অশোক দাশ
হুদু চলে গেল। নবমীর ভোরে। সকলকে শোক সাগরে নিমজ্জিত করে, দশমীর আগেই ভাসান হয়ে গেল। গত একমাস পূর্বে গর্ভাবস্থায় পড়ে যায় সে। পায়ের হাড় ভেঙে যাওয়ায় দাঁড়াবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এই অবস্থায় দিন পনেরো আগে সে হৃষ্টপুষ্ট নধর কান্তি সপ্তম সন্তানের জন্ম দেয়। কিন্তু সন্তানকে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর সামর্থ তার ছিল না। ক্রমশ তার শরীর রুগ্ন হতে থাকে। খাওয়ার প্রতি অনিমিয়া সৃষ্টি হয় এবং দীর্ঘ রোগ সজ্জায় পড়ে থাকার ফলে তার শরীরে বেডসোর হয়ে পচন ধরা পড়ে। চিকিৎসকদের সব রকম চেষ্টা ব্যর্থ করে সকলকে শান্তি দিয়ে সে চলে যায় পরপারে। সন্তান স্নেহে হুদুকে মানুষ করেছিল মান্তু এবং তার পরিবার পরিজন। আজ তার চোখের জল বাঁধ মানছে না। হুদু'র শেষ কাজ সে নিরবে নিঃশব্দে অশ্রু গোপন করে ,করে চলেছে।
হুদু তাঁকে অনেক দিয়েছে কিন্তু তার শেষ অবস্থা যে এত ভয়াবহ হবে, সে কল্পনা করতে পারে না। গর্ভবতী হওয়ার পূর্বে সকলেই বলেছিল ছেড়ে দিতে। কিন্তু মানতে চায়নি কসাইয়ের হাতে তুলে দিতে। সে তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যতদিন বাঁচবে আমাদের বাড়িতেই থাকুক। শেষ পরিণতি যে এত কষ্টের এত বেদনার হবে ,ভাবতে ভাবতে মান্তু কান্নায় ভেঙে পড়ে।
আজ নবমীর উৎসব ম্লান
হয়ে গেছে ওদের বাড়িতে। বাবা বাকরুদ্ধ। মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে ।চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছে। মা মাঝে মাঝেই কাজের ফাঁকে আঁচলে চোখের জল মুছছে।
সকলে মিলে তাকে নিয়ে চলল দামোদর নদে ভাসান দিতে। মান্তু পিছন পিছন কিছুদূর গিয়ে ফিরে আসে। হুদু যেন তাকে বলে গেল ,মন খারাপ করে চিন্তা করিস না। আমার উত্তরসূরি রইল তাদের ভালবাসিস তাদের আদর যত্নে বড় করে তুলিস তাহলেই আমি শান্তি পাব। অজান্তেই মান্তুর চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে শ্রাবণের ফল্গুধারা।
অশোক দাশ
ভোজান ,রসপুর ,হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।
মোবাইল নম্বর-৮৩৪৮৭২৫৩৩৩