ছন্দ প্লাবন
উদয় নারায়ণ বাগ
ছন্দ মাত্রাতে ছড়া কবিতা লেখা কে না পছন্দ করে, আর করবেই না কেন ছন্দ মাত্রা দিয়ে কবিতা ছড়া লিখলে লেখাগুলো কত সাবলীল হয়, যা নদীর স্রোতের মতো মৃদুমন্দ গতি পেয়ে সাগরের বুকে ধেয়ে যায়। ছন্দের মাত্রা দিয়ে কবিতা ছড়া লিখলে লেখাগুলো অতি সহজেই পাঠকের মনের গভীর পোঁছে যায়, তাই এই সামান্য ছন্দ মাত্রার আলোচনা -
# ছন্দ: কাব্যের আবেগময় শ্রুতিমধুর শব্দ গুলোকে সুশৃঙ্খল ভাবে বিন্যস্ত করে যে মনোহর রূপমাধুরী সৃষ্টি হয় তাকে ছন্দ বলে।
ছন্দ সবসময় উচ্চারণের উপর নির্ভরশীল বানানের উপর নির্ভরশীল নয়। তাই ছন্দের মাত্রা নির্ণয় করতে হলে উচ্চারণ সঠিক হওয়া উচিত।
# মাত্রা - একক সময়ে অক্ষরের উচ্চারণেই হলো মাত্রা।
তাই জানতে হবে অক্ষর কাকে বলে?
# অক্ষর - বাকযন্ত্রের সাহায্যে এক ঝোঁকে শব্দের যতটুকু উচ্চারণ করা যায় তাই হলো অক্ষর।
যেমন -
"মাধুর্য - মা ধুর্ য " এখানে তিনটি অক্ষর।
"পথশিশু - প থো শি শু " এখানে চারটি অক্ষর।
" শব্দ - শব্ দ " এখানে দুইটি অক্ষর।
তাই এই অক্ষরের উচ্চারণ গুলো কে আমরা মাত্রা বলতে পারি। এই অক্ষরের মাত্রা এক-একটি ছন্দে আলাদা আলাদা।
# পর্ব- ছন্দময় কোনো কবিতাতে পাঠের সময় যে সম পরিমাণ মাত্রা যুক্ত বাক্যাংশের পর সামান্য বিরতির প্রবনতা আসে তাকেই পর্ব বলে।
পর্ব তিন প্রকার ১- পূর্ণপর্ব ২- অতিপর্ব ৩- উপপর্ব
"একলা দুপুর | খেলছে খেলা | বৈশাখের মাঝ | বেলায় ||
ধুলোর মাঝে | গড়াগড়ি | করছে সে-তো | হেলায় ||"
এখানে প্রথম লাইনে চারটি পর্ব আছে।
" একলা দুপুর "- পূর্ণপর্ব
" খেলছে খেলা "- পূর্ণপর্ব
"বৈশাখের মাঝ "- পূর্ণপর্ব
"বেলায় "- অতিপর্ব
আর এই অতিপর্বটি লাইনের প্রথমে থাকলেই উপপর্ব বলে।
"" একলা দুপুর খেলছে খেলা বৈশাখের মাঝ বেলায় "-
এই লাইনের পুরোটাকে "চরণ" বলে।
আর অনেক গুলো চরণ মিলে একটি "স্তবক " গঠিত হয়।
# অন্ত্যমিল- পর্ব কিংবা চরণের শেষের ধ্বনি বা ধ্বনি গুচ্ছের একি রকম ব্যবহারকে অন্ত্যমিল বলে।
যেমন - উপরের প্রথম ও দ্বিতীয় চরণে অন্ত্যমিল "বেলায় / হেলায়"।
# মধ্যখণ্ডন - আমারা মধ্যখণ্ডন একটি উদাহরণের সাহায্যে বুঝার চেষ্টা করি -
আম বাগানে জাম বাগানে
খেলব আজি খেলা,
হেসে গেয়ে কাটবে সবার
দিনের সারা বেলা। (স্বরবৃত্ত -৪+৪+৪+২)
আম বাগানে -৪ জাম বাগানে -৪
খেলব আজি -৪ খেলা-২
হেসে খেলে-৪ কাটবে সবার -৪
দিনের সারা -৪ বেলা -২
এখানে স্বরবৃত্তের - ৪+৪+৪+২ মাত্রা বিন্যাসকে পূর্ণ করেছে অর্থাৎ প্রতিটা পর্ব সমান মাত্রায় বিভক্ত হয়েছে। তাই এই ছন্দে কোনো মধ্যখণ্ডনের সমস্যা নেই।
আর প্রতিটা পর্ব যদি সমান মাত্রায় বিভক্ত না হয় তবে তা মাধ্যখণ্ডন হয়।
যেমন -
আমাদের একটি আছে ভাই
নামটি যে তার যদু,
স্বভাব খানি বড্ডো মিঠা
যেনো মৌয়ের মধু।
এখানে দেখা যাচ্ছে ছন্দ টির প্রথম চরণে
আমাদের একটি -৫ আছে ভাই -৩
নামটি যে তার -৪ যদু-২
অর্থাৎ এখানে স্বরবৃত্তের ৪+৪+৪+২ মাত্রা বিন্যাস পূর্ণ করেনি তাই এখানে মধ্যখণ্ডন হয়েছে।
এই মধ্যখণ্ডন ছন্দে ছড়া ও কবিতা লেখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই এর গুরুত্ব অনেক।
==================
উদয় নারায়ণ বাগ
গ্রাম নোয়াডিহি
পোস্ট রাঙ্গা
থানা হিড়বাঁধ
জেলা বাঁকুড়া
পিন-৭২২১৩৬
