Click the image to explore all Offers

অণুগল্প ।। ফেরা ।। প্রতীক মিত্র

ফেরা

প্রতীক মিত্র


    বাড়িটা খালের কাছে যেখানে কংক্রীটের ব্রীজটা আছে সেখানে।  খালের আশেপাশে বাঁশবন।বছরের অধিকাংশ সময় বাড়িটা বন্ধই পড়ে থাকে। আগে গ্রামেরই এক বয়স্ক দেখাশোনা করতো। পয়সায় পোষায় নি বলে ছেড়ে দিয়েছে। বাড়ির লোকজন শহরে থাকে। বছরে একবার কি দু'বার আসে। ক'টা দিন থাকে।, হৈচৈ করে তারপর আবার ফিরে যায়।এই বছর শেষ হতে চললো। এখনো লোকগুলোর পাত্তা নেই। দেখাশোনা করতো যেই লোকটা সেও কয়েকবার তার ঢ্যাঢ্ঢেরিয়া সাইকেলে ঘুরপাক খেয়েছে বাড়িটার আশপাশে।না কোনো আওয়াজ নেই। তাহলে নিশ্চয়ই কেউ আসে নি। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নামলে অবশ্য বাড়িতে খুটখাট আওয়াজ হয়।এক একদিন রাতে ছাদে আলো জ্বলতেও দেখা যায়।  এক আধজন কৌতুহলবশতঃ ছাদ বেয়ে উঠেওছিল। তখনই চক্ষু চড়কগাছ।এ কোন ডাকাতরানি!হাতে বন্ধুক!বড় বড় লাল লাল চোখ!বাবারে-মা'রে বলে তারা কোনোক্রমে পালিয়ে বাঁচলে মেয়েটি খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে।এবার বাড়ির কর্তা-গিন্নি আসেনি।বাবা-মা'র সাথে ঝগড়া করে মেয়েটি এসেছে। একদম একা সে নিজেও আসতো না একটু ভয়, একটু দ্বিধা যেহেতু ছিল।তাই বুড়ো চাকর রামদেওকে এনেছে।সে ব্যাটা রান্না-বান্না করে ঘুমোয় সারা দিন ধরে। বাড়ি থেকে আনা সবজি এখনও ফুরোয়নি।আর টিয়া( মেয়েটির নাম) সারাদিন ঝোপে ঝাড়ে ঘুরে বেড়ায় ছবি তুলবে আর পাখি শিকার করবে বলে। খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। খালের ধারের বাড়িতে ডাকাতরানি আছে। বাড়ির খেয়াল নিত যে লোকটা সে কর্তাকে ফোন করলে সবটা জানতে পারে।লোকটা ছোট্ট দিদির সাথে কথা বলে স্বস্তি পায়। টিয়া বেশ বড় হয়ে গেলেও ওর কাছে সে এখনও সেই ছোট্ট দিদি। কলেজে নাকি পড়ছে। গাছপালা নিয়েই। সে বোঝায়, ওর এভাবে আসাটা ঠিক হয়নি বাবা-মা'কে ছেড়ে। টিয়া বড় বড় চোখ করে বন্দুক তুলে ধরে। ' গুলি করে দেবো কেউ ওস্তাদি করলে!' লোকটা নকল ভয় পাওয়ার মতন করে হাত তুলে হাসে। ' আমি যাই তোমার সাথে? কোন কোন গাছ তোমার দেখা বাকি? আমায় বলো!'
'প্লেন্টি প্লেন্টি!ও গুণে শেষ করা যাবে না।কিন্তু তুমিতো পাহারা দাদু বুড়ো হয়ে গেছো।দৌড়োতে পারবে না।' টিয়া বললে লোকটা বলে
'দৌড়োবো কেন?রামদেওএর সবজিও তো লাগবে?মাছ-ডিম-মাংস?'
' ও সব ম্যানেজ হয়ে যাবে!' টিয়া বলে ওর  হাত ধরে টানে আর জানতে চায়, ' আচ্ছা তোমার নামটা কি গো দাদু?'
'তোমরাও কোনোদিন জানতে চাওনি, আমারও আর বলা হয়নি।আমার নাম দেবু, দেবু পাহাড়ি; তোমার দাদু মজা করে আমায় বলতো পাহারা। সেই থেকে ওটাই নাম হয়ে গেছে।' দেবু কথা শেষ করে টিয়াকে বলে ওর বাবাকে ফোন করে বলে দিতে টিয়া যদ্দিন থাকবে, দেবু ঠিক দেখভাল করবে। টিয়া শুনে খুব খুশি। যদিও সে আর জানতে চায় না কেন মধ্যিখানে দেবু ওদের এই বাড়ি দেখাশোনার কাজ আর করেনি দেবুর মাথায় সেই সব ঝাপসা স্মৃতিরা ঘুরপাক খেতে থাকে।টিয়ার দাদু-ঠাকুমা আসতো।দাদুর অসুস্থততা, মৃত্যু, টিয়ার বাবার সাথে দেবুর ভুল বোঝাবুঝি। না এসব কথা সে আর টিয়ার সাথে বলে না। টিয়াকে গাছ দেখাবে বলে নতুন উদ্যমে সে এখন মেতেছে। ' রামদেও আজ দিশি মুরগী করবি, বুঝলি!আমি মাংস পাঠিয়ে দিচ্ছি!' টিয়া পুরো টিয়ার দাদু, দিদার মতন। জলের মতন, আলোর মতন।
----------------------------
প্রতীক মিত্র
কোন্নগর-712235, পশ্চিমবঙ্গ

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.