গল্প ।। ফড়িং সাইকেল ।। শম্পা পাত্র
ছবিঋণ- ইন্টারনেট।
ফড়িং সাইকেল
শম্পা পাত্র
ঠাম্মা বললো - রথের দড়ি টানা অনেক পুণ্যের,যা একটু ছুঁয়ে হলেও আয়।
আষাঢ় মাস পড়েছে।বাড়ির চারদিকে প্যাচপ্যাচে কাদা।গ্রামের বাড়ি তাই রাস্তায় ড্রেনের ব্যবস্থা নেই।কাগজের নৌকা বানিয়ে ভাসিয়ে দিয়েছি জলে।ঘরের উঠোন থেকে নামতেই গোড়ালি ভিজে গেলো।
ঠাম্মার কথাটা মনে গুনগুন করছিল সারাক্ষন।কি যে করি রথ দেখতেই হবে।অবচেতন বয়সে রথ মায়ের কোলে এক বার গিয়েছিলাম।কিন্তু নিজের জ্ঞান যবে থেকে হয়েছে আমি একবারও রথের মেলায় যাইনি।
বাবা তার এভন সাইকেলটা নিয়ে হেসে হেসে জিজ্ঞেস করলেন - কি রে মুনী রথ দেখতে যাবি নাকি?
এতো যেনো মেঘ না চাইতেই জল। মাথা নেড়ে সম্মতি জানাই যাবো।
হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে পড়লাম জগন্নাথ দেবের রথের দড়ি টানতে ।
পায়রা আঁকা জামাটা আমার সবচেয়ে প্রিয়।সেটাই পরে সাইকেলের সামনের রডে খাঁচায় বসে পড়লাম।
ক্রিং ক্রিং করে আমি বেল বাজাতে থাকি।রাস্তায় লোকের অনেক ভিড়।কেউ গরুর গাড়িতে করে কেউ না হেঁটে রথের মেলার দিকে অগ্রসর হচ্ছে ।যতই কাছে যাচ্ছি ততই যেনো ভিড় বেড়েই যাচ্ছে ।
হরেক রকম মিষ্টি নিয়ে ময়রা দোকান দিয়েছে ।এক বুড়ি আনারস নিয়ে বসেছে ।আনারসের খুব কদর রথে।জিলিপি ও পাপড় ভাজা বিক্রির লম্বা লাইন।
আগে ঠাকুর দেখবি তারপর কেনাকাটা ।বাচ্চাদের হরেক খেলনা দেখে বাবার আঙুল ধরে টানতে থাকি।বাবা কেন কি জানি আমাকে কোলে তুলে অন্য দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ।
মেলার পূর্ব দিকে সার্কাস বসেছিল । একটি ছোট্ট মেয়ে শূন্যে দড়ির উপর হেঁটে যাচ্ছে।দেখে আমি চেঁচিয়ে উঠলাম - এয় বাচ্চা নিচে নাম।পড়ে যাবি ।তোর মা খুব মারবে তোকে ।বাবা বললেন - ওরা পড়বে না।ওরা অনেক প্র্যাকটিস করে ।ওটা ওদের পেশা।লোককে মজা দিয়ে টাকা উপার্জন করা ।
মেয়েটার জন্য আমার মায়া জন্মালো আমার নিষ্পাপ মনে ।চোখে জল এসে গেলো।
বাবা
আমার দুঃখের কথা বুঝতে পেরে আমাকে দক্ষিণ প্রান্তে নিয়ে গেলেন রথ যেখানে
দন্ডায়মান ছিল ।
কি সাংঘাতিক ভিড় রে বাবা।এক ব্রাহ্মণ চামর দিয়ে প্রভু জগন্নাথ দেবকে হওয়া করছেন।কি সুন্দর লাগছে দেখতে।যেনো স্বর্গ থেকে স্বয়ং দেবতা মর্ত্যে এসেছেন।
হঠাৎ কে যেন পেছন থেকে থাক্কা মারলো।মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে গেলাম।বাবা কোনো মতে আমাকে দুই বাহুর মধ্যে সুরক্ষা দিলেন।আমার মাথার একটু আঘাত লাগলো। পেঁ করে কেঁদে থেমে গেলাম ।
রথের দড়ি আর ছোঁয়া হলো না।মালপোয়া আর জিলিপি খেতে খেতে একটা ফড়িং সাইকেল এর দিকে নজর গেল।বাবাকে কেনার নয় জেদ করতে থাকি।
বাবার কাছে সাইকেল কেনার মত টাকা ছিল না ।ওগুলো ভালো নয় মা। সাইকেলে চাপলেই ভেঙে যাবে ।
না বাবা আমাকে ওটাই দাও।বলেই ধুলোতে লুটোপুটি খেতে থাকি।হঠাৎ বৃষ্টি নামলো।হালকা ঝড় হল ।
সাইকেলের কথা ভুলেই গেলাম।রথের চাকা কাদায় মাখামাখি।চাকা আর এক পাও নড়ছে না।বৃষ্টি যখন থামলো তখন অন্ধকার নেমে গেছে ।নিশাচরের মত বাবা সাইকেল চালিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেন।তারপর সজোরে এক গাছে আঘাত লাগে ।অজ্ঞান হয়ে যাই।
জ্ঞান যখন ফিরল তখন মায়ের কোলে।পাশে ফড়িং সাইকেলটা দাঁড়িয়ে।দৌড়ে গিয়ে সাইকেলে চাপি।সাইকেলটা কোথা থেকে আসলো? কে আনলো ? বাবা মা ঠাম্মা কেউ সদুত্তর দিতে পারলনা।আজ ও বিস্ময়ে ভাবি ফড়িং সাইকেলটা কে দিয়েছিল!