অমরত্বের সন্ধান
মিঠুন মুখার্জী
কলকাতার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের একমাত্র ছেলে দিবাকর বোস। বয়স পঞ্চাশ বছর। বাবা - মা মারা গিয়েছেন অনেক বছর হয়েছে। জীবনে নাম - যশ - অর্থ যথেষ্ট উপার্জন করেছেন তিনি। বিয়ে করেও সুখী হন নি । সন্তান না হওয়ায় এবং নিজের ব্যবসা দেখতে গিয়ে সংসারে মন না দিতে পারায়, পত্নী সংসার ত্যাগ করে চলে গেছেন। তাছাড়া দোষের মধ্যে প্রতিদিন মদ খাওয়ার নেশা ছিল তার। কলিকালে মদ খেলে দোষ নেই। ঘরে ঘরে মদের আসর বসে। তার মধ্যে মৃত্যু ভয় সব সময় কাজ করে। তিনি মরতে চান না। যে করেই হোক অমর হতে চান তিনি। অমৃত পান করে দেবতারা হয়েছিলেন অমর। কিন্তু কলিকালে অমৃত পাওয়া যায় না, শুধুই বিষ। বাড়িতে চাকর - বাকর কোম্পানির কিছু কর্মচারীরা থাকেন। তাই একাকীত্ব তেমন একটা অনুভব করেন না তিনি। এই মানব জনম বারবার হয় না, তাই এ জনম ও এই সুন্দর পৃথিবীকে তিনি ছেড়ে যেতে চান না। তার সমস্ত সম্পত্তি ও অর্থ যদি অমরত্বের জন্য দিয়ে দিতে হয়, তাও তিনি দিতে রাজি।
একদিন রাত্রে গলা পর্যন্ত মদ খেয়ে দিবাকর বোস খাটের উপর ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ তিনি দেখেন-- একটি অজানা অচেনা দেশে তিনি এসেছেন। কিছুটা হাটার পর একটা রাজপ্রাসাদ দেখতে পান। সিংহাসনে বসে আছেন একজন। তার পায়ের কাছে একজন অতি বৃদ্ধ বড় একটা খাতা নিয়ে কি যেন দেখছেন। তার সামনে থেকে প্রাসাদের দরজা পর্যন্ত মানুষের লাইন। কারো বয়স সত্তরের কম হবে না। প্রাসাদের ভিতরে ঢোকার পর তিনি বুঝতে পারেন এটা যমালয়। সিংহাসনে যিনি বসে আছেন, তিনি যমরাজ। আর তার পায়ের কাছের ব্যক্তিটি চিত্রগুপ্ত। সকল বৃদ্ধরা লাইনে দাঁড়িয়ে কি করছেন তা বুঝতে না পেরে দিবাকর বোস একজনকে জিজ্ঞাসা করেন---"এই লাইনটি কিসের জন্য দাদা ?" তখন ওই বৃদ্ধটি ভাঙা গলায় দাঁতহীন মুখে বলেন--- "আজ্ঞে আমরা প্রত্যেকে আমাদের আয়ু বাড়ানোর জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছি। যমরাজ হঠাৎ বেশিদিন বাঁচার একটা ছাড়পত্র দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। তার জন্য অবশ্য টাকা অথবা সুন্দরী নৃত্য পটীয়সি পত্নীদের দান করতে হবে। নতুবা মর্ত্যে যেতে দেবেন না। এখানে যাদের দেখছো তাদের প্রত্যেকের বয়স সত্তর পার হয়ে গেছে। কিন্তু তাদের প্রত্যেকের সুন্দরী নৃত্য পটীয়সি পত্নীদের বয়স কুড়ি থেকে চল্লিশের মধ্যে। আমরা মরার আগে দীর্ঘায়ু কামনা করায় যমরাজ আমাদের সঙ্গে আমাদের কচি বউদেরও যমালয়ে তুলে এনেছেন। ওদের যমালয়ে বন্দী করে রাখা হয়েছে। যার যার নৃত্য যমরাজের ভালো লাগবে কেবলমাত্র তাদের স্বামীর আয়ু রিনিউ করা হবে। নতুবা পত্নীকে মর্ত্যে পাঠিয়ে স্বামীর ইহকালের পাপ- পুণ্যের যথাযথ বিচার হবে। আমরা সবাই ইহকালে দরিদ্র থাকায় অর্থ আমাদের ছিল না। থাকার মধ্যে ছিল সুন্দরী পত্নী। তাই ওদের দিয়েই আমাদের মনোবাসনা পূর্ণ হতে পারে। ওই আগন্তুক বৃদ্ধকে এরপর দিবাকর বোস বলেন--- " আমিও তো অমর হতে চাই। পত্নী আমার ছিল, কিন্তু অভিমানে বাপের বাড়ি চলে গেছে। আমি পত্নীর বদলে প্রচুর অর্থ দিতে পারি। আমার ভালো লাগছে এই ভেবে যে আমি এখনই পৃথিবী ত্যাগ করবো না।" এরপর দিবাকর বোস বুড়োটির পর লাইনে দাঁড়ায়।
কিছুক্ষণ পর চিত্রগুপ্ত খাতা হাতে নিয়ে এক একজন করে বুড়োর নাম ধরে ডাকেন এবং তারা স্কুলে উপস্থিত দেওয়ার মতো বলেন উপস্থিত মহাশয়। তারপর তার পত্নীকে যমরাজের সামনে নৃত্যের পোশাক পরিয়ে উপস্থিত করা হয়। যমরাজের সামনে তারা নাচতে লজ্জা পেলেও স্বামীর মূল্যবান জীবনের জন্য মনের মতো করে তারা নৃত্য পরিবেশন করেন। যমরাজ সুরা পান করেন এবং তাদের নৃত্য পরিবেশন দেখেন। ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে পনেরো - ষোলো জনের নৃত্য দেখে যমরাজ দশ জনের নৃত্যকে সার্টিফিকেট দেন। বলেন ---"এই দশ জন নারী আমায় মুগ্ধ করেছে। আমি এদের নৃত্যে খুবই খুশি। এদের পতি দেবতাদের দশ বছর করে আয়ু বাড়িয়ে দেওয়া হোক চিত্র গুপ্ত। তাদের দশ বছর কমিয়ে মর্ত্যে পাঠিয়ে দাও। সৃষ্টিকর্তা জিজ্ঞাসা করলে বলে দেবে ওদের এখনো সময় হয়নি। আর ওদের এই দশ জন সুন্দরী নৃত্য পটিয়সী পত্নীকে এই দশ বছর যমালয়ে রেখে দাও। আমাদের মনোরঞ্জন করবে এরা। যমরাজের কথা শুনে চিত্রগুপ্ত বলেন---" যমরাজ এটা করা কি ঠিক হবে? ব্রহ্মাদেব জানতে পারলে আমাদের ক্ষমা করবেন না।" এই কথা শুনে যমরাজ বলেন--- "আরে আমরা না বললে উনি জানবেন কিভাবে। তাছাড়া মর্ত্যে দুর্নীতির শেষ নেই। ওদের ধরতে ধরতে আমরাও একটু দুর্নীতি করতে শিখেছি বাবা। তুমি একেবারে চিন্তা করো না।"
চিত্রগুপ্ত যমরাজের কথামতো নৃত্যে পাশ করা দশ জন নারীর স্বামীদের দশ বছর করে বয়স কমিয়ে দিয়ে মর্ত্যে পাঠিয়ে দিলেন। এদের পাঠানোর আগে বললেন -- " এই দশ বছর পূর্ণ করে তোমরা পুনরায় যমালয়ে ফিরে আসবে বাছাধনরা। বন্ধক স্বরূপ তোমাদের পত্নীরা এখানে থাকলো। তোমাদের ইহকালের কর্ম শেষ হলে এদের মুক্ত করে মর্ত্যে পাঠানো হবে। বুঝলে তো সকলে?" সকলে একসাথে বললেন-- " আচ্ছা ঠিক আছে।" বয়স কমে যাওয়ার আনন্দে, আরও দশ বছর আয়ু বাড়ার খুশিতে মর্ত্যে পদার্পণ করেন সকলে। একে অপরকে বলেন, এই দশ বছর বউয়ের অত্যাচার থেকে মুক্ত থাকা যাবে, খুব ভালোই হলো।
যাদের পত্নীরা নৃত্য পরিবেশন করে যমরাজকে খুশি করতে পারেননি, তাদের গরম তেলে ভাজার জন্য, জ্বলন্ত চুল্লিতে ফেলে দেওয়ার জন্য যমরার চিত্রগুপ্তকে আদেশ দিলেন। শাস্তি পাওয়া বৃদ্ধ লোকেরা শাস্তি কমের জন্য চিত্রগুপ্তের হাতে লুকিয়ে কিছু কিছু অলংকার ঘুষ স্বরূপ দিলেন। চিত্রগুপ্ত তাদের শাস্তি যমরাজকে না জানিয়ে কিছুটা কমিয়ে দিলেন। এরপর চিত্রগুপ্ত যমরাজকে বলেন --- "এদের সহধর্মীনিদের কি করা হবে মহারাজ?" এদের বৈধব্য দশা ভোগ করার জন্য এখনই মর্ত্যলোকে পাঠিয়ে দেওয়া হোক বোলে আদেশ দেন তিনি। যমরাজের কথামতো তাদের মর্ত্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কয়েক মুহূর্ত পর যমরাজ দিবাকর বোসকে দেখতে পেয়ে চিত্রগুপ্তকে বলেন--- " চিত্রগুপ্ত এই প্রৌঢ় ব্যক্তিটি কে? ওকে দেখে তো মনে হচ্ছে ওর এখনো যমালয়ে আসার সময় হয়নি। তাহলে ও এখানে এলো কি করে? ব্রহ্মাদেব জানতে পারলে ভীষণ কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।" যমরাজের কথা শুনে চিত্রগুপ্ত দিবাকর বোসকে জিজ্ঞাসা করেন---" কে ভাই তুমি? এখানে কি করছ? তোমাকে তো আমরা কেউ এখানে নিয়ে আসিনি। তবে এখানে তুমি এলে কিভাবে?" চিত্রগুপ্তের প্রশ্নের উত্তরে দিবাকর বোস বলেন---" আজ্ঞে এখানে আমি কিভাবে এলাম তা আমি নিজেও জানিনা। তবে আমার মনে হচ্ছে আমি উচিত জায়গায় এসেছি। আসলে আমার না মরার কথা চিন্তা করলে খুব কষ্ট হয়। আমি মর্ত্যে মোটামুটি সবই পেয়েছি, শুধু পত্নী ও সন্তান সুখ পায়নি। তাতে আমার আফসোস নেই। তবে আমি অমর হতে চাই। তার জন্য কী কোন ব্যবস্থা করা যায় না? যত টাকা লাগে আমি দিয়ে দেব। আমার বাড়ি গাড়ি কোম্পানি সব আপনাদের নামে লিখে দেবো। শুধু আমায় অমরত্বের বর দিতে হবে। পারবেন না আপনারা? দরকার হলে আমার বউকে মর্ত্য থেকে তুলে এনে ওর নাচ দেখুন। ও খুব বড় নৃত্যশিল্পী। যেভাবেই হোক আমায় অমরত্ব দিতেই হবে। এই মহা মূল্যবান মানব জনম ও সুন্দর পৃথিবীটা আর দশজন মানুষের মত আমি ছেড়ে যেতে চাই না।" দিবাকর বোসের কথা শুনে যমরাজ বলেন---" চিত্রগুপ্ত এতো ভয়ানক মানুষ। এ মরতে চায়না। সৃষ্টির নিয়মকে লঙ্ঘন করে এ অমর হতে চায়। এবার বোধয় আমাদের চাকরিটাই ও খাবে। ওকে এখনই মর্ত্যে পাঠাও। ত্রি-দেব জানার আগে এই কাজ করো। তা না হলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। কেন যে দশ বছর করে ছাড় দিতে গেলাম! মর্ত্যে সব কিছুতে ছাড় দেখে আমারও মনে হলো যমালয়ে একটা দিন আয়ু ছাড়ের অফার দিই। কিন্তু এমন বিপদে পড়বো তা কে জানে।" যমরাজের কথা শুনে চিত্রগুপ্ত দিবাকর বোসকে বলেন---" আপনার মাথার ঠিক নেই, আপনি মর্ত্যে ফিরে যান। জন্ম-মৃত্যু নিয়ে জীবের জীবন। তাদের অমরতার বর দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। আপনি এখন আসেন ভাই।" চিত্রগুপ্তের কথা শুনে দিবাকর বোস রেগে যান এবং বলেন--- " যতক্ষণ না আমি অমরতার বর পাচ্ছি, ততক্ষণ আমি যমালয় ছেড়ে যাব না। তাছাড়া আমি জেনে গেছি নিয়মের বাইরে গিয়ে যমরাজ দশ জনের দশ বছর করে বয়স কমিয়েছে। আপনি বাকিদের থেকে ঘুষ নিয়ে তাদের শাস্তি কমিয়েছেন। এসব যমালয়ে হচ্ছে কি?" এইবার যমরাজ ও চিত্রগুপ্ত ভারী বিপদে পড়ে যান। খুব রেগে যমালয়ে চিৎকার শুরু করেন। জোর করে প্রহরী দিয়ে দিবাকর বোসকে চ্যাংদোলা করে মর্ত্যে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। এমন সময় সেখানে উপস্থিত হন ব্রহ্মাদেব। তিনি যমরাজকে বলেন--- " কি চলছে এখানে? এত চিৎকার কেন? চিত্রগুপ্ত সব নিয়ম অনুযায়ী চলছে তো?" চিত্রগুপ্ত ব্রহ্মাদেবকে বলেন---" হ্যাঁ প্রভু। আপনি আবার দেবলোক ছেড়ে এখানে এলেন কেন! আমাদের স্মরণ করতে পারতেন।" এমন সময় দিবাকর বোস ব্রহ্মাদেবকে প্রণাম করে বললেন---" প্রণাম ব্রহ্মাদেব। আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই। এরপর একে একে তার অমরত্বের বর দানের কথা পর্যন্ত সব বলেন তিনি। ব্রহ্মাদেব তার সব কথা শুনে বলেন---" সৃষ্টির সবচেয়ে উন্নতশীল প্রাণী হল মানুষ। তাদের বুদ্ধির দ্বারা তারা করছে না এমন কিছুই নেই। তবে যার প্রাণ আছে তার মৃত্যু আছে। তার জন্য কষ্ট পাওয়ার কিছুই নেই। আত্মা অবিনশ্বর, তার ধ্বংস নেই। এক শরীর থেকে অন্য শরীরে সে যাত্রা করে। পুরাতন জীর্ণ শরীর না ছাড়লে নতুন শরীর পাবে কি করে? পৃথিবীর সব প্রাণেরই মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। নতুন করে সৃষ্টির জন্য এই চক্রাকার পরিবর্তন। মানুষ তার অবদানের দ্বারা ভালো কাজের দ্বারা সকল মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকবে। শরীর নাই থাকলো, তোমার ভালো কাজ তোমাকে অমর করে রাখবে। যাও বৎস মর্ত্যে ফিরে গিয়ে তোমার যা আছে তা মানুষের সেবায় নিয়োজিত কর। মানুষ তোমাকে অমর করে রাখবে।"
এরপর যমরাজ তাকে মর্ত্যে ফিরিয়ে দিয়ে যান। হঠাৎ দিবাকর বোসের ঘুম ভেঙে যায়। সে বুঝতে পারে এই নশ্বর শরীর একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে, কিন্তু যা কখনো ধ্বংস হবে না তা হলো ভালো কর্ম। মানুষ ও সমাজের জন্য এমন কিছু করতে হবে যার মাধ্যমে তাদের মাঝে আমি চিরকাল বেঁচে থাকবো। তার জীবনের একটা বিরাট পরিবর্তন হয়। তিনি একটা স্কুল খোলেন এবং সেখানে গরিব বাচ্চাদের বিনা পয়সায় পড়ার ও খাবারের ব্যবস্থা করেন। একটা অনাথ আশ্রম ও একটা বৃদ্ধাশ্রম খোলেন, সেখানে অনাথ ও অসহায় শিশুদের ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের দেখাশোনার ব্যবস্থা করেন। এইসব করার জন্য প্রচুর লোক নিয়োগ করেন তিনি। রাস্তার মানুষদের বিনা পয়সায় প্রতিদিন খাওয়ানোর জন্য একটা হোটেল খোলেন। যে টাকা ও সম্পত্তি দিয়ে দিবাকর বোস অমরত্ব কিনতে চেয়েছিলেন, সেই টাকায় মানুষের জীবন বাঁচিয়ে তাদের কাছে নিজেকে একজন দেবতুল্য মানুষের পরিণত করেন। জীবনে যত অন্যায় তিনি করেছিলেন সব তার পুন্য কর্মের দ্বারা ধুয়ে যায়। মানুষ তার সমাজসেবা ও উপকার পেয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। সকলকে তার প্রশংসা করতে দেখে ও তার নাম ধরে জয়ধ্বনি দিতে দেখে খুব খুশি হন তিনি। এরপর তার মায়ের নামে একটা ট্রাস্টি খোলেন তিনি। তার সমাজ সেবা দিনকে দিন বেড়ে যায়। তার নাম এলাকার ছাড়িয়ে বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। কয়েক বছর পর সমগ্র দেশের মানুষের কাছে একজন প্রকৃত সমাজসেবক হিসাবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। প্রত্যেক বছর এক লক্ষ করে গাছের চারা তিনি মানুষকে বিনামূল্যে বিতরণ করেন। তার ট্রাস্টির বাৎসরিক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন---" গাছ আমাদের পরম বন্ধু। তার সমস্ত কিছু দিয়ে আমাদের সে বাঁচিয়ে রেখেছে। তাই সকলে আজ থেকে প্রতীজ্ঞা করুন, গাছ কাটা নয় গাছ লাগানো হবে জীবনের লক্ষ্য। মানুষের ক্ষতি নয়, উপকার করাই আমাদের পরমধর্ম । "
কয়েক মাস পর একদিন হঠাৎ করে ঘুমের ঘোরে স্ট্রোক হয়ে দিবাকর বোস ইহলোক ত্যাগ করেন। এবার সত্যি সত্যি যমরাজ তার আত্মাকে যমালয়ে নিয়ে যান। যমালয়ে যাওয়ার আগে তিনি দেখেন তার মরদেহের সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকশো মানুষ খুব কাঁদছে। তিনি দেখে মনে করেন তারা অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। কিন্তু পরক্ষণে তিনি ভাবেন কারো জন্যই এই পৃথিবী থেমে যায় না। একটু অসুবিধা হলেও পুনরায় সবই কারো হাত ধরে ঠিকঠাকই চলবে। এরপর তিনি দেখেন হাজার হাজার মানুষ তার মরদেহ নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে শ্মশানে যাচ্ছে। কেউ বলছে "বড্ড ভালো মানুষ ছিল। খুব কম বয়সে চলে গেল।" আবার কেউ বলছে "এরকম দেবতুল্য মানুষ পৃথিবীতে খুবই কম আসে। মানুষ চিরকাল তাকে মনে রাখবে।" এসব শুনে তিনি খুবই খুশি হন। এরপর যমালয়ে যমরাজ চিত্রগুপ্তকে খাতা দেখে দিবাকর বোসের পাপ-পুণ্যের হিসাব কষতে বলেন। চিত্রগুপ্ত হিসাব কষে বলেন--- " মহারাজ, এর জীবনে যা পাপকর্ম ছিল, তা শেষ দশ বছরের পুন্যে ঢাকা পড়ে গেছে। এখন এর পুণ্যের ভাগ বেশি।" চিত্র গুপ্তের কথা শুনে যমরাজ দিবাকর বোসকে তার পুন্য কর্মের জন্য স্বর্গে প্রেরণ করেন। তিনি স্বর্গ থেকে দেখেন, রাস্তার মোড়ে মোড়ে তার স্ট্যাচু বসেছে। তার সমাজ সেবামূলক কাজকে দায়িত্ববান কর্মচারীরা আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। জায়গায় জায়গায় তার নামে সাইনবোর্ড বসেছে। এক কথায় দেশের মানুষ তাকে অমর করে দিয়েছে।
=======
মিঠুন মুখার্জী
C/O-- গোবিন্দ মুখার্জী
গ্ৰাম : নবজীবন পল্লী
পোস্ট+থানা -- গোবরডাঙা
জেলা -- উত্তর ২৪ পরগণা
পিন-- 743252