চিত্র ঋণ - ইন্টারনেট
স্বর্গ সমাচার
- প্রবোধ কুমার মৃধা
( এক জীবিত ও এক মৃতের মধ্যে স্বপ্নে কাল্পনিক কথোপকথন)
সদাশিব --- Hello অমর, তোমার ওখানকার ব্যবস্থাপনা কেমন,বলবে একটু।
অমর ---- OK. এখানে দুঃখ নেই, দারিদ্র নেই, নেই চোখের জল; প্রেম আছে, বিরহ নেই। আছে কেবল আনন্দ আর আনন্দ।
---- তাহলে মানুষ ওখানে কি নিয়ে আছে?
---- মানুষ নয়তো,সব দেবতা।
---- ওই জন্যই সইতে পারে অমন ধারা।
---- খারাপ কি বুঝলে?
---- ভালো অপেক্ষা খারাপই তো বেশি বুঝছি। পাওয়া আছে, পাওয়ার আকাঙ্খা নেই, প্রেম আছে,বিরহ নেই,হাসি আছে,কান্না নেই -- এমন একতরফা একঘেয়েমি কতদিন সহ্য করা যায়?
---- এখানে কেউ কিন্তু ও-কথা চিন্তায় আনে না। তুমি এখানে এলে এখানকার মতো হয়ে যাবে, তখন তুমিও অন্য রকম চিন্তা করতে ভুলে যাবে।
---- ওখানে আমার যাওয়া হবে না!
---- কেন, বাধা কোথায়?
---- তোমাদের মতো তেমন সৎ কর্মফল আমার নেই।
---- মানে?
---- বুঝতে পারলে না! স্বর্গসুখ ভোগ তারাই করে,মর্তবাসকালে যাদের পুণ্য অর্জনের পুঁজি থাকে,যা আমার নেই।
---- কি করে বুঝলে তোমার নেই?
---- কর্ম তো আমি করছি, তার উচিত - অনুচিত নিজে বুঝতে পারব না?
---- কর্ম তোমার বটে, ফল তো তোমার নয়! তার পাপ- পুণ্য, ভালো - মন্দ,ন্যায়-অন্যায় নির্ধারণের কর্তা তথা কর্মের ফলদাতা তো এখানেই বাস করেন।
---- সেই কারণেই তো ওখানে যাওয়া সম্ভব নয।
---- কী অসুবিধে?
---- অন্য কেউ দায়িত্বে থাকলে উপঢৌকনাদি দিয়ে একটা ব্যবস্থা করে নেবার সুযোগ থাকতো, কিন্তু...।
---- কোনো কিন্তু নেই। এখানেও হালে পরিবর্তনের হাওয়া প্রবল। প্রচলিত বিধি ভেঙে বিধি বহির্ভূত কাজ কারবার ঘটছে মাঝে মধ্যে।
গত স্বর্গসভা নির্বাচনে ' দৈত্যদল' বেশ কয়েকটা আসন প্রায় ছিনিয়ে নিয়েছিল। তারপর থেকে শাসকদল তথা ' দেবতা সংঘ' তাদের দেবানুক্রমে ভোগ করে আসা মৌরসি পাট্টার বিধি বিধান কিছুটা শিথিল করতে বাধ্য হয়েছে।
---- ক্ষমতায় টিকে থাকার কৌশল।রক্তমুখো বাঘের মতো ক্ষমতার স্বাদ একবার পেয়ে গেলে, ধরে রাখতে নানা ছলা-কলার আশ্রয় অবলম্বন আর কি!
---- সে যাই বলো! ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা ক্ষমতাবানরাই করে থাকেন।ক্ষমতার বাইরে থাকা কারও পক্ষে ও-জিনিসের মর্ম বোঝা সম্ভব নয়।
---- তবে এটা বুঝি যে, বাধ্য না হলে ইচ্ছা করে কেউ ক্ষমতা ছাড়তে সম্মত হবে না।অধিক ক্ষমতা লাভের উদ্দেশ্যে অল্প ক্ষমতা ছাড়াটাই বুদ্ধিমানের কৌশল।
---- তোমার ধারণার সারবত্ত্বা আছে। দিনের পর দিন বিরোধী পক্ষের চাপ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। মিটিং, মিছিল, আন্দোলন, অবরোধ প্রায় লেগেই আছে। কৈলাসধাম, বৈকুণ্ঠধাম,যক্ষপুরী প্রভৃতি বেশ কয়েকটি দেবসভা কেন্দ্রে ' দেবতা সংঘের' প্রার্থীগণ খুব কম মার্জিনে নিজেদের আসন টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
শাসকদলের প্রবল বিরোধিতা,প্রচারে বাধা, হাজারো বিধি-নিষেধ আরোপ সত্ত্বেও দৈত্যদের ভোট প্রাপ্তির হারকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। স্বাধীনভাবে প্রচারের সুযোগ পেলে এবং ভোটে কারচুপি না হলে ভোটের ফলাফলে তারতম্য ঘটায় প্রবল সম্ভাবনা ছিল। একমাত্র ইন্দ্র পুরী আসনটিতে শাসকদলের আশানুরূপ আধিপত্য বজায় আছে।যদিও দেবরাজ ইন্দ্রকে সরিয়ে যুবরাজ জয়ন্তকে স্বর্গসিংহাসনে বসাবার দাবি দিন দিন জোরালো হচ্ছে।
---- ব্রহ্মান্ডের কোথাও জনজীবনে নিরাপত্তা নেই, শান্তি নেই, স্বস্তি নেই; সর্বত্রই ক্ষমতা লাভের এবং ক্ষমতা ভোগের প্রতিদ্বন্দ্বিতা অব্যাহত।রাজায় রাজায় চলছে লড়াই, ফলস্বরূপ প্রজাসাধারণের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ।
---- আঞ্চলিক দেব-দেবীগণকে যেভাবে কুলীন দেব-দেবীর সমাজ থেকে ব্রাত্য করে রাখা হয়েছে তাতে অকুলীন দেব সমাজে একটা চাপা ক্ষোভ ভিতরে ভিতরে চোরা স্রোতের মতো বইতে শুরু করেছে।
বিষয়টা আজ আর কারো অজানা নেই। আঞ্চলিক দেব-দেবীদের অনেকেই দৈত্যদলের নেতৃস্থানীয়দের সাথে গোপনে গোপনে যোগাযোগ রেখে চলেছেন।ইস্যুটি বর্তমান শাসকশ্রেণির গভীর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো অসুর এবং দানবদেরকেও শর্তসাপেক্ষে পক্ষে টানতে পেরেছে বিরোধীরা। সবাই মিলে একটা ফ্রন্ট গঠনে সফল হয়েছে।
---- এভাবে বহুদিন যাবত দৈত্যদের ন্যায্য অধিকার অর্থাৎ তাদের পিতৃ সম্পত্তির সত্ত্বভোগ থেকে বঞ্চিত করে রাখাটা সম্পূর্ণ বেআইনি। তাছাড়া দেবতাগণ একটানা ক্ষমতার শীর্ষে অবস্থান করার ফলে তাঁদের মানসিকতায় এবং কার্যে স্বৈরাচারী লক্ষণ স্পষ্ট। সেটাই স্বাভাবিক। ইতিহাস,পুরাণ তার সাক্ষ্য বহন করে।
পক্ষান্তরে আমদেবতাগণ একঘেয়েমি কাটাতে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার পথে হাঁটতে শুরু করেন আর তখনই শাসকের দমনপীড়ন আরম্ভ হয় নির্মমভাবে।অবাধ্য দেবতাদেরকে বাধ্য রাখতে চলতে থাকে ক্ষমতার বুলডোজার।
---- হ্যাঁ ব্রাদার। এটি একটি সংক্রামক ব্যাধির মতো।স্বদেশে-বিদেশে, স্বর্গে-মর্তে সর্বত্রই এক ছবি। ক্ষমতায় টিকে থাকার অভিলাষে যত রকম হীন ও অবৈধ কলা-কৌশল অবলম্বন করা সম্ভব তার চেষ্টা থাকে অব্যাহত। বিধি বহির্ভূত ভর্তুকি প্রদান, প্রয়োজনে ভীতীপ্রদর্শন,মিথ্যে মোকদ্দমায় ঝুলিয়ে দেওয়া, এমন কি, পেশাদার খুনি লাগিয়ে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া প্রভৃতি তাৎক্ষণিক পদ্ধতিগুলির অনুশীলন জরুরি হয়ে দেখা দেয়।
---- কাজ নেই ভাই! এখানে -ওখানে, উপরে -নিচে, সবখানে যখন একই অবস্থা, তখন জন্মান্তর নিয়ে তোমাদের স্বর্গসুখ চাই না।যে-ক'টা দিন বাঁচি, রক্তমাংসের মানুষ হয়ে জাগতিক সুখ-দুঃখ,হাসি-কান্না,মিলন-বিরহের মাঝে এই মাটির পৃথিবীর মায়ার বাঁধনে আবদ্ধ হয়ে কাটিয়ে দিতে চাই। শুভেচ্ছা রইল।
==========================