Click the image to explore all Offers

নিবন্ধ ।। প্রেরণা ।। ডা.প্রদীপ কুমার দাস


 
প্রেরণা
ডা.প্রদীপ কুমার দাস



রবীন্দ্রনাথের সারাটা জীবনই ঘটনাবহুল। সেই জীবনে কখনো প্রেম ভালবাসা উছলে উঠেছে কখনো বা দুঃখের সাগরে ভেসে গেছেন। তবে তাঁর প্রেম ভালবাসা হল স্বর্গীয় প্রেম যা কামনাতীত, সময়াতীত ও কালাতীত। এসব ঘটনার মাঝে অকস্মাৎ চলে গেলেন নতুন বৌঠান কাদম্বরী দেবী। তাঁর বিরহে ব্যাকুল হয়ে লিখলেন, ' চলে গেল, আর কিছু নাহি কহিবার, চলে গেল, আর কিছু নাহি গায়িবার'। এ এক আশ্বর্য আত্মনিবেদন। একে একে চলে গেলেন পত্নী মৃণালিনী দেবী, মধ্যম কন্যা রেণুকা, ফ্রেন্ড-ফিলোজফার গাইড পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, সবকিছু শূণ্য করে দিয়ে চলে গেলেন ছোটছেলে শমীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শোকে মুহ্যমান, নিঃস্ব হলেন, রিক্ত হলেন। তাঁর বিরহশোক এক নৈব্যক্তিক স্তরে উন্নীত হয়।কন্ঠে ধ্বনিত হয়, ' দুঃখে যেন করিতে পারি জয়'। এখান থেকেই  'গীতাঞ্জলি' কাব্যরচনার প্রেরণা। আত্মনিবেদনের সুর ধ্বনিত হয় গীতাঞ্জলির পাতায় পাতায় গানে গানে। তারই সুবাদে পুরষ্কৃত হন নোবেল পুরষ্কারে।
 
      এছাড়া মনীষীদের মধ্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রেরণাদাতৃ ছিলেন মাতা ভগবতী দেবী ও প্রেরণাদাতা পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বামী বিবেকান্দের ক্ষেত্রে শ্রীশ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণদেব ও  মাতা সারদা দেবী। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর রাজনৈতিক প্রেরণাদাতা ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাস ও বাসন্তীদেবী। ছোটবেলায় বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী এলবার্ট আইনস্টাইন অঙ্কে খুব কাঁচা ছিলেন। অঙ্কের স্যার ক্লাশে বকাবকি করে বলতেন তাঁর দ্বারা অঙ্ক কষা হবে না। খুব মুষড়ে পড়তেন। তাঁর মা ও পরবর্তীকালে প্রেমিকা প্রেরণা যুগিয়ে তাঁর আত্মপ্রত্যয় বাড়ানোর কাজটা করেছিলেন বলে বিরাট অঙ্ক কষে ই ইজিকাল্টু এম সি স্কোয়ার আবিষ্কার করে সারাবিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। ছোটবেলা থেকে থমাস আলফা এডিসন জড়োবুদ্ধি সম্পন্ন ছিলেন বলে স্কুলের ক্লাসটিচার একটা চিঠি লিখে এডিসনকে বলেছিলেন চিঠিটা মায়ের হাতে দিতে। বাড়ি ফিরে চিঠিটা মায়ের হাতে দিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, চিঠিতে কি লেখা আছে? মা তাঁকে শুনিয়েছিলেন, বাবা, তোমার আই কিউ বা বুদ্ধিমত্তা এত বেশি যে তোমাকে পড়ানোর মতন কোন শিক্ষক ওই স্কুলে নেই। তাই উনারা তোমাকে আর ওই স্কুলে রাখতে চান না। এবার থেকে আমিই তোমাকে পড়াবো বাড়িতে রেখে। এরপরে বৈদ্যুতিক বালব আবিষ্কার করে এডিসন বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানীর সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন। তাঁর মাও সময়ের ব্যবধানে পরলোকগমণ করেছিলেন। একদিন কি একটা কাজে মায়ের ট্রাঙ্কটা খুলে কিছু দরকারি কাগজপত্র খোঁজার তাগিদে স্কুলের ক্লাসটিচারের লেখা চিঠিটি হাতে পান। চিঠিটি পড়ে তাঁর চোখ দিয়ে অঝর ধারায় অশ্রু বয়ে যায় মাকে স্মরণ করে। আসলে চিঠিতে লেখা ছিল আপনার সন্তান এতই কমবুদ্ধি সম্পন্ন যে ওকে স্কুলে রাখলে স্কুলের বদনাম হয়ে যাবে তাই ওকে আর স্কুলে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। সেদিন  ক্লাশ টিচারের ওই কথাটা শোনালে আজকের স্বনামধন্য বিজ্ঞানীকে এডিসনকে কি পাওয়া যেত? নেগেটিভ ধারণাকে বাদ দিয়ে তিনি সেদিন ছেলেকে যে পজিটিভ ধারণায় ও উৎসাহব্যঞ্জক প্রেরণায় উজ্জীবীত করতে পেরেছিলেন বলেই আমরা পেয়েছিলাম বিজ্ঞানী আলফা এডিসনকে।
--------------------------
 

 
ডা. প্রদীপ কুমার দাস
১৫/সি, রাজা কে এল গোস্বামী স্ট্রিট, শ্রীরামপুর,হুগলী, সূচক-৭১২২০১
চলভাষ-৯৪৩৩৩৪৫৫৯১

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.