অনিকেত বাবু অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তার স্ত্রী রমা দেবী অবসরপ্রাপ্তা সরকারি কর্মচারী। তাদের দুই কন্যা সন্তান। সকলেই উচ্চশিক্ষিতা। বিবাহ সূত্রে তারা তাদের শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। মাঝেমধ্যে তারা বাবা-মার কাছে আসেন ।যে কটা দিন থাকেন আনন্দ হইহুল্লোড় করে কেটে যায়।
অনিকেত বাবু আর রমা দেবী দুজনেই উদারমনা। এবং যুক্তিবাদে বিশ্বাসী। অন্ধ কুসংস্কার কে তারা মনে প্রানে ঘৃণা করে। তাই তারা দুজনেই অঙ্গীকারবদ্ধ মৃত্যুর পর তাদের দেহ যেন মানব কল্যাণে দান করা হয়। সেইমতো তারা তার মেয়ে জামাই আত্মীয়-স্বজনদের আগাম জানিয়ে রেখেছেন।
তারা দুজনেই ভ্রমণ পিপাসু। তাই তারা তাদের সাধ্যমত ভারতবর্ষের বিভিন্ন দ্রষ্টব্য স্থানে প্রতি বছরেই বেড়াতে যান। এবারে তাদের গন্তব্যস্থল হিমাচল প্রদেশ।
হিমাচলের বিভিন্ন জায়গা সিমলা কুলু মানালি ঘুরতে থাকে, আর প্রাকৃতিক নৈসর্গিক দৃশ্যাবলী রমা দেবী ক্যামেরা বন্দী করতে থাকেন। ছবি তুলতে তুলতে হঠাৎই পা হোড়কে পাহাড়ের ঢালে গড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় মানুষের সহায়তায় এবং ট্যুর কন্টাক্ট সংস্থার উদ্যোগে রমা দেবীকে উদ্ধার করা হয় অচেতন অবস্থায়। এবং স্থানীয় হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকগণ তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ইতিমধ্যে অনিকেত বাবু তার স্ত্রীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেগুলি এখনই মুমূর্ষ মানুষকে বাঁচাবার কাজে লাগানো যাবে, তার ব্যবস্থা হসপিটাল কর্তৃপক্ষকে করতে বলেন ।
সরকারি সহায়তায় গ্রীন করিডোর খুলে চারটি হসপিটালে চারজন মুমূর্ষ মানুষকে রমা দেবীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
এর মধ্যেই অনিকেত বাবুর মেয়ে -জামাই গন উপস্থিত হন। এবং মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ করার জন্য বাবার পাশে দাঁড়ান।
মরনের পরেও অনিকেত বাবুর স্ত্রী রমাদেবী জীবিত থেকে গেলেন ওই চারজন মুমূর্ষু মানুষের প্রাণ সঞ্চারের মধ্য দিয়ে।
শোকের মধ্যেও অনিকেত বাবু ও তার স্বজনের এটুকুই সান্ত্বনা ।
অনিকেত বাবু ও তার মেয়েরা রমা দেবীকে ফুলের সাজে সাজিয়ে তার মৃতদেহ তুলে দিলেন মানব কল্যাণে হসপিটাল সুপারের হাতে।
অনিকেত বাবুর চোখ হতে ঝরে পড়ে আনন্দাশ্রু। গোধূলি অপরাহ্নে অস্তাচল গামী সূর্যের রক্তিম আভায় আলোকিত হয়ে ওঠে দশদিক।
======================
অশোক দাশ
ভোজান, রসপুর ,হাওড়া ,পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
মোবাইল নম্বর-৮৩৪৮৭২৫৩৩৩