Click the image to explore all Offers

ছোটগল্প ।। মালিকানা।। রণেশ রায়

 




দু কামরার ছোট ফ্ল্যাট শহরতলিতে। থাকে সুখেন বোস স্ত্রী বাচ্চা মাকে নিয়ে। বাবা মারা গেছেন অনেকদিন। মা অসুস্থ। মেয়ে বছর পাঁচেকের। সুখেন সওদাগর অফিসে কাজ করে। স্ত্রী ঘর সামলায়। সুখেন কাজের চাপে ঘরে বেশি সময় দিতে পারে না। মেয়েটি স্কুলে প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী। সুখী ছোট পরিবার। হেসে খেলে চলছিল। কিন্তু হঠাৎ যেন সব বন্ধ । মেয়ের স্কুল নেই নিজের অফিসের কাজ বাড়ি থেকেই করতে হয়। বাইরে বেরোন বন্ধ। যতটুকু বাজার করা বা অন্য প্রয়োজনে না গেলে নয়। এতদিন স্ত্রী নয়না বাজার করত। এখন সুখেনকেই করতে হয়। স্ত্রী রান্না ঘর মোছা কাপড় কাঁচার কাজ করে। তাছাড়া আছে মেয়ে ও মাকে দেখার ভার। কাজের যে মেয়েটি ছিল তার আসা বারণ।

কোথা থেকে যে করোনার হানা সব স্তব্ধ করে দিল। সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয় দরজা জানালা দিয়ে কখন ঘরে ঢোকে! তারপর শরীরে তো ছিদ্রের অভাব নেই। আর এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মনের ছিদ্র। সামাজিক দূরত্ব। কেউ যেন স্পর্শ না করে। যে যার নিজের। অন্যের সংস্পর্শ বিপদের কারণ। এক মহাভয়। মহামারি। রোজ আক্রান্ত আর মৃত্যু বেড়ে চলেছে। এটা শুধু এই বোসবাড়ি নয় সারা পৃথিবীর চেহারা। সত্যিকারের বিশ্বায়ন। করোনার বিশ্বায়ন। গরিব বড়লোক সব একাকার। করোনা ঘোর সাম্যবাদী। কাউকে রেওয়াত করে না। তার দৃষ্টিতে সবাই সমান। সবার জীবন যাপনটা খেয়ে পরে টিকে থাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে । গাড়ি থাকলেও তার ব্যবহার নেই, মলে গিয়ে কেনাকাটা বন্ধ হোটেল রেস্টুরেন্টে খাওয়া ফুর্তি বন্ধ। আরো মুশকিল বাচ্চাদের নিয়ে। তাদের খেলাধুলো বন্ধ। বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাই মোবাইল ল্যাপটপে দক্ষ হয়ে উঠছে। ফেসবুক হোয়াটস আপে নেশা চেপে বসছে। এটাই আজ জীবন। ডিজিটাল জীবন।

এই অসহায় জীবনের মধ্যেও বাড়ির গিন্নিরা নতুন একটা জীবনের স্বাদ পাচ্ছে যেন। করোনার আগে কেউ অফিস কেউ স্কুলে গেলে সারাদিন তারা বাড়িতে একা থাকতেন। ঘরের সব কাজ কাঁধে। নিজের সত্তা বিসর্জন দিয়ে একা সংসারের বোঝা টানতে হয়। সারাদিন কাজ কিন্তু তার মধ্যেই এক নিঃসঙ্গতা, গৃহস্থালির নিঃসঙ্গতা। আজ সেখানে স্বামী মেয়ে ছেলে সারাদিন সঙ্গে। ভরা সংসার। পরিবারের বন্ধনটা যেন এক আনন্দলোক। এতদিন পুরুষরা মনে করত বাড়িতে স্ত্রীদের বেশ মজা। কত বিশ্রাম। আর তাদের কত ঝামেলা। বিশ্রাম নেই, বাসে ট্রামে চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে যাতায়াত। রোজগারের ধান্দা। কিন্তু কয়েকদিন বাড়িতে থেকে বোস বাবুরা বোঝে ব্যাপারটা তা নয়। চোখে আঙুল দিয়ে করোনা দেখিয়ে দেয় কত ধানে কত চাল। সুখেন বাবু সব দেখে বোঝে ঘরের কাজে হাত লাগানো দরকার। স্ত্রীকে সাহায্য করার হাত বাড়িয়ে দেয়। এটা করোনার অনুগ্রহ নয়নার মত বিশুদ্ধ গৃহিনীর কাছে। সেখানেই তারা যেন আকাশে নিজেদের ভাগটা পায়। জানলা দিয়ে  দেখে আজ আকাশ পরিষ্কার। সন্ধ্যায় তারাগুলো কি উজ্জ্বল। জ্যোৎস্নার উদ্ভাসিত আলো বারান্দা হয়ে ঘরে। মনের কোণে উঁকি মারে। রাতের শয্যা ডাকে। সংসারে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। এই স্বামীস্ত্রী ভাগ করে সংসার চালাবার আনন্দটা আগে এরা পায় নি। তাই এত আতঙ্কের মধ্যেও করোনাকে ধন্যবাদ জানাতে হয়।

নয়নার ফুরফুরে মেজাজ। সামনে বসার ছোট্ট ঘরটায় সুখেন মোবাইল হাতে। রান্না হয়ে গেছে। এখন একটু বিশ্রাম। আর আজকাল সুখেন স্নানের সময় কাপড় কেঁচে দেয়। মেয়ে বসে গেছে অনলাইনের স্কুলে। নয়নার কবিতা লেখার ঝোঁক। করোনা যে সুখবার্তা এই দুর্যোগের মধ্যে তার কাছে পৌঁছে দিয়েছে তা নিয়ে সে স্বামীকে তার কবিতার একচ্ছত্র শোনান:

আগে কখনও আমি

ভাবিনি কি আনন্দ ঘরে

প্রিয়জনের মধুর মিলনে

নিভৃত একান্ত আশ্রয়ে

কি মধুর ভালোবাসার ছোঁয়া 

দোলা লাগে আমার অন্তরে।



স্ত্রীর এই উৎফুল্ল মনের ভাগিদার সুখেনও। সে ভাবে স্ত্রীকে এত স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দে আগে সে দেখেনি তো। তার মধ্যেও সঞ্চারিত হয় স্ত্রীর আনন্দ গুঞ্জন। সে পরিবারের এই পরিবেশটাকে উপভোগ করে। এর মধ্যেই এতদিনের অভ্যস্ত বাইরের জীবনটা তাকে টানে। সেখানেও যে খোলা মুক্ত জীবনের একটা আনন্দ আছে সেটা সে বোঝে। কিন্তু তাসত্ত্বেও এই সামাজিক দূরত্বের ব্যাপারটাকে সে কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। রোগএর হাত থেকে রেহাই পাবার জন্য শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সে তো পূরণ চলতি প্রথা। নতুন কিছু না। মনে আছে ছোটবেলায় পক্স হলে রোগীকে আলাদা করে দেওয়া হত। তার সংস্পর্শে অন্যদের হত। আর স্মল পক্স কলেরা সে তো প্রাণ নিয়ে টানা টানি। কিন্তু সামাজিক দূরত্বটা কি। এ যেন অস্পৃশ্যতা! এ নিয়ে যা চলছে মেনে নেওয়া যায় না। কাজের মেয়েটাকে সেইজন্য বিদায় নিতে হল। সুখেন বলেছিল ওদের দিকটা ভেবে সবেতন ছুটি দেওয়া হোক। কিন্তু সেটা কার্যকরী করা সম্ভব হয় নি। কাজের লোক ঢোকাই বারণ। স্ত্রীও তাকে বিনা কাজে বেতন দিতে রাজি নয়।


এমনি করে চলছে। এখন পুরো লক ডাউন। দুধ কাগজ এমন কি তরী তরকারীও ঘরে দরজার বাইরে ঠিক করে দেওয়া লোক পৌঁছে দেয়। সাফাই কর্মীরা ময়লা দরজার কাছ থেকে নিয়ে যায়। আর তাদের পেটের দায়ে করোনার ঝুঁকি নিয়েও বেরোতে হয়। তবে পরিবারের লোকের ভয় তারা করোনার বাহক। সুখেন ভাবে আমরা যে কেউ তো করোনার বাহক হতে পারি। তার কাছে সব গুলিয়ে যায়। ভাবে এই মানুষগুলোর যদি পেটে ভাত থাকত তবে তারাও তো করোনার ভয়ে কাজগুলো করতে অস্বীকার করতে পারত।তারা নিজেদের বাঁচাতে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার তাগিদ বোধ করত।তবে তাদের কিভাবে চলত। আর সবাই তো জানে উড়ো জাহাজে উচ্চবিত্তদের দেহ ভর করে এদেশে করোনা আমদানি হয়েছে। অথচ তারা করোনা বাহক হলো, তারাই অচ্যুত! আসলে যার ভাত নেই তার কিছুই নেই। আত্মসম্মান নেই নিরাপত্তা নেই। যাই হোক সুখেনবাবুদের বেশ চলছে খাওয়া দাওয়া আর নিজেদের মধ্যে আনন্দে। এতে নয়না বিশেষ খুশি। তার তো বাইরে জীবন নেই তাই এই বদ্ধ জীবনের কষ্টটা তার নেই। বরং এর মধ্যে সে একটা খোলা জীবনের নতুন স্বাদ পাচ্ছে আজ।

অনেক বেলা হয়েছে। সকালে দুধ আসে। কিন্তু আজ এখনও আসে নি। সুখেন বাবুর আবার দুধ ছাড়া চা চলে না। এদিকে সুখেন বাবুর অফিস থেকে খবর আসে তাদের চাকরি আর নেই। কোম্পানি এ মাসের মাইনে দিয়ে সামনের মাস থেকে তাদের আর দরকার নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে। সে খবরটা নয়না এখনও জানে না। সে দুধ না আসায় ব্যস্ত হয়ে ওঠে। সুখেন বলে পাশের ফ্ল্যাটে সৌরভদের বাড়ি থেকে আপাতত দুধ এনে কাজ চালিয়ে নিক পরে সুখেন বেরিয়ে ব্যবস্থা করবে। করোনার আগে এভাবে একে অপরের সাহায্যে হাত বাড়িয়েছে দু পক্ষই। তাই সেটা কোন সমস্যা নয় সুখেন ভাবে। নয়না বেরিয়ে যায় দুধের ব্যবস্থা করতে। সুখেন তখন ফোনে নিরাপত্তা অফিস থেকে জানতে পারে যে এখানে একটা ফ্ল্যাটে করোনা হওয়ায় ভয়ে দুধ দিতে ছেলেটি আসে নি। ইতিমধ্যে কিছুটা অপ্রস্তুত আর যেন বিরক্ত হয়ে নয়না ফেরে। সুখেন ওকে এরকম অবিন্যস্ত দেখে কি হয়েছে জানতে চায়। নয়না বলে সৌরভের মা দরজা খোলে নি। কার যেন করোনা হয়েছে এই ফ্ল্যাটে কোথায় তাই নয়নাকে বিদায় করে দেয়। সে যেন অচ্যুৎ। সুখেনকে এ কথা বলায় সুখেন হাসে। নয়না বিরক্ত হয়ে বলে:

----- হাসছ কেন?

সুখেন ওকে পাশে বসায়। ঠান্ডা মাথায় বলে:

----  এটাই হবার ছিল। এর জন্য রাগ করার কিছু নেই। আজ আমরা সামাজিক দূরত্বের মধ্যে আছি। শুধু এটা শারীরিক দূরত্ব নয়। একটা মানসিক দূরত্বও যা সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টি করে। সেই জন্যই তো কাজের মেয়েকে বারণ করেছি বা করতে বাধ্য হয়েছি। কেউ কাউকে বিশ্বাস করছি না। ও ভাবছে তোমার করোনা আর তুমি ভাবছ ওর। কাউকে ব্যক্তিগত ভাবে দোষ দিয়ে লাভ নেই।

নয়না কথাটা পুরো মানে না। মনে করিয়ে দেয় সে সৌরভ এর জন্য কত কি করেছে। সুখেন জানে সেটা। কিন্তু এখন যে অবস্থা বদলেছে সেটা আর কে কাকে বোঝাবে? যাই হোক সে জানায় অফিস থেকে খবর এসেছে তার সামনের মাস থেকে চাকরিটা নেই। নয়নার মাথায় হাত। এবার কি হবে। সুখেনের ইঅফিসের ওপর রাগ করে সে বলে:

------ এ কি? এতদিন অফিসকে দিয়ে গেলে। আজ এই প্রতিদান?

সুখেন বলে:

----- কোম্পানী জীবনে এটাই নিয়ম। ওটা আমার কোম্পানী আমি ঠিক যেমন কাজের মেয়েটার কোম্পানী।

নয়না বলে:

------ কাজের মেয়ে আর তুমি এক হল?

সুখেনের উত্তর:

----- হ্যাঁ একই। আমার কোম্পানী আমার প্রভু আমি যেমন কাজের মেয়েটির প্রভু। যাই হোক আমাদের কিছুদিন চলে যাবে। ব্যাংকে কিছু টাকা আছে প্রভিডেন্ড ফান্ড আছে। কিছুদিন পর একটা কিছু হয়ে যাবে। আমি ভাবছি ওই মেয়েটির পরিবারটার কি হবে।  ওদের যে কিছুদিনও চলবে না। আমি তোমাকে না জানিয়ে দুমাস মাসে ৭৫ শতাংশ মাইনে দিয়ে এসেছি। কিন্তু এখন সেটা তো আমার পক্ষে আর সম্ভব নাও হতে পারে।




=========================================================

Better  Some Tabs. For You

1. 



Samsung Galaxy Tab A 10.1 (10.1 inch, RAM 2GB, ROM 32GB, Wi-Fi-Only), Black

Deal Price: Rs. 12,499.00

Extra 10%  direct off  on SBI Card (20-23 Jan, 2021)

For Details CLICK HERE

2. 


Lenovo Tab M10 HD Tablet (10.1 inch, 2GB, 32GB, Wi-Fi Only) Slate Black

Deal Price: Rs. 9,990.00

Extra 10%  direct off  on SBI Card (20-23 Jan, 2021)

For Details CLICK HERE

3. 

Samsung Galaxy Tab A7 (10.4 inch, RAM 3 GB, ROM 32 GB, Wi-Fi-only), Grey

Deal Price: Rs. 16,999.00

Extra 10%  direct off  on SBI Card (20-23 Jan, 2021)

For Details CLICK HERE

=======================

Click Here To Find More Tabs.

========================

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.