সুচন্দ্রা বসু
গল্পে দেখা যায় খুনের মামলায় সাক্ষী হয়েছে পাখি।এখানে আদালতে মামলা উঠেছে। এখানেও সাক্ষী তোতাপাখি।মালিক তার নাম রেখেছিল 'রাখি'।
প্রফেসর মাণিকের কাছে সুমিতা যখন পড়তে আসত,তখন তার রূপে মুগ্ধ হয় মাণিক। মোহাবিষ্ট
হয়ে দুজনেই প্রেমেপড়ে । এরপর পারস্পরিক সম্মতিতে তারা বিয়ে করে। হেসে খেলে আনন্দে তাদের দিন কাটছিল ।এইভাবে একবছর পার হয়ে যায়। প্রথম বিবাহ বার্ষিকের উপহার হিসেবে সুমিতাকে আফ্রিকান প্রজাতির তোতা কিনে দিয়েছিল মাণিক।
তোতাটিকে কথা বলা শিখিয়েছিল মাণিক। পোষ্য আফ্রিকান গ্রে প্যারটের গলার শব্দ ছিল হুবহু মানিকের মতো। এরা বেশ বুদ্ধিমান ও এদের স্মৃতিশক্তি বেশ ভালো হয়।
বার বার সুমিতা মিস ক্যারেজ হওয়ায় ডাক্তার বেডরেস্ট থাকতে বলে। তাই মানিকের বাড়িতে পরিচারিকা হিসেবে কাজে রাখা হয়েছিল কল্পনাকে। রাতদিন ওই বাড়িতে থাকত সে। সেও খুব সুন্দরী ছিল।মাণিক কল্পনার প্রতি হঠাৎ আকৃষ্ট হয়ে পড়ে ।সুমিতা একদিন তাদের ঘনিষ্ট অবস্থায় দেখতে পায়। অশান্তি শুরু হয় মানিক ও সুমিতার মধ্যে। তারা পরস্পর আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। সুমিতা মাণিকের মধ্যে সম্পর্কটুকু বজায় থাকে। কল্পনার সেটা সহ্য হয় না। সে বারবার মাণিককে জোরাজুরি করে সুমিতার সাথে পাকাপাকি ডিভোর্স করার জন্য। সুমিতার মাণিকের বাড়িতে আসা পছন্দ করত না
কল্পনা। কিন্তু সুমিতা ওই পাখির জন্য মাঝেমধ্যে মাণিকের বাড়িতে আসত।পাখিটা সুমিতাকে না দেখলে কথা বলতে চাইতো না। আর পাখিটার কথা কল্পনা খুব একটা বুঝতে পারত না।
একদিন বাড়িতে হঠাৎ খুন হয়ে যায় মাণিক। কারা বাড়িতে ঢুকে মাণিককে খুন করে কল্পনার মাথায়
আঘাত করে পালিয়ে যায়।কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা ছিল বলে কল্পনা তাদের চিনতে পারেনি। খবর পেয়ে থানা থেকে পুলিশ আসে।তারা সব দেখে মাণিককে খুনের কোন কারণ খুঁজে পায় না। ফলে কেসটা আদালতে ওঠে না।
সুমিতা মাণিকের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়িতে এসে দেখে মাণিকের নিথর দেহ রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে পড়ে আর কল্পনাও মাথায় আঘাত পেয়ে মাটিতে কাতরাচ্ছে।দুজনের মাঝখানে পড়েছিল একটি বন্দুক। পাখিটা ওদের সামনে খুব ডানা ঝাপটাচ্ছিল আর বলছিল তুমি আমায় মেরো না। সুমিতা এই দৃশ্যটা মোবাইলে ভিডিও করে রাখে।
সুমিতা আদালতে মামলা করল। কল্পনা মাণিককে খুন করছে।আদালত তথ্য প্রমাণ দেখতে চাইলে
সুমিতা তোতাপাখিটিকে আদালতে এনে হাজির করল। মাণিক বাড়িতে থাকাকালীন রাখি ঘরে ছাড়া থাকত।মাণিক যখন খুন হয় তখন পাখিটি সব দেখতে পায়।
সুমিতার অভিযোগ, গুলি চালানোর সময় মাণিক চিৎকার করে উঠেছিল মেরো না আমায় মেরো না কল্পনা।পাখিটি হুবহু মাণিকের স্বর নকল করে বিচারককে তা শুনিয়ে দেয়।
ডিভিশন বেঞ্চে আর দুজন বিচারকের সায় না থাকায় পাখিটির কথা প্রমাণ হিসেবে গ্রাহ্য হয় না।
মামলা খারিজ হয়ে যায়।
ছয়মাস পরে সুমিতা ভালো উকিল ধরে মামলাটা আবার আদালতে তোলে। সুমিতার মনে জেদ চেপে যায় যে এর শেষ দেখে সে ছাড়বে।
আবার যখন আদালতে মামলা ওঠে সুমিতার উকিল পাখিটির জবানবন্দি শুনিয়ে বিচারকদের
বলে , হুজুর পাখি কখনও মিথ্যা কথা বলে না, মানুষ মিথ্যে বললেও বলতে পারে।
আদালতে তখন কল্পনাকে ডেকে পাঠানো হয়। কল্পনা আদালতে উপস্থিত হতেই রাখি তার ডান
হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে চিৎকার করে ওঠে - আমায়মেরো না মেরো না কল্পনা।
সুমিতার উকিল তখন সওয়াল জবাবে বিচারকদের বলেন- দেখুন কল্পনা ডান হাত দিয়ে মাণিককে গুলি করেছে,তাই রাখি তার ডান হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাণিকের মতো গলার স্বরে আকুতি জানাচ্ছে কল্পনাকে মেরো না আমায় মেরো না।
বিচারক গণ সবদিক বিচার করে কল্পনাকে খুনি সাব্যস্ত করেন এবং বারো বছরের জেল ঘোষণা করেন।
===========================
সুচন্দ্রা বসু
২৬৭/৫ জি.টি.রোড পানপাড়া শ্রীরামপুর হুগলি।
পিনকোড ৭১২২০৩