বিজ্ঞপ্তি
লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫
নভেম্বর ২১, ২০২৪
এক বছর আগের ঘটনা, সকলের মতো আমিও একটু ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। দিনের শেষে কাজের ফাঁকে ফেসবুকের স্ক্রল করাটা একটা নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ঠিক এমনই সময় আমার নজর যায় একটি মানুষের প্রোফাইলের উপর। যেটা স্বাভাবিক অনেকের সাথেই হয়ে থাকে। উপর থেকে দেখে প্রথমে কিছু মুহূর্তের জন্য ভালো লেগে যায়। মনে হয় রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে কথা বলি, আমার মনে হয় অচেনা কাউকে বিরক্ত না করাই ভালো। তো আপনাদের মত আমিও সেদিনের মত তাকে এড়িয়ে চলে যাই। কিন্তু পরদিন সন্ধ্যায় আবার তার প্রোফাইল আমার সামনে আসে। তখন তার প্রোফাইলে ভিতরে আমি যাই এবং তার তথ্য নিরীক্ষণ করি। খুব ভালো লাগে এবং দেখি অনেক পোস্ট এবং অনেক ছবি। বুকের উপর পাথর রেখে তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে ফেলি। ভাবিনি সেটা একসেপ্ট করবে কি না করবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফোনের সেই নোটিফিকেশন, সেই বিশেষ ব্যক্তিটি আমার রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করেছে। মনের মধ্যে আনন্দ কৌতূহল সৃষ্টি হয়। আমি হাই লিখতেই যাচ্ছি তার আগে তার তরফ থেকে একটি ছোট্ট বার্তা আসে "আপনি কি আমাকে চেনেন?"খুব স্বাভাবিকভাবে আমি না লিখি। সেও এড়িয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর আমি নিজে থেকে তাকে জিজ্ঞাসা করি আপনার বাড়ি কোথায়? সে উত্তর দেয়। এইভাবে আমাদের মধ্যে কথোপকথন ধীরে ধীরে শুরু হয়। কিছুক্ষণ কথা বার্তা বলার পরই তার ব্যাপারে আমি অনেকটাই জেনে যাই এবং সৌভাগ্যবশত তিনিও আমার সাথে খুব ভালোভাবে, ভদ্রভাবে কথা বলেন এবং আমার ব্যাপারেও কিছু জানতে চান। আমিও তার উত্তর দিই। পরদিন সকালে তার শুভ সকাল বার্তাটি পাওয়ার পর আমার খুব ভালো লাগে এবং আমিও তার উত্তর দিই। তিনি জানান যে তিনি কাজে যাবেন এবং কথা সন্ধ্যার পরই হবে। আমার সময় কোনোমতেই কাটে না, সন্ধ্যা অব্দি অপেক্ষা না করে দুপুরে তাকে জিজ্ঞাসা করি খাওয়া-দাওয়া হয়েছে। কিছুক্ষণ পর তিনি জানান হ্যাঁ হয়েছে এবং আমি খাওয়া-দাওয়া করছি কিনা সেটাও জানতে চান। এবং তিনি বলেন এবার কথা সন্ধ্যার পরে হবে। ফোনে ফুল চার্জ করে সন্ধ্যা থেকে আমি অপেক্ষা করি। সন্ধ্যার পর যথারীতি তিনি তার কথা রাখেন এবং আমাকে একটি ম্যাসেজ করেন। আগের দিনের মতো আবার কথাবার্তা শুরু হয়। নিজের অজান্তেই ভালো লাগছিল এটা আমি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারছিলাম। একটি মেয়ে হয়ে নিজে থেকে কিছু বলা একটু আজব লাগে। দু-তিন দিন এভাবে কেটে যায় তারপর হঠাৎ একদিন তিনি আমাকে জানান আমার জীবনে অন্য কেউ আছে কিনা। আমি এক গাল হাসি নিয়ে তাকে জানাই কেউ নেই। হয়তো তিনি কিছু বলতে চাইছিলেন কিন্তু তিনি কথাটি পাল্টে নেন। একটা বারের জন্যে আমারও ইচ্ছা হলো জানতে তার জীবনে কেউ আছে কিনা। কিন্তু মনের মধ্যে কোথাও একটা লজ্জা বাধা দিচ্ছিলো। রাতের বেলা শুভরাত্রি বলার পরে থাকতে না পেরে তাকে জিজ্ঞাসা করেই ফেলি। সেও জানায় কেউ নেই। মন খুব খুশি হয়ে যায় এবং ঘুম ভালো আসে।তারপর কিছুদিন কথাবার্তা হওয়ার পরে মনের কথা জানাতে ব্যস্ত হয়ে যাই। একটা আজব কৌতহল সৃষ্টি হয় সে কি আমাকে চাইবে নাকি শুধু বন্ধুত্ব রাখতে চাইছে। এটা সেটা বলার পরে বুঝি সেও আমাকে হয়তো চায়। কিন্তু কথাটা তার মুখ থেকে শোনার জন্য আমার মন আনচান করতে থাকে। রাতের বেলা ঘুম আসে না। মনে হয় হয়তো সকালে সে ভালো কিছু জানবে। কিন্তু তাও হয়না। আমার রাগ হয়। আমি একটু জেদী মেয়ে তাই জেদ করে তার সাথে সন্ধ্যা বেলায় আর কথা বলি না। তার সব বার্তা আমি দেখি কিন্তু উত্তর দিই না। বাধ্য হয়ে সে আর কথা বলে না এবং বলে আমি হয়তো বিরক্ত করছি তাই আর করবো না ভালো থাকবেন। আমি কেঁদে ফেলি এবং বলি আমি তোমায় পছন্দ করি এবং কথা বললে আরো বেশি পছন্দ হয়ে যাবেন তখন আমি নিজেকে বোঝাতে পারবো না। কথায় আছে " ভুল ট্রেনে উঠে পড়লে তাড়াতাড়ি সামনের স্টেশনে নেমে যেতে হয়, কারণ যত দূরে যাবেন ফিরতে ততই কষ্ট হবে"তিনি খুব ভদ্র ভাবে বলেন যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আপনার সাথে ফোনে কথা বলতে চাই। আমি তাড়াতাড়ি নিজের নম্বর দিয়ে দি। তখনই তার ফোনে আসে এবং আমি একা বাড়ির ছাদের উপরে বসে চাঁদের দিকে তাকিয়ে ভাবি আমার ভাগ্যে কি আছে। আমি তার ফোন তুলি এবং তিনি বলেন যে তার জীবনে অন্য কেউ আছে তাই আমাকে চাইলেও পাবে না। আমি কোনো কথা বলিনা। হয়তো চোখের কোণে নিজের অশ্রু লুকাচ্ছিলাম। মুখে হাসি নিয়ে বলি মজা করেছিলাম, কিন্তু সেটা শোনার পরে তার গলাটি আস্তে আস্তে ভেঙে যায়। মনে হয় তার কিছু একটা স্বপ্ন নষ্ট হলো। কিছু ক্ষন চুপ থাকার পরে বলেন আমি জানতাম মজা করছেন তাই আমিও মজা করেছিলাম। আমার জীবনে কেউ নেই। আমি নিমেষের মধ্যে আবার ভেঙে পড়ি এবং কাঁদতে কাঁদতে বলি তোমায় ভালো লাগে এতে আমার কি দোষ। তারপরে আমার জীবনে ঘটে একটি আজব ব্যাপার। সেও কাঁদতে কাঁদতে বলে আমারও তোমায় ভালো লাগে, এতে আমারই কি দোষ। জীবনে প্রথম কোনো ছেলেকে কাঁদতে শুনি, আমার জীবনের সেরা ভুল আমি করেছি এটা বুঝে যাই এবং ফোন কেটে দি। সেও ফোন করে না। অনেক পরে আমি ফোন করে জিজ্ঞাসা করি খেয়েছে কিনা, জানতে পারি তার খিদে নেই। আমি রাগ করে চিল্লাতে থাকি এবং বলি না খেলে কিন্তু আমি কথা বলবো না। আর অবিশ্বাস্য ভাবে সে ফোন ধরে রেখে খেতে বসে যায় আর আমি সেটা বুঝতেও পারি। তারপরে বলে আমার সাথে দেখা করতে চায়। আমি মানা করি। কেনোনা আমার মনে হয়েছিল যদি আমাকে সামনে থেকে দেখতে ভালো না লাগে তাহলে আমার স্বপ্ন ভেঙে যাবে। কিন্তু বার বার জোর করার পরে দীর্ঘ ১১ মাস পরে আমি বলি দেখা করবো।তারপরে সে একদিন আসে দেখা করতে। আমি সকাল থেকেই খুব চিন্তায় থাকি, ভাবি আজ সব শেষ হবে তাই আমার না যাওয়া ভালো, কিন্তু কাউকে কথা দিয়ে কথা না রাখাটা পাপ তাই আমি বেশি না ভেবে যাই দেখা করতে। আমরা কখনো একে অপরকে সামনে থেকে দেখিনি। একটা বাজারের মোড়ের মাথায় সে এসে দাঁড়ায়। মাথায় হেলমেট তাই মুখ দেখতে পাচ্ছিলাম না। সে ফোন করে এবং জানতে চায় আমি কোথায়, আমি মিথ্যে বলি যে আসতে পারবো না। সে ফোন কেটে দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায় এবং হেলমেট খোলে। সেই প্রথম সামনে থেকে ওর মুখ দেখি এবং ভাবি এই ছেলে হয়তো আমার জন্যে না। কিন্তু তারপরেও একটা ঘটনা আমার সব থেকে খারাপ লাগে এবং মাথায় খুব রাগ ওঠে। সে নেমে একটা সিগারেট কেনে এবং সেটি জ্বালায়। আমি দূর থেকে দৌড়ে আসি এবং সবার সামনে সেটা মুখ থেকে ফেলে দিয়ে একটা থাপ্পর দিতে গিয়েও হাত আটকে নি। আমার রাগ মুখ দেখে সে বুঝে যায় আমি কে। কিছুক্ষণ একভাবে আমার দিকে বোকার মত তাকিয়ে থাকে এবং বলে গাড়িতে ওঠো। আমি গাড়িতে উঠি এবং অনেক দূরে চলে যাই লোকালয় থেকে এবং একটা ফাঁকা রাস্তার ধারে গিয়ে দাঁড়াই। আমি তখনও রেগে থাকি আর সে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে আর হঠাৎ আমার হাত ধরে বলে আমাকে একটু ভালোবাসতে পারবে?আমার মনের মধ্যে জানি না কি চলছিল, তাই ভাবছিলামতোমার ওই মধুর হাসিতে আমি পাগল,তোমার ওই চাহনিতে আমার খুশি।কিভাবে থাকবো তোমায় ভালো না বেসে,আমি যে শুধু তোমাকেই ভালোবাসি❤️আমি নীরব দৃষ্টি দিই এবং বলি বোকা বোকা কথা বলো না। ভালোবাসা দিলে সবটুকুই দেবো, অল্প ভাবে না। সে আমার দিকে তাকিয়ে আমার বর্ণনা দিতে থাকে এবং আমি তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি। যেমন ছবিতে দেখেছিলাম তার থেকে অনেক আলাদা। যেন আমার স্বপ্নের মানুষ কোনো। তার অনেক কথার মাঝে আমি সব ভুলে গিয়ে তার বুকে মাথা রাখি এবং বলি চুপ, আমাকে শান্তিতে একটু এখানে থাকতে দাও। সেও আমাকে কাছে টেনে নেয়। এর পরে কিছুক্ষণের মধ্যেই যেন সে সব থেকে কাছের কেউ হয়ে ওঠে। এখনো ভুলিনি প্রথম দিনেই তার গালে মজা করে থাপ্পর মারা এবং সে ভয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলো এবং বলছিলো কেউ কখনো মজা করেও গালে হাত দেয়নি কিন্তু তুমি প্রথম দিলে তাই রাগ হলো কিন্তু খুব ভালো লাগলো। তার পরে তার গাল টিপে দেওয়া, এক সাথে সেলফি নেওয়া, পাশে দাঁড়িয়ে কে বেশি লম্বা সেটা মাঁপা এই পাগলামি গুলো ছিলই।এখনো তার সাথে আছি এবং মরণ অব্দি থাকবো সেই প্রতিজ্ঞা নিয়েছি। আর এটাও বলা আছে যদি কখনো না পাই তোমায় নিজের করে তাও হাত ছেড়ে যাব না এবং অন্য কারো হবো না। ভেবে নেবো "না পেয়েও তোমাতেই পাগল আছি"।
-----------------------------------------
মল্লিকা ঘোষমদনপুর, কল্যাণী, নদীয়া
অসাধারণ হয়েছে লেখাটা, এইভাবে লিখতে থাকুন, আমরা আপনার পাশে আছি
উত্তরমুছুননিপুণ আর প্রাজ্ঞ কলমের মুন্সিয়ানায় দেখতে পেলাম এক সমর্পনের দৃশ্যকল্প। অনবদ্য বিন্যাস ও কাহিনীর যথাযথ পটভূমি নির্মাণ। ভালোবাসা সতত ও সুন্দর- এর থেকে প্রাসঙ্গিক এবং সত্য আর কিছু হতে পারে না। ভীষণ ভীষণ ভালো লাগল। সৃজনে থাকো।
উত্তরমুছুন