Click the image to explore all Offers

গল্প ।। বান্ধবী ।। অঞ্জনা মজুমদার

 

  
  বান্ধবী 

অঞ্জনা মজুমদার  
 

অফিসে গিয়ে মনোজ দেখল তার পাশের টেবিলে একটি নতুন মেয়ে একমনে কাজ করছে ল্যাপটপে। চটপট প্রিন্ট বের করে ফাইল রেডি করে দিচ্ছে। বেয়ারা সুবল ওর টেবিল থেকে ফাইল নিচ্ছে আর বড় সাহেবের ঘরে দিয়ে আসছে। সুবল ওর স্পিড এর সঙ্গে পেরে উঠছে না। একবার মনোজের দিকে করুণ চোখে  তাকিয়ে সুবল মাথা নাড়ল। 
মেয়েটির চোখ এড়াল না সুবলের হাবভাব। মিষ্টি গলায় বলল, সুবল তুমি দশ মিনিট রেষ্ট নাও। কিন্তু ঠিক দশ মিনিট।  
সুবল হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। তাড়াতাড়ি চোখের আড়ালে চলে গেল। মেয়েটি মনোজের দিকে এগিয়ে হাত বাড়িয়ে বলল, হাই মিঃ মনোজ আমি তৃণা। আজ জয়েন করেছি। তোমাকে ফ্রেন্ড ভাবতে পারি? 
মনোজ হাত বাড়িয়ে বলল, নিশ্চয়ই। তুমি আমার নাম জানো? 
তৃণা বলল, আমি তোমার সব কিছু জানি। তুমি এ বছর পি এইচ ডি কমপ্লিট করে সান সাইনে জয়েন করেছো। ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট থ্রু আউট। 
মনোজ স্মিত হেসে বলল, আর তুমি কোন ইউনিভার্সিটি? কলকাতায় নতুন?  কোথায় থাকো? 
তৃণা আবারও হাসল, আমার কথা থাক। লেট আস ডু আওয়ার জব সিনসিয়ারলি। বলেই নিজের ডেস্ক এ ফিরে বেল বাজাল। সুবল শশব্যস্ত হয়ে ফিরে এলো। তার দশ মিনিট রেষ্ট এর সময় শেষ। 
মনোজ কাজে মন দিল। কিন্তু তার মন আর চোখ খালি তৃণার দিকে চলে যাচ্ছিল। তৃণা দ্রুত কাজ করে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে মনোজের দিকে চেয়ে মৃদু  হাসি ছুঁড়ে দিচ্ছে। 
সিনিয়র অফিসার মিঃ দেব মনোজকে ডেকে পাঠালেন। মনোজ, তৃণার সঙ্গে আলাপ হলো? সি ইজ জিনিয়াস। তুমি নতুন ব্রিজ এর ডায়াগ্রাম রেডি করেছো? 
ইয়েস স্যর। আপনার ল্যাপটপে শেয়ার করেছি। দেখাবো? 
মিঃ দেব মন দিয়ে দেখে বললেন, ও কে। দেখি।
মে আই কাম ইন স্যর?  তৃণার গলা।
ইয়েস কাম ইন। তৃণা দেখো দেখো মনোজ কি ব্রিলিয়ান্ট ডিজাইন করেছে।
তৃণা এক ঝলক ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বলল, বাট স্যর, একটু প্রব্লেম আছে। 
মিঃ দেব আর মনোজ অবাক। কি প্রব্লেম? 
তৃণা ল্যাপটপের মাউজ ঘুরিয়ে একটা পয়েন্ট দেখাল। মনোজ অবাক!  ইস্ এই প্রব্লেমটা তো খেয়াল হয়নি! 
মনোজ তক্ষুনি সমস্যাটা সমাধান করে ফেলেছে। সেটা বলতেই তৃণা সপ্রশংস দৃষ্টিতে তাকাল। মনোজ মনে মনে খুব খুশি হয়ে বলল, থ্যাঙ্ক ইউ তৃণা। 
তৃণা মাথা নেড়ে নিজের টেবিলে ফিরে গেল। 
এভাবেই চলতে লাগল। তৃণার কাজের ধরণের সঙ্গে মেলাতে মনোজও নিজেকে উজাড় করে কাজ করে যেতে লাগলো। সান সাইনে তার কাজের কদর বাড়তে লাগলো। 
কিন্তু অফিস থেকে বাড়ি ফিরে এসেও মনোজের তৃণার কথা সবসময় মনে পড়তে লাগলো। প্রিয় বন্ধু রনি বলল, আর মনে মনে প্রেম করে কি হবে?  বলেই দে তৃণাকে তোর মনের কথা। 
মনোজ ঠিক করেছে কাল বলেই ফেলবে তৃণাকে সে ভালবাসে। 
কিন্তু পরদিন কাজের চাপে সারাদিন ব্যস্ত রইল। যখন ভাবল এবার বলবে তখনই তৃণা বলল, মনোজ আমি খুব টায়ার্ড, বাড়ি যাই। এনার্জি স্টোর করতে হবে। 
মনোজ বলল, চলো যাই রেষ্টুরেন্টে। ভালো করে খাওয়া দাওয়া করে ফ্রেস হয়ে নেওয়া যাবে।
তৃণা বলল, সরি মনোজ আমি বাড়ি যাই। সেটাই ভালো হবে।
মনোজ বোকার মতো সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল। 
রনি হতাশ হয়ে বলল, আজও পারলি না বলতে।এভাবে তো চলতে পারে না। দাঁড়া, কাল আমিই একটা ব্যবস্থা করব। 
যা করবি দেখিস তৃণার কোনও অসুবিধে না হয়।
পরদিন প্ল্যান মতো মনোজ আর রনি প্রথমে তৃণার কাজে দেরি করিয়ে দিল। পরে দুজনে পথ আটকাল। 
আজ আমাদের সঙ্গে কাফেতে যেতেই হবে। 
তৃণা ছটফট করে বলল, আজ বড্ড দেরি হয়ে গেল। এখন না গেলে বিপদ হয়ে যাবে।
রনি বলল, আজ তো ছাড়া পাবে না তৃণা। 
মনোজ বলল, চলো না তৃণা। আমরা একসাথে কফি খেতে যাই।
তৃণা কোনও কথা না বলে দৌড়ে গিয়ে ওর জন্য ঠিক করা গাড়িতে উঠল। চলো কুইক।
মনোজ আর রনি থতমত খেয়ে গেল। রনি ছাড়ার পাত্র নয়। মনোজের হাত ধরে টেনে গাড়িতে উঠে তৃণার গাড়ির পিছু ধাওয়া করল। এ রাস্তা সে রাস্তা ঘুরে দ্রুতগতিতে তৃণার গাড়ি একটা বহুতলের নীচে থামল। পিছনে পিছনে রনির গাড়ি। 
তৃণা ছুটে লিফটের ভেতরে। 
লিফট ওপরে উঠে গেল। দুই বন্ধু দেখল লিফট দাঁড়াল ফোর্থ ফ্লোরে। পরেরবারে ওরাও লিফটে করে ফোর্থ ফ্লোরে পৌঁছে সামনের ফ্ল্যাট এর খোলা দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই হতবাক।
তৃণা বাইরের ঘরে পিছন ফিরে বসে। তার পিঠ থেকে একটা কর্ড বেরিয়ে চার্জিং পয়েন্টে লাগানো আছে। 
মনোজ আর রনি থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে। মুখে কথা নেই। কি দেখছে ওরা? 
সিনিয়র অফিসার মিঃ দেব হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলেন। 
একি মনোজ, রনি তোমরা?  আমি আন্দাজ করেছিলাম। তাই ছুটে এলাম। 
ওরা তৃণার দিকে হাত দেখিয়ে জিজ্ঞাসু চোখে মিঃ দেব এর দিকে তাকিয়ে আছে। 
হাসিমুখে মিঃ দেব বললেন, তোমরা বুঝতে পারোনি, তৃণা একটা হিউম্যান রোবট। অফিসের কাজ কর্ম দ্রুত করার জন্য ওকে আনা হয়েছে। মনোজের ওকে ভালো লাগে বুঝতে পেরেছিলাম। কাল তোমাদের সব সত্যিটা বলেই দিতাম। তার আগেই তোমরা নিজেরা আবিষ্কার করলে তৃণার সত্যিটা। সত্যি জেনেও আগের মতোই সিনসিয়ারলি তৃণার বন্ধু থাকবে তো মনোজ? 
মনোজ ধাতস্থ হয়েছে অনেকটা। বলল, স্যর তৃণা কি আমাদের কথা শুনতে পাচ্ছে? 
মিঃ দেব বললেন, না, চার্জ দেবার সময় ও নিজেকে অফ করে দেয়। 
মনোজ বলল, টেনশন করবেন না স্যর, তৃণা আমাদের আগের মতোই ভালো বন্ধু থাকবে। আমরা হাতে হাত মিলিয়ে সান রাইজের উন্নতির জন্য কাজ করে যাবো।
মিঃ দেব করমর্দনের জন্য হাত বাড়ালেন, থ্যাঙ্ক ইউ। তোমরা এরকমই স্পিরিটেড থাকো নতুনকে স্বাগত জানাতে। দুই বন্ধু একযোগে বলল, হ্যাঁ তৃণা আমাদের বন্ধু, হোক সে রোবট।
 ------------------------------------
 
ছবিঋণ - ইন্টারনেট।  
 
===================

অঞ্জনা মজুমদার 
এলোমেলো বাড়ি 
চাঁদপুর পল্লী বাগান 
পোঃ    রাজবাড়ি কলোনী 
কলকাতা    ৭০০০৮১

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.