অনুবাদ গল্প ।। চিনা লোককথা ।। চন্দন মিত্র
ছবি - সংগৃহীত ।
চিনা লোককথা
(যে লোকটির কাছে জীবনের থেকে টাকার মূল্য অধিক)
ইরেজি থেকে বাংলা রূপান্তর : চন্দন মিত্র
এক বুড়ো কাঠুরে কুড়ালখানা কাঁধে নিয়ে প্রায়দিন পাহাড়ের চূড়ায় উঠে যেতেন। বেছে বেছে গাছ কেটে আনতেন। কাঠ বেচে বুড়ো সংগ্রহ করতেন রৌপ্যমুদ্রা। কীভাবে সেই রৌপ্যমুদ্রা স্বর্ণমুদ্রায় রূপান্তরিত করবেন, সেই চেষ্টাতেই তাঁর সমস্ত বুদ্ধি নিয়োজিত ছিল। বুড়ো ছিলেন বেজায় কৃপণ। তাঁর কাছে জীবনের থেকে টাকার মূল্যই ছিল অধিক। এককথায় সোনা-ই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান। সমাজ-সংসারের অন্য কোনো দিকে তাঁর কোনোরকম নজর বা আগ্রহ ছিল না।
একদিন পাকদণ্ডি বেয়ে পাহাড়ে ওঠার সময় একটি বাঘ বুড়োকে ধাওয়া করে। বাঁচার জন্য তিনি দৌড়াতে শুরু করেন। কিন্তু বাঘের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেন না। একসময় বাঘটি তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বুড়োর পিঠে কামড় বসিয়ে বাঘটি তাঁকে টানতে টানতে নিয়ে যায়। বাবার চিৎকার শুনে বুড়োর ছেলে একটি লম্বা ধারালো ছোরা হাতে নিয়ে বাঘের পিছনে দৌড় লাগায়। জোয়ান ছেলে বাবার প্রাণ বাঁচাতে বদ্ধপরিকর। সে প্রাণপণে দৌড়ে বাঘের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
বুড়োর পরনে মোটা কাপড়ের জামা থাকায় বাঘের কামড় তাঁর শরীরকে আহত করেনি। তিনি সুস্থই ছিলেন। বুড়োর ছেলে ছিল বেশ সাহসী। সে ধারালো ছোরাটি শক্তহাতে ধরে বাঘটিকে আঘাত করতে উদ্যত হয়। বাঘটিকে আঘাত করার আগেই বুড়ো চেঁচিয়ে ছেলেকে বলেন—
'সাবধান, ছোরার আঘাতে দামি চামড়াটা নষ্ট করিস না। চামড়া নষ্ট না-করে যদি বাঘটাকে ঘায়েল করতে পারিস, তাহলে আমরা চামড়াটা বিক্রি করে ভালো দাম পাব। বাঘটাকে সাবাড় কর, কিন্তু দোহাই ছোরা দিয়ে আঘাত করিস না।'
বাবার নিষেধ শুনে ছেলেটি থতমত খেয়ে যায়। সেই ফাঁকে বাঘটি বুড়োকে নিয়ে জঙ্গলের গভীরে ঢুকে পড়ে।
--------------------------------------
চন্দন মিত্র
ভগবানপুর (হরিণডাঙা)
ডায়মন্ড হারবার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা