Click the image to explore all Offers

ছোটগল্প ।। পলাশের খোঁজে বাবলাদা ।। দীপক পাল

পলাশের খোঁজে বাবলাদা

 দীপক পাল 


 সন্ধ্যার পরই সৌম্য বিশ্বরূপ টুক টাক কথা বলতে বলতে পার্কে ঢুকলো হাঁটতে  হাঁটতে নির্দিষ্ট  বসার বেঞ্চের দিকে এগিয়ে যেতেই ওরা অবাক হয়ে দেখল যা এর আগে কোন দিন দেখেনি, সেটাই দেখতে পাচ্ছে  এখন বাবলাদা একা একা বেঞ্চে বসে দৃষ্টিটাকে সামনের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে কিছু একটা চিন্তা করছে চুপি চুপি তার সামনে যেতেই বাবলা উত্তেজিত হয়ে বললো, ' তোরা এসেছিস? তা এতো দেরি করে এলি কেন? কখন থেকে তোদের জন্য অপেক্ষা করছি'


সৌম্য বলে,
- ' কেন, আমরা তো রোজ এই সময়ই আসি'


বিশ্বরূপ বলে,

- ' কি ব্যাপার বলোতো বাবলাদা তুমি কি টিউশনি করা ছেড়ে দিলে নাকি চাকরি-বাকরি কিছু পেয়েছ?'


- ' কিছু একটা ব্যপার তো আছে নিশ্চয়ই, না হলে বাবলাদা এত আগে থেকে এখানে এসে বসে আছে আমাদের জন্য আবার বলছে তোরা আসতে এতো দেরি করলি কেন কি ব্যপার বলতো বাবলাদা?'


- ' বলবো, বলবো, সব বলবো আজ আমি তোদের বাদাম খাওয়াবো' তারপর পকেটে হাত দিয়ে টাকা বের করে বিশ্বরূপের হাতে দিয়ে বললো, 'এই নে একটু বেশি করে আনবি আলাদা আলাদা করে আনবি তিন জায়গায় খেতে সুবিধা  হবে'


টাকা নিয়ে বিশ্বরূপ বেরিয়ে গেল কিছুক্ষণ পরে এসেও গেল বাদাম নিয়েএরপর শুধু বাদাম ভাঙার শব্দ প্রথম বাদামটা খাওয়ার পর দ্বিতীয় বাদামটা ভাঙতে ভাঙতে বাবলা বললো,

- ' দোল তো শেষ হলো, মজা করে অনেকে মিলে রঙ খেলাও হলো, এবার চল বেড়িয়ে আসি বরন্তি থেকে'

কথাটা শুনে সৌম্য বিশ্বরূপ  অবাক হয়ে গেল বিশ্বরূপ বললো,

- ' বরন্তি! সেটা আবার কোথায়? কিই বা আছে সেখানে? তুমি এই কথা বলার জন্য আগেভাগে এসেছ?'


- ' একদম ঠিক বলেছিস' কথাটা বলে একটা বাদাম টপ করে মুখে পুরে দিয়ে, একটু ঝালনুন চেটে নিল


সৌম্য এতক্ষণ চুপচাপ থেকে ব্যাপারটা আঁচ করার চেষ্টা করছিল এবার সে মুখ খুললো

- ' তাতো বুঝলাম কিন্তু এখন আমার পকেট একদম খালি কিন্তু কি আছে সেখানে যে যেতে বলছ?'


- ' তবে শোন, এটা তো ফাল্গুন মাস, বসন্ত কাল এখন এই সময় বরন্তিতে রাস্তার দুপাশে গাছে গাছে লাল পলাশ ফুল ফুটে থাকে নিচেও কত শত ফুল ঝরে পড়ে থাকে এককথায় বরন্তি এখন লাল পলাশের দেশতাই এই সময় পর্যটকদের আনা গোনা বাড়েসব হোটেল আগে থেকেই প্রায় বুকড্ হয়ে যায় বুঝলি?'


- ' তাহলে কোন ভরসায় আমরা সেখানে যাব?'


- ' পুরো কথাতো তোরা এখনও শুনিসনি আমার ছাত্রের বাবা রণেশদাকে তো তোরা জানিস, একজন মাঝারি মাপের ব্যবসাদার শুধু একরকম নানানা রকম জিনিসের কেনাবেচা করে বেশ দু পয়সা করে ফেলেছে সেইজন্য নানা ব্যবসায়ীদের সাথে তার লেনদেন চলে দুটো গাড়ী আছে তার একটা গাড়ী নিজের বিভিন্ন যোগাযোগের জন্য, আর একটা বড় ট্রেকার সেই ট্রেকারে তার বেশ কিছু জিনিস যাবে আসানসোলে আর এক ব্যবসাদার এর কাছে সেই ব্যবসাদারের নাম দিবাকর সাউ তার আবার কিছু জিনিস উঠবে গাড়ীতেতারপর সে সব নিয়ে পরেরদিন সকালে গাড়ী রওনা দেবে বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড়ে সেদিনটা থেকে পরের দিন সকালে গাড়ী রওনা দেবে কলকাতায় ভায়া দুর্গাপুর শুশুনিয়ায় পাহাড়ের কোলে চলছে বিশাল মেলা প্রচুর ভীড় হয় এছাড়া শুশুনিয়া পাহাড়তো আছেই এর আগের দিন আমরা বরন্তিতে থাকবোরণেশদা জানে আমরা রাঁচিতে বেড়াতে গিয়েছিলাম, তাই আমাকে বরন্তির কথা বলে বলেন যে যেতে পারেন গাড়ীর সঙ্গে আমি তখন বলেছিলাম আমার সঙ্গে যদি আরো দুই বন্ধু যেতে রাজী হয় তবেই যাব রণেশদা বললো কষ্ট করে যদি যেতে পারেন, তবে আমার আপত্তি নেই আমি দিবাকরবাবুর সাথে কথা বলে নেব এবার তোরা বল্ তোরা যেতে রাজী আছিস কিনা খাওয়া খরচ ছাড়া আর কোন খরচ নেই'


            সৌম্য আর বিশ্বরূপ কিছুক্ষণ নিজেদের মধ্যে কথা বলে নিল, তারপর বাবলাকে ট্রেকারে ঝাঁকুনির কথা বললো গায়ে খুব ব্যথা হতে পারে বাবলা আশ্বাস দিল 'হলে হবে তাই বলে এমন একটা সুযোগ ছেড়ে ঘরে বসে থাকবো? কি বলিস তোরা?'


ওরা একসাথে বলে, 'কক্ষনো নয়'


' এবার তবে আমি পড়াতে যাই'


বাবলা উঠতেই ওরা দুজন চীৎকার করে উঠলো ' থ্রি চিয়ারস ফর বাবলাদা '


            শুক্রবার সকাল ছটায় ওরা সব জড়ো হলো রণেশদার বাড়ীর নিচে ট্রেকারে জিনিসপত্র তোলা প্রায় শেষ ট্রেকারটা বেশ নতুন মনে হয় যে নস্যি রঙের ওয়াটার প্রুফ ত্রিপল দিয়ে ঢাকা গাড়ীটা সেটা বেশ নতুন মনে হয় ট্রেকারের ওপর ড্রাইভারের সিটের ঠিক পেছনের গায়ে সাঁটান বেঞ্চটায় ফোম দেওয়া দুপাশে দুটো হাতল আছে মোটামুটি আরামদায়ক না হলেও তিনজন পাশাপাশি বসা যাবে ট্রেকারে নানা রকমের দামী দামী খেলনায় ভর্তি জীপ মোটর গাড়ী ট্রাক রেলগাড়ী ছররা বন্দুক ইত্যাদি বহু কিসিমের জিনিসে ভর্তি তাছাড়া নীল রঙের প্লাস্টিক দিয়ে বাঁধা কিছু জিনিস আছে তাতে কি আছে কে জানে বিশ্বরূপ সৌম্য গাড়ীতে উঠে কোনরকমে সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে বেঞ্চটাতে বসলো ওদিকে রণেশদা ও বাবলাদা ড্রাইভারকে কিছু নির্দেশ দিচ্ছে ঘড়িতে সওয়া ছটা বাজে ছটা বেজে কুড়ি মিনিটে বাবলা আর ড্রাইভার  গাড়িতে উঠলো 'জয় বজরঙবলী' বলে ড্রাইভার গাড়ী ছাড়লো বাবলা সৌম্য বিশ্বরূপের মাঝখানে গিয়ে বসলো বসে বললো, ' জানিস ড্রাইভার প্রসাদ ওর পাশের সিটে বসতে বলছিল আমি রাজী হইনি বলতো আমরা একসাথে বসে গল্প করতে করতে না গেলে বেড়াবার কোন মজা আছে'

 

বিশ্বরূপ বললো,

- ' একদম ঠিক বলেছ বাবলাদা, তুমি পাশে না থাকলে আমরা খুব বোর হতাম


তাই শুনে সৌম্য সায় দিল

- ' ঠিক বলেছিস বিশ্ব, বেড়াবার অর্ধেক  মজাটাই মাটি হয়ে যেত এদিকে আমাদের   ড্রাইভারের মাঝে মাত্র ছোট্ট একটা জানলা ছাড়া আমাদের আশেপাশে আর কোন জানলা নেই যে বাইরে একটু চোখ রাখবো, খালি গাড়ীর পেছনের দিকটা খোলা বলে রাস্তা মানুষজন গাড়ীগুলো খালি পিছিয়ে যেতে দেখছি'


- ' একটু মানিয়ে গুছিয়ে নেরে তোরা পকেট হাল্কা বলেই তো এই রাস্তায় গেলাম' বাবলা বলে


'আমাদের বেড়াবার খুব শখ অথচ দেখ পকেটে বিশেষ পয়সা নেই জানিস রাতে থাকাটাও ফ্রি তবেই তোরা বল'


- ' আমরাতো মেনেই নিয়েছি আগে কিন্ত বাবলাদা তুমি পাশে থাকলে আমরা ডোন্ট কেয়ার' বলে বিশ্বরূপ
           

গাড়ি দাঁড় করিয়ে ড্রাইভার প্রসাদ জানলা দিয়ে বললো, ' আপনারা নাস্তা করিয়ে নিন এখানে' বলে সে গাড়ির দরজা খুলে কোথায় চলে গেল ওরাও খুব সন্তর্পনে গাড়ি থেকে নেমে একটা ছোট রেস্টুরেন্টের দিকে যেতে যেতে সাইনবোর্ডে দেখলো ডানকুনি লেখা দোকানে ঢুকে বাটার টোসট, ওমলেট আর চা পান করে গাড়িতে উঠলো গাড়ি চলতে লাগলো আসানসোলে গাড়ি পৌঁছল প্রায় বারোটা দিবাকর সাউ ওদের খুব যত্ন করে বসিয়ে পুরী তরকারি পেট ভরে খাইয়ে দিল তারপর সঙ্গে একজন দিয়ে শেয়ারে বরন্তি যাবার গাড়িতে উঠিয়ে দিলো দিবাকর সাউ বাবলাকে একটা চিঠি ধরিয়ে দিয়েছিল চিঠিটা হিন্দিতে লেখা খালি নিচের দিকে ইংরেজীতে একজনের নাম একটা রিসর্টের নাম লেখা আছে


            গাড়ি বরন্তিতে ঢোকার মুখ থেকেই গাছে গাছে লাল পলাশের দৃষ্টি নন্দন  দৃশ্যের ছোঁয়ায় গাড়ির যাত্রীরা আনন্দে সব হৈ হৈ করে উঠলো একটা রিসর্টের সামনে গাড়িটা দাঁড় করালো তিনজন যাত্রী, স্বামী-স্ত্রী একটা বাচ্চা নেমে গেল গাড়ি থেকে গাড়ি আবার এগিয়ে গেল থামলো আর একটা রিসর্টের কাছেরিসর্টের নাম মিলিয়ে ওরা নেমে গেল ভাড়া মিটিয়ে এগিয়ে গেল অফিস রুমে এক ভদ্রলোক বসে আছেনমুখ তুলে ওদের দিকে তাকাতেই বাবলা চিঠিটা এগিয়ে দিল


'আপনারা দিবাকর বাবুর লোক ঠিক আছে।' তারপর তিনি মোবাইলে কাউকে আসতে বললেন সে আসতেই তিনি ড্রয়ার খুলে একটা চাবি বার করে তার হাতে দিয়ে বললেন, ' এনাদের এক নম্বর রুমটা খুলে দাও' তারপর ওদের বললো, 'যান আপনারা ওর সাথে'


            তালা খুলে ওদের ঢুকতে বললো সে বললো, 'আপনাদের ভাগ্য ভাল আজ বেলাতে এই ঘর খালি হয়েছে আবার কাল দুপুর বারোটার মধ্যেই একটা দম্পতি এসে পৌঁছবে আপনাদের তখন এই ঘর ছাড়তে হবে এই ঘরটা কর্তা রেখেছেন খালি নিজের ঘনিষ্ট লোকেদের জন্য' সবটা শুনে বাবলাদা বললো,


- ' এখন দেড়টা বাজে আমরা কাল সকাল নটায় ঘর ছেড়ে দেব এখন কথা হচ্ছে রাতের বেলা ডিনার পাওয়া যাবে?' সে ঘাড় নাড়তেই আবার বললো, 'আর বিকেলে চা? কাল সকালে ব্রেকফাস্ট?'


- ' বিকেল সাড়ে চারটেতে চা সঙ্গে কিছু ভাজা আর রাত সাড়ে আটটায় ডিনার শুরু' বলে চলে গেল


- ' চল এবার আমরা এবার স্নান টান করে বেরোই ' বাবলা বলে 'দেখতো গিজার আছে কিনা?'


সৌম্য বলে,
- ' আছে আছে আমি দেখে নিয়েছি ভেতরে শাওয়ার বালতি মগ সবই আছে'


- ' তাহলে আমি আগে স্নান করে আসি' বাবলা ঢুকে পড়লো


            স্নান করে ঘরে তালা দিয়ে বারান্দায় একটু রোদে দাঁড়িয়ে থেকে সামনের দিকে ওরা চোখ মেলে তাকালো যতদূর দৃষ্টি যায় ততদূর পটে আঁকা যেন এক ছবি বাম দিকে এক উঁচু পাহাড় সোজা একটু ডান দিক করে গড় পঞ্চকোট পাহাড় লেকে তার ছায়া ভারী সুন্দর এবার রিসর্টের ভেতরে চোখ ফিরে এলো সামনে কিছুটা জায়গা জুড়ে আছে একটা ছোটদের চড়ার জন্য স্লিপ দোলনা ইত্যাদি তাছাড়া আছে বহু রঙের ফুল গাছ তাতে নানা বর্ণময় ফুল ফুটে আছে বড় কয়েকটা পলাশ গাছে পলাশ ফুটে আছে সত্যি মন ভালো লাগার সম্পূর্ন নিখুঁত আয়োজন বিশ্বরূপ আনন্দে সৌম্যকে বললো, 'চল্ দোলনা চড়ি'


কিছুক্ষণ দোলনা চড়লো ওরা তারপর ওরা ফটক্ পেরিয়ে বাইরে বেরোল রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকলো রাস্তার দুপাশে গাছে গাছে পলাশ ফুলে লালে লাল, গাছের তলায় এমন কি রাস্তাতেও কত পলাশ ফুল একান্ত অবহেলায় পরে আছে কিছু কিছু ওরা কুড়িয়ে নিল এদিক সেদিক কিছুক্ষণ ঘুরে রিসর্টে  ফিরে এলো রিসর্টের বারান্দায় বসে গরম গরম বেগুনি আর চা তারিয়ে তারিয়ে খেয়ে, শেষ বিকেল সন্ধের কিছুটা সময় কাটিয়ে একটু শীত শীত লাগায় ওরা ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল প্রথম বসন্তের ছোঁয়া এখানে স্পষ্টবিছানায় কম্বল আছে মাঝ রাতে প্রয়োজন হতে পারে গল্প করতে করতে একসময় বাবলা বলে,


- ' জানিস কাল সকাল নটায় আসানসোল থেকে রণেশদার ট্রেকারটা আমাদের শুশুনিয়ায় যাবার পথে তুলে নেবে, আমাদের তার মধ্যে স্নান করে ব্রেকফাস্টটা সেরে নিতে হবে বুঝলি' দু জনেই একসাথে বলে,

- ' বুঝলাম সাড়ে আটটা তো বাজে, ডিনারটা এখন সেরে আসি চলবাবলা বলে, ' চল চল'


 দরজায় তালা দিয়ে ওরা ক্যান্টিনে ঢুকলো দেখলো অর্ধেকের ওপর টেবিল ভর্তি হয়ে গেছে কিন্তু ডিনার এখনও শুরু হয় নি ওরা তিনটে চেয়ার টেনে বসলো একটু পরেই ডিনার শুরু হলো ডিনার সেরে রুমে ঢোকার আগে প্যসেজে একটু হাঁটা চলা করতে করতে  সৌম্য বললো,


- 'দেখ বিশ্ব, এই অন্ধকারে পাহাড়গুলো কেমন আবছা দেখাচ্ছে ঠিক ভুতের মত'


একবার সেদিকে তাকিয়ে বাবলা বললো,


'আর পাহাড় দেখতে হবেনা, চল এবার শুয়ে পড়ি ভোরবেলা থেকে এখন পর্যন্ত যা পরিশ্রম হয়েছে আজ আমি আর চোখ খুলে থাকতে পারছি না, চললাম রুমে'

ওরাও বাবলার পেছন পেছন ঢুকলো


পরদিন সকাল নটার আগেই ট্রেকার এসে গেল বাবলারাও ব্রেকফাসট সেরে একেবারে রেডি ছিল ঝটপট গাড়িতে উঠে পড়লো গাড়িও ছেড়ে চললো বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড়ের দিকে চলার পথে রাস্তার দু পাশে বহু পলাশ ফুল ফুটে থাকতে দেখা যাচ্ছে কোথাও কোথাও শিমুল গাছও চোখে পড়ছে মজার কথা শিমুল ফুলের রোঁয়া কি করে যেন গাড়ির পেছন দিক দিয়ে ঢুকে আর বেরোতে না পেরে গাড়ির মধ্যে ঘুরতে থাকলো বাবলা জানলা দিয়ে ড্রাইভারকে বললো, 'প্রসাদজী মাঝে মাঝে গাড়িটা একটু দাঁড় করাবেন ঠিক যেখানে প্রচুর একসাথে পলাশ ফুল ফুটে আছে আমাদের পাশে তো কোন জানালা নেই তাই ঠিক ঠাক ভাবে পলাশ ফুল দেখতে পারছি না আমরা


' ঠিক ঠিক, কোন চিন্তা করবেন না আপনারা'


এরপরে সত্যি সত্যিই সে এমন দু জায়গায় গাড়িটা দাঁড় করালো যেখানে পলাশে পলাশে ছড়াছড়ি রাস্তা ছেড়ে সবাই গাছের তলায় তলায় হাঁটতে থাকলো বাবলা গান গেয়ে উঠলো, ' পলাশ শিমুল কেন আমার মন রাঙালে, জানি না.....' একটু এদিক সেদিক করার পর প্রসাদ তাগাদা দেওয়ায় গাড়িতে আবার উঠো বসলো


গাড়ি শুশুনিয়ায় পৌঁছতেই ওরা দেখলো শুশুনিয়া যাবার রাস্তার দুপাশে বিরাট মেলা বসেছে ওরা মেলায় সামিল হলো প্রসাদ বললো, ' এই মেলাটা একেবারে শুশুনিয়া পাহাড় পর্যন্ত চলে গেছে আপনারা ঘুরে ঘুরে মেলা দেখুন, মজা করুন, লেকিন আগে জরুর কিছু খেয়ে নিন ওর ভিতরে ভাত উত্ কিছু পাবেন না তারপরে ঠান্ডা মাথাতে মেলা ঘুরুন, আরামসে পাহাড় চড়েন বহুত্ মজা লাগবে আমার মোবাইল নম্বর নিয়ে রাখুন অসুবিধা কিছু হলে ফোন করবেন চলুন আপনাদের খাবার দোকানটা দেখিয়ে দি' তারপর একটু পেছন দিকে গিয়ে বড় রাস্তার এপার থেকেই উল্টো দিকের একটা ভাতের দোকান দেখিয়ে দিয়ে বললো, ' দোকানের রান্নাটা ভালো ঐখানেই আপনারা ভাতটা খেয়ে নিন এবার তাহলে আমি চলি বহৎ কাম বাকি'


            চলে গেল প্রসাদ ওরাও রাস্তা পেরিয়ে ভাতের হোটেলে ঢুকলো হোটেলের রান্না খুব একটা খারাপ না খেয়ে নিয়ে পয়সা মিটিয়ে রাস্তা টপকে আবার মেলায় সামিল হলো রাস্তার দুপাশে সারি সারি স্টল সেই স্টলে কত রকমের জিনিস যে পাওয়া যাচ্ছে তার কোন ইয়াত্তা নেই ছোটদের  নানা রকম খেলনাতো আছেই, তাছাড়া স্থানীয় আদিবাসীদের হাতে গড়া বা বানানো মাটির তৈরী জিনিস বেতের তৈরী বাঁশ চিরে বহু রকমের প্রয়োজনীয় জিনিস যা দেখলে অবাক হতে হয় কাঠের তৈরী আসবাব পত্র, লোহার তৈরী অতি প্রয়োজনীয় যা কিছু ঘরে রাখার মতো চাষী মিস্ত্রি মজদুরদেরও খুব কাজে লাগে আছে কিছু সাধারন খাবারের স্টল আছে এক ঘন্টার মধ্যে ফটো তুলে ডেলিভারী দেওয়ার সটুডিও আছে ছড়্ড়া বন্দুক দিয়ে বেলুন ফাটান এত বড়ো মেলা দেখতে সময় লাগলো অনেক মেলার শেষে ওরা দেখলো পাহাড়ের  গায়ে একটা বাঘের মুখ থেকে খুব মোটা হয়ে জল পড়ছে শুশুনিয়া পাহাড়ের জল এই জল খেলে পেটের যাবতীয় রোগ নাকি সেরে যায় এই জলে স্নান করলে নিয়মিত সব গায়ের চামড়ার রোগ নাকি সেরে যায় সেইজন্য মনে হয় এই কলের নিচে ভয়ানক ঠেলাঠেলি ভীড় একসাথে ঘড়া, কলসী জলের বোতল নিয়ে ঠেলাঠেলি চলছে।। আবার জলের ফোর্স অনেক থাকায় একটু গায়ে মাথায় লাগাবার জন্য ভয়ানক ঠেলাঠেলি বাবলা বললো,


- ' এরা দেখি সব পাগল হয়ে গেছে এসব পাগলামি দেখে কোন লাভ নেই চল বরং পাহাড়ে চড়ি চল চল'


এক কথায় সৌম্য বিশ্বরূপ রাজী হয়ে গেল বাঘ কলের ঠিক ওপরেই তিনটে মন্দির পাশাপাশি মন্দিরে গিয়ে প্রথমে ওরা ঠাকুরের আশীর্বাদ নিল অতঃপর পাহাড়ে উঠতে লাগলো বাবলা বললো,

- ' জানিস এই পাহাড়ে রক্ ক্লাইম্বিং হয়?'  ওরা বললো, ' জানতাম না ঠিক'


এক দেড়শো ফুটের মতো উঠে ওরা পাশাপাশি তিনটে পাথরে বসলো বিশ্বরূপ  বললো,

- ' দেখ সৌম্য গত বুধবার সন্ধের আগে পর্যন্ত আমরা জানতাম না যে আমরা কোথাও বেড়াতে যাব, কিন্তু আজ শনিবার পড়ন্ত দুপুরে আমরা এই শুশুনিয়া পাহাড়ের ওপর বিরাজ করছি একেই বলে কপাল'


- ' ঠিক বলেছিস বিশ্ব, এটা একটা মিরাক্কেল এর পুরোটাই হলো বাবলা দার জন্য আইডিয়া সম্পূর্ণ বাবলাদার মস্তিষ্ক প্রসূত এর জন্য বাবলাদাকে ঠিক কি বলা যায়?'  দুজনেই একসাথে চিৎকার করে উঠলো,

- ' থ্রি  চিয়ার্স ফর বাবলাদা, থ্রি চিয়ার্স'


            এরপর ওরা নিচে নামতে থাকলো মেলা দেখতে দেখতে ফিরতে থাকলো বড় রাস্তায় এসে গাড়িটা খুঁজে পেলনা সৌম্য বললো, ' প্রসাদের ফোন নম্বরটা তো তোমার কাছে আছে একটা ফোন করোনা'


- ' দাঁড়া পরে ফোন করবো, আগে কিছু খেয়েনি, বড্ড খিদে পেয়েছে রে'


বিশ্বরূপ নেচে উঠে বলে,

- ' আমারও ক্ষিদে পেয়েছে বাবলাদা তুমি একদম আমার আর সৌম্যর মনের কথাটা বলে দিয়েছ বুঝলে '


একটা দোকান বুঝে ঢুকে পড়লো তিনটে করে সিঙাড়া আর চা খেয়ে ওখানে বসেই প্রসাদকে ফোন করলো প্রসাদ বললো, ' আমি একটা দরকারি কাজে গিয়েছিলাম এখুনি আসছি আমি ঐখানে থাকুন'


কিছুক্ষন পরে হন্তদন্ত হয়ে হেঁটে এলো এসেই বললো, ' চলুন আপনাদের দিবাকরবাবুর ভাইয়ের স্টলটা দেখাই একটু যাওয়ার পরেই আঙুল তুলে স্টলটা দেখাল সে স্টলটা ছোটোও না আবার বড়োও নাএই স্টলটার একটা সুবিধা হলো, এর দুটো দিক খোলা রাস্তার সামনের দিক ডান দিকের পাশের দিকভেতরে নানা রকমের জিনিস সুন্দর করে সাজানো হয়েছে যেমন একতারা, দোতারা, বেহালা ইত্যাদিস্টলের দু পাশেই লোকের ভীড় দোকানের ভেতরে দুজন লোক বিক্রি করছে প্রসাদ একজন লোককে দেখিয়ে বললো, ' উনি দিবাকরবাবুর ছোট ভাই প্রভাকর আর একজন কর্মচারী এবার চলে আসুন সন্ধা হয়ে গেছে।' বাবলারা প্রসাদের পেছন পেছন হাঁটতে লাগলো গাড়ির ভিড় এখন অনেক কমে গেছে সহজেই হাঁটা যাচ্ছে প্রসাদের সাথে যেতে যেতে ওরা প্রসাদের  কথা শুনছে সে বলছে,


- ' আজকের রাতটা আপনাদের কাটাতে একটু তকলিফ হবে কেন কি এখন যে ঘরটাতে আপনাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে সেটা আপনাদের ঠিক মনোমতো নয় ওতে আমাদের ড্রাইভাররা থাকে আপনাদের কিন্তু নাস্তা করতে এখানেই আসতে হবেকিছুদূর গিয়ে একটা একতলা লম্বা  বাড়ির কাছে এসে দাঁড়াল দুজন লোক একটা বেঞ্চের ওপর বসেছিল তাদের কাছে গিয়ে প্রসাদ বললো, ' ইনারা দিবাকরবুর লোক আছেএকটা ঘর দিতে হবে কাল সকাল আটটায় ইনারা ঘর ছেড়ে দিবেন'


যাকে প্রসাদ  কথাটা বলছিল সে আবার পাশের লোকটাকে বললো, 'যা একটা ঘর খুলে দে ঘরের চৌকি দুটো একসাথে করে একটা বড়ো চওড়া তোষক পেতে দিবি, যা আপনারাও যান ওর সাথে'

            

খুবই ছোট ঘর তার মধ্যেই দুটো সরু চৌকি পাতা চৌকি দুটো এক করে কোথা থেকে একটা পাতলা বড়ো তোষক এনে চৌকি দুটোর ওপর ছড়িয়ে দিয়ে একটা বড় চাদর পেতে দিল এরপর পেছনের দরজা খুলে ওদের দেখাল দুপাশে দুটো বাথরুম আর স্নানের জায়গা গায়ে দেওয়ার একটা করে চাদর ওরা এনেছিল ভাগ্যিস।। সোয়েটার ওরা আর খুলবে না ঠিক করলো জুতো খুলে শুয়ে পড়লো ওরা কিছুক্ষণ মড়ার মতো পড়ে থাকায় সবার চোখেই ঘুম এসে গেল হঠাৎ সৌম্যের ঘুম ভাঙতে হাতের ঘড়ি দেখে লাফ দিয়ে উঠলো ডাকলো, ' এই বিশ্ব, বাবলাদা লো, খেতে যাবে না?'  'চল চল ' ঘরে তালা দিয়ে ওরা রাতের খাবার খেতে গেল দুপুরেরই খাওয়ার পুনরাবৃত্তি  হলো যেন খেয়ে এসে ঘরে ফিরে বিছানায় ঠিক ঠাক করে চাদর মুড়ি দিয়ে সব ঘুমের দেশে পাড়ি দিল কিন্ত ভোর রাতের ঘুমটা ঠিক জমলো না শীত করছিল


সকাল আটটার আগেই গাড়ি এসে গেল কাছেই এক জায়গায় চা বিস্কুট খেয়ে সবাই গাড়িতে উঠলো বাঁকুড়া শহরের কাছে ওরা ব্রেকফাসট করলো বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা খেল আর ডানকুনিতে লাঞ্চবাড়ি ফিরতে তিনটে বেজে গেল


                                        _______________________
  Address :-
------------------
Dipak Kumar Paul,
DTC Southern Heights,
Block-8,  Flat-1B,
Diamond Harbour Road,
Kokata-700104.



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.