রমা দা
সুশান্ত সেন
আমাদের ছোটবেলার কলকাতার সাথে এখন কার কলকাতাকে মেলান যায় না। সে প্রায় সত্তর বছর আগেকার কথা। তখন কলকাতায় এত উঁচু উঁচু বাড়ি ছিল না। বেশির ভাগ বাড়ি ছিল দোতলা । বাড়িগুলো একটু ছড়ানো ছিটানো, মাঝে মাঝে একটু করে মাঠ।
আমরা ছোটরা বিকেল হলেই সেই ছোট ছোট মাঠে খেলা করতাম। একটু বড় হবার পর আমরা সেই মাঠে ক্রিকেট , ফুটবল বা ভলিবল খেলতাম।
পাড়ার ভেতরই আমাদের থেকে সাত আট বছর বড় ছেলেদের একটা দল ছিল। সেই দলের সাথে আমাদের ছোটদের দলের ছেলেদের মিশিয়ে ক্রিকেট খেলা হত। প্রতি দলে কিছু বড় কিছু ছোট।
রমাদা ছিল বড়দের দলের জোরে বল করা বোলার। আমাদের খুব ভালো বাসত। এবারে যে গল্পটা বলার জন্য এত কথা বললাম সেই কথাটা বলি ।
আমরা একটু একটু করে বড় হচ্ছিলাম। প্রথম বড় পরীক্ষা তখন ছিল - স্কুল ফাইনাল। দশম শ্রেণীর শেষে এই পরীক্ষা হত।
আমরা চার বন্ধু সেই পরীক্ষা পাশ করলাম। প্রথম বিভাগে। ঠিক তারপরে পরেই রমাদা একদিন আমাদের ডাকল ,বলল ,কাল তোদের আমি খাওয়াব , রাত্রে , বাড়িতে বলে আসবি।
আমরা ভাবলাম পাড়ার ধারে কাছের কোন রেস্টুরেন্টে মনে হয় চপ কাটলেট খাওয়াবে। সেই মত আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলাম কি খাব আর কি না খাব।
নির্দিষ্ট দিন রাত্রে আমরা আশ্চর্য হয়ে দেখলাম রমাদা আমাদের নিয়ে গেল এসপ্লানেড চত্বরের তখনকার সব থেকে পশ রেস্টুরেন্ট " অম্বর " - এ। জীবনে সেই প্রথম আমরা একটা ঝা চকচকে রেস্টুরেন্ট এ ঢুকলাম , সেখানে পেট পুরে রমাদা আমাদের খাওয়ালো। ভালো ভালো সব খাবার , কোনটারই নাম আমরা আগে শুনিনি , এই প্রথম শুনলাম আর খেলাম। খেতে খেতে রমাদা বললো তোদের ভালো পাশ করার আনন্দের জন্য এই খাওয়া। আমারা আরো বড় বড় পরীক্ষা পাশ করে পাড়ার মুখ উজ্জ্বল করবো , এই সে চায়।
পাড়ার দাদা শ্রেণীর লোকেদের হৃদয় সেই সময় কত বড় ছিল , আর তারা তাদের থেকে ছোটদের কি চোখে দেখতেন , সেটা বলবার জন্য এই গল্পটা লিখলাম।
------------------------------
সুশান্ত সেন
৩২বি , শরৎ বসু রোড
কলিকাতা ৭০০০২০