পাভেল আমান
নিজের অধীনে বেঁচে থাকাই স্বাধীনতা। আপন চিন্তা ভাবনা কর্মক্ষেত্রকে প্রসারিত করাই তো স্বাধীনতা। স্বাধীনতা মানে নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে রাখা আপন লক্ষ্যে নিজেকে চালিত করা। স্বাধীনতা মানে বীর শহীদ বিপ্লবী দেশ প্রেমিক সংগ্রামী চেতনার মানুষদের আত্মত্যাগের কাহিনী যেখানে লুকিয়ে আছে দেশের প্রতি ভালবাসা নিবেদিত প্রাণ মানসিকতা সর্বোপরি দেশকে প্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দিশা। এভাবেই স্বাধীনতাকে নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করতে শিখেছে কলেজ পড়ুয়া শফিক। প্রতিবছরের মত এবারেও সে যথারীতি তার কলেজের ৭৭ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সমস্ত কর্মকাণ্ডে নিজেকে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রেখেছে। শহীদ বেদী নির্মাণ থেকে শুরু করে পতাকা উত্তোলন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সবকিছুতেই তার উপস্থিতি। কলেজের স্যার ম্যাডামেরা তার উৎসাহী কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে খুব প্রশংসা করে । এই দিনটা এলেই তার অবচেতন মননে এক চরম উদ্দীপনা উৎসাহ ও দেশাত্মবোধের অনুরণন কম্পিত হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের পাতায় চোখ বুলিয়ে সে অনেক রক্তাক্ষয়ী সংগ্রাম লড়াইয়ের জেনেছে হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের দেশমাতৃকার প্রতি অঙ্গীকার। কিন্তু প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে সে যখন স্বাধীনতার সংজ্ঞা আপন মনে ব্যাখ্যা করছে সে উপলব্ধি করছে দেশের স্বাধীনতা এখনো যথার্থভাবে প্রত্যেকের মধ্যে বিস্তার ঘটেনি। স্বাধীনতা তার দৃষ্টিভঙ্গিতে এখনো শৃঙ্খলিত বিশেষ কিছু বাহুবলী ক্ষমতাবান প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা নেত্রীর মধ্যে সীমাবদ্ধ। একদিকে যখন স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবকাল শুরু হয়ে গেছে এখনো আর সমুদ্র হিমাচল ভারত বর্ষ জুড়ে বৈষম্য বিদ্বেষ বিভাজন সর্বোপরি অস্থিরতার বাতাবরণ। প্রতিটা মুহূর্তে শফিক স্বাধীনতার তাৎপর্য গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে কাটাছেঁড়া করতে থাকে তখন তার সহজ সরল মননে কিছু অপ্রীতিকর প্রশ্ন উদ্ভাসিত হয়। আমরা কি চেয়েছি এই স্বাধীনতা যেখানে মানুষের মানুষের বিদ্বেষ ধর্মীয় অনৈক্য রাজনীতির সাম্প্রদায়িকতা। আমরা কি চেয়েছি এই স্বাধীনতা যেখানে রাজনীতির কুশীলবরা আমরা দেশ সেবার নামে রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে আত্মস্বার্থ চরিতার্থে উন্মুখ হয়ে উঠেছে। আমরা কি চেয়েছি সেই স্বাধীনতা যেখানে ধনী-গরীব বৈষম্য দুর্নীতি অরাজকতা লাগামছাড়া হয়ে উঠবে। আবারো স্বাধীনতা দিবসের মুহূর্তে যখন তিরাঙ্গা জাতীয় পতাকা পত পত করে আকাশে উড্ডীয়মান শফিক নিবিষ্টচিত্তে ভাবতে আছে অগণিত বীর শহীদ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বুকের রক্ত ঢেলে প্রাণের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা আমরা চাইনি।
যথাযথ মর্যাদায় স্বাধীনতা দিবস পালনের পর বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প আড্ডা দেয়ার পর শফিক বাড়ি ফিরে এলো। এদিকে চারিদিক থেকে ভেসে আসছে বন্দেমাতারাম জনগণমন সারে জা হাসে আচ্ছে র মধুর ঐকতান। পাশাপাশি নেতা নেত্রী স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে বড় বড় গাল ভরা কথা। যেগুলো শুনতে খুব ভালো লাগে কিন্তু সেই বক্তব্যের গুরুত্ব শুধুমাত্র সেই দিনটিতেই সীমাবদ্ধ। আপন রাজনৈতিক লক্ষ্যে প্রত্যেকেই অবিচলিত। তাদের কাছেই ভোট বৈতরণী পার করে ক্ষমতায় আসীন হওয়াটাই স্বাধীনতা। সেজন্য তারা স্বাধীনতার গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য উপলব্ধি করেও নির্বাচনের আগের মুহূর্তে ছড়িয়ে দেয় সাম্প্রদায়িকতার বিভীষিকা । শফিক ভালোভাবেই উপলব্ধ স্বাধীনতার মর্মার্থ। তবুও সে প্রত্যয়ী হয়ে স্বপ্ন দেখে চিন্তা করে একদিন স্বাধীনতা সবার কাছেই সাম্য মৈত্রী অখন্ডতা সৌহার্দ্য ভ্রাতৃত্ব সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে পৌঁছে যাবে। সেদিন বিলীন হবে বিদ্বেষ বিভাজন ঘৃণার রাজনীতির সাতকাহন। মনুষ্যত্বের জাগরণে প্রত্যেক ভারতীয় হয়ে উঠবে বিবেকবান এবং বুঝে নেবে বেঁচে থাকার ন্যূনতম অধিকার যার পরতে পরতে লেগে আছে স্বাধীনতার প্রয়োগ ও কার্যকরিতা। অবশেষে শফিক
বিশ্বাস করে ফিরে আসবে স্বাধীনতার প্রকৃত উদযাপনের মুহূর্ত যেখানে আমরা জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মিলেমিশে একাকার হয়ে ভারতীয় পরিচয় বেঁচে থাকবো। দিন বদলের সাথে সাথে মানুষের মানসিকতা ভাবনাচিন্তার পরিবর্তনে রাজনীতির আত্মশুদ্ধিকরনে বিকশিত হবে ২০০ বছরের ব্রিটিশ দাসত্বের শৃংখল থেকে বহু কষ্টে অর্জিত সাধের স্বাধীনতা।
===================
রচনা -পাভেল আমান -হরিহরপাড়া- মুর্শিদাবাদ