গল্প ।। বেলা শেষে তোমার কাছে ।। চন্দ্রানী চট্টোপাধ্যায়
ছবিঋণ- ইন্টারনেট
বেলা শেষে তোমার কাছে
চন্দ্রানী চট্টোপাধ্যায়
যাঃ, কারেন্ট টা অফ হয়ে গেল!! কি জায়গা রে বাবা!! বিড়বিড় করতে করতে রুচিরা উঠে দাঁড়াল খাট থেকে। সেই সঙ্গে সঙ্গে ফুল দিয়ে সাজানো সুসজ্জিত খাট থেকে বেশ কয়েকটা ফুল ও ছড়িয়ে পড়ল মেঝেতে। নতুন জায়গা নতুন ঘর কোনরকমে পা টিপে টিপে টেবিলের উপর থেকে নিজের মোবাইলটা আনতে গেল রুচিরা। দরজার ঠিক পাশেই রয়েছে টেবিলটা। তাতে রয়েছে অনিকেতের বেশ কয়েকটা বই এবং একটি সুন্দর ফুলদানি। রুচিরা কোনরকমে হাতড়ে হাতড়ে টেবিলের কাছে পৌঁছতে গিয়ে কিছুর সাথে ধাক্কা খেল এবং চিৎপাত হয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হল কিন্তু পড়ে গেল না। রুচিরা খুব ভয় পেয়ে গেল। একি হলো আধ শোয়া হয়ে কিসের মধ্যে আটকে পড়েছে সে!! বুকের মধ্যে ঘনঘন নিশ্বাস পড়ছে। মিনিট দুয়েক পরেই কারেন্ট চলে এলো। রুচিরা চোখগুলো ভয়ের চোটে বন্ধ করে রেখেছিল অনিকেত ওকে একটু ঝাঁকাতেই চোখটা খুলল । অনিকেতকে দেখেই ওর সর্ব অঙ্গ জ্বলে গেল, এক ঝটকায় টেবিলের কাছে চলে গেল আর ওই সুন্দর ফুলদানী টা হাতে তুলে নিল।
---একি আপনি???
----একদম কাছে আসার চেষ্টা করবেন না। তাহলে কিন্তু ফলটা ভালো হবে না।
----ঠিক আছে ঠিক আছে আপনি একটু শান্ত হন। আমি আপনার মোটেই কাছে আসছি না। ইনফ্যাক্ট আমার কাছে আসার ইচ্ছে ও নেই।
----ও তাই বুঝি? তাহলে বিয়েটা করলেন কেন? একেবারে না করে দিতে পারতেন? এই বলে গটগট করে বিছানাতে বসে পরলো রুচিরা।
----আপনি বা বিয়েতে রাজি হলেন কেন ?
-----আপনার ও তো না করার অপশন ছিল... ছিল...
----একি একি আপনি আমার দিকে এগোচ্ছেন কেন?
অনিকেত ধীরে ধীরে রুচিরার মুখের পাশে নিজের মুখটা এনে বিছানার উপর নিজের বালিশটা নিয়ে বলে"এই প্রবৃত্তি আমার কোনদিনও হবে না"। বলেই সোফাতে গিয়ে বালিশটা টেনে শরীরটাকে এলিয়ে দিল।
----উফ কি মানুষ রে বাবা!! বিছানায় পড়ল তো ওমনি নাক ডাকতে শুরু করলো! ডিসগাস্টিং একেবারে!
---এই যে শুনছেন? শুনতে পাচ্ছেন? শুনুন না? ওই পাশ ফিরে ঘুমোন না?
বাবা মায়ের ওপর অভিমান করে কিছুক্ষণ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে রুচিরা।" কি ভুল করেছিলাম আমি?সুমনকে ভালোবেসেছিলাম। কাওয়ার্ড একটা। বাড়িতে সবাইকে খুব বড় মুখ করে বলেছিলাম সুমনকে ছাড়া বিয়ে করতে পারবো না। আর সুমন আমাকে মাঝ রাস্তায় ছেড়ে দিল। আই নিড সাম মোর টাইম টু সেটেল ডাউন। প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড"। ব্যস আর কোন কথা বলতেই পারল না পরিবারকে রুচিরা। বাবা মায়ের পছন্দ করা ছেলের সঙ্গে অগত্যা বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হলো । এইতো সেই গুড বয় অনিকেত এখন নাক ডেকে ঘুমোচ্ছেন। কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে রুচিরা। রাগের চোটে গায়ে চাদরটুকু পর্যন্ত নেয় নি। বেনারসি আর গা ভর্তি গয়না পড়েই ঘুমিয়ে পড়েছে।
ঘরের মধ্যে এখন পিন ড্রপ সাইলেন্স। অনিকেত উঠে বসলো। আর এক সপ্তাহ পরেই ওকে ফিরতে হবে ওর কাজের জায়গায়। আজ বড় বাবা মাকে মনে পরছে। সে কোন ছোটবেলায় বাবা মাকে হারিয়ে ফেলেছে । পিসি একমাত্র ওর বাবা মার অভাব বুঝতে দেয়নি কোনদিন। আজ পিসির কথা রাখতে গিয়ে এই বিপত্তি। এই বিয়ে। আচ্ছা বিয়ে না করে কি কোন মানুষ থাকতে পারে না! পিসি ও তো বিয়ে করেননি তার বেলা? দুটো মানুষ পরস্পর পরস্পরকে চেনার আগে তাঁদের বিয়ে হয়ে গেল। রুচিরা তো কোনমতেই এটাকে মেনে নিতে পারেননি। তাহলে কি সারাজীবন কম্প্রোমাইজ করে যেতে হবে?
কাল বোধহয় পূর্ণিমা! আজ কেমন গোল থালার মত চাঁদ উঠেছে। পুকুরের জলের ওপর এই চাঁদের প্রতিচ্ছবি কি যে অপরুপ সুন্দর লাগছে!!
রুচিরা ঘুমিয়ে পড়েছেন। অনিকেত পায়ের কাছে পড়ে থাকা চাদরটা রুচিরার গায় দিয়ে দিল। ওনার চোখের কোনে জলটা এখনো শুকায়নি ৷
অনিকেত আর ঘুমোতে পারলো না ৷ জোড় করে একটা চাপিয়ে দেওয়া সম্পর্ক কীভাবে টেনে নিয়ে যাবে সারা জীবন এই ভাবতে ভাবতেই জ্যোৎসনার আলো ম্লান হতে লাগলো ৷
... রুচিরা রুচিরা ওঠ ওঠ!! কটা বাজে দেখেছিস ৷ কিরে এই বেনারসি গয়না পরেই ঘুমিযে পড়েছিস !
... পিসিমা জানো তুমি আমার মায়ের কথা মনে করিয়ে দিলে ৷ মাও আমাকে এমনিভাবে ডাকত সকাল বেলায়।
.... আর কিছুদিন পর থেকে সব তোকে একা একা করতে হবে মামনি৷ একা একাই ঘুম থেকে উঠতে হবে ব্রেকফ৷স্ট বানাতে হবে নিজেকে খেতে হবে খাওয়াতে হবে সব ৷
....কিন্তু পিসিমা আমি যে ওনাকে ...
রুচিরা দেখল পিসীমার ঠিক পেছনে অনিকেত এসে দাঁড়িয়েছে এবং ইশারা করে ওকে কোনো কিছু না বলতে বলছে ৷
...বল কি বলছিলি৷ ওনাকে কি ভালোবাসিস তো ৷ ওকে ভাল না বেসে কেউ থাকতেই পারবে না ৷ মুক্ত আকাশের মত ওর মন ৷
পিছন ফিরতেই পিসিমা অনিকেতকে দেখে বলে উঠলেন,
...কিরে কোথায় ছিলি এতক্ষন ?এখন আর বাউন্ডুলেপনা করলে চলবে না ৷বাড়িতে নতুন বউ এসেছে ৷ফ্রেশ হয়ে আয় তোরা খেতে ৷দেখতে দেখতে অষ্টমঙ্গলা শ্বশুরবাড়িতে রাত কাটানো সব ই হয়ে গেল ৷ সব ছুটি ও শেষ ৷ এবার ফেরার পালা ৷ অনিকেত বায়না ধরেছিল পিসি মাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ৷কিন্তু পিসিমা কিছুতেই যেতে রাজি হল না ৷
দেখতে দেখতে বিয়ের পর মাস ছয়েক কেটে গেল ৷ অনিকেতের ছন্নছাড়া বাউন্ডুলে মার্কা ঘরটা এতদিনে রুচিরার হাতের স্পর্শে প্রাণ ফিরে পেল ৷ দুজনের আলাদা আলাদা ঘর ৷এই ফ্ল্যাটটা থেকে রুচিরার বাপের বাড়ি যেতে প্রায় ঘন্টাখানেক সময লাগে ৷তাই রুচিরা মাঝে মধ্যেই ওর বাপের বাড়িতে চলে যায় ৷সারাদিন ধরে রুচিরার একা একা মোটেই ভাল লাগেনা।
ঘুম আসছে না কিছুতেই দুই ঘরেতে দুজনেরই । মধ্যরাত রুচিরা আর শুয়ে থাকতে পারে না ৷ ব্যলকনির দিকে পা বাড়ায় দেখে অনিকেত আগে থেকেই সেখানে দাঁড়িয়ে।
... একি আপনি এখনও ঘুমোননি ??
... আপনি ও তো ঘুমোন নি অনিকেত বাবু ৷
... এমনি এসে দাঁড়িয়েছি ৷ মনে হচ্ছে খুব বৃষ্টি আসবে ৷
... কি করে বুঝলেন ?
... ছোটবেলার পিসি বলতো রাতের আকাশটা যদি লাল হযে যায় তবে বৃষ্টি আসে ৷
... আপনাকে আজ বড় আপসেট দেখাচ্ছে রুচিরা ৷ আমাকে কি বলা যাবে আপনার কি হয়েছে ?
রুচিরা চুপ করে থাকে ৷
... অনেকদিনের চাপা কষ্ট কিন্তু কখনো কখনো মন ও বইতে পারে না ৷ শেয়ার করেই দেখুন না একবার৷.
...আপনার জীবনটা আমি খারাপ করে দিলাম অনিকেত বাবু ৷
... আমার জীবন কেউ খারাপ করতে পারেনি ৷ আমি আমার জীবনকে খুব শ্রদ্ধা করিএবং ভালবাসি ৷ বরং আমার আপনার মতই মনে হয় ৷ আমি আপনার লাইফটা স্পয়েল করে দিলাম। আচ্ছা হাসব্যন্ডের দাবী করবো না ৷ অন্তত বন্ধুত্বটুকু স্বীকার করে নেবেন ?
রুচিরা চুপ করে থাকে ৷
এই প্রথম বার নিজে হাতে ব্রেকফাস্ট বানায় অনিকেতের জন্য। তারপর লান্চ প্যাক করে দেয়।
অনিকেত অবাক হয়ে যায়।
... এসব আবার কেন ?
... কাল রাতের কথা গুলো কি ভুলে গেলেন ? এখন অফিসে যান ৷
আজ রুচিরা প্রথমবার অনিকেতের ফোনের জন্য অপেক্ষা করছে ৷ বারবার নিশ্চুপ মুঠোফোনের দিকে চোখ যাচ্ছে তার ৷
এখন ঠিক সন্ধ্যে সাতটা বাজে ৷ কিন্তু অনিকেত কেনো ফিরছে না ? প্রতিদিন তো এই সময় বাড়ি ফিরে আসে ৷ রুচিরা ভাবে সে কি একটা ফোন করে দেখবে ? না এত আগ্রহ দেখাবার কোন দরকার নেই ৷
অনিকেত ফিরল রাত তখন আটটা ৷ রুচিরা এককাপ কফি এনে রাখল অনিকেতের সামনে ৷ তার এই বদল অনিকেতের চোখে এড়াল না ৷ রুচিরা এই প্রথমবার ওকে ডিনারের জন্য ডাকতে এল। অনিকেত প্রথমে ঠিক যেতে চাইল না কিন্তু রুচিরার মিষ্টি মিষ্টি এই জেদটার কাছে হার মানতে বাধ্য হল ৷
ডিনারের পর ওরা ওদের প্রিয় ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াল।
... না রুচিরাএটা কিন্তু মানতেই হবে আপনার হাতের রান্নাটা খুব ভালো। অনেকদিন পর যেন মনে হলো বাড়ির খাবার খেলাম । অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ৷
...আমি কিন্তু আপনার থেকে একটা ফোন কল আশা করেছিলাম ৷
...আপনি ?আমার থেকে আশা করেছিলেন ? আমার কি সৌভাগ্য !
...মজা করছেন না অনিকেত বাবু !
...না বলা যায় না আবার যদি রেগে টেগে যেতেন ! আপনার মনে আছে সেই আমাদের ফুলশয্যার রাতে কী কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন !সেদিন মনে হয়েছিল ওরে বাবা মেয়ে নয় রীতিমতো শ্রীমতি ভয়ঙ্করী !
...প্লিজ অনিকেত বাবু আর এসব কথা মনে করিয়ে আমাকে লজ্জা দেবেন না ৷
. . .এক কাজ করুন কাল সারাদিন বাড়িতে একা একা না থেকে বাড়ি থেকে ঘুরে আসুন ৷ অনেকদিন যাওয়া হয়না বাড়িতে ৷ কি বলেন ? আপনাকে বলে রাখি কাল একটু দেরি হবে অফিস থেকে ৷
রুচিরা চুপ করে থাকে। কারন টা খুব জানার ইচ্ছে থাকলে ও মুখে কিছুই জিজ্ঞাস৷ করতে পারল না।
সকাল সকাল ব্রেকফাস্ট বানিয়ে দুজনে একসাথে খাওয়া সেরে ফেলল ৷ লান্চ প্যাকও করে দিল। আজ অনিকেত রুচিরার মুখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। স্টেপ কাটা চুলগুলোতে বিলি কেটে দিতে ইচ্ছে করছিল খুব....কিছু বলতে চেযেও বলতে পারল না ৷
অনিকেত বেরিয়ে গেল। রুচিরা ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালো। এখান থেকে দেখা যায় রাস্তাটা। অনিকেত অপেক্ষা করছে অফিসের ক্যাবের জন্য। অনিকেত একবার পিছন ফিরে রুচিরাকে হাত নেড়ে বাই জানিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ল।
এ কি অভ্যাস হচ্ছে রুচিরার। একদিকে রুচিরা আর অন্যদিকে তার রেপ্লিকা। দুজনে বুঝে উঠতে পারছে না আসলে সত্যিটা কি। এক রুচিরা বলছে ছুটে যাই অনিকেত এর কাছে তো আর এক রুচিরার মত নেই। এক রুচিরা র মনে হচ্ছে , সে অনিকেত কে ভালবেসে ফেলেছে। তো অন্যজন বলছে অত্যন্ত বোকা বোকা ব্যাপার। এটা করা উচিত নয়। তুমিতো সুমনকে ভালবেসেছিলে। এটা তোমার একটা ইনফ্যাচুয়েশন।
রুচিরা চোখ বন্ধ করে ফেলে দুই হাত দিয়ে কানগুলো চেপে ধরে। ঠিক করে এসব নিয়ে আর ভাববে না। কিন্তু এই সম্পর্ক ! এর কি হবে? সারাদিন কেটে গেল। দুপুরে কিছু খেলো না । আচ্ছা অনিকেত যদি ওকে নিয়ে ভাবত তাহলে অফিসে গিয়ে অন্তত একবার ওর কথা মনে পড়ত। একটাবার অন্তত ফোন করে খোঁজ নিত। রুচিরা খুব আপসেট হয়ে গেল। অনিকেতের ফেরার সময় হয়ে এল ৷ রুচিরা নিজের মনেই আবার ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াল ৷ কিছুক্ষন পর দেখল রিকশায় করে অনিকেত ফিরছে ৷পাশে মনে হচ্ছে কোন মহিলা বসে আছে ৷"এ কে ?অনিকেতের পাশে অন্য কোন মহিলাকে দেখে কেন এত রাগ হচ্ছে? তবে কি আমি আবার করে প্রেমে পরলাম , ওকে কি একবার জিজ্ঞাসা করা উচিত আমার!!"বিড়বিড় করতে থাকে রুচিরা। বাড়িতে ফিরলে রুচিরা অনিকেতকে কিছুই বলে না। মনটা ভালো নেই। অনিকেত কি কিছু বুঝতে পারে না? অফিস থেকে এসে তো একটাও কথা বলেনি আজ। রুচিরার ঘরের দরজাটা হাল্কা ভেজানো। অনিকেত টেবিল থেকে জলের বোতলটা নিতে এসে হঠাৎ করে রুচিরার মৃদু কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়। ভাবে একবার কি যাবে ওর ঘরে!! কাঁদছে কেন মেয়েটা? আর যাই হোক রুচিরাকে কাঁদতে দেখতে পারবে না। বিয়ের ছবিটা দেখেই রুচিরাকে ওর পছন্দ হয়ে গিয়েছিল। ওকে কোনো ভাবেই হারাতে চায় না অনিকেত। তাই রুচিরার দরজাটা নক করে ফেলে অনিকেত।
..... আসতে পারি?
.... এমা ছি ছি একি কথা আসতে পারি কেন আসুন না। এটা বলার কি আছে?
.... না মানে আপনি যদি আবার রাগ করেন.. আবার যদি কিছু ছোড়াছুড়ি করেন.... তার পর এই রাত্তির বেলা কোথায় আবার ডাক্তার পাবো বলুনতো??
...... হাহাহাহা.... আপনি সত্যি খালি ঠাট্টা করেন আর বারবার আমাকে মনে করিয়ে দেন সেই দিন টা। আই এম সরি ভেরি সরি।
.... আচ্ছা আচ্ছা হয়েছে। আমাকে একটা কথা বলবেন আপনার কি খুব মন খারাপ। আমাকে আপনি বলতে পারেন..….. আমি যদি কোন আপনার উপকারে আসতে পারি.....
...... কি জানেন তো যখনই এলোমেলো চিন্তা ভাবনারা মাথার মধ্যে ভিড় করে আসে তখন কি যে হয় মনে হয় ছুটে চলে যাই আপনার আঙ্গিনায়.....মনে হয় ...মনে হয় দুই হাত বাড়িয়ে......
..... কি হলো রুচিরা বলুন..... বলুন না.... শেষ করুন কথাটা!!
... কিছু না অনিকেত..... আপনার কালকে অফিস আছে না.... অনেক রাত হলো.... শুয়ে পড়ুন এবার. গুড নাইট।
...... গুড নাইট।
আজ সকাল থেকে প্রচুর ফোন আসতে শুরু করেছে রুচিরার। রুচিরা এতবার করে ফোনেতে থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ বলে যাচ্ছে তাও অনিকেত কি কিছুই বুঝতে পারছে না যে আজ তার জন্মদিন। একবারও উইশ পর্যন্ত করলো না। অনিকেত বেরিয়ে যাবার পর বাড়ি থেকে ফোন এল। মা বাপি উইশ করলো। অফিসে গিয়ে অন্তত একবার ফোনও তো করতে পারত অনিকেত। নাঃ সত্যিই বোধহয় ওর রুচিরা র প্রতি কোন আগ্রহ নেই। মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল ওর। আজ বাড়িতে যাবে আর ফিরবে অনেক রাত করে।
রুচিরা ফ্ল্যাটে ফিরে এসে আরো রেগে গেল। একি কি অবস্থা। সারা মেঝেতে ময়দা একদিকে বেকিং পাউডার .... একেবারে লন্ডভন্ড।
...... হ্যাপি বার্থডে ....... ভেবেছিলাম আপনাকে একটা সারপ্রাইজ দেবো...... নিজে হাতে কেক বানিয়ে...... কিন্তু কিছুই করে উঠতে পারলাম না......
....... কিছু করতে হবে না। আমি অলরেডি সারপ্রাইজড।
অনিকেত অনেকটা কাজ বাড়িয়ে দিলো এটা ভেবে বেশ বিরক্ত হলেও মনে মনে খুবই আনন্দিত রুচিরা। কিন্তু এটা কি শুধুই ফর্মালিটি? বন্ধুত্বের জন্য? আর ওই মেয়েটি যার সঙ্গে বেশ খুশি খুশি লাগছিলো!
...... রুচিরা.... রুচিরা..... রুচিরা দেবী আপনি কোথায় হারিয়ে গেলেন। চলুন আপনাকে একটু হেল্প করি এগুলো পরিষ্কার করতে।
..... আপনাকে কিছু করতে হবে না। আপনি ওয়াশরুমে যান এবং নিজে ফ্রেশ হয়ে আসুন।
.... যেতে পারি একটা শর্তে।
..... এতেও শর্ত!!! আচ্ছা বেশ বলুন কি শর্ত?
...... আমার সাথে এখন ডিনারে যেতে হবে । কোনো না কিন্তু আমি শুনবো না আপনার।
.... আচ্ছা বেশ তাই হবে।
আজ সুন্দর করে সাজলো রুচিরা। পরনে আগুনরঙা একটা সিল্কের শাড়ি যেটা এক্ষুনি অনিকেত ওকে প্রেজেন্ট করেছিল। ছোট্ট একটা টিপ আরেকটু লিপস্টিক। তার সাজগোজের জন্য এই যথেষ্ট।
এই প্রথমবার তারা একে অন্যের মুখোমুখি অনেকটা সময় রেস্তোরাঁর নিভু নিভু আলোয় দিনটা ভালই কাটালো।
সেই চেনা পরিচিত ব্যালকনিতে এসে অনিকেত আজকের ভালো লাগার মুহূর্ত গুলো আবারও মনে করার চেষ্টা করছে। কখন যে রুচিরা পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতেই পারেনি ও।
....... থ্যাংকস ফর এভ্রিথিং
....…এতে থ্যাংকস এর কি আছে রুচিরা!!
..... একটা কথা খুব জানতে ইচ্ছে করছিল যদিও এটি আমার এক্তিয়ারের বাইরে তবুও ....ওই মেয়েটিকে আপনি কি ভালবাসেন? রিকশায় করে একসাথে আসছিলেন সেদিনকে।
...... কি বলি বলুন তো আপনাকে! তবে মনে হচ্ছে কিছু একটা গন্ধ বেরোচ্ছে... কিছু পুড়ছে মনে হচ্ছে..
.... পুড়ছে তো!! বিড় বিড় করে বলে উঠলো রুচিরা।
...... কি বললেন? আর একবার বলুন.. কিচ্ছু শুনতে পেলাম না।
..... দরকার নেই।
.... আমি একজনকে ভালোবাসি ঠিকই তবে ওই মেয়েটিকে নয়। ওকে আগে আমি টিউশন পড়তাম । বড্ড গায়ে পড়া বলে ছেড়ে দিয়েছি। আপনাকে লুকানোর কিছু নেই। আমি চিন্তা করেছি এবার তার জীবনের রং ছড়িয়ে দেবার সময় এসেছে। আপনি আমার খুব ভালো বন্ধু। তাই আপনার সাথে শেয়ার করলাম।
...... খুব ভালোবাসেন বুঝি তাকে?
...... সারাক্ষণ তার ছবি দেখতে থাকি।
...... কনগ্রাচুলেশন্স!!!!!
এই কথা বলেই রুচিরা পেছন ফিরে নিজের রুমে যেতে গেলে অনিকেত ওর হাতটা চেপে ধরে। এক ঝটকায় ওর বুকের কাছে নিয়ে আসে। যে মেয়েটিকে অনিকেত ভালবাসে তার ছবিটা দেখায়। রুচিরা হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠে। আরো চেপে ধরে অনিকেতকে। মোবাইলে অন্য কোন মেয়ের নয় তার বিয়ের আগেকার ছবি। অনিকেত হাঁটু মুড়ে বসে একটা আ়ংটি নিয়ে রুচিরাকে বলে.....
..... উইল ইউ বি মাই ওয়াইফ? খুশিতে আনন্দে শুধু কেঁদেই যাচ্ছে রুচিরা আর মাথাটা নাড়িয়ে সম্মতি জানাচ্ছে। এক দৌড়ে ঘরে চলে গেল আবার ফিরে এলো হাতে একটা সিঁদুরের কৌটা
...... রাঙিয়ে দিন আজ আমায়। আপনার রঙেই ভিজতে চাই সারা জীবন।
অনিকেত জড়িয়ে ধরে রুচিরাকে।
জীবনের এই অন্তবিহীন লেনদেন সুখ দুঃখ,ভালো মন্দ ,ভালোবাসা যন্ত্রণা ফুরিয়ে যায় না কখনো। উন্মোচিত পান্ডুলিপির মতো একটি জীবন পত্র বারংবার নতুন নতুন ভাবে নতুন রূপে ফিরতেই থাকে।
-------------------------------------
✍️কলমে
চন্দ্রানী চট্টোপাধ্যায়
Address
640, Jawpur road
Kolkata 74
Wao.... Great.
উত্তরমুছুনChaliye jao boss
Wao....Great
উত্তরমুছুনChaliye jao boss
Wao... great
উত্তরমুছুনChaliye jao boss