Click the image to explore all Offers

অণুগল্প ।। দশভূজা ।। অশোক দাশ


দশভূজা
অশোক দাশ

    মাটির মানুষ মৃন্ময়ী। বয়স ষাট ছুঁই- ছুঁই। শক্ত সামর্থ্য কর্মঠ পেটানো শরীর। সাত চড়ে রা কাড়ে না। সকলের ফরমাস মতো ভোর থেকে রাত্রি কাজ করেই চলেছে।
   তার নিজস্ব রে একটা জগত আছে সে ভুলতে বসেছিল। কয়েকদিন ধরেই পাশের বাড়ি থেকে নির্যাতিতা গৃহবধূর আর্তচিৎকার সে শুনতে পাচ্ছে। কিন্তু কাজের চাপে সেদিকে তার ভুক্ষেপ ছিল না। আজ আবার কানে আসলো গৃহবধূর করুণ চিৎকার। মৃন্ময়ীর মনে পড়ে গেল তাদের স্কুলের রমেন স্যারের কথা। তিনি বলতেন, অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তারা সম অপরাধি এটা আমার কথা নয় স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা। যেখানে তোমরা অন্যায় দেখবে তার প্রতিবাদ করবে মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াবে।
   মৃন্ময়ী আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না সংসারের কড়া অনুশাসন উপেক্ষা করে পাশের বাড়ির দরজায় টোকা দিল, যে সমস্ত বাড়ির মেয়ে-বৌরা উঁকিঝুঁকি মারছিল তারাও তার পিছু নিল। দরজার টোকা শুনে গৃহকর্তা বাইরে বের হয়ে আসলো।
কি ব্যাপার আপনারা সব এখানে কেন? মৃন্ময়ী জানতে চাইলো আপনার বাড়ির গৃহবধূকে কেন রোজ নির্যাতন করেন?
গৃহকর্তা বলতে থাকেন এটা আমাদের পারিবারিক ব্যাপার আপনাদের মাথা গলানোর কোন দরকার নেই ।যান চলে যান আপনার এখান থেকে। চলে যাবো বলে তো আসেনি  মেশোমশাই,কারন না জেনে আমরা এক পাও পিছু হটবো না। পরিষ্কার জানিয়ে দিলো মৃন্ময়ী।
ঠিক এরই মধ্যে আলু -থালু বেশে হাউ হাউ করে কাঁদতে - কাঁদতে বাড়ির ছোট বউটি এসে জড়িয়ে ধরে মৃন্ময়ী কে এবং আর্তস্বরে বলতে থাকে আমাকে বাঁচাও দিদি ,আমাকে এখান থেকে তোমরা নিয়ে চলো না হলে আমাকে এরা মেরে ফেলবে। মৃন্ময়ী মেয়েটিকে আশ্বস্ত করে এবং কি হয়েছে ঘটনাটি বলতে বলে।  গৃহবধূর মুখে যে বৃত্তান্ত শুনল তাতে সকলে স্তম্ভিত হয়ে যায়। মেয়েটি গরীব ঘরের মেয়ে ।পনের টাকা দিতে পারেনি তার বাবা ।তাই দুবেলা তাকে গঞ্জনা দেওয়া হয়। কোন সময় তাকে আধ পেটা খেতে দেওয়া হয়। প্রতিবাদ করলেই কিল-চড় -ঘুসি ।তার ওপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করা হয়।
কি মেসোমশাই আপনার কিছু বলার আছে? সম্মিলিত নারীদের প্রতিবাদে কুঁকড়ে গেল গৃহকর্তা। আপনারা মানুষ  না মানুষ রুপি জানোয়ার! ওখানে কথা না বাড়িয়ে, মেয়েটিকে সঙ্গে নিয়ে, মৃন্ময়ী দেবী থানায় আসলেন। সমস্ত ঘটনা অফিসার কে বলে মেয়েটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস পেয়ে বাড়ি ফিরলেন।
মৃন্ময়ীর মনটা আজ আনন্দে‌ পুলকিত হয়ে উঠল।
আবার মনে পড়ে যায় রমেন স্যারের কথা। যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। মে হাতে সে সন্তানকে সোহাগ করে সেই হাতেই সন্তানকে শাসন করতে তার হাত কাঁপে না। নারীরা যেমন ঘর সামলায় তেমন সমাজেরও বিভিন্ন কাজে তারা যে সমান পারদর্শী তার প্রমাণ বারবার  দিয়েছেন। নারীরা পারে না এমন কাজ আজ দুনিয়ায় নেই। তাইতো নারী দশভূজা।
=================================
 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.