ছবিঋণ - ইন্টারনেট
রঙিন বসন্ত
সুচন্দ্রা বসু
১৩ ফেব্রুয়ারি পয়লা ফাল্গুন বসন্তের প্রথম দিন। নতুন রূপে আসে নতুন বসন্ত। পয়লা ফাল্গুনের পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এ যেন এক সুবর্ণ সুযোগ একজন আরেকজনকে মনের কথা বলার পুলকিত হওয়ার।
বাংলার গ্রামে শিমুল কৃষ্ণচূড়া পলাশের সুমধুর গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে পাড়ায় পাড়ায়। বসন্তকে বলা যায় পাতা ঝরা বসন্ত। সব উদ্ভিদ নিজেদের পাতা ঝরিয়ে ফেলে। গাছের ডালে ডালে নতুন সোনালি লাল রঙের কচি পাতার আগমন ঘটে।
এসময় কোকিল তার সুমধুর কণ্ঠে মুগ্ধ করে । মুখরিত হয়ে ওঠে গ্রামের মাঠ-ঘাট। দখিনা হাওয়া জুড়িয়ে দেয় মানুষের মন। বসন্তের সবুজ সকালে দুর্বা ঘাসের ওপর বিন্দু বিন্দু জলকণা মুক্তার টুকরার মত সূর্যের আলোয় ঝলমল করতে থাকে। সে এক অপরূপ দৃশ্য । পাতাঝরা গাছে নতুন কুঁড়ি গজায়, মনে হয় প্রকৃতি সেজেছে এক নববধূর সাজে প্রকৃতি যেন লজ্জাবতী এক তরুণী।
ফুরিয়ে যায় না বসন্তের মুগ্ধ করা অপরূপ রূপ। এসব কারণে প্রতিবছর রবীন্দ্রভারতীতে পালিত হয় বসন্ত বরণ উৎসব ।অরুণিমা বাসন্তি রঙের শাড়ি,অরুণ বাসন্তি রঙের পাঞ্জাবি পরে খুব আনন্দেই বরণ করে বসন্তকে। অরুণের হৃদয় জুড়ে অরুণিমার মায়াবী মুখশ্রী।চঞ্চল দুটি মন সুযোগের অছিলায়।
চোখে মুখে ফুটে ওঠে স্পষ্ট বসন্ত ছাপ।উল্লাসিত আবেগী দুটি মনে লালিমার আভায় লুকোচুরি খেলছে অনুরাগ।চোখ ধরা পড়ে যায় ছবির মতো।
অপেক্ষা করেছিল অরুণ মনের কথা বলবে এইদিনে। হাতে ফুল নিয়ে এক অনুভূতির আনন্দে ছুটে যায় অরুনিমাকে মনের কথা বলার উচ্ছ্বাসে। দুজনের হাতে ছিল লাল টকটকে গোলাপ আর প্রকৃতি জুড়ে লাল পলাশ এক অপরূপ দৃশ্য। আবেগি প্রেমিকরা তাদের ভালোবাসার মানুষকে ফুল দিয়ে ভালোবাসা নিবেদন করে। বসন্ত আর ভালোবাসা যেন মিলেমিশে একাকার।বসন্তের রঙেই রঙিন হবে দুজনের স্বপ্ন ভালবাসা।কিন্তু কেউই সেদিন সম্পূর্ণ কাছাকাছি আসতে পারে নি।
অরুণিমাকে অরুণ বলেই ফেলেছে শেষে দোলের দিনে পথের সাথীকে চিনে নিয়েছি, শয়নে স্বপনে জাগরণে জাগে যার মুখ। যে দিবানিশি মন কেড়েছে তার, মিষ্টি মুখের হাসি দিয়ে।
নানান প্রশ্ন জাগে অরুণিমার মনে।সত্যিই অরুণ এল কি তার জীবনে। রূপে গুণে মুগ্ধ হয়ে সে জীবনসঙ্গী বেছে নিল তাকে অবশেষে। স্কুল মাস্টারের চাকরির খবর জানাতেই এসেছিল দোলের দিন অরুণ। সুখবর জানাতে বাড়িতে এলে অরুনকে সবুজ আবীরে সারা অঙ্গ আনন্দে ভরিয়ে দেয়।সেও অরুণিমার মুখে ও কপালে লাল রঙের আবীর মাখাল।অরুণ চলে যাওয়ার পরে সে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াল রঙটা সিঁথিতে সিঁদুরের মত লেগে গেছে। সেই রঙে মনে তার শিহরণ জাগল। চোখে মুখে লজ্জা মেখে আড়ালে আয়নায় সে নানা ভঙ্গিতে নিজেকে দেখল। তাকে নিয়ে রঙিন জীবন ছবি আঁকল নিজের মনে। রঙ্গিন মনের সন্ধান যেন সে পেয়েছে। সে কি তবে হৃদয় দরজা খুলে দেবে? ফাল্গুনী রঙ তার মনে গোপনে বলে গেল অনেক কথা। নানান প্রশ্ন জাগল তার মনে এরপর জীবনে তার কি ঘটবে?
এভাবেই বসন্ত আসে যায়। অরুণিমাদের মনে রঙ ধরায়।
======================
সুচন্দ্রা বোস
২৬৭/৫ জি.ট. রোড পানপাড়া শ্রীরামপুর হুগলি।