অণুগল্প ।। অবক্ষয় ।। চন্দন মিত্র
ছবিঋণ - ইন্টারনেট।
অবক্ষয়
চন্দন মিত্র
দর্শক আসন থেকে জনৈক মাঝবয়সী ভদ্রলোক (?) সটান গিয়ে উঠলেন স্টেজে। বক্তৃতার মাঝখানে প্রবল গ্যাঞ্জাম শুরু হয়ে গেল। একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠান। বক্তব্য রাখছিলেন বাংলা ভাষা-সাহিত্যের বিশিষ্ট অধ্যাপক তথা স্বনামধন্য কথাসাহিত্যিক হারাধনবাবু। তাঁর আগুনঝরা বক্তব্যের রেশ তখনও কাটেনি, 'ভুলে গেলে চলবে না, আমাদের মাতৃভাষা আজ বিপন্ন। আমাদের নবীন প্রজন্মের সামনে বাংলা ভাষার মূল্য ও মাধুর্য তুলে ধরতে হবে। তারাই পারে আমাদের দুখিনি বাংলা ভাষাকে...।' হারাধনবাবু আর একটিও কথা বলতে পারলেন না। অকস্মাৎ মঞ্চে উঠে তাঁর হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নিলেন সেই ভদ্রলোক (?)। তারপর সেই মাইক্রোফোনে ভাসিয়ে দিলেন নিজের বাজখাঁই গলা, 'এই যে মশাই আমাদের গাম্বাট পেয়েছেন তাই না! নিজের দুই ছেলেকে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াচ্ছেন; ফার্স্ট ল্যাংগুয়েজ ইংরেজি, সেকেন্ড ল্যাংগুয়েজ হিন্দি। তারা বাংলা লেখা বা পড়া তো দূরের কথা ঠিক মতো বাংলা বলতেও পারে না। আর আপনি এখানে এসে জ্ঞান দিচ্ছেন, নবীন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। আপনি নিজে মনে করেন বাংলা মিডিয়ামে পড়লে ছেলেরা গোল্লায় যাবে। আর এখানে এসে বাংলা ভাষা, বাংলা ভাষা বলে চেল্লাচ্ছেন। ছিঃ, লজ্জা করে না আপনার।' বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক, বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক হারাধনবাবুর এমন হেনস্থা দেখেও কেউ কোনো প্রতিবাদ করলেন না। আরও কত অবক্ষয় যে আমাদের দেখতে হবে, কে জানে!
------------------------
চন্দন মিত্র
ভগবানপুর (হরিণডাঙা)
ডায়মন্ড হারবার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা