শরতের বিকাল । গরম ভালই । তবে পূজোর গন্ধ যেন চারদিকে । শিউলি, কাশ, পদ্ম এর ছড়াছড়ি আর আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘের ওড়াওড়ি ! মহালয়া আসছে ।কিছুদিনের মধ্যেই ছুটি পড়বে !বাইরে মৃদু হাওয়া বইছে । স্কুল থেকে বাড়ী ফিরলাম আমি । পিঠের ব্যাগটা টেবিলে রেখে ঘরে ঢুকে দেখলাম খবর এর কাগজ নিয়ে বসে আছে রুশাদি । বাড়ীতে রয়েছে সে । কাল ওদের স্কুলের প্রতিষ্ঠা দিবসে অনুষ্ঠান হয়ে আজ ছুটি । ওটায় নাকি ওদের স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠান ।ওপরে ফ্যান ঘুরছে, , রুশাদি এক ঝলক তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল স্কুল এর পর চাউমিন খেতে গেছিলি বুঝি ঋষি ? মানে…. তুমি কি করে ? একটু অবাক আমি , আরে তোর প্যান্ট এর পকেট এর একটু নিচে একটা চাউমিন এর টুকরো , রুশা দি কাগজ থেকে মুখ না সরিয়েই বললো । গোয়েন্দা গল্প পড়ে পড়ে তোমার ব্রেন দেখছি ভালই শার্প হয়ে গেছে । আমি নিজে দেখতে পাইনি তুমি কেমন বুঝে গেলে ! আমি বললাম। এবার পূজোর ছুটিতে আমরা দুই তুতো ভাই দিদি পুরী যাবো । টিকিট কাটা আছে। জেঠু মানে রুশাদির বাবার কোনো বন্ধুর হোটেল বুক করা আছে । ভেবেছি ওখানে গিয়ে বুঝে পরিচয় দেবো । শুনেছি ওই বন্ধু নাকি জেঠুকে পুরী এলে তাঁর বাড়ীতে থাকার কথা বলেছেন । ওনার বাড়ীতে নাকি কিছু একটা অমূল্য জিনিস আছে ।জেঠু কি সেটা বলেনি । বলেছে যদি যাস দেখতে পাবি । জেঠুর অবশ্য শোনা । আমরা নিজেদের মতো থাকবো বলে আপাতত কিছু বলিনি যে আমরা কে ! আমাদের মা বাবারা যাবে গ্রামের বাড়ীতে । সেখানে সারা বছর ফল ফুলের ছড়াছড়ি । গ্রামের বাড়ীতে এই সময় আমাদের ঠাকুর এর পালা পড়ে । আমরাও যাই কিন্তু এবার আমাদের মন বাইরে যাবার । রুশাদি কিছুমাস হলো হাই স্কুলে চাকরি পেয়েছে।অঙ্কের টিচার । বয়স পঁচিশ। বয়েস কাট চুল ।হাইট ৫'৮" । সাধারণ বাঙালী মেয়েদের তুলনায় বেশ খানিক টা লম্বা । আমি ওর সমান সমান । ক্লাস নাইনের স্টুডেন্ট । আমাদের দুজনের নানারকম বই পড়া বিশেষ করে গোয়েন্দা গল্প পড়া নেশা ।
দেখতে দেখতে আমাদের পুরী যাবার দিন চলে এলো । লক্ষ্মী পূজোর বিসর্জনের পরদিন যাওয়া । দুর্গা পূজোর পর মনটা কেমন যেন বিষণ্ণ থাকে ! বাতাসে কেমন উদাসী সুর । তাই বেড়াতে যাওয়ার জন্য মনটা আনন্দে ছিল। রাত ৯ টায় ট্রেন ।ব্যাগ পত্র নিয়ে আমরা বর্ধমান থেকে হাজির হলাম আগেই হাওড়া স্টেশনে । রুশাদির সাথে একটা স্পেশাল ব্যাগ ।যাতে সে টর্চ ,ওষুধ , আতস কাঁচ, ডায়েরী ,পেন টুকটাক রেখেছে ।আতস কাঁচ দেখে জিজ্ঞেস করেছিলাম আমি, এটা কি হবে ? রুশাদি বলেছিল যদি কিছু দরকার হয় । বললাম গোয়েন্দা গিরি করবে নাকি কিছু হলে! রুশা দি হাসলো , বললো পেতেও তো পারি ! ট্রেনে উঠে বসলাম আমরা । আমাদের সামনের সিটে এক ভদ্রলোক ও তাঁর পাশে জানালার ধারে আরেকজন বয়স্ক মহিলা বসলেন । এইদিকে রুশাদি জানালার ধারে বসলো । পাশে আমি , আমার পাশে আপাতত খালি । কামরায় আরেক ভদ্রলোক যাঁর চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা , সাদা ধুতি পাঞ্জাবী ,হাতে দামী ঘড়ি , গলায় সোনার চেন,লম্বায় প্রায় আমার মতো এক ভদ্র লোক উঠে এসে সিট মিলিয়ে ওনাদের পাশে বসলেন । এখনকার যুগে ওনার বয়সী কাউকে অনুষ্ঠান ছাড়া সাধারণত ধুতিতে দেখা যায়না । ওনার চেহারায় আভিজাত্যের ছাপ একটা । উনি বার বার রুশাদির দিকে তাকাচ্ছিলেন সেটা আমাদের নজর এড়ায় নি ।ওনার চোখে মুখে একটু জিজ্ঞাসু ভাব । জিজ্ঞেস করেই ফেললেন রুশাদিকে তিনি, আচ্ছা তুমি কি অলোক চ্যাটার্জির মেয়ে ? হ্যাঁ কিন্তু আপনি কিভাবে জানলেন ? রুশা দি জানতে চায়লো, উনি বললেন ,আলোক আমার বন্ধু আমার নাম শ্যাম কান্ত চৌধুরী । পুরীতে থাকি ।তোমার বাবার সাথে কিছুদিন আগে হটাৎ দেখা হয়েছিল ।ছবি দেখেছিলাম তোমার । তাই চেনা চেনা লাগলো আবছা ভাবে ।ব্যবসার কাজে আমাকে কলকাতায় আসতে হয় । আলাপ শুরু হলো, শ্যামকান্তবাবু জানালেন ওনার হোটেলের ব্যবসা সাথে আরও কিছু সাইড বিজনেস আছে । আমি আর রুশা দি চোখাচোখি করলাম দুইজনেই হয়তো একই ভাবছি , ইনি জেঠুর সেই বন্ধু। উনি বলে চললেন , তাঁর আসল বাড়ী কোলকাতায় কিন্তু কর্মসূত্রে ওরা বিহার পরে ওড়িশা তে আসে। এক ছেলে ব্যবসায় আছে, আরেকজন ডাক্তারী পড়ছে ,এক মেয়ে ইলেভেনে পড়ছে । আমরা কোন হোটেলে আছি জানতে চায়লেন শুনে উফুল্ল হয়ে বললেন , আরে ওতো আমাদের হোটেল সাগরিকা । বললেন শোনো তোমরা হোটেলে না আমাদের বাড়ীতে থাকবে ।আমার স্টেশন থেকে সামান্য দূরে বাড়ী । হেঁটে সিবিচ আসা যায় । বাড়ীর গাড়ীতে সমুদ্র দেখে এসো। সমুদ্র স্নান সি বিচ এ বেড়ানো বাড়ী থেকেই করতে পারবে । আসলে বহুদিন রাজ্য ছাড়া বাঙালী দেখলে খুব ভালো লাগে , তার ওপরে যদি তারা পরিচত কেউ হন । খুব ভালো লাগে । বাড়ীতে আমি পুরো বাঙালিয়ানা বজায় রেখেছি। রুশা দি বললো,তাই কি ধুতি পাঞ্জাবি ? উনি হাসলেন হ্যাঁ আমার শখ ! বাড়ীতে তোমাদের জেঠিমা আর নীলম আছে, মানে আমার মেয়ে , ভালো লাগবে। বড়ো ছেলে আদিত্য হোটেলের রুমেই থাকে । সপ্তাহের শেষে আসে । তখন আমি আবার যাই। ছোট ছেলে অনন্ত হোস্টেলে থাকে, ছুটিতে আসে। এখন সেও তার বন্ধু দের সাথে বেড়াতে গেছে কদিনের জন্য । আমি বড়ো ছেলেকে বলে দেবো , তোমাদের বাড়ীতে নিয়ে যাচ্ছি। ওনার আন্তরিক ব্যবহারে আমরা না করতে পারলাম না। আলাপে যোগ দিলেন অন্য দুই সহযাত্রী ও ,ওনারাও পুরী যাচ্ছে ।আগে থেকেই ওনাদের হোটেল বুক আছে। শ্যাম কান্ত বাবু বলছিলেন পুরীর নানা রহস্যের কথা । মন্দিরের চূড়ার পতাকা হাওয়ার বিপরীত দিকে বয় দিনের বেলা সমুদ্রতট থেকে সমুদ্রের দিকে আর সন্ধ্যায় সমুদ্র থেকে সমুদ্র তটের দিকে হাওয়া আসে কোনোদিন মন্দিরের ছায়া দেখা যায়না, চূড়ার ওপর দিয়ে কোনো এরোপ্লেন যেতে পারেনা । মন্দিরের যেকোনো জায়গা থেকে পুরীর সুদর্শন চক্র দেখা যায় । মন্দিরে সিঁড়িতে পা দিলে প্রথম সিঁড়ি থেকে সমুদ্রের শব্দ শোনা যায় দ্বিতীয়তে নয় আবার তৃতীয় তে পা দিলে শোনা যায় ।এমন নানা গল্প শোনাচ্ছিলেন জগন্নাথ এর ভোগ রান্নার নানা কথা বললেন । পর পর হাঁড়ি চাপানো হয় নীচে চুলা বা উনোন ধরানো হয় জ্বালানি কাঠে ,ঠিক সব থেকে ওপরের পাত্রের খাবার আগে সেদ্ধ হয় । পর পর সেদ্ধ হয়ে শেষে নীচে । সারা বছর একই পরিমাণ ভোগ রান্না করলেও যত লোকই বেশি হোক না কেনো সবার কুলিয়ে যায় । কিকি রান্না হয় কত জন সেবক কাজ করে রান্নায় নানা গল্প বলতে লাগলেন । রোজ নতুন পাত্রে রান্না হয় । কিভাবে ১২ বছর পর পর পুরোহিত স্বপ্নাদেশ পান আর নতুন নিম কাঠ দিয়ে জগনাথ ও বলরাম আর সুভদ্রার কলেবর বানানো হয় । মন্দির এর রত্ন ভান্ডার এর চাবি পাওয়া যায়নি একবার নাকি খুলতে গিয়ে ভিতর থেকে নাগের হিসহিস আওয়াজ শুনে কেউ আর সাহস পায়নি । সবাই খুব উপভোগ করছিলাম অজানা ঘটনাগুলো শুনতে । কিছু ক্ষন গল্পের পর আমরা খেয়ে নিলাম । পরোটা ,আলুর দম ,আর মিষ্টি । আপার আর মিডল বার্থ এ শুয়ে পড়লাম রুশাদি আর আমি । লোয়ার যার তিনি এখনো আসেননি । ওদিকে লোয়ার এ ভদ্র মহিলা ,মাঝে ওনার স্বামী আর ওপরে র বার্থে শ্যাম কান্ত বাবু শুলেন । শুতে না শুতে নাক ডাকা শুরু হলো দুই ভদ্রলোকের । আমাদের ঘুম আসছিল না । ফোনের টাওয়ার নেই , দুজনে ছোট চার্জার নিয়ে শুয়ে শুয়ে একটু বই উল্টে তার পর ঘুমিয়ে গেলাম ।মাঝ খানে ট্রেন এ খড়গপুর থেকে এক যাত্রী উঠলেন । ঘুম ঘুম চোখে দেখলাম তিনি নিজের সিট খুঁজে শুয়ে পড়লেন । পরদিন ভোর হতে না হতে শ্যাম কান্ত বাবু সকল কে উঠিয়ে দিলেন । সকলে মুখ হাত ধুয়ে বসলেন সিট এ ব্যাগ পত্র গুছিয়ে রাখলেন আর কিছু ক্ষন পরেই পুরী ঢুকবে । চায়ের জন্য সকলের মন উসখুস করছিল । হালকা হালকা বাতাস আসছিল জানালা দিয়ে । রাতের ভদ্রলোক কে দেখলাম ।বয়স আন্দাজ ২৭/২৮ । হালকা চাপ দাড়ি ফর্সা লম্বা । সবাই রেডি হয়ে বসলাম, ৬ টায় ট্রেন পুরী স্টেশনে ঢুকে গেলো।
শ্যাম কান্ত বাবুর বাড়ীর গাড়ীতে ওনার সাথে রুশাদি আর আমি ওনার বাড়ীতে গেলাম । বিশাল বাড়ী । ওপর নীচ মিলিয়ে বেশ কটা ঘর । সাজানো গোছানো । জমিদার বাড়ীর মতো দেখতে ।নীচে বৈঠক খানা । ওখানে বাইরের লোকদের সাথে কথা বার্তা চলে । চারদিকে নানা গাছপালাও চোখে পড়লো। বড়ো উঠোনের একপাশে গ্যারেজ ।দুটো গাড়ী । জায়লো আর স্পার্ক। বোঝায় যায় তিনি শৌখিন । বৈঠক খানা ঘরে দামী সোফা সেট , টেবিল ।।সুন্দর বড়ো ফুলদানি । তৈল চিত্র কিছু একদিকে বই এর আলমারি ।ওপরে ঝাড় লণ্ঠন ঝুলছে । অন্য একটি ঘরে সাজানো আছে বাদ্য যন্ত্র ।পুরোনো দিনের কিছু ! আমাদের সাথে ,স্ত্রী ও মেয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন উনি ,এই হচ্ছে আমার বন্ধু অলোক চ্যাটার্জীর মেয়ে রুশতী চ্যাটার্জী ও ভাইপো ঋষভ চ্যাটার্জী । বেড়াতে এসেছে । আমাদের হোটেলেই বুক করেছিল কিন্তু আমি এখানে নিয়ে আসি । ওনারা খুশী হলেন । কথার মাঝে এক ভদ্র লোক এলেন বললেন স্যার দুজন ভদ্রলোক সেই জমির ব্যাপারে একটু দেখা করতে এসেছেন । শ্যাম কান্ত বাবু বললেন আচ্ছা চলো যাচ্ছি, তারপর আমাদের দিকে ঘুরে বললেন এ হলো আমার সেক্রেটারি নিশীথ ব্যানার্জী । আমাদের নমস্কার বিনিময় হলো । আমরা দেখলাম ওনার পরণে বুশ শার্ট , লম্বা ,ফর্সা ,চোখে সরু ফ্রেমের চশমা । লম্বা হাইট।বয়স আন্দাজ ২৭/২৮ ওনারা চলে গেলেন । শ্যাম কান্ত বাবুর মেয়ে নীলম বেশ মিশুকে হাসিমুখী । লম্বা চুল তার । নিজের ঘরে নিয়ে গেলো আমাদের, ওর সখ নানা দেশের স্ট্যাম্প সংগ্রহ । আমাদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো । দেখলাম ঘরে শান্তিনিকেতন এর কাজ করা কার্পেট পাতা । জামাটাও শান্তিনিকেতন এর জামা । রুশা দি জিজ্ঞেস করায় বললো সে শান্তিনিকেতনের জিনিস পছন্দ করে । ওয়েস্ট বেঙ্গল গেলে নিয়ে আসে এমন! নীলম অন্য ঘর দেখাতে লাগলো একটা ঘরে বেশ কিছু বাদ্য যন্ত্র ।পুরোনো দিনের দেখেই বোঝা যায় আবার তার সাথে এখানকার । নীলম জানালো তাদের বাড়তে বহু আগে থেকে গানের চর্চা আছে ।সেও শেখে আবার তার দুই দাদা একটু জানে ,বাদ্য যন্ত্র গুলো নিয়মিত মোছা হয় কোনো ধুলো নেই , যত্ন করা হয় বোঝা গেলো । ঘরে আরও কিছু পুরোনো দিনের জিনিস চোখে পড়লো । জিজ্ঞেস করায় নীলম বললো তার বাবার পুরোনো জিনিস সংগ্রহের একটু আধটু শখ আছে । শ্যামকান্ত বাবুর স্ত্রী মানে জেঠিমা আমাদের আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন । জেঠু আর শ্যাম কান্ত বাবু ফোনে কথা বললেন। আশ্বস্ত হলেন জেঠু , বন্ধুর ওখানে আমরা উঠেছি শুনে । শ্যামকান্ত বাবু ওনার বড়ো ছেলেকে ফোনে সব বললেন । ঠিক হলো জল খাবার খেয়ে সমুদ্রে স্নান করতে যাবো আমরা । নীলম ও থাকবে । পরে বিকালে সমুদ্রের ধারে বেড়াতে যাবে আমরা । তারপর একদিন জগন্নাথ দর্শন , একদিন কোনারক মন্দির আর একদিন ওড়িশার বালুখন্ড জঙ্গলে যাওয়া যাবে । শেষ দিন ফের সমুদ্র স্নান করে বিকালে কিছু কেনাকাটা করে পরদিন বাড়ী ফেরা।
পুরীর সমুদ্রের কি গর্জন ! বড়ো বড়ো ঢেউ! উথাল পাথাল ঢেউ এ উপুড় ঝুপুর স্নান । হাওয়া আর ঢেউ এর তালে মন নাচতে লাগলো । চারদিকে কত লোক । খালি বাংলা কথা কানে আসছে! মনে হচ্ছে না আমরা বাংলার বাইরে আছি ! দুপুরে যত্ন করে করে খাওয়ালেন জেঠিমা ।ভাত, শাক ভাজা , পটল ভাজা, ডাল ,শুক্ত , পাবদার ঝাল , দই আর চাটনি । পেট ভরে খেলাম । শেষ বিকাল বিচে সমুদ্রের ঢেউ দেখতে খুব ভালো লাগছিল । এখন সমুদ্র অনেক টা শান্ত যেন! সারাদিন দুষ্টুমি করে সে যেন এবার থেমেছে । যেন তার ঘুম ঘুম ভাব ! বাদাম ঝালমুড়ি খেতে খেতে দেখতে লাগলাম আমরা সমুদ্রের সেই মন উদাস করা রূপ! আমাদের সাথে শ্যামকান্ত বাবু ও নীলম ছিল! কিছু ক্ষন কাটিয়ে বাড়ী ফিরতেই শ্যামকান্ত বাবুর চাকর এসে বললো বাবু এক ভদ্রলোক আপনারা বেরিয়ে যাবার পর এসেছিলেন । এক ঘন্টা অপেক্ষা করে চলে যান । যাবার আগে একটা কাগজ রেখে যান , টেবিলে রাখা ছিল কাগজ টা , শ্যাম কান্ত বাবু কাগজ টা নিলেন, তার পর বিরক্তি সূচক শব্দ প্রকাশ করলেন । রুশা দি বললো কি ব্যাপার জেঠু? উনি চিঠি টা দেখালেন, দেখলাম লেখা আছে "প্রিয় শ্যামকান্ত বাবু আপনার বাড়ীর সব থেকে দামী জিনিস টা দিন । ওটা আমার খুব দরকার । আমি মূল্য দেবো এর জন্য। কাল সন্ধ্যার মধ্যেই চাই । আমি যাবো। পুলিশ কে বলে বিপদ বাড়াবেন না । শ্যাম কান্ত বাবু বললেন বহু যুগ আগে আমাদের বংশের এক পূর্ব পুরুষ মহারাজ চন্দ্র গুপ্ত মৌর্যর সভায় গান শুনিয়ে একটি হার উপহার স্বরূপ পান , তার পর থেকে ঈশ্বর এর কৃপায় আমাদের বংশে উন্নতি । খুব পয়া । একবার সেই হার সেফটির জন্য ব্যাংকে রেখে ছিলাম কিন্তু সেবার কি কারণে জানিনা ব্যবসায় লোকসান হয় । তাই সেই থেকে বাড়িতেই নিরাপত্তা দিয়ে রাখি । এই হার বংশ পরম্পরায় আমার কাছে এখন । এর জন্য আমি বাড়ীর কোনো সম্পত্তি নিই নি । দিয়ে দিয়েছি ভাগ অন্য শরিক দের ।কিছুদিন আগে কেউ ফোন করে হারটা বিক্রি করার অফার দেয় ফোনে । আমি না করি দিই । মূল্য দেবে বলছে কিন্তু সেই মূল্য অনেক কম আর তাছাড়া আমাদের বংশের পয়া জিনিস আমি বিক্রি করতে চাইনা । জেঠুর কথা মনে পড়লো তাহলে এই সেই অমূল্য জিনিস । রুশা দি বললো যদি কিছু মনে না করেন হার টা দেখতে পারি জেঠু? নিশ্চয় ! আমি এমনিতেই তোমাদের দেখাতাম! তবে আমি এসব কেয়ার করিনা ! বলে পুরোনো জিনিস সাজানো আছে যে ঘরে ওখান থেকে একটা হার বার করে আনলেন । অবাক হয়ে দেখলাম আমি আর রুশা দি , কি সুন্দর দেখতে হারটা । অপূর্ব কারুকাজ । চুনী পান্না , মুক্ত বসানো । লকেটের মাঝে একটা ছোট হীরে বসানো । কতদিন আগের জিনিস দেখে মন যেনো ইতিহাসে চলে গেলো । উনি আবার রেখে দিয়ে এলেন । এই হার টার কথা কে কে জানে ? রুশা দি জানতে চাইলে তিনি বললেন আমরা বাড়ীর লোক জন ছাড়াও আত্মীয় রা তো জানেই এছাড়া ঘনিষ্ঠ কিছু বন্ধু স্থানীয় , আলোক ও জানে যদিও কোনোদিন দ্যাখেনি শুনেছে শুধু ।এখন তোমাদেরকে দেখালাম। নিশীথ আর আমি জানি কিভাবে রাখি আমরা । আমার স্ত্রী ও জানে । নিশীথ আর আমি জানি কিভাবে সিন্দুক খুলতে হয় । ও খুব বিশ্বাসী । ভীষণ ভালো । তবে আমি এসবে ভয় পাইনা । না করে দিয়েছি ব্যাস ।আমার বন্ধু কমল নাথ ও বলেছে এসব পুলিশ কে বলার দরকার নেই ।কত জন বলে এমন ।যদিও সে প্রায় একমাস আগে একটা অফার এসেছিল আর তার পর এই ! পুলিশ কে বললে ব্যাংকে রাখতে বলবে । তাহলেও একবার পুলিশ কে জানালে ভালো হতো জেঠু আমি বললাম! হুঁ দেখি দুদিন কোনো জ্বালাতন হয় কিনা নিশ্চয় বলবো । রাতে ভাত , আলুপোস্ত ,ডাল ডিমের কারি দিয়ে ভাত খেতে বেশ ভালো লাগলো । সকলের সাথে নিশীথ দাও খেলো ।সে এই বাড়িতেই থাকে ।
রাতে শোবার আগে বারান্দায় একটু খাওয়া খাচ্ছি । আমাদের যে ঘরে শুতে দিয়েছে তার লাগোয়া বারন্দা। বড়ো ঘর দুদিকে দুটো সিঙ্গল বেড । পাশের ঘরে নীলম । ওদিকের ঘর দুটো দুই ভাই এর । বন্ধ সেগুলো ।নীচে শ্যাম কান্ত বাবুর ঘর । রুশা দিকে একটু চিন্তিত দেখালো । বললাম কি গো হার নিয়ে ভাবছো ? শ্যামকান্ত জেঠু পুলিশ কে বলতে পারতেন একটু ,এত অমূল্য সম্পদ । রুশাদি বললো ,হুঁ সেই তো ! তাও কালকের মধ্যে বলছে ! ব্যবসায় কত শত্রু থাকে ! তুই আমার একটা কাজ করে দিবি ? আমার অসুবিধা যাবার তুই কি কাল সকালে বা এখন নিশীথ দার ফোন নাম্বার টা এনে দিতে পারবি। বলবি আমার খুব দরকার ! এখনো শোয়নি হয়তো ! যা নিয়ে আয় ।কেউ কিছু জানতে চায়লে বলবি গল্প করতে গেছিলি। ওকে! বলে আমি নেমে গেলাম । নাম্বার নিয়ে ফিরে এসে দেখি রুশা দি ফোন ঘাঁটছে। নাম্বার টা সেভ করে নিল । বললাম গোয়েন্দা গিরি করে বার করো দেখি দিদি। । হতে পারে বাইরের লোক না চেনা কেউ আছে !
পর দিন ড্রাইভার কে সাথে নিয়ে কোনারক বেরোলাম সকাল সকাল । আজ আমরা দুজন আর ড্রাইভার । আজ আর নী লম নেই । ওর টিউশন আছে ।দেখলাম কি অপূর্ব মন্দির । অসাধারণ কারুকার্য । শুনেছি পৌরাণিক মত অনুযায়ী এই মন্দির কৃষ্ণ পুত্র শাম্ব কৃষ্ণের কাছে অভিশাপ পেয়ে এই চন্দ্র ভাগার তীরে সূর্যের উপাসনা করে নিজের সুন্দর রূপ ফিরে পান ও কৃতজ্ঞতা স্বরূপ ওনার মন্দির গড়েন । ইতিহাস অনুযায়ী ১২৫৫ তে রাজা নরসিংহ দেব এই মন্দির নির্মাণ করেন । কোণ অর্ক অর্থাৎ সূর্যের বিভিন্ন কোণ এর অবস্থান নির্দেশ করার জন্য এই মন্দির । অর্ক হলো সূর্য । পরবর্তী কালে ১৫০৮ এ সুলতান সোলেমান খান করনানির সেনাপতি কালা পাহাড় মন্দির এর অনেক কিছু ধংস করেন । আবার শোনা যায় রাজা নিজে মুসলিম মেয়ে বিয়ে করায় সমাজচ্যুত হলে রাগে নিজের বানানো মন্দির এর কিছু ধংস করেন । সামুদ্রিক জলদস্যু রাও ধংস করে। মারাঠা রা এর নাট মন্দির বন্ধ করে দেয় । এই মন্দির এর বিগ্রহ পরবর্তী কালে খুর্দা বংশের রাজা নরসিমা দেব সূর্য বিগ্রহ পুরী জগন্নাথ মন্দিরে নিয়ে যান ও আলাদা ভাবে প্রতিষ্ঠা হয় । মন্দিরে পুজো আরতি বন্ধ হয়ে যায় । শোনা যায় রাজা নরসিংহ নাকি ১২ বছরে ১২০০০ কর্মী নিয়োগ করেন এই মন্দির তৈরীর জন্য । কিন্তু নির্মাণ শেষে মন্দিরের মঙ্গলঘট বসানোর কাজে এক কর্মীর ১২ বছরের ছেলে সাহায্য করলে কর্মী একজন বেড়ে যায় ।সে বাবাকে খুঁজতে এসেছিল। সেই কর্মীর ছেলে মঙ্গল ঘট বসিয়ে চূড়া থেকে ঝাঁপ দিয়ে সবাইকে বাঁচাতে আত্মহত্যা করে। তার নাম ধর্মদাস বা ধর্মপদ। আত্মহত্যায় রক্তপাতের ফলে মন্দিরে খুঁত হয়ে যায় পুজোতে । আর পূজো হয়না । রাজার নিষেধ ছিল একটা কর্মী বেশি হলেও সবাইকে শূলে চড়ানো হবে । জন শ্রুতি রাতে এখনও এখানে আর্তনাদ শোনা যায় ।তাই রাতে কেউ আসেনা । ভারসাম্য রক্ষার জন্য এই মন্দিরে শক্তিশালী চুম্বক ছিল সেই যুগে । ইংরেজ বা পর্তুগিজ দের জাহাজ সমুদ্রে প্রায় এই জায়গায় এসে আটকে যেত । পরে তারা কারণ খুঁজে ওই চুম্বক বের করে নেয় । মন্দিরের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় । পরে বালি দিয়ে কিছুটা ভারসাম্য রক্ষা করা গেছে । রথের আকারে তৈরী এই মন্দির ব্ল্যাক প্যাগোডা নামে পরিচিত। জগন্নাথ মন্দির হোয়াইট প্যাগোডা । এখন যেটা লোকে দ্যাখে এটা নাট মন্দির ।মূল মন্দির না । এক সময় বুনো জন্তু আর দস্যুদের ঘাঁটি হয়ে যায় । পরে পরে নতুন করে আবিষ্কার হলেও ততদিন অনেক কিছু নষ্ট হয়ে গেছে । ভাস্কর্যের কিছু কিছু জিনিস পুরীতে সরানো হয়েছে । খুব মন খারাপ করছিল এত সুন্দর মন্দির কে যে যার ইচ্ছা মত নষ্ট করে গেছে দেখে । একটা সৃষ্টির পিছনে কত না কাহিনী ! রুশা দি আমায় ক্যামেরাতে পিক তুলতে বলে নিজে কিচটা দূরে ফোন করে জানিনা কোথায় কথা বলছে ।বলেছে ও এসে গাইড নেবে । আমি ছবি তুলছিলাম । এই মন্দিরে যেহেতু পূজো হয়না তাই সবাই জুতো পড়ে যায় । সমুদ্র কাছে হলেও এখানে শব্দ আসেনা । জানিনা কি বিশেষত্ব সব প্রাচীন ঐতিহ্য গুলোতে । আমার শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে । এমন সব সৃষ্টির স্রষ্টাদের আমার কুর্নিশ । প্রায় আধঘণ্টার ওপরে ফোন করে রুশা দি এলো । বললাম কি হলো দিদি এত দেরী? বললো দরকার ছিল রে ! পরে সব বলবো । বললাম হুম বুঝেছি নিশ্চয় হার টার ব্যাপারে কিছু কাজ করছ! রুশা দি হাসলো । বললো চল মন্দির টা দেখি । লেট হয়ে গেলো ।
পরোটা ,ঝাল আলু চচ্চড়ি ও সন্দেশ খেলাম জল খাবারে । পথ চলতি টুকটাক কিনে যাচ্ছে রুশাদি । আমিও ছবি নিচ্ছি পথ চলতি টুকটাক । ড্রাইভার জিজ্ঞেস করলো নন্দন কানন যাবার প্ল্যান আছে কিনা ! রুশা দি বললো যাবার ইচ্ছা নেই । কোলকাতায় দেখেছে । আমার ইচ্ছা ছিলো যাবার , শুনেছি কোলকাতার থেকেও বড় কুমীর আছে , না জানি আরো নতুন কিছু অ্যানিমাল আছে কিনা ! কিন্তু দিদির একটু চিন্তিত মুখ দেখে আর বলতে সাহস পেলাম না । এখন বলতে গেলেই ড্রাইভারের সামনে চেঁচাবে । ড্রাইভার আমায় নেহাত ই বাচ্ছা ভাববে । দুপুরেই পৌঁছে গেলাম বাড়ী । স্নান সেরে খেতে গিয়ে দেখি মেনুতে আজ মটন ! ঘুম এসে গেছিলো দুপুরে তার পর শেষ বিকালে আবারও সমুদ্রের ধারে । সন্ধ্যার সামুদ্রিক হাওয়া খুব মনোরম ।এখন সাথে নীলমদি ও আছে । রুশা দি বললো তোরা একটু কথা বল । আমি একটু আসছি । আমরা ফুচকা খেয়ে বসলাম টুকটাক এটা ওটা নানা বিষয়ে কথা বলতে লাগলাম ।দিদির কোনো পাত্তা নেই কি করছে কে জানে ! বুঝলাম কিছু একটা তো বটে ! বেশ খানিক পর এলো । বললো ওদিকে এক পরিচিতর সাথে দেখা হয়ে গেছিল কথা বলতে গিয়ে দেরি হলো । আমি একটু লক্ষ্য করে দেখলাম মুখটা , কিছুই বোঝার উপায় নেই ! নীলমের দিকে তাকিয়ে বললো আজ ঘুমটা বোধহয় বেশি হয়ে গেছে দুপুরে ,মাথা ধরেছে ।আজ আর বেশিক্ষন থাকব না । শুতে মন চায়ছে । অগত্যা উঠে পড়লাম । দিদি একটু ঈশারা করলো এগোতে। একটু কি শুকনো মুখ ! ! আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। ফিরে এসে আধঘন্টা শুয়ে ছাদে যেতে ছাদে যেতে চায়লো । নীলম জানালো বাবা রাতে ছাদে যেতে বারণ করে । রুশাদি মিনতি করলো খুব যেতে ইচ্ছে করছে তার ! তার গলায় এমন কিছু সুর ছিল নীলম দরজা খুলে দিল । রুশা দি বললো লাইট জ্বেলো না । আমিও থাকলাম । রুশাদি ছাদ থেকে বাইরে নজর করছিল কিছু ।সবাই শুয়ে পড়লে দিদি বলে নিশীথ দাকে বলা আছে , কিছু বই দেবে নিয়ে আয় জলদি । বললাম এই যে বললে মাথা ব্যথা ,এখন পড়বে? যা আমার মাথা ব্যথা সেরে যাবে বই পড়লে । অগত্যা আবার উঠে নিশীথ দার দেওয়া বইয়ের প্যাকেট টা নিয়ে এলাম ।
পরদিন সকালে স্নান সেরে আমরা ও শ্যামকান্ত বাবুরা তিনজনে জগন্নাথ দর্শনে গেলাম । বাড়ীতে কাজের লোকরা ও নিশীথ দা থাকলো। শ্যাম কান্ত বাবুর চেনা পান্ডা । আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন উনি । ভীড় এড়িয়ে আমরা পূজো দিলাম ।কি বড় মূর্তি জগন্নাথের ! নামে নামে সবার জন্যে পুজো দেওয়া হলো । দুপুরে ভোগ খাবার ব্যবস্থা ছিল । মন্দির ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম ।এইসব প্রাচীন জিনিস দেখলে কেমন একটা অনুভূতি হয় । দেখতে দেখতে রহস্যগুলো মনে পড়ছিল । দেখলাম সূর্য ও চন্দ্র দেবতার প্রতিষ্ঠিত মন্দির ও, যে বিগ্রহ আনা হয়েছিল কোনারক থেকে।
ভোগ খাবার পর পরেই শ্যামকান্ত বাবুর ফোনে ফোন আসে কোথাও থেকে । তাঁকে উদ্বিগ্ন দেখায় বলেন তাড়াতাড়ি বাড়ী যেতে হবে । নিশীথ অজ্ঞান হয়ে গেছে ।বিনু ফোন করেছিল । বিনু মানে ওনাদের রান্নার লোক জেঠিমা কে হাতে হাতে সাহায্য করে। গিয়ে দেখি বাসার ঘরে জল অনেক । কাজের লোক রা জল ঢেলে জ্ঞান ফিরিয়েছেন । মেঝেতেই ছিল নিশীথ দা । শ্যামকান্ত বাবু তাড়াতাড়ি ছুটে এলেন । আমরা সবাই ধরাধরি করে ওর ঘরে শুয়ে দিই বিছানায় । শ্যামকান্ত বাবু তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছিয়ে দিলেন । একটু সুস্থ বোধ করলো যদিও একটু ঘোর তখনও । শ্যামকান্ত বাবু বিনুদা কে গরম দুধ আনতে বললেন । তার পর দুধ খেয়ে একটু ঠিক হলো । নিশীথ দাকে ঘুমোতে বলে ডাক্তাবাবু কে ফোন করলেন তিনি । বাইরে বিনুদার কাছে শুনলেন নিশীথ দা কাজ করছিল ঘরে । রোজ যেমন কেউ না কেউ আসে আজও এক জন এসেছিল ওর কাছে ।তিনি চলে যাবার পর ও অনেক ক্ষন ধরে খেতে আসছে না দেখে দুপুরে ডাকতে গিয়ে দ্যাখে উনি অজ্ঞান । চেয়ার উল্টে পড়ে আছে। টেবিলের কাঁচের বাতি ভেঙে মেঝেতে! চম্পা দি সেগুলো কুড়িয়ে নিয়ে গেছে । আগে একটু জল ঢেলে জ্ঞান ফেরানোর ব্যবস্থা করে তারপর ফোন করেন । সব শুনে শ্যামকান্ত বাবু বললেন ঠিক আছে ।খুব ভালো করেছো যাও বেলা হয়ে গেছে খেয়ে নাও সবাই ।খিদে পেয়েছে নিশ্চয় তোমার ।যাও আমরা এসেছি এদিক টা দেখছি । ওরা চলে গেলো । কিছু ক্ষন পরই ডাক্তার বাবু এলেন । উনি দেখে বললেন ওনাকে অজ্ঞান করা হয়েছিল । নিশীথ দা জানালো এক ব্যক্তি দেখা করতে এসেছিলেন । যেমন সবাই আসে ভেবে কথা বলতে যাবো হটাৎ উনি উঠে আমার নাকে রুমাল চেপে ধরতে যান ।আমিও তীব্র গতিতে উঠে পড়তে যাই , চেয়ার উলটে যায় । উনি ও ঝাঁপিয়ে পড়ে নাকে রুমাল টা চেপে ধরেন ।কেমন একটা ঝিম ধরা মিষ্টি গন্ধ ।কোথায় যেনো হারিয়ে যেতে লাগলাম । কিছু ধরতে গেলাম । কি যেনো পড়ে গেলো ! আর কিছু মনে নেই । ডাক্তার বাবু বললেন কেউ ছিল না বাড়ীতে ? শ্যামকান্ত বাবু জানালেন না সবাই বাইরে ।কাজের দুজন লোক ছিল কিন্তু রান্না ঘর এখান থেকে দূরে । আর রোজই লোক আসে সব সময় চা দেওয়া হয়না । অর্ডার করলে দিয়ে যায় । ওরা বুঝতে পারেনি । আজ একটু কম কাজ থাকায় হয়তো বিশ্রাম নিচ্ছিল । এদিকে মাথা ঘামায় নি । পরে খেতে ডাকতে এসে দ্যাখে । মনে হচ্ছে জল খাবার এর পর এসেছিল । বোধায় ১১ টা হবে । ডাক্তার বাবু বললেন ওহে শ্যামকান্ত পুলিশ কে বলে দ্যাখো । শ্যামকান্ত বাবু অন্যমনস্ক ভাবে বললেন হুঁ । ডাক্তার বাবু চলে গেলে উনি প্রথমে নিজের ঘরে তার পর সেই পুরনো দিনের জিনিস সাজানো থাকে সেই ঘরে গেলেন ওটা ঠিক সেই ঘরের পাশেই যেখানে বসে ওনারা ব্যবসার কাজ দ্যাখেন । হোটেল ব্যবসা ছাড়াও ওনাদের আরো কিছু সাইড ব্যবসা আছে । শুনেছি ওনার একটা নার্সিং হোম গড়ার ইচ্ছা । ওখানে পরে ছোটো ছেলে বসবে আর অন্য দের উপকার হবে । গরিব মানুষ রা পরিষেবা পাবে । ঘর থেকে হঠাৎ একটা আর্তনাদ শুনতে পেয়ে আমরা সবাই গেলাম ।দেখি উনি হতাশ ভাবে বসে পড়েছেন ।বললাম কি হলো জেঠু? উনি বললেন হার টা নেই । সবাই বিস্মিত হলো, সেকি! জেঠিমা সিন্দুকএর ডালা খুলে ঝুঁকে দেখলেন একি হার কই? আর্তনাদ করে উঠলেন একি সর্বনাশ! রুশা দি আর নীলম জেঠিমা কে ধরে বসালেন । আমি জল এগিয়ে দিলাম দুজনকেই ।বললাম এবার তো পুলিশ কে বলুন । উনি বললেন হ্যাঁ এবার তো জানাতে হবে । চাবি আমার ঘরে থাকে তাহলে ডালা কিভাবে খুললো ! আমি যাবো কমল নাথ কে নিয়ে ।
আধ ঘণ্টা পর পরই ফোন পেয়ে চলে এলেন কমল নাথ বাবু । বসার ঘরে ওনারা কথা বলছিলেন । রুশাদি আর আমি ঘরে ঢুকলাম , রুশাদি বললো জেঠু কি ভাবলেন ? পুলিশ কে জানাবেন? বললেন এসো এসো এই আমার বন্ধু কমল নাথ রাউথ । একসময় কোলকাতায় থাকতো । আমরা নমস্কার করলাম । দেখলাম ওনার হাতে আঙুলে একটা ব্যান্ডেজ। শ্যামকান্ত বাবুও লক্ষ্য করে বললেন কি হলো তোর আবার ? উনি বললেন আর বলিস না ফল কাটতে গিয়ে হঠাৎ করে লেগে গেছে। দেখলাম বাংলা টা বাঙালি দের মতোই বলেন । ঠিক আছে আপনারা কথা বলুন আমরা আসছি বলে চলে এলাম । রুশা দি নীচে গাছের ওখানে ফোন করতে লাগলো কোথাও । এখান থেকে কিছুই শোনা যায়না । আমি চলে এলাম । কিছু পরে গাড়ীর শব্দ পেলাম বোধায় ওনারা বেরোলেন ।
পরদিন আমরা ড্রাইভার এর সাথে বালুখন্ড এর জঙ্গল দেখতে বেরোলাম । একটু খারাপ লাগছিল আমরা আসার পর এমন হোলো! শ্যামকান্ত বাবু অবশ্য বললেন না না এর জন্য তোমরা নিজেদের দায়ী ভেবো না আগে থেকেই হার নিয়ে শুনতে হয়েছিল ।আমি গুরুত্ব দিই নি। পুলিশের কাছে স্পেশ্যাল পারমিশন করিয়ে নিয়েছেন . আজকের যাওয়া। রুটিন মাফিক সবাইকে হয়তো জিজ্ঞেস করবেন । কাল সন্ধ্যায় আমাদের ফেরা । জানি না কি হবে । রুশাদি কে অবশ্য কেমন যেনো নিশ্চিন্ত লাগছিল ।কি জানি বাবা ধরে ফেললো নাকি কাউকে ! বললাম দিদি কাউকে সন্দেহ করছো? রুশাদি বললো কেউ একজন যে অনেক কিছু জানে ।বললাম মনে হচ্ছে চোর মাস্টার কী ইউজ করেছে। নজর রাখছিল কখন আমরা কাল বেরোয় । মনে হয় চোর জানত যে আমরা সবাই মন্দির যাবো । রুশা দি বললো ঠিক ধরেছিস ।লক্ষ্য করলাম একটা গাড়ী পিছনে একটু তফাৎ নিয়ে আসছে। বললাম দিদি একটা গাড়ী ফলো করছে নাকি ! রুশা দি বললো কত টুরিষ্ট আসে দেখতে ! তার পর নেমে আমরা জঙ্গল দেখতে লাগলাম । আমি ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে গেলাম । নানা পাখি , জীব জন্তু কি অপূর্ব লাগছিলো পরিবেশ ঘুরতে ঘুরতে একটু ভিতর দিকে চলে গেছিলাম । একটু নির্জন জায়গা । হঠাৎ একটা লোক এসে রুশাদির দিকে রিভলবার উঁচিয়ে বললো হার টা দিয়ে দাও ।জানি তোমার কাছে আছে । ভালোই ভালোই দিলে কিছু করবো না । নাহলে এতে সাইলেন্সার লাগানো আছে । দু ভাই বোন কে টিক করে গা ঢাকা দিলে কেউ জানতে পারবে না । নিমেষে কি ঘটে গেলো যেন! রুশা দি দুরন্ত গতিতে একটা হাই কিক দিলো লোকটার দিকে । রিভলবার শুন্যে উঠে গেলো আমি সাথে সাথে ক্যাচ ধরে নিলাম । রুশা দি ততক্ষন লোকটাকে ফেলে দিয়েছে ।আমি রুশা দির হাতে দিলাম ওটা। রুশাদি বললো সাবাস ঋষি ! তার পর লোকটার দিকে তাক করে বললো একদম উঠবেন না । আমায় বলল কল লিস্ট খুলে প্রথম নাম্বারে কল লাগিয়ে দে আমায় । দিলাম ,দেখলাম ইন্সপেক্টর সিং লেখা ।ফোন কানে নিয়ে বললো , জলদি আসুন ।এদিক ওদিক তাকিয়ে দিক বললো । দেখলাম তিনজন পাঞ্জাবী ছেলে হাজির হলো । আরে এরা তো সেই পিছনের গাড়ী থেকে নেমেছিল দেখেছিলাম । জঙ্গল ঘুরছিল। লোকটাকে ওঠালো । সবার হাতে রিভলবার । উঠে দাঁড়াতেই রুশা দি ওনার গোঁফ দাড়ি সানগ্লাস ,পরচুলা খুলে দিল । চমকে গেলাম এ তো কমল নাথ বাবু। কাল দেখেছিলাম টাক মাথা ।চশমা চোখে ।
সন্ধ্যায় বৈঠক খানায় সবাই বসে । ইনসপেক্টর সিং ও আছেন । এক পাশে কমলনাথ বাবুও আছেন। শ্যাম কান্ত বাবুর বড়ো ছেলে আদিত্য এসেছেন । সুদর্শন যুবক। ছোটো ছেলেও আজই ফিরলো । সেও সৌম্য দর্শন এর । আলাপ পরিচয় হয়েছে একটু আগে ।এবার রুশা দি শুরু করলো , গতকাল জেঠু ঘরে কথা বলার সময় আমি বাগানে যাই কথা বলতে ইন্সপেক্টর সিং এর সাথে ।আমার সন্দেহ হয় ওনার আঙ্গুল কাটা দেখে , নিশীথ দা কে আক্রমণ এর সময় কাঁচ বাতি ভেঙে যায় ।ওই সময় কেটে যায় ওনার হাত ধস্তাধস্তির সময় । আর উনিও মাস্টার কী ইউজ করে সিন্দুক ও ওই ঘরের চাবি খুলেছিলেন ! কি তাই তো? কমল নাথ বাবু শুকনো মুখে ঘাড় নাড়লেন । কেউ হারটা কালকের মধ্যে চায় বলে হুমকি দিল , এত মূল্যবান সম্পদ কিন্তু জেঠু পুলিশ কে বললেন না কারণ তিনি হারটা বাড়ীতে রাখতে চান পয়া বলে , পুলিশ ব্যাংকে রাখতে বলবে তাই আমি ঠিক করি নিশীথ দার সাথে যে হার টা বাঁচাতে হবে যদি রাতে সত্যি চোর আসে ।চোর জানে কোথায় থাকে , বাড়ীর সব হাল হকিকত জানা তার । সম্ভবত জেঠু ওনার বন্ধু কে আমাদের নিয়ে বেরোনোর কথা বলেছিলেন এমনি যেমন লোকে বলে। শ্যামকান্ত বললেন হ্যাঁ আগের দিন ফোনে বলেছিলাম। যেমন রোজ টুকটাক কথা হয় । রুশা দি বলে , আমার এক ক্লাসমেট ক্যালকাটা পুলিশে আছে তাকে ফোন করি সে নিশীথ দার সাথে কন্টাক্ট করে । সব ফোনে । তার পর এখনকার থানা জেনে ইন্সপেক্টর সিং কে ফোন করে । ব্যাপারটা আপনাকে গোপন রেখে আমরা হারটা বাঁচানোর কাজ চালাই । কারণ চিঠিতে উল্লেখ করা ছিল যেন পুলিশ কে এসব না জানানো হয় আর আপনিও জানাতে চাননি ।কিছুটা কমলনাথ বাবুর পরামর্শে । কারণ উনি চাননি পুলিশ এসব জানুক । সেদিন সি বিচে আমি নিশীথ দা ও ইন্সপেক্টর সিং এর সাথে মিট করি । ওনারা ছদ্মবেশে ছিলেন । ইন্সপেক্টর সিং নিশীথ বাবুকে মাস্টার কি দেন হারটা ওই ঘর থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় রাখতে ,কারণ চোর ওই ঘর কে টার্গেট করবে।আমিও ছাদ থেকে দেখছিলাম কেউ আশপাশ থেকে নজর রাখছিল কিনা! রাতে বই এর সাথে ওই হার আমার কাছে পাঠিয়ে দেয় ঋষির হাত দিয়ে নিশীথ দা । সবাই বিস্মিত হয়ে তাকালো । আমিও চমকে উঠি সেদিন তাহলে ওতে হার ছিল !হার টা সরিয়ে আনে নিশীথ দা, যখন আপনি আর জেঠিমা ঠাকুর ঘরে যান ।আপনি নিজ হাতে দুবেলা ঠাকুর পুজো করেন , বাইরে গেলে পুরোহিত বলা থাকে তাই তো? শ্যামকান্ত বাবু বললেন হ্যাঁ । বিশেষ কাজে ওই পুরোহিত কে ডাকি । এখনো যখন পারছি পুজো টা নিজের হাতে করি ।মন তৃপ্তি পায় । ব্রাহ্মণ ঘরের যখন! শুধু কি টাকা টাকা করবো! ঈশ্বরের আশীর্বাদে আমার কিছু অভাব নেই । মানুষ এর জন্য কিছু করে যেতে চাই । রুশা দি বলে আবার, আমি যখন ফোন করি , হঠাৎ সেখানে হাজির হয় কমল নাথ বাবু । আমার কেমন সন্দেহ হয় !আসলে উনিও হার সন্ধান করছিলেন আর কথা শুনতে এসেছিলেন চট করে মাথায় বুদ্ধি আসে ওনাকে শুনিয়ে বলি কাল হার নিয়ে যাচ্ছি জঙ্গলে সে ক্ষেত্রে আমার দেখার ছিল উনি সত্যি দোষী কিনা দোষী না হলে উনি তৎক্ষণাৎ জেঠু কে সব বলতেন সে ক্ষেত্রে তখনই আমায় সব জানতে হতো কিন্তু তাতে জানা যেত না কে হার টা চেয়েছিল আর কে নিশীথ দা কে অজ্ঞান করে চুরি করতে এসেছিল , আর দোষী হলে কিছু না বলে ঠিক আমার পিছু নেবে জঙ্গলে । উনি এটায় করলেন । আমি যখন ফোনে হার টা নিয়ে যাবো বলি তখন ওদিকে ফোনে কেউ ছিল না এমনি শুনিয়ে বলি উনি শুধু ওটাই শোনেন পরে আপনারা বেরিয়ে গেলে ইন্সপেক্টর সিং কে সব বলে পুলিশ প্রটেকশন চাই জঙ্গলে । উনি নিজে দুজন সহকর্মী নিয়ে পাঞ্জাবী বেশে যান । গিয়ে হাতেনাতে ধরেন । ঋষি ও হেল্প করেছে ধরতে ।বলে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো । আমি একটু লজ্জা পেলাম ও খুশী হলাম । ইন্সপেক্টর সিং বললেন জেরাতে উনি স্বীকার করে ছেন উনি লোভে পড়ে গেছিলেন ।পুরোনো জিনিস ।এটার দাম অনেক ।চালান করলে অনেক টাকা পাবেন ।আসলে আপনার উন্নতি দেখে ওনার হিংসা আসছিল ।নিজেকে নিয়ে একটু হতাশায় ভুগতেন ।তবে আগে কোনো অপরাধের সাথে যুক্ত নেই উনি । এতক্ষণ পর মুখ খুললেন শ্যাম কান্ত বাবু আমি কমল কে ক্ষমা করে দিলাম । জেলে গেলে ওর পারিবারিক সম্মান হানি হবে ।ওর স্ত্রী ,ছেলে মেয়ের মাথা হেঁট হয়ে যাবে । মেয়েকে শ্বশুর বাড়িতে কত কথা শুনতে হবে । আমার একান্ত অনুরোধ কেস দেবেন না ।আমি তুলে নিতে চাই । আমাদের হয়তো আর আগের মতো বন্ধুত্ব থাকবে না ।কিন্তু আমার বিশ্বাস ও আর করবে না ।ওর অনুশোচনা ওর শাস্তি ।আমি আর কোনো শাস্তি দিতে চাইনা । আমি জানি ওর বেশ দেনা আছে বাজারে হয়তো সব থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিল এইভাবে । একবার আমার বাবা ওর বাবার কাছে এই হার বন্দক রেখে টাকা নিতে চেয়েছিল ওর বাবা মানে কাকা বাবু হার নেন নি বলেছিলেন এ তোমাদের পারিবারিক জিনিস । সৌভাগ্য তোমাদের । আমি এমনি টাকা দিচ্ছি । সাহায্য করেছিলেন ।লোভ করেন নি হারটার। বাবার কাছে শোনা আমার । তাই সেই কৃতজ্ঞতা থেকে আমি ওকে ক্ষমা করে দিলাম । সবাই চুপ করে গেল ।পরিবেশ ভারী হয়ে গেলো । কমলনাথ বাবু নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলেন । শ্যামকান্ত বাবু ছেলে মেয়ে স্ত্রী কে বললেন ওনার ফ্যামিলিতে যেন এসব কেউ না জানে! ও নিজে বললে আলাদা ব্যাপার । রুশা দিকে বললেন সাবাস তোমায় । আর তুমি আর নিশীথ যা করেছো এর মুল্য পাবে । রুশা দি ব্যাগ থেকে হারটা বার করে টেবিলে রাখলো ।নিশীথ দা বললো এবার , স্যার আমায় ক্ষমা করুন আমি আপনাকে না বলে সিন্দুক খুলেছি শুধু হার টা বাঁচাতে ।নেবার উদ্দেশ্যে না । সস্নেহে ওর মাথায় হাত রাখলেন শ্যাম কান্ত বাবু ,আমি বুঝেছি সেটা । তোমার মত সৎ লোক এযুগে খুব কম পাওয়া যায় । আমার ভাগ্য তোমায় পেয়েছি । কি যে বলেন স্যার আপনি না থাকলে আমি কোথায় কোথায় ঘুরতাম হয়তো !কেউ নেই আমার ! আপনি সব আমার ! মা বাবা কবে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে । পরিবারে কেউ আপণ করলো না আমায় ! প্রণাম করলো নিশীথ দা ওনাকে । এবার আমি একটু একা থাকতে চাই শ্যাম কান্ত বাবু বললেন,সবাই উঠে পড়লো। রুশা দি বললো আমার একটা বলার ছিল শুধু আপনাকে । ঋষি থাক । হ্যাঁ বলো ।উনি বললেন ,আমি খুব ভুল না করলে সিন্দুকের হার টা নকল তাইনা জেঠু? উনি চমকে গেলেন তার পর মৃদু স্বরে বললেন এমন মনে হলো কেনো তোমার? কারণ হুমকি পেয়েও আপনি একটু ক্যাজুয়াল ছিলেন ।কিছু জনকে দেখিয়েছেন তার ওপরে শুধু আপনি আর সেক্রেটারি সিন্দুক খোলেন এত বিশ্বাস যদিও আমি জানি নিশীথ দা খুব ভালো তবু ছেলেরাও খোলে না আপনার চাবি জানে না কোথায় !বললেন হ্যাঁ এটা নকল কিন্তু দেখতে এক রকম অনেক খোঁজ করে কারিগর পেয়ে বানিয়েছি । জানি পুরোনো জিনিস অনেকের লোভ হতে পারে ! তাহলে কি আসল টা ব্যাংকে? কিন্তু আপনি যে ব্যাংকে রাখতে চান না বলছিলেন । রুশাদি জিজ্ঞেস করলো ,না বাড়ীতে উনি মৃদু স্বরে বললেন। বাড়ীতে? আমরা বিস্মিত! কোথায় ? রুশা দি জানতে চাইলো, আমার ঠাকুর ঘরে । সিংহাসনের ভিতরে । সে ভাবেই বানানো সিংহাসনটা। বাইরে থেকে কিছুই বোঝা যায়না । ভিতরে খাপ আছে । তবে আমি তা লিখে রেখেছিলাম । মৃত্যুর পর ছেলেরা যাতে দেখতে পায় ।স্ত্রীকে বলে যেতাম। আলমারিতে আছে লেখা । রোজ পূজো করে উঠে দেখি । তাই এটা নিয়ে ক্যাজুয়াল ছিলাম । তোমার বেশ বুদ্ধি! একটানা বলে উনি হাসলেন। তুমি ধরতে পেরেছো ঠিক এইরকম একটা হার আমি বানিয়ে দেব তোমায় তোমার পারিশ্রমিক হিসেবে । রুশা দি হাসলো আপনার আশীর্বাদ ওটা ! মাথা পেতে নেব । তবে হার টার পার্মানেন্ট নিরাপত্তা ভাবতে হবে । এতো মুল্যবান জিনিস এটা ! শ্যাম কান্ত বাবুকে প্রণাম করলো রুশা দি। আমার দারুন আনন্দ হচ্ছিলো। পরদিন সমুদ্র স্নান আবার । সাথে কেনাকাটা ও চললো। সমুদ্র কে বিদায় জানিয়ে দিদি – ভাই এ ট্রেনে চাপলাম । ভালোই কাটলো ছুটি । আর হ্যাঁ ওই আসল হার টা আসার আগে আমাদের দেখিয়ে ছিলেন শ্যামকান্ত বাবু । অদ্ভূত সুন্দর!
-------------------------------------------------------------
Rayosee Chakroborty
C/O Sukhendu Chakraborty
Kalanabogram,Purbo Bardhoman
Pin no-713124
Very nice story. ������
উত্তরমুছুন