স্যালুট তোমাদের
অশোক দাশ
অনন্যা আমি একটু জয়নগর থেকে ঘুরে আসি।
কেন এই বৃষ্টি বাদলে আর বাইরে যাবে? যাও যদি রেইনকোট টা পরে যাও।
ঠিক আছে রেইনকোট ব্যগে থাক, আর দুই একটা বাজারের ব্যাগ দাও। যদি কিছু খাদ্য সামগ্রী নিয়ে আসা যায়।
দামোদর ফুঁসছে। চারিদিক জল থৈ থৈ করছে। উদয়নারায়নপুর আমতা সব প্লাবিত । বানভাসি আর্ত মানুষজন আশ্রয়ের সন্ধানে, একটু খাবারের জন্য ত্রাণ শিবিরে ভীড় জমাচ্ছে।
সবেমাত্র মোহন বাবু জয়নগর ব্রিজের কাছে এসে পৌঁছেছেন। চারিদিকে কোলাহল । সবাই উদ্বেগের সাথে, ব্রিজের রেলিংয়ে ঝুঁকে পড়ে প্রবাহিত উত্তাল দামোদরের জলে কি যেন দেখে চলেছে।
শশব্যস্ত অবস্থায় আমিও পড়ি মরি করে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম, আগনা গ্রামের এক গৃহবধূ দামোদরে স্নান করতে নেমে স্রোতে ভেসে গিয়েছে। এখন এখানে ভেসে যাচ্ছে। কেহ কেহ দড়ি ঝুলিয়ে তার সামনে ফেলার চেষ্টা করছে কিন্তু কোনমতেই প্রবল স্রোতে সে দড়ির নাগাল পাচ্ছে না। ডুবছে ভাসছে হাত তুলে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। বাঁচাবার জন্য যেন আকুল আবেদন জানাচ্ছে। সবাই হায় হায় করছে। অসহায়ের মতো একজন মৃত্যু পথযাত্রীকে বাঁচাবার সাহসে কুলাচ্ছে না কারোই।
ইতিমধ্যে সংবাদ পেয়ে আকনা গ্রামের দুইজন যুবক মোটরবাইকে করে এসে, ব্রিজের পাশে গাড়ি রেখেই ব্রিজের উপর থেকে উত্তাল দামোদরের বুকে ঝাঁপ দেয়। নিজেদের জীবন পণ করে ভাসমান গৃহবধূকে ধরার চেষ্টা করে কিন্তু কোনভাবেই নাগালের মধ্যে আনতে পারে না, হাল ছেড়ে না দিয়ে দীর্ঘ চার কিলোমিটার সাঁতারে দুর্বার স্রোত কে পরাস্ত করে অবশেষে গৃহবধূকে উদ্ধার করে।
সাথে সাথে তাঁকে উদয়নারায়নপুর স্টেট হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং গৃহবধূর প্রাণ বাঁচে।
বাড়ি ফিরে মোহন বাবু তার স্ত্রীকে এই ঘটনা জানান এবং বলতে থাকেন, যেন অনন্যা এখনো মানুষ আছে মানুষের পাশে। এখনো মনুষ্যত্ব মানবতা শেষ হয়ে যায়নি। নিজেদের জীবন বিপন্ন করে অপরের প্রাণ বাঁচায়, নিজে চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতে পারতাম না। এভাবেই তোমরা বেঁচে থাকো মানুষের মধ্যে। হাজারো স্যালুট তোমাদের।
=================================
চিত্র ঋণ - ইন্টারনেট
অশোক দাশ
ভোজান, রসপুর, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত