Click the image to explore all Offers

গল্প ।। যেতে যেতে ।। প্রতীক মিত্র

city

 যেতে যেতে 

প্রতীক মিত্র 


বাসে আমিও ছিলাম। বাসের কন্ডাক্টর রীতিমতো চেনে। মাঝে মাঝেই যাই। ভীড়ের মধ্যে কথা সব সময় না হলেও চোখাচোখি হলে একবার অন্তত হাসে ভদ্রলোক। আমাকে বেশ বিশ্বাস করে। ফলে আমি যদি বলতাম ওই বুড়ো-বুড়িটাকে আমার সন্দেহ হচ্ছে কন্ডাক্টর ঠিক শুনতো। কিন্তু না। আমি কিছু বলিনি। অপেক্ষা করেছি। মজা দেখেছি। ধুলাগড় টপকানোর পরই সামনের সিটটায় যে‌ কিছু একটা ঘটেছে বুঝলাম। টাকার ব্যাগটা তারা পাচ্ছে না। বুড়ো বুড়ি দুজনেরই কঙ্কালসার চেহারা। দেখলে মায়াই হয়। ফলে‌ যখন তারা বেশ জলভরা চোখে বলতে শুরু করলো যে টাকার ব্যাগটি তাদের খোয়া গেছে গুটিকয়েক সহযাত্রীদের সাথে‌ কন্ডাক্টরও সেটা মেনে‌ নিল। দুজনের মেলালে প্রায় দুশো টাকা ভাড়া সেটাও নিলো না। কন্ডাক্টর মালিককে কি বলবে? নিজের পকেট থেকে দেবে? না আমি আর বেশী ভাবিনি। যদিও আশপাশের দু'একজনকে ফিসফিস করে‌ নিজের মতামত জানিয়ে ছিলাম। তারা আমাকে হৃদয়হীন অমানুষই ভেবে থাকবে। এরপর গন্তব্য আসায় ব্যস্ততা দরুন আমিও নেমে‌ গিয়েছি। 

এরপর মানে বেশ অনেকটা পর... অনেক দিন, মাস পর বালি ফিরছি। সঙ্গে লাগেজও একগাদা। সেই সব লাগেজের চক্করে এদিক -ওদিক তাকানোর সুযোগই পাইনি। তারপর সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে। হঠাৎই চোখ গেল আরে এতো সেই বুড়ো -বুড়িটা না? এখানেও সেই একই নাটক চালাচ্ছে। কাঁচা খুবই কাঁচা। আমার মতন তো আরো অনেকে থাকতে পারে যারা ওদের চিনবে, ব্যাটারা যেকোনো মুহূর্তে ধরা পড়তে পারে। ভয় নেই। নাকি নিরুপায়? নাকি স্বভাব? না আমার আর আর্থ-সামাজিক কাটাছেঁড়া করে বিশেষ লাভ নেই কেননা কারোরই সমস্যা কিছু কম নেই। তবুও ঠিক সেই মুহূর্তে আমার মনে আসছিল সেই সব সহযাত্রীদের কথা যারা আমায় হৃদয়হীন বলেছিল। তাদের একজনও যদি থাকতো এই বাসে , তাহলে তারা হাতেনাতে প্রমাণ পেয়ে যেত। অবশ্য তারপর কি আমার জানা নেই। অগত্যা একটা বসার সিট পেলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করে‌ বাড়ির কথা, কত টাকা শোধ বাকি তার কথা  ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে ঢুলতে শুরু করি। বালি এলে নামার সময় আর খেয়ালই হয় না ওই বুড়ো-বুড়িটার কথা। আমি নেমে গেলে বাস বেশ উদাসীনভাবে চলে যায়। ওকে যেতে হবে আরো বেশ খানিকটা পথ।

====================
 প্রতীক মিত্র, কোন্নগর

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.