বিসমিল্লায় গন্ডগোল
মাখনলাল প্রধান
বড্ড জ্বালাচ্ছে খাঁ সাহেব । আমার এই সত্তর বছর বয়সের উপর তোমার দাদাগিরি মানায় না জনাব । বেশ তো মাঝরাত পর্যন্ত কেঁদেকেটে ভাসিয়ে ঠাসিয়ে সারাপাড়া উজাড় করলে , রেয়াদ পর্যন্ত করলে না ছেলে- বুড়ো , ধাড়ি না মাঝারি । আবার সকাল হতে না হতেই , বাসি মুখ ধুতে না ধুতেই ফুকে চলেছ বাদশাহি গালপাট্টার ফুকফুকানি । তোমার মতলবটা কী খুলে বলতো শুনি !
বছর তেইশের কোঠায় তোমায় বোধহয় প্রথম নেমতন্ন করে এনেছিলুম । বাবাই বলেছিল , খাঁ সাহেব লোক ভাল রে , ধরে নিয়ে আয় একেবারে জমিয়ে দেবে । তখন তো এরকম ছিলে না হে !
তখন তো এরকম সিচুয়েশনও ছিল না । উড়ুউড়ু মন ছিল , ভরাট হৃদয় ছিল , চোখে বিনা সুরমায় কী যে নেশা ছিল । এখন দেখ , বুকের মধ্যে কেমন যেন বেড়াল ছানার লম্ফঝম্ফ একেবারে জগঝম্প । তখন সে বেশ সয়ে যেত ঘাপটি মেরে মনের মধ্যে রয়ে যেত । আপনাআপনি ভাবনাভাবনি , আমেজ করে মনের মধ্যে আউড়ে নিলে দিব্যি চলতো । আর এখন দেখ , যেন পাথর খাদান । আকপাক আইঢাই করে প্রাণ গোবিন্দ । শুতে বসতে শান্তি পায় না আমার কচি মন । এই যে কাল থেকে চালিয়ে যাচ্ছ বাপু একটানা শাঁখের করাত , জ্বালিয়ে যাচ্ছ ভিসুভিয়াস , হামানদিস্তা নাকি নারদের ঢেঁকি একেবারেই দারা সিংহের মতো । পিলেমোটা চিলেকোঠায় কানের উপর শাণের উপর থান ইট চাপা দিয়ে একা একা শুয়ে ছিলাম । দরজা জানলা না মেনে মাথার মধ্যে তূরপুন না হারপুন চালিয়ে চোখ-পাথরে জল ঝরিয়ে ছাড়লে হে ! বলিহারি তোমার কারিগরি । এতদিন তো এমন ছিলে না মিঞা , এটা তুমি ভাল করলে না ।
আমার একমাত্র মেয়ের বিয়েতে এভাবে যে আমার সঙ্গে জামার সঙ্গে জলে-কাদায় ল্যাপ্টালেপ্টি , একটানা বোল কান্নাকাটির পাল খাটানো সহ্য হয় না । যাওবা ছিল মনে মনে সংগোপনে , সদ্দি-বদ্যির রকম-সকম চাপিয়ে দিয়ে চালিয়ে নেওয়া আর হল না ।তোমার ওই চরিত্তিরে রাগ এসে যায় , তাও বোঝ না , নিজেকে ছাড়া কাউকেই খোঁজ না । বয়স তো কম হল না , মাথার মধ্যে কি একটাও তোমার জোনাকি নেই হে ?
এই দেখ না , উপর থেকে একা বোকা নামতেই পারছি না । দিব্যি বলছি , বলতে আমার ইচ্ছেও হয় না । কী বলব দাদা , বাড়ির ভেতর একগলা জল , তাও আবার মাঝে মাঝে হড়পা বানের মিশেল করে শিলং পাহাড় থেকে ঝরনা ধারায় ঝরতে আছে । কাছে গেলে ঝরবে বেশি সেই ভয়েতে সামলে আছি । পা বাঁচিয়ে গা বাঁচিয়ে নাক উঁচিয়ে সুড়ুৎ করে ফুড়ুৎ সুরে গেলাম চলে সাহেব যেন । এখন তো দেখি পালা করে এ ওকে দেয় ভাগাভাগির দুফোঁটা জল । এতেও আবার ভাব বেশি হয় গলায় গলায় বিনা সলায় , এখন বন্ধ ছলাকলা । এই জলযোগের খাতির খুব , পাড়া পড়শি সকলে দেয় ফোঁটায় ফোঁটায় , কেউ না পারলে আঁচল চাপে মুখে চোখে , শোকে ও দু:খে তারাও পাবে , এসব ক্ষেত্রে কেইবা হারে । বুঝলে মিঞা বাঙালির হিয়া পারেও যেমন ছাড়েও তেমন । দিয়েই দেবে দু ফোঁটা জল এই সম্বল । আর তুমি তখন থেকেই ষড়যন্ত্রীর মতো ইন্ধনের ইন্ধন জুগিয়ে বন্ধন ছেঁড়ার মহরতে কী যে কলা দেখাচ্ছ না একা একা !
যা বল তা বল , যতই বাজাও , বাজার মাতাও না কেন , এক হাঁটু কাদা তুলে দাও না কেন , আমি কিন্তু যা হবার তা হতেই দেব । মাঝখানটায় নেচে গেয়ে তুমি মাতিয়ে নাও । তুমি ভাবছো তুমিই সেরা , তুমিই ঠিক , আমি ভাবছি আমি শান্তিপ্রিয় লোক । - যাই যাই , আমি না গেলে বুঝলে , গাড়ি আবার ছাড়বে না । আমি না গেলে মন ভারি সকলের । নীচের থেকে নিজের থেকে ডাক এসেছে হে ! বুঝলে মিঞা বিসমিল্লা , আমি তোমায় মানছি না , আমি কিন্তু কাঁদছি না ।
===================
Makhanlal pradhan
Sukantapally , boral
Kol-700154
Contact 9830716809
