বাঁকুড়ার ওই লাল মাটি
(পর্ব - ১)
অঙ্কিতা পাল
আমি এক ভ্রমণ পিপাসু ব্যক্তি, ভ্রমণ হলো আমার অত্যন্ত প্রিয় শখ। তাই শীতের ছুটি পড়তে না পড়তেই বেরিয়ে পড়লাম বাঁকুড়ার মুকুটমনিপুরের উদ্দেশ্যে। এটা ছিল আমাদের ফ্যামিলি ট্যুর।
গত ২৮শে ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাত তিনটের সময় উঠে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে, চা খেয়ে চারটেতে মারতি স্করপিওতে উঠে চললাম সাঁতরাগাছি রেল স্টেশনের উদ্দেশ্যে। ভোর সাড়ে পাঁচটায় সেখানে পৌঁছে গেলাম। আমাদের ট্রেনটা ছিল সকাল সাড়ে ছটার রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস যেটা সাঁতরাগাছি থেকে পুরুলিয়া গামী , এবার ট্রেনের অপেক্ষায় বসে রইলাম।
প্রতীক্ষার অবসান উঠে পড়লাম ট্রেনে সিট নম্বর ৬০ থেকে ৬৫ পর্যন্ত জানালার ধারে রিজার্ভেশন টিকিট ব্যাস আর কি চাই ; এবার তো বাইরের দৃশ্য উপভোগ করবার মুহূর্ত। ট্রেন ছুটে চলেছে পেরিয়ে যাচ্ছে কত কিছু কত শহর কত গ্রাম ঐ তো দেখা যাচ্ছে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র আবারো পেরিয়ে গেল এক নাম না জানা বড় এক অপরূপ নদী, মা পাশে বসে ছিলেন সুধালাম , কি নাম দামোদর ? মা হেসে বললেন, রূপনারায়ণ । আবারো ট্রেন ছুটছে - ছুটেই চলেছে অচেনা অজানা রাস্তা ধরে পার হয়ে যাচ্ছে কত ছোট ছোট নদী-নালা, গাছপালা , জঙ্গলের সারী , গাঁদা ফুল ও পদ্ম ফুলের মেলা। ট্রেন আবার এসে দাঁড়ালো খড়্গপুরে তারপর মেদনীপুর, চন্দ্রকোনা, আন্দুল, পাঁশকুড়া, মেচেদা, শালবনী ও অন্যান্য স্টেশনে। শালবনী পার হতে না হতেই শাল গাছের সারী আমাকে মুগ্ধ করলো। আমি তাদের ক্যামেরায় বন্ধী না করেই থাকতে পারলাম না। এবার ট্রেনের দোলাচলে দুচোখে ঘুম এসে গেল, ঘুম ভেঙ্গে চেয়ে দেখি বিষ্ণুপুর স্টেশনে ট্রেন এসে দাঁড়ালো । আবার কু ঝিক ঝিক ঝিকঝিক করে চার ঘন্টা যাত্রার পরপর অবশেষে বাঁকুড়া স্টেশনে নেমে পড়লাম। এবার প্রশ্ন কিভাবে যাবো মুকুটমণিপুর ?
চারিদিকে গাড়ির চালক হেঁকে যাচ্ছে - এসো যাবে নাকি। আমরা একটি টোটোতে উঠে পরলাম প্রায় ছয় কিলোমিটার যাওয়ার পর বাঁকুড়া বাসস্ট্যান্ডে এসে খাতরা যাওয়ার বাসে উঠলাম, আবারো চোখে ঘুম নেমে এলো প্রায় দেড় ঘন্টা যাত্রার পর অবশেষে খাতরা পৌছালাম। অবশেষে সেখান থেকে ম্যাজিক গাড়িতে পাচ কিলোমিটার যাবার পর আমার স্বপ্নে সাজানো কংসাবতী নদী ও সবুজ পাহাড় ঘেরা লাল মাটির মুকুটমনিপুর। আমরা নদীর পাশেই সরকারি ইউথ অবসানের সবচেয়ে সুন্দর ঘর অর্থাৎ যেখান থেকে পাহাড় ও নদী কে স্পষ্টভাবে
উপলব্ধি করা যায় মনে হয় যেন তারা দিগন্তে মিশেছে সেখানে আমাদের থাকতে দেওয়া হলো। সারাদিনের ক্লান্তির পর স্নান করে ও মধ্যাহ্নভোজন সেরে আবারো বেরিয়ে পড়লাম মুকুটমনিপুরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও স্থানীয় অঞ্চল গুলি পরিদর্শন করতে।
এবারে কংসাবতীর বক্ষ মাঝে নৌকা করে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা একটু অন্য ধরনের নদীতে তখন ঠান্ডা বাতাস বিরাজমান, নৌকা থেকে নেমে প্রথমে পরেশনাথ মন্দির দর্শনে গেলাম সেখানে ভৈরবী মা ও শিবলিঙ্গ দর্শন করে মন ভরে গেল।
দ্বিতীয় কংসাবতী ও কুমারী নদীর মিলন বা সংযোগস্থল গোধূলি বেলা কে যেন আরো রাঙিয়ে দিলো ।
এবার তরী এসে দাঁড়ালো এক তীরে যেখানে কত লোকজন বনভোজন করে চলেছে নিজেদের ছন্দে, আহা! কিচমৎকার ভাবা যায় কংসাবতীর শাল মহুয়ার ছত্রছায়ায় বনভোজন সত্যিই অসাধারণ। এবার এক মটর রিক্সার সংযোগে ডিয়ার পার্ক অর্থাৎ মৃগদাব সোনার বাংলা পার্ক ও আদিবাসী গ্রাম দেখে মন স্নিগ্ধ হয়ে গেল যেন বাংলা খাতার পাতায় গ্রামের রচনার মতো। এবার তরী ধীরে ধীরে কংসাবতীর বক্ষে চলেছে গোধূলি বেলার সূর্যের রক্তিম আভা নদীর জলকে ম্নান করেছে যেন তুলি দিয়ে আঁকা ছবির মতন।
সন্ধ্যেবেলা মুকুটমণিপুর মেলার অসাধারণ আলোকসজ্জা সত্যিই খুব সুন্দর। আপনাদের সাথে সাথে পোড়া মাটি ও কাঠের কারুকার্য সত্যি পর্যটকদের নজর কেড়েছে । এবার রাত হয়ে গেল, নৈশ্য ভোজন শেষ করে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরের দিন সকাল ছয়টা ঘুম থেকে উঠে চায়ের কাপে চুমুক দিতে না দিতেই দেখলাম লাল সূর্যরেখা কংসাবতী ও পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে যেন চকচক করছে। তারপর কংসাবতী ব্যারেজ বরাবর হাঁটতে শুরু করলাম প্রাতঃ ভ্রমণ বেশ ভালই লাগছিল । এবার মুকুটমণিপুর থেকে শুশুনিয়া পাহাড় হয়ে বিষ্ণুপুরে।
ক্রমশঃ-------------------
-------------------------------------
ভাঙ্গড়, দক্ষিণ ২৪ পরগনা।