Click the image to explore all Offers

ধারাবাহিক গল্প ।। প্রেম ও সংকল্প ।। দীপক কুমার পাল

তিলোত্তমাকে


 প্রেম  ও  সংকল্প 

(তৃতীয় পর্ব)

দীপক কুমার পাল 


' ডাক্তার চন্দ্র আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন,  ধীরেনবাবুর প্রেসার ভয়ানক ফল করেছে মাত্র ৫০

আমি একটা ইনজেকশন দিচ্ছি ধীরেন বাবুকে ।  এটাতে যদি বিশেষ কাজ না হয় তাহলে ওনাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে ।  আমি এখানে খানিক থেকে  দেখি পরিস্থিতিটা কোন দিকে যাচ্ছে  তারপর যা ব্যবস্থা করার করতে হবে এ কথা বলতে বলতেই তিনি ইনজেকশন দিলেন বাবার হাতে ইঞ্জেকশন দিয়ে  তিনি কিছুক্ষণ বাবাকে আরও পরীক্ষা করতে থাকলেন আমি সেই ফাঁকে ডাক্তার বাবুর জন্য চা ও ফ্রেঞ্চ টোস্ট  বানিয়ে ছোট টেবিলে নামিয়ে সামনে দিলাম তিনি খুব খুশী হয়ে বললেন, এই হচ্ছে মা, ঠিক জানে আমি বাড়ী থেকে কিছুই খেয়ে বেরুই নি ।'

          কথা বলতে বলতে ওরা চান্দ্রেয়ীর বাড়ির কাছে এসে পড়েছে সুমন্ত বলল,'বাকি কথাটা তুমি এখানেই বলো আমি শুনবো তারপর তোমাদের বাড়ীতে ঢুকবো এতো কিছু হয়ে গেছে আমি তো ভাবতেই পারছি না ।'' তারপর একসময় বাবা চোখ মেললেন ডাক্তার চন্দ্র প্রেসার দেখে বললেন এখন প্রেসার ১৫০ বাবকে বললেন, কাল সন্ধ্যায় একবার ফোন করলেন না কেন? অনেকদিন প্রেসার চেক করান না, কেন? এদিকে প্রায়  নরমাল হয়ে যাওয়া প্রেসার একই ওষুধ প্রতিদিন খেয়ে যাওয়ার ফলে কোনো কারণে প্রেসার লো হতে হতে একেবারে ডেঞ্জার জোনে পৌঁছে গেছে মেয়ে খবর না দিলে কিহতো?'

      তারপর এটাচি কেস খুলে প্রেসক্রিপশন প্যাড বার করে খস্ খস্ করে প্রেসক্রিপশন লিখে আমার হাতে দিয়ে  বললেন, এখুনি এই ওষুধগুলো অনিয়ে নিয়ে খাওয়াতে থাকো ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে মাঝে আমি একদিন নাহয় দেখে যাবো আমি তাহলে এখন আসি, বলে ডাক্তার চন্দ্র চলে গেলেন

            সুমন্ত চন্দ্রেযীর পেছন পেছন ওদের ঘরে প্রবেশ করলো ভিতরে ঢুকে চেয়ারে বসা মাকে ও খাটে শোয়া বাবাকে উদ্দেশ্যে করে চান্দ্রেয়ী সুমন্তর পরিচয় দিয়ে বলল, -' এই হচ্ছে সুমন্ত এবার বি কম্ ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে আমার  খুব ভালো বন্ধু ।' চান্দ্রেয়ীর বাবা আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে মেয়ের মুখের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন চান্দ্রেয়ীর মা, -' এ সেই ছেলেটাগো যে সমু বাসে উঠতে গিয়ে ছাতাটা রাস্তায় পড়ে গিয়েছিল, সেই ছাতাটা নিয়ে চলন্ত বাসে উঠে সমুকে ছাতাটা ফিরিয়ে দিয়েছিল ।' -' ও আচ্ছা আচ্ছা বুঝলাম বস ওই চেয়ারটা টেনে এনে ভাল আছ তো?' -' হ্যাঁ কাকু ভাল আছি ।' সুমন্ত খুব লজ্জা পাচ্ছিল আসলে সুমন্ত চলন্ত বাসে ওঠা নামায় অভ্যস্ত চান্দ্রেয়ীর মা সুমন্তকে এবার বলল,-'  আচ্ছা তুমি তো এবার বি কম্  পরীক্ষা দিয়েছ, পাশ করে কি করবে ঠিক করেছ, লেখাপড়া চালিয়ে যাবে?'

-' না কাকিমা, একটা চাকরির চেষ্টা করবো এখন কারণ বাবার ওপর চাপ কমাতে আমার এখন একটা চাকরির খুব প্রয়োজন পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোতে এখনো অনেক দেরী তাই আমি একটা ভালো ইন্সটিটিউটে টাইপ শর্টহ্যান্ড ক্লাসে ভর্তি হয়েছি পড়াশোনার সাথে এটাও চালিয়ে যাব ঠিক করেছি চাকরি যদি পাই ভালো না হয় লেখাপাড়াটাই চালিয়ে যাব ।' 

' এটাতো খুব ভালো ডিসিসন ।'

' চাকরী পেলে আমি প্রাইভেটে এম কম্ পরীক্ষা দেবো তার জন্য এখন থেকেই প্রিপারেশন নিচ্ছি ।' 

' প্রাইভেটে এম কম্  পরীক্ষা পাশ করতে গেলে শুধু ভালো পরীক্ষা দিলেই হয় না ভগবানের আশীর্বাদও

তার সাথে প্রয়োজন বুঝলে l'  চান্দ্রেয়ির বাবা কপাল দেখিয়ে এ কথা বললেন l

হ্যাঁ কাকু আমি জানি, ২ ৩ পার্সেন্টের বেশি পাশ করে না l খাতা না দেখেই নাকি নাম্বার দেওয়া হয় l'

তবে বলি শোনো l তখন নকশাল আন্দোলন প্রায় স্তিমিত l আমরা পাঁচ বন্ধু মিলে ঠিক করলাম যে

প্রাইভেটে এম কম্ পরীক্ষা দেবো l সেই ভাবে আমরা একটু একটু করে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম l এরপর আরও এক বন্ধু আমাদের সাথে যোগ দিলো ও সে ছিল রেগুলার ক্যান্ডিডেট l চাকরীর সূত্রে সে ঠিক

ঠাক ইভিনিং ক্লাস করতে পারত না l তার ফলে তার পক্ষে পড়া ফলো করা সম্ভব হচ্ছিলনা l তাতে করে

তার ধারণা হলো এম কম্ খুব কঠিন পরীক্ষায় সে পাশ করতে পারবে না তাই পরীক্ষা দেওয়া বেকার l

কিন্তু আমাদের উৎসাহ দেখে এবং একটু দেখে নিয়ে ভাবলো পরীক্ষাটা দেয়াই যায় l ব্যস শুরু করে দিলো আমাদের কাছে প্রাথমিকটা শিখে নিয়ে আমাদের সাথে শনিবার ও রবিবার কোচিং ক্লাস করা  ' 

সবাই আমরা বেশ সিরিয়াস l পরীক্ষা শুরু হলো l  আমার ঠিক পাশেই সেই রেগুলার ক্যান্ডিডেট বসায় 

ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যাসি, স্ট্যাটিসটিক্স কিছু কিছু আমার খাতা থেকে দেখে লেখে l অবশ্য আমিই 

তাকে সুযোগ দিয়েছি l  অ্যাকাউন্টেন্সি পরীক্ষার দিন আমায় একটু বাথরুমে যেতে বলল l সেখানে যেতেই আমাকে বলে আমার ব্যালেন্স শিট মিলছে না l আমি ফেল করে যাব l আমি সদ্য তখন ব্যালেন্স

শিট মিলিয়ে এসেছি একবারে l তাই মনটা বেশ ভালো ছিল l অমাকে বলে প্রশ্নপত্রের শেষে অংকটা করে দিতে l ভাবলাম এত বড় একটা অংক কি করে করবো l খুবই সংক্ষিপ্ত করে ট্রেডিং, প্রফিট এন্ড লস একাউন্ট এন্ড ব্যালেন্স শিট মিলিয়ে দিলাম l  এবার যখন রেজাল্ট বেরোলো তখন দেখি পাশের হার রেগুলার ক্যান্ডিডেট ৮৬% আর প্রাইভেট ২% l সেই রেগুলার ক্যান্ডিডেট পাশ আর আমরা পাঁচ

জন প্রাইভেট ক্যান্ডিডেট সব ফেল l আমাদের ৬ জনের মধ্যে সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রটাও ফেল l কি আর

বলব, ঘেন্না ধরে গেলো l ' একসঙ্গে এত কথা বলে তিনি শুয়ে পড়লেন l ক্লান্ত হলেন মনে হয় l সদ্য তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন l এদিকে চান্দ্রেয়ী ট্রেতে চার কাপ চা ও একটা বড় প্লেটে দু তিনরকমের বিস্কুট নিয়ে হাজির l ওগুলো টেবিলের ওপর রাখতেই সুমন্ত বলে উঠলো,

'আরে আমিতো সকালে চা সমেত ব্রেকফাস্ট করে এসেছি l এখন আবার চা খাবো?'

'হ্যাঁ খাবেন l আমরাওতো চা ব্রেকফাস্ট করেছি l আর একবারে করলে কি কোনো দোষ আছে?'

' আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে l'  সুমন্ত এক কাপ চা তুলে নিলো ট্রে থেকে সঙ্গে একটা বিস্কুট l

             চান্দ্রেয়ী এক কাপ চা ও দুটো বিস্কুট নিয়ে কাকুর কাছে গিয়ে কাকুকে ডেকে তার হাতে দিলো l

' বাহ্, চমৎকার হয়েছে চা টা l ধন্যবাদ চন্দ্রেয়ী l'  সুমন্তর প্রশংসা শুনে সে বলল,

' আমার সৌভাগ্য, ধন্যবাদ আর প্রশংসা দুটোই একসাথে পেলাম l'চান্দ্রেয়ীর কথায় কাকিমা হাসলেন,

' জান সুমন্ত, তোমার কাকু অসুস্থ হওয়ার পর সমুর ওপর দিয়ে যা যাচ্ছে তা আর বলার নয় l বাবার 

ওষুধ আনা ঠিক ঠিক সময়ে বাবাকে ওষুধ খাওয়ানো ও ডাক্তারকে রিপোর্ট দেওয়া, বাবাকে স্নান করান 

ভাত খাওয়ানো,  দোকান বাজার করা আমার সাথে রান্নাঘরের কাজ করা ইত্যাদি নানা রকম কাজ করে নিজের পড়াশোনা ফাঁকে ফাঁকে করা এ কম কথা নয় l' 

' মা তুমি এত কথা বলো নাতো l যা করা উচিত তাইতো করেছি l এটা মোটেই বেশি কিছু না l আমার অসুখ করলে তুমি করো না ?'  সুমন্ত চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ে বলে,

'কাকু কাকিমা, এবার আমি আসি কেমন l'

' আচ্ছা এসো, সময় করে আবার এসো কেমন l'

' নিশ্চয় আবার আসবো '

              সুমন্ত বেরোতেই পেছন পেছন চন্দ্রেযীও বেরিয়ে এলো l সুমন্ত গেটের বাইরে পা রাখতেই সে বলে উঠলো, ' জানো সুমন্ত, এইরে তুমি বলে ফেললাম, তুমি আসাতে মা বাবা খুব খুশী হয়েছেন l'

' আহা কানে যেন আমার মধু বর্ষিত হলো সমু ।' বলেই একলাফে সুমন্ত উধাও । 

  চলবে...

Address :-

—-----------

Dipak Kumar Paul,

DTC Southern Heights

Block-8, Fla-1B

D.H.Road, kol - 700104

  •  

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.