Click the image to explore all Offers

গল্প ।। রাস্তায় ।। প্রতীক মিত্র

 
ছবিঋণ - ইন্টারনেট ।
 
রাস্তায়

প্রতীক মিত্র 



সপ্তর্ষি আজও যখন ট্রেন লাইনের সমান্তরাল রাস্তাটা হেঁটে পেরোচ্ছিল মনে মনে ভাবছিলো এত ঠান্ডা যখন ভিখারিটা বোধ হয় বসবে না। কিন্তু ভিখারিরই বা উপায় কি? লম্বা এই রাস্তাটায় ওর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।এ সুযোগ ছাড়লে ওর চলবে কেন?আর ক্ষুধাই বা ওকে অন্যথা করতে দেবে কেন? আশপাশটা মেঘলার দরুণ ফ্যাকাশে। ঝিলের ওপর বকের সংখ্যাও কম। গোসাপটা আজ আর উঁকি মারেনি। ভিখারিটিকে দেখেই সপ্তর্ষির অস্বস্তি যথারীতি শুরু হয়ে যায়। ও জানে ওর এই মোটের ওপর পাতে দেওয়ার যোগ্য পোষাক-আদবকায়দার পেছনে খরচ হওয়া অর্থ ওর কষ্টার্জিত। ওর এখানে পাপবোধের দহনজ্বালায় পীড়া পাওয়ার কোনো কারণ নেই।কিন্তু ওই যা হয় আর কি…অযৌক্তিক বিষয়গুলোতেই মাথা বেশি খাটানো হয়ে যায়।সপ্তর্ষি রোজকার মতন আজও রেল লাইনের সমান্তরাল রাস্তা পেরোবার সময় ভিখারিটিকে টপকালো। ভিখিরিটি তখন নোংরা মাফলারটাকে ভালো করে গলায় পেঁচানোর চেষ্টা করছিলো বলে সপ্তর্ষি ভাবলো ও নির্ঘাত রোজ যেটা করে আজ সেটা করবে না। কিন্তু ও সপ্তর্ষিকে হতাশ করে সেই কাজটিই করলো। ডান হাতটা সামনে বাড়িয়ে বলে বসলো, 'বাবু!' যদিও এটা সে জানতো যে সপ্তর্ষি অন্যদিনের মতন আজও কোনো ভিক্ষে দেবে না। দু'জনের চোখাচুখি হত আগে। এখন আর হয়না। সপ্তর্ষি ভিখিরিটির দিকে আর তাকাতে পারে না। অবশ্য পাপবোধ কিসের বুঝে উঠতে পারে না।ওর জীবনযাত্রায় যেটুকু স্বাচ্ছন্দ্য তা সবই ওরই সৎভাবে অর্জন করা। এবং ভিখিরিটি চেহারার দিক থেকে সুস্থ। বয়স হলেও একদম বুড়ো থুরথুরে নয় যে নড়াচড়ার ক্ষমতা নেই। ব্যাটা জাস্ট কিছু না করে হাত পেতে থাকে ভিক্ষে নেবে বলে এটা ভেবেই সপ্তর্ষির কেমন লাগে।অবশ্য এটাও ঠিক, পাশাপাশি ওর এটাও মনে হয় যেমন আজ হচ্ছিল যে ভিখিরিটি আর কিছু না হোক ওকে গালিতো দিতে পারে।গালি ওর দেওয়াই উচিৎ নয় কি?প্রত্যেকদিন হাত পেতে থাকে অথচ সপ্তর্ষি কিছুই দেয়না।এক-একবার সপ্তর্ষি ভেবেছে পুরোনো সোয়েটার-টোয়েটার কিছু খুঁজে পেলে ওর জন্য নিয়ে আসবে। কিন্তু ট্রেন-বাসের যা অবস্থা, যা কাজের চাপ মাঝে মাঝে নিজেকেই ও খুঁজে পায় না। সপ্তর্ষি ভিখিরির চোখে চোখ না রাখলেও আন্দাজ করতে পারে ভিখিরিটা ওর দিকে ড্যাবড্যাব করে হয়তো চেয়ে আছে। ব্যস ওটুকুই।আর কিছু সে বলে না। সপ্তর্ষি ভাবে আজ হয়তো ভিখিরির গালি খাবে, অপমানিত হবে।সেটা আর হয়না। রোদ তখনও মেঘের আড়ালে। গোসাপের উঁকি নেই। নেই বকেদের ভীড়ও।লম্বা রাস্তা। তবু অন্যদিন পায়ে হেঁটে শেষ ঠিক হয়ে যায়। আজ যেন শেষ হতেই চাইছিল না।
---------------------------

প্রতীক মিত্র

12a, supti mitra sarani, konnagar, hooghly, pin: 712235

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.