ছবিঋণ- ইন্টারনেট।
সহজ মানুষ
সৌমেন দেবনাথ
ছোটোবেলায় মায়ের মুখের ভূতের গল্প শুনে বড়ো হয়েছে শহর আলী। দাদির কাছে শুনেছে ভূতের গল্প, নানীর কাছে শুনেছে ভূতের গল্প৷ চায়ের দোকানে বসে শুনেছে ভূতের গল্প। জহির ভূত দেখেছে, সোহেল ভূত দেখেছে, জাবের ভূত দেখেছে; চা খেতে খেতে তারা সেই ভূত দেখার গল্প করছে। পাঠ্যবইয়ে ভূতের গল্প পড়েছে। তার দুঃখ একটাই সে ভূত দেখলো না কেন! কবরস্থানে নাকি ভূত থাকে, সেখানে গিয়ে সে বসে থেকেছে; ভূত দেখা দেয়নি। ভেদরগঞ্জের বিলে নাকি ভূত থাকে, মধ্যরাতে সেখানে গিয়ে সে বসে থেকেছে; ভূত দেখেনি। পাভেলদের তালগাছে নাকি ভূত থাকে; অমাবস্যার রাতে তালতলায় বসে থেকেছে; ভূত দেখা দেয়নি।
পড়াশোনার কারণে শহর আলী গ্রাম ছেড়ে শহরে এলো। বন্ধুর কম্পিউটারে ছবি দেখে, বন্ধুটি ভূতের ছবি দেখে বেশি। ভূতের ছবি মনোযোগ সহকারে দেখে সে। সিনেমায় ভূত দেখে নিজেকে সে শান্ত করে, দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো। সিনেমার ভূত দেখে সে বুঝলো, ভূত দেখতে কিম্ভূতকিমাকার হয়। চোখ বড়ো বড়ো আর কালো হয়। কান বড়ো বড়ো হয়, চোখ বড়ো বড়ো হয়, দাঁত বড়ো বড়ো হয়। মোটকথা, দেখলেই ভয় লাগে।
ভূত দেখার কৌতূহল তার কিছুটা কমেছে। কিন্তু মনে মনে বাস্তবে ভূত দেখার আগ্রহটুকু থেকেই গিয়েছে। গ্রামে ফিরলে রাত হলেই তেঁতুলগাছ তলায় গিয়ে বসে থাকে। তেঁতুলগাছে ভূত থাকে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি তাকে দিয়েছে গালিবের মা। তেঁতুলগাছ তলায় অনেক গেলো ভূতের দেখা মিললো না। টেলিভিশনে খবর শোনার সময় সে শুনলো সরিষার ভেতর ভূত। রান্নাঘরে গিয়ে সরিষা দেখে, দেখে না ভূত। সরিষা ক্ষেতে গিয়ে বসে থাকে, ভূত থাকে অদেখা।
একদিন গ্রামের বখেটা ছেলেরা গঞ্জে যাচ্ছে আর বলছে, গঞ্জের মেলায় ভূত দেখা যায়। উপেন, কিবরিয়া আর শাহেদদের পিছু নিলো শহর আলী। আজ ভূত দেখার সুবর্ণ সুযোগ সে হাতছাড়া করবে না। মেলায় গেলো, শাক-সবজির মেলা বসেছে। হরেক রকমের শাক আর সবজি। মানুষ আর মানুষ, মেয়েরা শাক দেখছে, মা-বোনেরা শাক দেখছে; আর তাদের দেখছে ছেলেরা, বখেটা ছেলেরা, বয়েসী বদেরা। প্রচণ্ড গরম পড়ছে, ঘামছে শরীর; চেহারায় চেনা যাচ্ছে না। উপেন এক তাড়ি শাক কিনেছে, হাতে শাক আর কণ্ঠে গান, রূপ তোমার ভেসে গেলো ঘামেরও জলে...
কিবরিয়া গান ধরলো, বাতাস হারিয়ে গেলে রূপসীদের রূপ ধরা যায়...
মেলা দেখা শেষে ওরা সবাই হাসাহাসি করতে করতে বাড়ির পথ ধরলো। হাসির কারণ গুরুত্বপূর্ণ কিছুই, ভূত দেখে আনন্দ লাভ। শহর আলী বন্ধুদের সাথে থাকা সত্ত্বেও কেন ভূত দেখতে পেলো না বুঝলো না।
অতীতে সহজ-সরল মানুষ ভূত দেখতো, এখন দেখে অতি চালকেরা।
=================