Click the image to explore all Offers

গল্প ।। প্রাণভরা ভালোবাসা ।। অঙ্কিতা পাল



 

প্রাণভরা ভালোবাসা 

 অঙ্কিতা পাল  


শরৎ এসেছে মোদের দ্বারে, আকাশে বাতাসে আজ আগমনী সুর। মহালয়া কেটে গেছে প্রায় চার দিন হয়ে গেছে।

আজ মহাপঞ্চমী ভাবলাম নতুন বউকে নিয়ে সন্ধ্যেবেলা ঠাকুর দেখে আসি, আমাদের বিয়ে হয়েছে প্রায় চার মাস। আমি আকাশ, বসে আছি আমার রাস্তার দিকের ঝুল বারান্দায়।
সেখান থেকে আমার পাড়ার দুর্গাপুজো আলোকসজ্জা স্পষ্ট ভাবে দেখা যায়, মনে হয় যেন আমার বাড়িতেই পুজো হচ্ছে।

মধুমিতা অর্থাৎ আমার স্ত্রী এক কাপ চা হাতে নিয়ে সামনে দাঁড়াল - চা খাও। 
আমি তার হাত থেকে চা নিয়ে পেয়ালায় চুমুক দিয়ে বললাম- ঠাকুর দেখতে যাব তৈরি হয়ে এসো। আমার কথা শুনে মাথা নিচু করে লজ্জায় লাল হয়ে চলে গেল। আমি চায়ের কাপটা টেবিলের উপরে রাখতে যাব, এমন সময় ওই ঘর থেকে মা ও বউ এর কিছু কথা কানে ভেসে এলো। লজ্জায় রাঙা বৌ আমার মাকে আবদারের সুরে বলছে, ও আমায় ঠাকুর দেখতে নিয়ে যেতে চায়। মা হাসতে হাসতে বললেন- যাও। সেও অমনি আদুরে কণ্ঠে বলে ওঠে , আপনি যাবেন।
মা মৃদু হেসে না সূচক সুরে বলেন, তোমরা ঘুরে এসো।
মায়ের কথা মতো সে লাল রঙের শাড়ি পরে মাথায় লাল ফুল দিয়ে নববধূর সাথে আমার সাথে ঠাকুর দেখতে এলো।
আমাদের বাড়ি শ্যামবাজারের ছোট গলির মধ্যে, বাড়িতে আমি, মা ও মধুমিতাকে নিয়ে মোট তিনজন। আপাতত সুখের কাট ছিল দিনগুলি।  
দুজনে মিলে ঠাকুর দেখছি, মধুমিতা গ্রামের সহজ সরল মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে শহুরে আদব কায়দা চাকচিক্য আলোকসজ্জা সুন্দর সুন্দর প্রতিমা তার মনকে মুগ্ধ করে দিল। আমি তাকে আইসক্রিম ও ফুচকা খাওয়ার জন্য প্রস্তাব দিলাম কিন্তু আমার লজ্জা রাঙা বউ চুপ করে রইল। কিছুক্ষণ ঠাকুর দেখার পর দুজনে মিলে কিছু ছবি তুললাম।
 
বাড়িতে ফিরব ঠিক এমন সময় রাস্তার উল্টো দিকের মেয়েটিকে দেখে আমার মনে যেন কিঞ্চিত ঝিলিক দিয়ে ওঠে, সারা শরীরে যেন শিহরণ জাগে।

সে যে আমার হারিয়ে যাওয়া শ্বেতা•••••

ফিরে যাচ্ছি দশ বছর আগের কথায় , আমি তখন কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
সে বছর কলেজে খুব ধুমধাম করে নবীর বরণ পালন করা হয়েছিল; সেখানে একজন প্রথম বর্ষের ছাত্রী সাদা শাড়ি পড়ে চমৎকার গান গেয়েছিল - " সেদিন দুজনে দুলে ছিল বনে" । সেই গানটি আমার মনে যেন দাগ কেটে দিয়ে গেল, আমার হৃদয় ব্যাকুল হয়ে উঠল তার প্রতি।
এভাবে কিছুদিন কেটে গেল কেটে গেল কিছু মাস•••••••••••

একদিন হঠাৎই তার সাথে দেখা মনে হলো সে ও যেন এক পলক আমার দিকে চেয়ে রইল,সে দুই এক মিনিট সময় মুহূর্তের মধ্যে কেটে গেল।

প্রতিদিনই মনে মনে ভাবি তার সাথে একদিনই দেখা করব তাকে নিজের মনের কথা উজাড় করে দেব।

অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান -
আজ ১৪ ই ফেব্রুয়ারি ভালবাসার দিন, আমি ভালোবাসা নিবেদনএর জন্য একগুচ্ছ লাল গোলাপ কিনে নিয়ে ক্রমশ এগিয়ে গেলাম তার দিকে, প্রশ্ন করলাম - Do you love me ? I really love you• সে ও হাসি মুখে আমার প্রেমের প্রস্তাব গ্রহণ করল,  মনটা আনন্দে ও খুশিতে ভরে উঠল তক্ষুনি।

কিন্তু ভাগ্যের কি নিষ্ঠুর পরিহাস আমার সে প্রেম সেদিন ব্যর্থ হয়ে গেল;
কোথা থেকে এক ধনী পরিবারের ছেলে এসে প্রস্তাব দিতেই সে রাজি হয়ে  তার হাত ধরে চলে যায় এবং দুজনেই আমাকে বিদ্রুপ করে হাহা করে  হাসতে শুরু করে। কারণ আমি সেদিন এক দরিদ্র পরিবারের ছেলে ছিলাম।

যাই হোক সেই ধাক্কা আমাকে অনেকটা অগ্রগতির দিকে টেনে নিয়ে যায়, আমিও অত্যন্ত সফলতার সাথে মহাবিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয় এ উত্তীর্ণ হয়ে কলেজের অধ্যাপনার কাজে নিযুক্ত হয়েছি।
তাই আজও মনে মনে ভাবি, সেদিন শ্বেতা যদি জীবনে ধাক্কা না দিতো তাহলে হয়তো এত বড় হতে পারতাম না কোনদিনও।

কিন্তু আজ দশ বছর পরে তাকে দেখে আমার করুণা হচ্ছে কারণ আপামোর বাঙালির প্রাণের পুজোতে সে এক শীর্ণ জীর্ণ পোশাকে রাস্তার ওপাশে হেঁটে চলেছে নিজের মতো।

পথ চলতে চলতে আলোক বর্ণমালায় হঠাৎ চোখে পরলো আমার স্ত্রী মধুমিতা সারল্য এবং তার অনন্য রূপ।
তাই নিজের মনের অতীতকে দূরে সরিয়ে রেখে, প্রাণ ভরা ভালবাসা নিয়ে বলতে ইচ্ছে করে- মধুমিতা তুমি শুধু আমার।

চিত্র ঋণ - ইন্টারনেট


============================
নাম - অঙ্কিতা পাল

Bhangar,  south 24 Parganas

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.