প্রতিবাদী নির্মলা
অঙ্কিতা পাল (বিশ্বাস)
সেদিন ভোরবেলা নির্মলা পুকুর ঘাটে বসে জামা কাপড় পরিষ্কার করছিলো। ঐ যে মাটির রাস্তা ঠিক তার পাশেই রয়েছে তালগাছ পিছনে ঝোপঝাড় তাই স্পষ্ট করে কিছুই দেখা যায় না। হালকা শীতের আমেজ চারিদিকে কুয়াশা আচ্ছন্ন, কিন্তু নিস্তব্ধ পরিবেশে কোথাও যেন একটি আওয়াজ শুনতে পায় সে। তবুও নির্মলা কোনো কিছুকে গুরুত্ব না দিয়ে আপন মনে নিজের কাজ করতে থাকে।
পুকুর পাড়ে যে বাঁধানো শান আছে তাতে কাপড় আছাড় দিতে দিতে হঠাৎই নির্মলার চোখ পরলো দূরের ঝোঁপটার দিকে ; সেখানকার গাছগুলো কেমন যেন এদিক-ওদিক দুলছে ।
হাত থাকা কাপড় গুলি রেখে মনে সন্দেহ নিয়ে নির্মলা নির্ভয়ে ক্রমশ এগিয়ে চলে ....................
এবার সেই আওয়াজ আরও স্পষ্ট হতে থাকে তার কাছে ;
যত সে এগোয় আওয়াজ আরো স্পষ্ট হয়..............
মনে হয় যেন একপ্রকার গোঁগানির শব্দ কেউ যেন জোরে জোরে হাঁপাচ্ছে আর আ....... আ........... করে কাঁদছে।।
তক্ষনাৎ সে যা দৃশ্য দেখেছিলো;
তাতে প্রচন্ড রাগে ও ঘৃণায় ক্ষিপ্ত হয়ে হাতে তুলে নিতে বাধ্য হয়েছিলো একপ্রকার মোটা বাঁশের লাঠি এবং চিৎকার করে প্রতিবাদের স্বরে বলেছিলো - ঘরে মা বুন নেই বেয়াদব কোথাকার? ছেড়ে দে মেয়েটা রে নইলে মেরে আধমরা করে দেবো। বাপ মা খাইয়ে পড়িয়ে কি শিক্ষ্যে দেছে। মাঝ বয়সী মহিলার এমন চিৎকারে কয়েকজন যুবক পালাতে চেষ্টা করে কিন্তু নির্মলা ছাড়ে না কখনোই,
হাতে থাকা বাঁশের টুকরোটা দিয়ে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে সে।
কয়েকজন যুবক একটি নিরীহ বধির মানসিক ভারসাম্যহীন কিশোরী কে টানতে টানতে ঝোপের মধ্যে নিয়ে আসছিলো।
নিরীহ অবলা মানুষটা সেই সময় প্রাণ বাঁচানোর জন্য আর্তনাদ চিৎকার করতে থাকে ; তাও কারোর এতটুকু করুনা হয় না তার প্রতি।
ঠিক সেই সময় নির্মলা উপস্থিতি সেই মেয়েকে নতুন জীবন দান করে।
নির্মলার এমন চিৎকারে গ্রামের সমস্ত মানুষ ছুটে আসে সেখানে। তার এমন সাহসিকতা ও প্রতিবাদী মনস্কতার জন্য প্রতিটি মানুষ দুঃখী দরিদ্র নির্মলা কে আন্তরিকভাবে সম্মান করেছিলো সেদিন, কারণ তিনি না থাকলে একটি অসহায় মেয়েটার প্রাণ ও সম্মান হানির আশঙ্কা ছিলো।
এহেন জঘন্য মানসিকতার লোকজনকে গ্রামের মানুষ কখনোই মেনে নেয়নি তারা উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করেছিলো। গরীব ভারসামহীন বলে কি তার মান সম্মান থাকতে নেই ?
কিন্তু দুঃখী মানুষটার কেউ ছিলনা তাই তিনি মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে ধরে তার মাটির বাড়িতে নিয়ে গেলেন।
=================
ভাঙ্গড়, দক্ষিণ ২৪ পরগনা।
