অণুগল্পঃ একটি খুন ও পথনাটিকা ।। সুপ্রভাত মেট্যা
0
জুন ০১, ২০২৫
একটি খুন ও পথনাটিকা
সুপ্রভাত মেট্যা
মেয়েটি খুন হয়েছিল ঠিক এই জায়গাটায়। চারিদিকে রক্তের ছিটে। জামায় চাপ চাপ অনেক, অনেক রক্তের দাগ। চোখে মুখে কালসিটে এতো আঘাতের চিহ্ন, ক্ষত, দগদগে করে রেখেছে যে চেনাই যায়না। খুনি কে, এখনও পর্যন্ত তা জানা যায়নি। তবে আশেপাশে পায়ের জুতোর ছাপ আর ভুল করে ফেলে যাওয়া লেডিস মানি পার্স দেখে মনে হচ্ছে খুনিটি সম্ভাব্য কোনও এক মহিলা হবে। আবার পোষ্ট মর্টামের রিপোর্ট বলছে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছিল। তা কি করে সম্ভব? খুনি যখন একজন মহিলা? তবে কি মহিলা খুনিটি কোনও ছেলেকে দিয়ে ধর্ষণ করিয়ে তারপর খুন করেছিল? ব্যাপারটা সত্যিই খুব রহস্যজনক। একজন মেয়ে হয়ে একজন মেয়ের এই সর্বনাশ, এবং নৃশংস হত্যা কেউ কি চাইবে? তবে কে খুন করল মেয়েটিকে। কাকেই বা খুন করা হয়েছে? স্থানীয় কেউ তো নয়ই, তা খুব ভালভাবে বোঝা যাচ্ছে। কেননা তাহলে কেউ না কেউ নিখোঁজ হতই। পুলিশ এসেছে। সাংবাদিকও। কিন্তু ও-ও-ই কিছুদিন যাওয়ার পর, আর কেসটা নিয়ে কেউ এগোয়নি। আসল ব্যাপারটা হল যেহেতু নিহত মহিলাটি বাইরের কেউ, তাই তার বিচার চাইবার অভিযোগকারীকে পাওয়াই মুশকিল। এখানে শুধু কে খুন নয়, কাকে খুন করা হয়েছে সেটাও অজানা। প্রায় বছরখানেক কেসটি ধামা চাপাই ছিল। এরপর ডাঃ সৌম্যদীপ্ত চৌধুরীর চেষ্টায়, তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ আবার মেয়েটির হত্যাকাণ্ডের নতুন করে তদন্ত শুরু করেন। ডাঃ চৌধুরী চান না কোনও মেয়ের ওভাবে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরেও তার বিচার না হওয়া। প্রকৃত দোষীদের শাস্তি চান তিনি। ডাঃ চৌধুরী শুধু ডাক্তার নন, তিনি একজন সমাজকর্মীও বটে। অনেক মানুষেরই তিনি বিপদে-আপদে পাশে গিয়ে দাঁড়ান। যাক, এখন মেয়েটির খুনের তদন্তভার দেওয়া হল এক মহিলা পুলিশ ইন্সপেক্টর ম্যাডাম ঈশানী দত্তকে। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, যে খুন হল সে একজন মহিলা, যাকে খুনি বলে সম্ভাব্য তালিকায় রাখা হল সেও একজন মহিলা এবং যিনি তদন্তভার নিলেন তিনিও একজন মহিলা, ম্যাডাম ঈশানী দত্ত। শুধু অভিযোগকারীই হলেন একজন পুরুষমানুষ, ডাঃ সৌম্যদীপ্ত চৌধুরী। এখন দেখা যাক তদন্ত কোন দিকে এগোয়। কিছুদিন পরে জানা গেল যে, মেয়েটি নাকি প্রকৃতপক্ষে খুন হয়নি। ওটা ছিল একটি পথনাটিকা। তবে যে তার লাশ পাওয়া গেল? আর সৎকার? এর সবই কি মিথ্যে? অবশ্য মেয়েটিকে, প্রবল বৃষ্টির দরুন শবদাহ দৃশ্যে কারও নজরে আসেনি! সে না হয় গেল, তবে ডাঃ সৌম্যদীপ্ত চৌধুরী যে সব জেনে শুনেও ওইদিন কেন নিশ্চিন্তে ঘুমোতে গেলেন, সেটাও এখন বিশেষ রহস্যের হয়ে দাঁড়াল!
---------------------------------------
সুপ্রভাত মেট্যা
গ্রাম :-বলরামপুর
পোষ্ট:-জয় বলরামপুর
থানা:-তমলুক
জেলা :-পূর্ব মেদিনীপুর