষ আসবে, আসবেই। আপন মনেই হেসে ওঠে মিঠু, দেবাশীষটা একটা পাগল,বলে তোকে আসি বলার পর আবার যদি ফিরে তাকাই, বাড়ি যেতে পারবো না, তাই মনকে বোঝাই দেখা হবে..।
বেলা প্রায় ১২ টা,হঠাৎ বাইরে হট্টগোল, হাসির আওয়াজ। পরিচিত গলা শুনে মিঠু ছুটে বাইরে বেরিয়ে আসে, সামনে দেবাশীষ, হাসি মুখে ওর বৌদিকে রঙ লাগাচ্ছে।মিঠু বারান্দায় উঠে দাঁড়ায়, ওর দাদা বলে,'এই মিঠুকে কেউ রঙ দিস না, ওর সামনে পরীক্ষা, আবার অল্পেতেই ঠান্ডা লাগে'।কিন্তু যারা এসেছে দেবাশীষের সাথে সবাই বন্ধু, কাজেই হল আবির খেলা..দেবাশীষ তখনও চুপ। মিঠু ঘরে যায় মুখ ধুতে।মুখ ধুয়ে ঘুরতেই সামনে দেবাশীষ, ওর চোখের চাহনি আজ বড়ো অদ্ভুত লাগে মিঠুর। ও পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে, তাতে ভর্তি সিঁদুর রাঙা লাল আবির, মিঠুর কপাল থেকে মাথা পর্যন্ত আবিরে রাঙিয়ে দেয় দেবাশীষ, হাতে দেয় একটা চিরকূট,তাতে লেখা, 'পলাশ লাল,সিঁদূর লাল,আর যত রক্ত রাঙা লাল, তারই আভায় রাঙিয়ে দেবো আমি তোমার গাল'এক নিমেষে মিঠু ওটা পড়ে দেবাশীষের দিকে তাকাতেই ওর ঠোঁট মৃদু স্পর্শ করে মিঠুর গাল ও মিঠুর কানে কানে বলে একবার আয়নার নিজে কে দেখে এসো..দেবাশীষ চলে যায়, কিন্তু মিঠু তখন চলার শক্তি হারিয়েছে, ওর মনে এক অদ্ভুত দোলাচল..আজ সারা সকাল বুঝি ও এই একটু ছোঁয়ার জন্যই অপেক্ষায় ছিলো...
=====================