বক ও মাছরাঙা
গোলাপ মাহমুদ সৌরভ
প্রতিদিনই পাড়াতলীর বিলে অসংখ্য সাদা বক ও মাছরাঙা পাখি ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়ায়। সারিবদ্ধভাবে খুঁটির উপর কখনো কচুরিপানার উপর চুপটি করে বসে থাকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে লম্বা ঠোঁট তাক করে। একটু আহারের জন্য দীর্ঘসময় ধরে অপেক্ষা করতে হয় তাদের। যখনই অসহায় ছোট ছোট পুঁটিমাছ গুলো পানির তলদেশ থেকে উপরিভাগে ভেসে ওঠে তখনই সাদা বক ও মাছরাঙারা পলকেই শিকার করে ক্ষুধা মেটায়। বক ও মাছরাঙা খুব ভালো বন্ধু। তারা একে অপরকে বুঝতে কোন অসুবিধা হয়না। যা-ই শিকার করে মিলে মিশে ভাগ করে খায়। বক ও মাছরাঙার মাঝেও মানবতা লক্ষ করা যায়, তারা-ও একে অপরের সহযোগিতা ও বন্ধুত্ব বুঝতে কোন অসুবিধা হয়না। তাদের মধ্যে একটি দূর্বল মাছরাঙা পাখি ছিলো। প্রতিদিন খুঁটির উপর বসে বসে ঝিমায় কোন রকম শিকার করতে পারে না। সারাদিন অপেক্ষা থেকেও একটা শিকার করতে সক্ষম হয়না। প্রায়ই শিকার না করে ক্ষুধা পেটে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরে যায়। এভাবে না খেয়ে মাছরাঙা একদিন খুব দূর্বল হয়ে যায়। ঠিক মতো উড়াল দিতে পারে না। এক দয়াবান বক তা লক্ষ করে আর তাকে দেখে খুব মায়া হয়। একদিন বক'টি মাছ শিকার করে ঠোঁটে করে মাছরাঙা পাখির সামনে নিয়ে ফেললো। আর বক উড়ে দূরে গিয়ে আরেক খুঁটির উপর বসে আরেকটি শিকারের জন্য অপেক্ষায় রইল। দূর্বল মাছরাঙা মৃত মাছটি খেয়ে একটু শক্তি বোধ করলো। আর বারবার চোখ মেলে মানবিক বক'টির দিকে তাকিয়ে থাকে। এভাবে প্রতিদিনই বক, মাছরাঙার আহার জুগিয়ে দেয়। মাছরাঙা পাখি খুবই খুশি আহার খেয়ে। আস্তে আস্তে মাছরাঙা সবল হয়ে ওঠে। গায়ে শক্তি বোধ করে। এভাবে বক ও মাছরাঙা খুব ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে। রোজ সকালে বক ও মাছরাঙা পাশাপাশি খুঁটির উপর বসে একে অপরের সঙ্গে যেন বন্ধুত্বের আলাপন করে। একদিন মাছরাঙা পাখি মাছ শিকার করে ঠোঁটে করে বকের সাথে শেয়ার করে খাওয়ার জন্য পাশাপাশি বসলো এবং ভাগ করে খেলো। এভাবেই বক ও মাছরাঙার ভালো বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়। বক ও মাছরাঙা যেখানেই যায় এক সাথে উড়ে বেড়ায়। একজনে শিকার করলে দুজনেই ভাগবাটোয়ারা করে খায়। মাছরাঙা পাখি বক বন্ধুর কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুল করে না। আসলে মানবিকতাই মনুষ্যত্বের পরিচয় মিলে যা,বক ও মাছরাঙার বন্ধুত্বের উদাহরণ। পাখিরাও মানবতা, ভালোবাসা, উদারতা বুঝতে পারে।
==================