বন্ধু ও বন্ধুত্ব
ইয়াসমিন বানু
'বন্ধু ' আর 'বন্ধুত্ব ' দুটো খুব কাছের শব্দ।
কিন্তু যদি একটু ভেবে দেখি, তো এদুয়ের মাঝে বেশ অন্তর রয়েছে, আছে অন্তরের ব্যাবধান । বন্ধু তো অনেকেই হয়।তাদের সাথে হাসি, মজা, ইয়ার্কি, কত দেওয়া নেওয়া ....... অবসর কাটানো আরো কত কী,,,,,,,,
এ যেন নিছক বন্ধুত্বে ক্ষণস্থায়ী আনন্দ আহরণ।।
আর এসবের অনেক অনেক ওপরে গিয়ে, একেবারে নিঃস্বার্থ, চাওয়াপাওয়াহীন, শুধুমাত্র প্রতিদিনের জীবনের একঘেয়েমি আর বদ্ধতার এক নিষ্কলুষ ফোকর খুঁজে নিতে দুই বন্ধুর সম্পর্কই হল ব্যাপক অর্থে "বন্ধুত্ব "। তাই - ই বোধহয় "বন্ধু " অনেক, শক্তিশালী "বন্ধুত্ব " গুটি কয়েক।
এই ফোকরে শুধু নির্মল শ্বাসবায়ু, যা মনের প্রতিটা প্রকোষ্ঠে ঢুকে টেনে বার করে মলিনতা, আর শুদ্ধ করে আবার পাঠায় নিজ জায়গায়।
বন্ধুত্ব পুরুষে পুরুষে, নারীতে নারীতে আর নারীতে পুরুষে। তবে প্রাকৃতিক নির্বাচনে 'নারীতে - পুরুষে ' বন্ধুত্ব বোধহয় সবথেকে শৈল্পিক।। 💐💐
শিল্প মানেই সৃষ্টি, আর সৃষ্টির আনন্দ।। তাই এই " বন্ধুত্ব " শিল্পের আনন্দকে ধরে রাখতে দরকার মনের গভীরতা বা গাঢ়ত্ব।।
বন্ধুত্বের গভীরতা কখনও সান্নিধ্যে, কখনও দূরত্বে বাড়ে।। অনেককেই দেখা যায় রোজকারের পারিবারিক আর বাইরের কাজ সুন্দরভাবে গুছিয়ে প্রায় নিয়মমাফিক একটা সময় বের করে বেরিয়ে আসে তার "মনের " বন্ধুটির জন্য। আবার কেউ কেউ মাসের পর মাস, বছরের পর বছর পরস্পরের কাছে না এসে শুধুমাত্র তীক্ষ্ণ লেখনীর মধ্য দিয়ে কল্পনায় তৈরি করে স্বচ্ছ এক বাইরের "পথ"। যে পথ তাদের নিয়ে ঘুরিয়ে নাকাল করে ফেলে আসা শৈশব, কৈশোর থেকে বর্তমানে। তাতেই বোধহয় এক অদ্ভুত ভালো লাগার অনুভূতি। যা অন্তত কিছুটা হলেও বর্তমান জীবনের অসার, ক্লান্ত, ব্যর্থ, হারানো জায়গাগুলোতে উষ্ণতা এনে দেয়। কোনোটাই কিন্তু দোষের নয়।
আজ জীবনের অর্ধেকের বেশি পথ পেরিয়ে এসে একটা চরম উপলব্ধি হয়েছে। মানুষের জীবনের একটা সময়ে নিজের পরিবার, একান্ত প্রিয় নিজের জন, এসবের বাইরেও অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন মনের এক "বন্ধু " র "বন্ধুত্ব" ভীষণভাবে দরকার। যে হবে ফেলে আসা বা বর্তমান জীবনের স্পর্শকাতর
জায়গাগুলোর নিষ্কলুষ, বলিষ্ঠ অবলম্বন। যেখানে আশা থাকবে না কোনো প্রাপ্তির , শুধুই মনের তৃপ্তির.........। যাকে পরিচিতির সময়ের দৈর্ঘ্যে সীমায়িত করা যাবে না। যাকে গুরুত্বের গভীরতায় সংজ্ঞায়িত করা যাবে।
জানি না কজন এমন বন্ধুর সাথে বন্ধুত্ব ধরে রাখার সৌভাগ্য লাভ করে।।।।
=========================================
কলকাতা, বেকবাগান