ঘূর্ণিঝড় রেমাল
অঙ্কিতা পাল
আজ ২৫ শে মে শনিবার, সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। প্রতিদিনের মতো সেদিনও আমি সকালবেলা উঠেই ছাদ বাগান টি পরিদর্শনে গেলাম , আমার ছাদ বাগান বলতে শুধুই ফুল গাছ। আমার ছাদ বাগানে রয়েছে লাল বাদামি ও সোনালী বর্ণের জবা ফুল, রয়েছে কমলা সাদা হলুদ ও গোলাপি বর্ণের গোলাপ ডালি , রয়েছে কলাবতী নয়ন তারা ও কলা ফুলে ও বাগান বিলাশের সমাহার। যখন আমি তাদের দেখতে যাই তখন মৃদুমন্দ বাতাসের সাথে সামান্য বৃষ্টি রেখা যেন ভূপৃষ্ঠে পতিত হলো। তারপর আমি আমার সকালের কাজ সেরে ঠিক দশটা নাগাদ তাদের কাছে গেলাম, দেখলাম বাতাসের তখন খুব গতি এবং তারা বাতাসে তালে তালে ঘার দোলাচ্ছে । আমি দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে যখন আবার ছাদে গেলাম দেখলাম প্রচন্ড হওয়ার গতিতে , আমার কচি কাগজ ফুলের গাছটির সমস্ত পাতা এবং ফুলগুলো বাতাসের স্রোতে ভেসে চলে যাচ্ছে। তখন আর বিলম্ব না করিয়া আমি তাহাদেরকে আমার দক্ষিণের ঘরে নিয়ে আসি। এখন সেগুলো সেখানেই বর্তমান আছে। আস্তে আস্তে ঝড়ের গতি আরো বাড়তে থাকে, আমাদের অসমাপ্ত ঘর গুলি প্লাস্টিকের আবরণী দ্বারা আবৃত করা হলো। এবার বিকেল চারটে আকাশের বুক চিরে এক কালো মেঘ রাশির প্রচন্ড বিদ্যুৎফুলিঙ্গের ন্যায় ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়তে লাগলো আর তার সাথে ঝড়ো হাওয়া। প্লাস্টিকগুলো তখনো খট মটফট মট করে আওয়াজ হচ্ছে। আমি প্রচন্ড শঙ্কিত হইয়া ঘরে থাকা ফ্রিজ টিভি ও এসির সংযোগ বন্ধ করিয়া দেই। দক্ষিণের ঘরের জালনা দিয়ে দেখি শো শো করে আওয়াজ বইছে, আর তার সাথে বিদ্যুতের চমকানি আর প্রচন্ড বৃষ্টি ধরিত্রীর বুকে নেমে আসছে। এবার আস্তে আস্তে সন্ধ্যে নেমে এলো বাতাসের গতি দ্রুত থেকে দ্রুততর হয়েই চলেছে, মনে মনে ভয় করছে এই ঝড় বৃষ্টি যদি আমাদের ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে বা অসমাপ্ত ঘরের জালনা দিয়ে প্রবেশ করিয়া সবকিছু ছারখার করিয়া লণ্ডভণ্ড করিয়া দেয়। এভাবে শঙ্কিত মনে মনে, ঈশ্বরকে ডাকিতে লাগলাম" হে ভগবান আমাদের পথ বলে দাও।"
নৈশভোজ শেষ করিয়া শুনিতে পাই মেঘের গড়গড় শব্দ বিদ্যুতের চমকানি এবং ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর তাণ্ডব; ঘন্টায় যার গতি একশো থেকে দেড়শ । প্লাস্টিকের আবরণ গুলি খর খর করে ছিড়ে যাইতেছে। বিদ্যুৎ তখন সারা পাড়াতে কোথাও নেই পাড়া নিস্তব্ধ এবং অন্ধকার, সারারাত বসে আছি এবং ভাবছি কি হচ্ছে প্রকৃতির সাথে। রাতে আর ঘুম এলো না বসে বসে ঘুরে ঘুরে কখন যে ভোর হয়ে গেল প্রকৃতি মা শান্ত হল বোঝাই গেল না।
==================================
নাম - অঙ্কিতা পাল
ভাঙড় দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা