বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন :

মুক্তগদ্য ।। ছোট্ট বুকে রবির দোলা ।। সান্ত্বনা ব্যানার্জী

         
ছবিঋন- ইন্টারনেট

ছোট্ট বুকে রবির দোলা

সান্ত্বনা ব্যানার্জী

 

          ঘুম ভাঙতেই চোখ চলে যেতো বইয়ের তাকে। ব্রাউন পেপারে মলাট দেওয়া সারসার পনেরো খন্ডের রবীন্দ্ররচনাবলী । আমার যখন ন ' মাস বয়স তখন নবপ্রজন্মের কথা ভেবে বাবা কিনেছিলেন বই গুলি। বাবার হাতের লেখা ছিল ভারি সুন্দর। বইয়ের চওড়া ধারে লিখে দিয়েছিলেন খন্ডের সংখ্যা আর সূচিপত্র, যাতে বাইরে থেকেই দেখা যায়। খুব ছোট থেকেই আমাদের প্রজন্মের রবিঠাকুরের সাথে পথ চলা শুরু পাঠ্য বইয়ের সাথে সাথে।ছোটো খোকা বলে "অ আ,শেখেনি সে কথা কওয়া"....তিনটে শালিক ঝগড়া করে রান্না ঘরের চালে.....,আর আমি মিলিয়ে লিখি...দুটি শালিক করছে খেলা আতা গাছের ডালে। কিংবা ....আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে....যমুনা পুকুর আমায় নদী হয়ে ডাকে। নিজের কবিত্বে নিজেই অবাক হয়ে যাই!কাল ছিলো ডাল খালি, আজ ফুলে যায় ভরে.....কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা মনে মনে,.....এই কবিতা গুলি মিশে যাচ্ছে রক্তধারায়। প্রথম নদী দেখা কাকার হাত ধরে, গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বাঁকা নদী। নদী দেখে বলে উঠি....আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে। গোবিন্দ দাদুর ছই দেওয়া গরুর গাড়ি করে দুগ্গা পুজোর আগে যখন গ্রামে ফিরতাম কাশ ফুলে ভরা মাঠ দেখতে দেখতে, তখন গলা দিয়ে আপনিই বেরিয়ে আসতো..... এসেছে শরৎ হিমের পরশ লেগেছে হাওয়ার 'পরে....গেয়ে উঠতাম....গ্রাম ছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ, আমার মন ভুলায় রে...।              

প্রথম যখন আস্ত একটা বড়ো নদী দেখলাম,দামোদর!খুশির আর সীমা নেই! আনন্দে বলে উঠলাম....মধু মাঝির ওই যে নৌকা খানা বাঁধা আছে রাজগঞ্জের ঘাটে। ওটা শেষ হতেই মা বলতো....আর একটা বল। ওমনি বলি.....অঞ্জনা নদী তীরে চন্দনী গাঁয়ে, পোড়ো মন্দির খানা গঞ্জের বাঁয়ে।

              বাবার শিখিয়ে দেওয়া "নির্ঝরিণী" কবিতা আবৃত্তি করে প্রথম মঞ্চে ওঠা আর প্রথম হয়ে রবিঠাকুরের বই পুরস্কার পাওয়া "কথা ও কাহিনী"। খুব ভালো আবৃত্তি করতেন বাবা আর মা দুজনেই। বাবার "দেবতার গ্রাস"আর "চিরদিনের দাগা"আবৃত্তি শুনতে শুনতে চোখ জলে ভরে উঠতো, সারাটি দিন গলার কাছটায় কান্না দলা পাকিয়ে থাকতো।প্রথম মঞ্চে নৃত্য পরিবেশন সেই রবি ঠাকুরের গান দিয়ে...... এসো হে বৈশাখ,আর...আলোকের এই ঝর্না ধারায় ধুইয়ে দাও......।

             যখন থেকে ওই পনেরো খন্ডের রবীন্দ্ররচনাবলী আমি হাতে নেওয়ার অনুমতি পেলাম তখন থেকেই তিনি হয়ে গেলেন আমার দুঃখে শোকে পথ চলার সঙ্গী, পরম আত্মীয়। কত গান গেয়েছি....কত যে পড়েছি কবিতা..., ক্রমে ক্রমে গল্পগুচ্ছ, প্রবন্ধ , নাটক, উপন্যাস। এখন যে গান আমি সারাক্ষন গুনগুনিয়ে যাই,

সেই গান দিয়ে শেষ করি ...

   দিনের আলো যার ফুরালো                        

  সাঁঝের আলো জ্বললো না,

  সেই বসেছে ঘাটের কিনারায়,

ওরে আয়, আমায় নিয়ে যাবি কে রে

    দিন শেষের শেষ খেয়ায়.....!

      -------------------------------  

 সান্ত্বনা ব্যানার্জী

 রাজারহাট,নিউ টাউন,

পশ্চিমবঙ্গ, ভারতবর্ষ।

 

                

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.