বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন :

গল্প ।। রংমশাল ।। সোমনাথ মুখার্জী

রংমশাল

সোমনাথ মুখার্জী


তমালিকার কল্পনার অগোচরে ছিল যে ভালবাসায় রঙের এত রহস্য মিশে থাকে। সত্যিই অকল্পনীয়। সেই রঙে মন রঙিন হবে ভাবা সম্ভব হয়নি।বয়স তো হল।প্রায় আটচল্লিশ। আসছে ফাল্গুণে তার পরিণতি। রূপের বিভঙ্গের যে প্রত্যাশা পুরুষের থাকে সেই রূপ কম আছে তমালিকার। বোঝেন সবই। নীরবতা বর্মের কাজ করে। কিন্তু, লালসা যে....।  থাক, এড়িয়ে যাওয়াই বোধকরি ভালো। আর কত রকম ভাবে যে লড়তে হবে জীবনে।
    অন্যমনস্ক ভাবে সন্ধ্যার আকাশের রঙের দিকে তাকালেন।বেশ ভালো লাগল। লক্ষ্য করলেন রঙের বিন্যাস এবং জাদু। বোধকরি,ভালবাসও বুঝি এমনই হয়।কথাটা মানুষটিকে বোঝাবো কেমন করে।  আদৌ কি সম্ভব হবে।
    স্বামী তো কবেই ঠকিয়ে দিয়ে বেপাত্তা।খোঁজ খবর নেই তো নেই। আচমকা উধাও।কেন এমন হল আজও রহস্যের কিনারা করতে পারলেন না।বারান্দায় এসে চেয়ার টেনে বসলেন।।বাবা একসময় কতক্ষণ ধরে যে এই চেয়ারটায় বসে থাকতেন।গল্প করতেন। 
ঘরের কাজ অনেকক্ষণ শেষ করেছেন।একাকীত্বের মানসিক অবসাদ প্রবল দিশাহারা করে রাখে।নিজেকে অসহায় এক নাবিক ভাবেন।শ্বশুড়বাড়ীর সঙ্গে সম্পর্ক একরকম মুছে গেছে।অথচ,আর একজন মানুষ কত কথা লেখে ফেসবুকে। সবাইকে হয়ত একরকম ভাবা মানসিক দৈন্য।ফুলের কতরকমের ছবি পাঠায়।ভাগ্যিস মুঠোফোন ব্যবহার করতে শিখেছিলেন।মানুষটা আবার রসের কথাও লেখে জমিয়ে।ভালো লাগে।হাতের মুঠোয় এখন ফোন ধরা।তবুও, ফেসবুক দেখতে মন সায় দিল না।ভাবলেন,মানুষটা কেন ভালোবাসে অসুন্দরকে!আড়াল থেকে কী রং বেশী জমাট বাঁধে।চাক্ষুস দেখার থেকেও।ছবি দেখে কত বিবাহ হয় আকছার।সেখানে ভালোবাসা কোথায় রঙ মিলন্তির খেলা খেলে।বিহ্বল লাগে নিজেকে।প্রশ্নচিন্হ মাথার গভীরতর অংশে ঘুরপাক খায়।
    কেন এত ভাবেন তমালিকা।আত্মানুসন্ধান নাকি বিশ্লেষণ।নিজের মধ্যে তলিয়ে গেলেন।আচমককা গেট খোলার শব্দ হল। ষাট বছরের বৃদ্ধ উঠোনে এসে দাঁড়ালেন।ধুতি পাঞ্জাবী পড়া।স্বাস্থ্য ভেঙ্গে গেছে।মুখশ্রীতে শ্রীর কোনো প্রভাব নেই।শুধু, চোখের মধ্যে প্রাণ যেন কথা বলতে উন্মুখ।
    খুব সাধারণ বাড়ি।তমালিকার বাবা তৈরী করেছিলেন সরশুনায়।বললেন,আপনিই তো তমালিকা বোস।
    তমালিকা দ্রুত পায়ে এগোতে গিয়েই চমকে উঠে স্থির স্থানুবৎ দাঁড়িয়ে পরলেন।মন অসাড়।পায়ে জোর নেই। স্নায়ুমন্ডলের ভেতর সমুদ্রের ভাঙন যেন।প্রত্যুত্তর জোগাল না।একি সেই!সেই মানুষ!!ছবি আর বাস্তবে এত অমিল! বারবার রঙহীন কেন হয় জীবন।তমালিকার দৃষ্টি থেকে রঙ মুছে গেল যেন। জীবনের রংমশাল পুড়ে শেষ হয়ে ছড়িয়ে দিল ছাই।

========================

শ্রী সোমনাথ মুখার্জী 

৫৬১/সি,লেক ভিউ পার্ক রোড,বনহুগলী, সোলারিস ফেজ-১, টাওয়ার-১, ফ্ল্যাট নম্বর -১০০৫, কলকাতা-৭০০১০৮







Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.