গল্প ।। আলোকপ্রভা কুটির ।। প্রনীল মাধব
0
জুলাই ০২, ২০২৪
আলোকপ্রভা কুটির
প্রনীল মাধব
গাছপালা নদীনালা ঝিলে ভরা একটি গ্রাম - বাকচা।সেই গ্রামেরই মন্ডল পরিবার যেন মেলা প্রাঙ্গণ হয়ে উঠেছে।গোটা গ্রামের লোক এসে জড়ো হয়েছে। একটু কৌতুহল হয়ে জানার ইচ্ছে জাগলো প্রদীপের মনে। বাইকটা দুটো বাড়ির আগে রেখে ভিড় সরিয়ে এগোতে লাগলো।এক অষ্টাদশী কন্যা ও বছর একুশের এক যুবক টোটো থেকে নামছে ।যেন রাজকন্যা ও রাজপুত্র অবতরণ করলো। এক পলক দেখার জন্য হিমড়ি খাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।প্রদীপ রতনলালকে কি একটা জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিল।রতনলালের মায়ের হৃদয়বিদারক কান্না দেখে প্রশ্ন করার সাহস হলো না।রতনলালের বাবা ও মা আকাশ ও শ্যামলীকে বুকে জড়িয়ে কেঁদেই চলেছে।"দাদুভাই তুই এতো বড়ো হয়েগেছিস।তোকে চিনতেই পারছি না।"--- রতনলালের বাবা কাঁদতে কাঁদতে এক নিঃশ্বাসে বলতে থাকে।শ্যামলী এইসব কান্ডকারখানা দেখে বারংবার অজ্ঞান হয়ে পড়ল।রতনলালের মা সোহাগে ভরিয়ে দেয় নাতনীর গাল,মুখ,চোখ,কপাল সর্বাঙ্গ।হাঁ করে সবাই দেখতে থাকে।রতনলাল একঘরে বসে কাঁদছে।" বাবা তুমি কাঁদছো কেনো?" -- শ্যামলীর কথায় অকস্মাৎ যেন আকাশ থেকে পড়ল রতনলাল।এই ডাকটি শোনার জন্য সে দীর্ঘ বিশ বছর অপেক্ষার প্রহর গুনছিল।ছয় বছরের নন্দিনী কিছুই বুঝতে পারে না। নতুন দাদা ও দিদি পেয়ে খুব খুশি। নন্দিনীর মা সস্নেহে সতীনের পুত্রকন্যাকে নিজ সন্তানের মতো সেবা শুশ্রূষা করতে লাগলো।সকালের জলযোগ সেরে দুপুরের মধ্যাহ্নভোজে ইলিশ,মাটন, চিংড়ি,দই,মিষ্টি - এক ভোজবাড়ির আয়োজন। অপরাহ্ণ, তিনটে বাজে। ঘড়ির দিকে লক্ষ্য প্রদীপের। সারা পাড়ার মানুষ না খেয়ে পড়ে রয়েছে রতনলালের বাড়িতে।এদিকে শ্যামলী জ্ঞান ফিরে ঠাকুমা,ঠাকুরদা,বাবা,সৎ মায়ের সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে ।মা অসতীর জন্য এত বড়ো সর্বনাশ হয়েছে। কুড়ি বছর পূর্বে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে গোটা পরিবারকে জেলের ভাত খাওয়ায় । ডিভোর্স ও হয়নি তাদের।মেডিক্যাল পড়াশোনার জন্য EWS সার্টিফিকেট আকাশ শ্যামলী বিডিও অফিসে আবেদনের জন্য যায় । সেইসূত্রে প্রদীপ পাত্র সমস্ত নিয়মাবলী বলেন।সেক্ষেত্রে পিতৃ পরিচয় আবশ্যক হয়ে ওঠে ।পিতৃপরিচয়হীন কিশোর কিশোরীর অনাথের মতো জীবনযাপন সত্যিই দুর্বিষহ।আজ যেনো পৃথিবীর সমস্ত সুখ আনন্দ পিতা রতনলালের আলোক প্রভার মতো ছড়িয়ে গেল।
===============================
Vill & PO - Gangasagar
PS - Sagar
Dist - South 24 Pgs
Pin- 743606