অণুগল্প ।। অ্যান্টিমেটার ।। অনিন্দ্য পাল
0
ডিসেম্বর ০১, ২০২৪
অ্যান্টিমেটার
অনিন্দ্য পাল
মাথাটা গরম হয়ে উঠছিল। রৌদ্র এক মগ জল ঢাললো মাথায়। কানের পাশ থেকে গরম জল নেমে ভিজিয়ে দিচ্ছিলো বুক। ছোটবেলা থেকেই সে দুর্বল, তার জন্মের সময় নাকি মরতে বসেছিল মা, মায়ের মুখ থেকেই শোনা। মা কে বলেছিল, আমাকে কেন জন্ম দিলে? বালাই ষাট! কান্নায় ভেঙে পড়েছিল রুমা। বলেছিল দশজনের একজন হতে হবে। আজও সেই কথার অর্থ বুঝতে পারে না রৌদ্র। কোন দশজনের? রঞ্জন জমির দালালি করে। ওদের দশজনের গ্রুপ, ওদের একজন? সন্ন্যাসী স্রেফ তোলাবাজি করে, সঙ্গে জনা দশেক গুণ্ডা। ওদের একজন? নাকি পদাধিকার বলে চুরি করা টাকায় তিনতলা রাজপ্রাসাদ বানানো চন্দনার ঘনিষ্ঠ দলের একজন হতে হবে? খুব দোটানায় পড়ে আছে রৌদ্র। শর্মিষ্ঠাকে কিছুতেই বোঝাতে পারছে না, তাকে দশ জনের এক জন হতেই হবে। মা বলে গেছে।
দরজার লকটা খুলে বেরিয়ে এল রৌদ্র। তার সারা গায়ে ঝলমল করছে আশ্চর্য আলো। ঠিক এই রকম আলো সে দেখেছে, কোথায় দেখেছে? মনে পড়ছে না তার। না পড়ুক, রৌদ্র একের পর এক দরজা খুলে বেরিয়ে এল খোলা আকাশের নিচে। আর কি আশ্চর্য, সেখানে সবাই তার মতোই, সবার গা থেকে অদ্ভুত আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ছে। চোখ দুটো খুলে রাখতে পারছে না রৌদ্র। হঠাৎ তার গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটাকে কেমন যেন চেনা চেনা মনে হল, রৌদ্র মনে করার চেষ্টা করলো। না, মনে পড়ছেনা। হঠাৎ একটা অদ্ভুত শিহরণ খেলে গেল রৌদ্রর মেরুদণ্ড বেয়ে। তার মুখের সঙ্গে হুবহু মিল লোকটার। আর ঠিক তখুনি লোকটা তার দিকে ফিরলো। একি! সব আলো যেন দপ করে নিভে গেল, চারদিকে শুধু অন্ধকার। ভাল করে চোখ রগড়ে রৌদ্র আবার তাকালো, তার মত দেখতে লোকটা একটা হাত বাড়িয়ে তাকে ধরতে চাইছে! সভয়ে পিছিয়ে গেল রৌদ্র। সে শুনেছে ম্যাটার আর অ্যান্টিম্যাটার পরস্পরকে ছুঁয়ে দিলে উভয়েই ধ্বংস হয়ে যায়। রৌদ্র আবার একের পর এক দরজা পেরিয়ে বাথরুমের সামনে এল, আর কী আশ্চর্য, সেখানে আর কোনও দরজা নেই। রৌদ্র হিসেব করে দেখলো সে মোট ন'টা দরজা পেরিয়ে এসেছে। এটাই তার শেষ দরজা। আনন্দে খানিকটা আলো আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিল রৌদ্র, এইমাত্র সে বুঝতে পেরেছে যে সেও এখন দশ জনের একজন।
===================
অনিন্দ্য পাল
চাম্পাহাটি, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা।