বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন :

ভৌতিক গল্প ।। একটা ভৌতিক সাইকেলের গল্প ।। মিঠুন মুখার্জী

 

  একটা ভৌতিক সাইকেলের গল্প 

মিঠুন মুখার্জী 


আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগের একটা ঘটনা। ভারতবর্ষ তখন স্বাধীনতা পেয়েছে দু'দশক হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার রাধাকান্তপুর ছিল সেই সময় বন জঙ্গলে ঘেরা। জনবসতি আজকের মত এত ঘন ছিল না। একটা বাড়ির সঙ্গে আর একটা বাড়ির দূরত্ব কম করে দুশো মিটার ছিল। মাঝে মাঝে ছিল গভীর বন- জঙ্গল। দিনের বেলাও সেই সকল জঙ্গলের ভিতরে সেভাবে সূর্যের আলো প্রকাশ করত না। ফলে একটা গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যেতে ওই জঙ্গলের ভিতরের রাস্তা ব্যবহার করতে হতো। দিনের বেলায় ওই জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যেতে গা ছমছম করত। রাতে দুই - চারজন একসঙ্গে যাতায়াত করত। একা যাওয়ার সাহস ছিল না তখনকার মানুষের। দিনের বেলাও টর্চ ব্যবহার করতে হতো কিছু কিছু জায়গায়। তবুও বাধ্য হয়ে কেউ কেউ একা যাতায়াত করত।
      এইসময় রাধাকান্ত পুরের একজন মাছ বিক্রেতা হাটে মাছ বিক্রি করে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই বাড়ি ফিরে আসত। নাম তার গণেশ পাইন। বাড়িতে যাওয়ার সময় কৃষ্ণ নাম জপ করতে করতে সে বাড়ি ফিরত। একদিন হাট করে বাড়ি ফিরতে তার বেশ খানিকটা দেরি হয়ে যায়। এক বন্ধুর কাছ থেকে একটা সাইকেল ধার নিয়ে বাড়ি আসার পরিকল্পনা করে সে। রাস্তায় গ্রামের দুজন পরিচিতর সঙ্গে দেখা হয়ে যায় তার। সে তাদের সঙ্গে বাড়ি ফেরার জন্য রওনা দেয়। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে তারা তিনজন কথা বলতে বলতে গ্রামের উদ্দেশ্যে আসছিল। তিন জনের হাতেই টর্চ। বনের ভিতর সন্ধ্যাবেলাতেই শিয়ালের ডাক শোনা যায়। থেকে থেকে সেই ডাক তাদের কানে ভেসে আসে। কিছুটা যাওয়ার পর গণেশ পাইন টর্চ মেরে দেখে, একটা আম গাছের সঙ্গে একটা একেবারে নতুন সাইকেল হেলান দেওয়া রয়েছে। সাইকেলের সামনে আবার ব্যাটারির লাইট আছে। গণেশ অন্য দুজনকে টর্চ মেরে সাইকেলটা দেখায়। সাইকেলের আশেপাশে কেউ ছিল না। এটা সকলকে অবাক করলেও গণেশ একটুও অবাক হয়নি। এক মুহূর্তের মধ্যে চিন্তা করে ফেলে, 'এই সাইকেলটা পেলে তার বাড়ি থেকে হাটে যাওয়া-আসার সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। রাত্রিবেলা যাতায়াতের কোনো সমস্যাই থাকবে না। ঈশ্বর বুঝি তারই জন্য এই সাইকেলটা এখানে রেখে গিয়েছেন।' সাইকেলটি নেওয়ার লোভে সে একেবারে অন্ধ হয়ে যায়। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সে। সঙ্গে থাকা দুই প্রতিবেশীকে বলে--- "সাইকেলটা কিন্তু বেশ খাসা ভায়া। আশেপাশে কারোকে তেমন দেখতে পাচ্ছি না। এটা আমি বাড়িতে নিয়ে যাব। প্রতিদিন হেঁটে হেঁটে হাটে যেতে খুব কষ্ট হয় আমার। এটি পেলে আমার অনেক উপকার হবে। আজ তো সবজির দোকানদার রমেনের সাইকেলটা চেয়ে এনেছি। অন্যের কাছে চাইতেও লজ্জা লাগে। ভগবান মনে হয় এই নতুন সাইকেলটা আমার জন্যই এখানে রেখে গিয়েছেন।" এই বলে সে রমেনের সাইকেলটা দাঁড় করিয়ে আগন্তুক নতুন সাইকেলটা আনার জন্য যায়। তখন প্রতিবেশী দুজনের মধ্য থেকে একজন তাকে বলে --- " দেখো গণেশ, এই ঘন জঙ্গলের মধ্যে এমন একটা নতুন সাইকেল রাখার বা থাকার কিন্তু অনেক রকম অর্থ হতে পারে‌। এই সাইকেলটাকে ফাঁদ হিসেবে কাজে লাগিয়ে ডাকাতরা আমাদের সমস্ত হরণ করতে পারে। তাছাড়া এর মধ্যে ভৌতিক কোন ব্যাপার-স্যাপার থাকতে পারে। যেটা আমরা নতুন সাইকেল বলে দেখছি সেটা ছুলে অন্য কিছু হয়ে যেতে পারে। বেশি লোভ করা ভালো নয় ভায়া। চলে আসো, এই সাইকেলটা নিতে হবে না।" এই প্রতিবেশীর কথা শুনে মাছ ব্যবসায়ী গণেশ পাইন একটু থমকে দাঁড়ায়। তারপর মনে মনে ভাবে--- "এই জঙ্গলে চোর ডাকাতের উপদ্রবের কথা আমি আগে তো কখনো শুনিনি। আর রইল ভূতের কথা। ওরা তো লোহার জিনিস ছোঁয় না, ভয় পায়। না, আমি এই সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করতে পারব না। আমার গিন্নি এই সাইকেলটা দেখলে খুবই খুশি হবে।" এরপর আরও খানিকটা এগিয়ে যায় গণেশ। প্রতিবেশীর কথায় গুরুত্ব দেয় না। তাকে সাইকেলের দিকে এগোতে দেখে অন্য প্রতিবেশী  বলে--- "গণেশ ভায়া দাঁড়াও। তুমি চট করে সাইকেলে হাত দেবে না। বিপদ কিন্তু বলে আসে না। তোমার লোভের জন্য আমরাও কিন্তু বিপদে পড়তে পারি। বেশি লোভ কিন্তু ভালো না। তুমি এক্ষুণি বাড়ি চলো।" এবারও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে গণেশ পাইন ভাবে--- " আমি বুঝেছি, এই নতুন আলো জ্বলা সাইকেলটির প্রতি তোমাদের দুজনের খুব লোভ হয়েছে। আমি ছেড়ে চলে যাই আর তোমরা পরে এসে সাইকেলটা নিয়ে যাও। তা আমি হতে দেবো না বাঁছাধন। এ সাইকেল আমি নেবই। যা হবার তা হবে। আমি আমার কষ্ট লাঘব করতে চাই। এই সুযোগ বারবার আসে না।" 
         এরপর দুজনের কথা পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে গণেশ পাইন নতুন সাইকেলে গিয়ে হাত দেয়। কিন্তু কিছুই হয় না। এরপর প্রতিবেশী দুজনের দিকে তাকিয়ে সে বলে--- "দেখো তোমরা, আমি সাইকেলে হাত দিয়েছি, আমার কিছুই হলো না। যতসব ভীতুর ডিম। সাহস না করলে ভয়কে জয় করা যায় না। এই সাইকেল কেউ রেখে হয়তো বাড়ি চলে গেছেন। তোমরা মিছে মিছে ভয় পাচ্ছ।" এরপর নতুন সাইকেলটা নিয়ে গণেশ রমেনের সাইকেলের কাছে আসে। তারপর  রমেনের সাইকেলে বসে নতুন সাইকেলটা এক হাতে ধরে বাড়িতে নিয়ে আসে। গণেশের বউ নতুন সাইকেলটা দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে। স্বামীকে জিজ্ঞাসা করে--- "কিগো এই নতুন লাইট লাগানো সাইকেলখানা তুমি কিনলে?  কত নিল এটা? খুব ভালো হয়েছে। এমন সাইকেল তোমার একখানা খুবই দরকার ছিল।" বউয়ের কথা শুনে গণেশ পাইন হেসে বলে---" আরে না না, সাইকেল আমি কিনি নি। রমেনের সাইকেল নিয়ে বাড়ি আসার পথে জঙ্গলে একটা আম গাছের সঙ্গে এই সাইকেল খানা হেলান দিয়ে রাখা থাকতে দেখি। আমি আমার কষ্টের কথা চিন্তা করে এই সাইকেলখানা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি।" মাছওয়ালার কথা শুনে বউ রীতা বিশ্বাস খুব খুশি হয়। সে তার স্বামীকে বলে---" তোমার ঘটে তাহলে বুদ্ধি আছে। বেশ করেছো তুমি। আমিও কদিন ধরে ভাবছিলাম তোমার একটা সাইকেলের খুবই দরকার। তাছাড়া আগের সাইকেলটাও তো মাস তিনেক আগে হাট থেকে চুরি হয়ে গেছে। তোমার সেদিনের চোখের জলের দৃশ্য আজও আমার দু-চোখে ভাসে।" এরপর হাত-পা ধুয়ে দুজন রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পরে। নতুন সাইকেলটা শোয়ার আগে বারান্দায় তুলে জানলার সঙ্গে লোহার শিকল ও তালা দিয়ে বেঁধে রাখে। তার পাশে রাখে রমেনের পুরনো ভাঙা সাইকেলটা। 
        তখন রাত দুটো বাজে। গণেশ ও তার বউ ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎ সাইকেলের লাইট আপনা থেকেই জ্বলে ওঠে। একজন পুরুষ মানুষের কণ্ঠস্বর সেই সাইকেলের মধ্যে থেকে ভেসে আসে। গম্ভীর কণ্ঠস্বরে কথা বলার সময় লাইটটি জ্বলে আর নেভে। চুপ থাকলে লাইট জ্বলে থাকে। সে বলে---" আমায় তোরা লোহার চেইন দিয়ে জানালার সঙ্গে বেঁধে রেখেছিস, তোদের এত সাহস। আমায় আমবাগান থেকে তোদের বাড়ি নিয়ে এসেছিস। তোরা সাইকেল নয় তোদের বিপদকে ঘরে ডেকে এনেছিস। তোদের কপালে আমি অনেক দুঃখ দেবো।" এই বলে লোহার শিকল কেটে বেরোনোর অনেক চেষ্টা করে সাইকেলটি। গভীর ঘুমে থাকায় গণেশ ও তার বউ কিছুই বুঝতে পারে না। এরপর পাশে থাকা রমেনের পুরনো সাইকেলটা নতুন সাইকেলের সঙ্গে লেগে পরে গেলে তার শব্দে গণেশের ঘুম ভেঙে যায়। গণেশ তার বউকে ডেকে নিয়ে কিছুটা ভয়ে ভয়ে বাইরে এসে দেখে নতুন সাইকেলটা যেমন ছিল তেমনি আছে , আর রমেনের সাইকেলটা পাশেই পড়ে রয়েছে। ডবল স্ট্যান্ড দেওয়ার পরও রমেনের সাইকেলটা কি করে পরে যায় তা বুঝে উঠতে পারে না গণেশ পাইন। এরপর এগিয়ে গিয়ে সাইকেলটা তুলে আগের মত ডবল স্ট্যান্ডে রেখে পুনরায় বউকে নিয়ে ঘরে চলে যায়  এবং শুয়ে পড়ে।
পরদিন সকালে চোখ-মুখ ধুয়ে স্নান সেরে অল্প খেয়ে দুটো সাইকেল গতরাত্রের ন্যায় চালিয়ে হাটে যায় গণেশ। একবারও সে টের পায়নি তার হাতে ধরা নতুন সাইকেলটি তার ও পরিবারের বিপদের কারণ হতে পারে। সাইকেলটির মধ্যে অধিষ্ঠিত আত্মাও তার খেল তখনো সেভাবে দেখায়নি। গণেশ তার মাছের দোকানের পাশের একটা ঘরের সাথে নতুন সাইকেলটা হেলান দিয়ে রেখে রমেনের পুরনো সাইকেলটা দিয়ে দেয়। এরপর মাছ বিক্রেতা গণেশ মাছ বিক্রিতে ব্যস্ত হয়ে যায় । বাজারের একজন মাছ ব্যবসায়ী তাকে জিজ্ঞাসা করে, "গণেশ ভাই, নতুন সাইকেলটা কবে কিনলে? কত টাকা পড়ল? দারুন হয়েছে তো সাইকেলটি। এতে আবার লাইট আছে দেখছি।" তার কথা শুনে গণেশ বলে --- " এই সাইকেলটা আমি কিনি নি, এটা আমার এক আত্মীয়ের। আমার কষ্ট লাঘব করার জন্য তিনি কয়েকদিন এটা আমাকে চালাতে দিয়েছে।" গণেশ এমন কথা বললেও অনেকেই তার কথায় বিশ্বাস করেনা । তাছাড়া তার দুজন প্রতিবেশী এই নতুন সাইকেলের রহস্য বা পাওয়ার ইতিহাস জানতেন। তাই গণেশের এমন উত্তর ধোপে টেকেনি। 
এই দিনও হাট থেকে বাড়ি ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায় গণেশের। শীতকালে  কখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে তা বোঝাই যায় না। নতুন সাইকেলে চেপে গণেশ জঙ্গলের ভিতর থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। কৃষ্ণপক্ষের ক্ষয়িত চাঁদ তখন আকাশে। লাইট জ্বলছে সাইকেলে। হঠাৎ সাইকেলটা খুব জোরে, আপনার থেকেই ছুটতে থাকে। গণেশ পা দুটো রডের উপর তুলে ধরে চিৎকার করতে থাকে। এমন হচ্ছে কেন তা সে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। এমন সময় সাইকেলের ভিতর থেকে একটা বিকট হাসি বেরিয়ে আসতে শোনে সে। হাসছে আর বলছে--- " কিরে তোদের ফ্রি খাওয়ার অভ্যাস আজও গেল না? অন্যের জিনিস না বলে নেওয়ার পরিণাম কি হতে পারে তা তুই আজ বুঝবি। আমি আজ তোকে উচিত শিক্ষা দেব।" কথার সঙ্গে সঙ্গে সাইকেলের লাইটটাও জ্বলা-নেভা করতে থাকে। এত জোরে সাইকেলটা ছুটতে থাকে যে গণেশ মাঝে মাঝে সিট ছেড়ে খানিকটা লাফিয়ে উঠছিল। রামনাম মুখে বললেও কিছুই হচ্ছিল না। এরপর সাইকেল থেকে বেশ খানিকটা দূরে গণেশ ছিটকে গিয়ে পড়ে। এরপর সাইকেলটা খানিকটা গিয়ে আপনা আপনি গণেশের দিকে ছুটে যায়। গণেশ বেশ আহত হয়। সাইকেলের সামনের চাকাটি গণেশের বুকের কাছে এসে বলে--- " দেব তোর হাড় গুড়ো করে? পিষে দেবো আমার সাইকেলের চাকায়? তবে বুঝতে পারবি কারো প্রিয় জিনিস না বলে নিয়ে গেলে তার ফল কি হতে পারে। "
এরপর গণেশ ভয়েতে কান্না করে দেয়। ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করে--- "কে আপনি? আমায় কেন মারার চেষ্টা করছেন? আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি? আমাকে ছেড়ে দিন। আমার এই সাইকেল চাই না। আমার কষ্ট লাঘবের জন্য আমি এই সাইকেলটা এই জঙ্গল থেকে নিয়ে গিয়েছিলাম। আমি ভুল করেছি। আপনি আমায় ক্ষমা করে দিন।" ভয়েতে গনেশ কাঁপতে থাকে, লুঙ্গির মধ্যে হিসু করে দেয়। বারবার প্রাণ ভিক্ষা চাওয়ার পর নতুন আলো জ্বলা সাইকেলটি তার থেকে খানিকটা দূরে সরে গিয়ে বলে--- " তুই সৎ মানুষ তাই তোকে আজ ছেড়ে দিলাম। একই ভুল বারবার করিস না। তাহলে দ্বিতীয়বার আমি তোকে ক্ষমা করব না।" তার কথার উত্তরে গণেশ বলে---" ঠিক আছে আমি আর কখনো এই সাইকেলের দিকে চোখ তুলে তাকাবো না। আমি কথা দিলাম।"
এরপর গণেশ পায়ে হেঁটে তার বাড়ির দিকে যাওয়ার উদ্যোগ করলে সাইকেলে অধিষ্ঠিত আত্মা তাকে বলে----" আমার সাইকেলে এসে তুই বস, আমি তোকে আজ বাড়ি দিয়ে আসছি। আর কখনো অন্যের জিনিস নিজের মনে করে নিবি না।" গণেশ তার কথা মতো সাইকেলে গিয়ে বসে। তার বাড়ির দিকে যেতে যেতে আত্মাটি বলে--- "আমি স্বপন রাহা। তোরা যে হাটে বসিস আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে ওই হাটে আমার মাছের আড়ত ছিল। আমি প্রায় রাধাকান্তপুরে হাটের শেষে এক আত্মীয়ের বাড়ি যেতাম। সেখানেই আমি থাকতাম। আমার প্রকৃত বাড়ি কলকাতায়। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর তিন কুলে কেউ না থাকায় ওই আত্মীয়ের  বাড়িতে এসে উঠি‌। ওখান থেকেই এই মাছের ব্যবসায় নামি। আমি এই সাইকেলটা কিনেছিলাম হাটে যাওয়ার জন্য। এটি আমার প্রাণের অধিক। এই সাইকেলটা আমি প্রচন্ড যত্ন করতাম। একদিন হাট থেকে রাধাকান্তপুরে ফেরার সময় ডাকাতদের খপ্পরে পড়ি আমি। আমার টাকা-পয়সা, সোনার চেইন ও আংটির লোভে তারা আমায় পিটিয়ে মেরে ফেলে। আমার সাইকেলটা তারা না নিয়ে চলে গিয়েছিল। আমার আত্মা এই জঙ্গলের মধ্যে ঘুরে বেড়িয়েছিল এই সাইকেলটার জন্য। সেই থেকে আমি এই সাইকেলটা আগলে রেখেছি। আমি আমার ভৌতিক শক্তির বলে এই সাইকেলটা জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে রাখি। মাঝে মাঝে আম গাছের নিচে এই সাইকেলটিকে আমি নিয়ে আসি। কারণ ওই আম গাছে এখন আমি রাত্রি হলেই থাকি। কোনো পথিককে দেখলে সাইকেলটি লুকিয়ে ফেলি। কিন্তু তোরা যেদিন সাইকেলটি দেখেছিলি সেদিন আমি আম গাছে ছিলাম না। দূর থেকে তোদের আমার সাইকেলটা নিয়ে যেতে দেখে আমি তোদের পিছু নিই।  সাইকেলের মধ্যে আমার আত্মা প্রবেশ করে। আমার ভৌতিক শক্তির বলে ত্রিশ বছর আগেকার সাইকেলটিকে আমি একই রকম রেখে দিয়েছি।" তার কথা শুনে গণেশ বলে--- "ডাকাতদের কি হলো? তাদের আপনি ছেড়ে দিলেন?" গণেশের প্রশ্নের উত্তরে সাইকেলে অধিষ্ঠিত আত্মা বলে---" না, কারোকেই  আমি রেহাই দেইনি। আমার সোনা দানা নেওয়ার পর তারা আবার এই জঙ্গলে দল বেঁধে আসতো অন্যের সবকিছু লুট করার জন্য। আমি কখনো সুন্দরী নারীর বেস নিয়ে, কখনো বড়লোকের ছদ্মবেশে, কখনোবা সুন্দর হরিণ সেজে তাদের সকলকে হত্যা করেছি। তাই তো এই জঙ্গল আজ চোর-ডাকাত মুক্ত। এই ঘটনা এখানকার অনেকেই জানে।" এরপর গণেশের বাড়ি এসে যায়। গণেশ সাইকেল থেকে নেমে যাওয়ার পর নতুন আলো জ্বলা সাইকেলটি জঙ্গলের দিকে ফিরে যায়। ফিরে যাওয়ার সময় গণেশ সাইকেলের উপর একজনকে বসে থাকতে দেখে। তার পরনের পোশাক সাদা। ক্রমে অন্ধকারের মধ্যে সে বিলীন হয়ে যায়।
=============


MITHUN MUKHERJEE 
C/O-- GOBINDA MUKHERJEE 
VILL -- NABAJIBAN PALLY
P.O + P.S --- GOBARDANGA
DIST -- 24 PGS (N)
PIN -- 743252

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.