নিবন্ধ ।। পিরামিড রহস্য ।। শ্যামল হুদাতী
ছবিঋণ- ইন্টারনেট।
পিরামিড রহস্য
শ্যামল হুদাতী
বন্ধুত্বপূর্ণ ভিনগ্রহীদের কথাও মানুষ কল্পনা করেছে। মানুষের থেকে উন্নত ভিনগ্রহীরা বিভিন্ন সময় পৃথিবীতে এসেছে। মানুষ এবং মানুষকে নানাভাবে সাহায্য করেছে এমনটাও মনে করেন কেউ কেউ। এলিয়েনরা কি মিশরে বা পৃথিবীর অন্য কোথাও পিরামিড তৈরি করতে সাহায্য করেছিল? যদি হ্যাঁ, তাহলে আধুনিক প্রযুক্তি/সরঞ্জাম আজ উপলব্ধ না থাকলে তারা কীভাবে তা করল? পিরামিড, সূর্য মন্দির, ইত্যাদি কি এলিয়েন বা কিছু সুপার সত্তা দ্বারা নির্মিত কারণ বেশিরভাগ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এমন জিনিস যা আমরা কয়েক বছর আগে ও অর্জন করতে পারিনি।
কায়রো থেকে সাহারার বালির ওপর দিয়ে প্রায় ১৫ কিলোমিটার মতো গেলেই বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে যান পর্যটকরা। গিজ়ার গ্রেট পিরামিড দেখার পরে অভিভূত হননি, এমন কেউই বোধ হয় নেই। দর্শকরা স্তম্ভিত হন ১৪৭ মিটার উঁচু ফারাও খুফুর পিরামিডের বিশালত্বে। আর ইজিপশিওলজিস্ট বা মিশর-বিশেষজ্ঞরা অবাক হন ওই পিরামিডের নির্মাণ শৈলির কথা ভেবে।
সত্যিই তো! এ যুগের মতো কোনও যন্ত্রই ছিল না তখন! তবুও কী করে এমন অতিকায় সৌধ তৈরি করেছিলেন প্রাচীন মিশরীয়রা? মনে করা হয় ওই পিরামিডের স্থপতি ছিলেন মিশরের চতুর্থ রাজবংশের রাজকুমার হেমিউনু। মিশরের কয়েকশো মাইলের মধ্যে তো গ্রানাইট এবং চুনাপাথরের তেমন কোনও ভাণ্ডারের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাহলে কোন পথে হেমিউনু প্রায় ২৬ লক্ষ ঘনমিটার পাথর আমদানি করেন ওই চত্বরে?
শুধু গিজ়া কেন, সাক্কারা, লাক্সার এবং মিশরের অন্যত্র ছড়িয়ে থাকা পিরামিডগুলো তৈরিতে যে বিপুল পরিমাণ পাথর লেগেছিল, সেই পাথর যে কী ভাবে এবং কোন পথে সেখানে এসেছিল তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেও কূল-কিনারা পাননি পণ্ডিতরা। অনেকে মনে করেন, বাইরের কোনও জায়গা থেকে জলপথে আনা হয়েছিল পাথর। এই ধারণার নেপথ্য কারণ অবশ্য স্থলপথে পাথর বয়ে আনার চেয়ে জলপথে পাথর আনার পরিশ্রম অনেকটাই কম বলে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, জলপথে পাথর আনার রুট কী? যে জায়গায় পিরামিডগুলো রয়েছে, সেই জায়গা তো নীল নদ থেকে কিছুটা দূরে। তাহলে পিরামিডের নির্মাণস্থলের কাছাকাছি কী ভাবে আনা হয়েছিল পাথর? এরই সম্ভাব্য জবাব পাওয়া গিয়েছে সম্প্রতি। একদল গবেষক খুঁজে পেয়েছেন নীল নদের একটি শাখার। প্রায় ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই শাখাটি বহুকাল আগেই শুকিয়ে গিয়েছিল। তারপর শুকনো নদীখাতটি সাহারার বালিতে চাপা পড়ে গিয়েছিল। অনুমান, সাড়ে চার হাজার বছর আগে ওই নদী যখন 'পূর্ণযৌবনা' ছিল, সেই সময়ে তার ওপর দিয়েই এক এক করে এসে ঢুকত পাথর-বোঝাই জাহাজ। ২৬০০ খ্রিষ্টপূর্ব থেকে ১৭০০ খ্রিষ্টপূর্বের মধ্যে মিশরে পর পর পিরামিড তৈরির নেপথ্যে রয়েছে অনামী ওই নদীর নাব্যতা। পরে নদীটি নাব্যতা হারালে ভাটা পড়ে পিরামিড নির্মাণ।
বহু বছর ধরে বহু গবেষক অক্লান্ত পরিশ্রম করেও যার সন্ধান পাননি, নীল নদের সেই শাখানদীর মরা খাতটা অবশেষে খুঁজে পেলেন এঁরা। মিশরের পিরামিড তৈরির এক অজানা অধ্যায়ের দরজা হয়তো এবারই খুলে যেতে চলেছে।
সাহারার বালিতে চাপা পড়ে কোন কালে শুকিয়ে গিয়েছিল নদীটা। ওই নদীর শুকনো খাতের খোঁজ পাওয়ায় প্রায় চার হাজার বছরের পুরোনো এক প্রহেলিকার ওপর থেকে রহস্যের পর্দা উঠতে চলেছে বলে আশা প্রত্নতত্ত্ববিদদের। পিরামিড তৈরিতে ব্যবহৃত পাথরের বিশাল চাঁইগুলো কোন পথে মিশরে আনিয়েছিলেন ফারাওরা - সেই রহস্যরই হয়তো সমাধান হবে এবার। এতদিন ধরে এর অনেক রকম সম্ভাবনা নিয়েই আলোচনা এবং তর্ক-বিতর্ক চলেছে। কিন্তু গবেষকরা কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি।
সম্প্রতি নর্থ ক্যারোলিনা উইলমিংটন বিশ্ববিদ্যালয় একদল গবেষক আবিষ্কার করেছেন যে পিরামিডগুলো সম্ভবত দীর্ঘকাল আগে হারিয়ে যাওয়া নীল নদের একটি প্রাচীন শাখা বরাবর নির্মিত হয়েছিল। বর্তমানে সেই নীলনদ আজ মরুভূমি ও কৃষি জমির নিচে ঢাকা পড়ে গিয়েছে।
-----------------------------
শ্যামল হুদাতী
৩৫৭/১/১৩/১, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড,
কলকাতা ৭০০০৬৮