বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন :

গল্প ।। সুগন্ধ ।। প্রতীক মিত্র


 
সুগন্ধ
প্রতীক মিত্র
 
বৃষ্টিটা নামলো ঠিক বেরোনোর মুখে। শুধু তনয়ের নয় ওর ছোট্টো ছেলে টিপুরও। ছেলে তো আহ্লাদে আটখানা।গ্রীলের বারান্দা দিয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টিফোঁটার হিমশীতল ছোঁয়া পেয়ে সে বাবা শুধু নয় রান্নাঘরে রান্নার দিদির সাথে ব্যস্ত মা দেবারতিকেও ডাকে।ছেলের আবদার কি আর ফেলা যায়? সবাই একবার করে গিয়ে অন্তত জলের ফোঁটার স্পর্শ নিয়ে আসে। টিপু যে স্কুল যাবে না সেটা ওর মা-বাবা ওর হাবেভাবেই বুঝে গেছে। তনয়ের যাওয়াটা জরুরী। অফিসের জরুরী একটা মিটিং আছে। অনেক বড় একটা টেন্ডারের বিষয়ে। বস ওকে ছাড়া কারোকে ভরসাই করতে পারে না। দেবারতির স্কুলে পরীক্ষা চলছে। আজ ওর বিষয়েরই পরীক্ষা। ওর মায়ের সকালে ফোনও এসেছিল। রোজকার মতন আজও স্কুল ফেরতা টিপু দিদার কাছে  যাবে।সন্ধ্যে হলে তারপর দিদার তরফে কেউ একজন ওকে পৌঁছে দিয়ে যাবে। এই রুটিন গত দু'বছর ধরে চলছে। তনয়ের বাবা বেঁচে ছিল যখন সে দেখতো নাতিকে।অবশ্য একটি আয়াও আসতো তবে তা নাম-কা-ওয়াস্তে।কাজ সব ভদ্রলোক নিজেই করতেন। হটাৎ করে ইহলোক ত্যাগ করাতে সব কেমন যেন ঘেঁটে গিয়েছিল।যাজ্ঞে দেবারতির মা বাঁচিয়েছে। তার পক্ষে এসে তনয়দের ফ্ল্যাটে থাকা সম্ভব নয়। তবে যদি ছেলেকে তারা দিদার কাছে পৌঁছে দেয়, দিদা তার খেয়াল রাখতে পারে।সেইভাবেই চলছিল। আজও চলবে। যদি না, বৃষ্টিটা ওভাবে এসে যেত। টিপু স্কুল না গেলে মুশকিল। দিদার বাড়ি অবদি তাকে পৌঁছনোর জন্য তনয়কে অন্য রুটে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাতে ওর পৌঁছতে দেরি হয়ে যাবে। ও জানতে পেরেছে এখুনিই মিটিং টা অফিস থেকে বেশ খানিকটা দুরে শহরের এক প্রান্তে একটা অডিটোরিয়ামে হবে। ছেলে, বরের ঘন্টাখানেক পরেই দেবারতির বেরোনো।সেও ফেঁসে যাবে।আয়াটা টুকটাক চুরি করতো বলে ওকে ছাড়িয়ে দিয়েছে সেই কবে।ছেলে বাড়িতে থাকলে ওদের কারোকে কামাই করতে হয়। মা তো তার আসতে পারবে না। আগে তনয়ের বাবার কারণে আসতো না এখন দেবারতির ভাইএর সদ্য সন্তান হয়েছে বলে আসতে পারবে না। অগত্যা ওরা টিপুকেই বোঝানোর চেষ্টা করে। হ্যাঁ এটা ঠিকই এটা বর্ষার প্রথম বৃষ্টি এটা ঠিকই বৃষ্টিতে মনটা কেমন কেমন করে, মনে হয় সবাই একসাথে থেকে গপ্প হোক-খেলাধুলা হোক-গান হোক কিন্তু সময়?  টিপুকে তখন বোঝানো প্রায় অসম্ভব। শেষমেশ উপায় বাতলালো ওর মামা। সেই ভাগ্নেকে আলাদা করে বলে স্কুল ফেরতা এলে ও দারুণ একটা 3ডি গেম খেলতে পারবে।গেমটাটাতে যে নায়ক সে কোনো একটা প্রবল বর্ষণের দিনেই খলনায়কদের শেষ করবে।খলনায়কের সংখ্যা অসংখ্য। খেলাটা সাবধানে খেলতে হবে কিন্তু। টিপু রাজী হয়। খুশিই হয়। খালি ফোনটা রাখার আগে একবার জানতে চায় গেমের বৃষ্টিতে কি হাওয়ার সুগন্ধটা পাওয়া যাবে? 
==============================
 


প্রতীক মিত্র
কোন্নগর-712235, পশ্চিমবঙ্গ

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.