গল্প।। অসঙ্গতি।। প্রতীক মিত্র
অসঙ্গতি
প্রতীক মিত্র
ট্রেন আপাতত বন্ধ।চোখের সামনেই। অপরাধী একটা মা কুকুর। বেনিয়মটা ওই করলো।ফলে যেটা হওয়ার নয় সেটাই হল। গাড়ি এই লাইনে সাধারণত সময়ে নিয়ম মেনে যায় না। এই সকালেই গেল অনেকদিন পর। মা কুকুরকেও তখনই লাইন পেরোতে হত। তার পেছন পেছন গেল তার ছানাপোনারা। সেখানেও তারা নিয়মের খেলাপ করেনি। মায়ের বাধ্য না হলে কি চলে?বড্ড পেটুক।খালি খেতে চাইতো।ছোটো তো দুধ ছাড়া কিছু খেতে পারতো না। কিন্তু তার জন্য মাকেও তো খেতে হবে।মা রেল বস্তির আশেপাশে থেকে কতটুকুই বা আর খাবার পাবে?ফলে যা হওয়ার তাই হল। একটাও বাঁচলো না।মুন্ডুহীন বাচ্চাগুলো লাইনেই পড়ে ছিল। মা কুকুর অদ্ভুত একটা উদাসীনতা নিয়ে বসেছিল একটু দুরে। বোধ হয় গোটা পরিস্থিতিটাকে ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারছিলো না। আমরা গুটিকয়েক যাত্রী যারা ছিলাম। কেউই গোটা বিষয়টা নিতে পারছিলাম না। যদিও আমাদের বিশেষ কিছুই করার ছিল না।নিয়মের দোহাই দিয়েই এরপর একটা দুটো দুরপাল্লার ট্রেন গেল। মা কুকুর তখন একটু দুরে। ট্রেন চলে যেতে বাচ্চাগুলোর শরীর আরো ছিন্নভিন্ন হলে মা আবার ফিরে আসে। কাকগুলোও নিয়মের দোহাই দিয়েই হাজির হল সেখানে। এমন ভোজের ব্যবস্থা কোথ্থেকেই বা জুটবে তাদের কাছে? ছোট্টো শরীর, কচি; খেতে সুস্বাদু হবে! কোনো একটা কাটা টুকরো মুখ দিয়ে টানতেই বেনিয়ম করলো মা কুকুর। তেড়ে গেল কাকগুলোর দিকে। আমাদের জন্য এইসব ততক্ষণে সহ্যের সীমা ছাড়িয়েছে। আমরা দু'একজন যাদের হাঁটুর অবস্থা একটু ভালো লাইনে নামলাম। মৃত বাচ্চাগুলোকে সরাতে। মা কুকুর কিছুতেই সরে না। উলটে চোখেমুখে তার অদ্ভুত হিংস্রতা। ভাবখানা এমন যে লড়াই অসম পরাজয়ের হলেও লড়াই সে ছাড়বে না। ট্রেন তারপর থেকে থেমে আছে। মা কুকুরকে কিভাবে সামলানো যায় সেটাই রেলের লোকজন ভাবছে।
==================
কোন্নগর, হুগলী, পশ্চিমবঙ্গ