Click the image to explore all Offers

অণুগল্প।। বাজলো তোমার আলোর বেণু ।। অশোক দাশ




বাবা মায়ের একমাত্র কন্যা দীপান্বিতা। অন্য মেয়েদের থেকে ভিন্ন। তাঁর পচ্ছন্দ সাদা মাটা জীবন। পড়াশোনায় অত্যান্ত মেধাবী। সহপাঠীরা সকলে তাকে ভালোবাসে।সেও সকলের আপদে- বিপদে সব সময় পাশে থাকে। কার ও কোন অসুবিধা হলে মুসকিল আসান দীপান্বিতা।
   একদিন সে টিউশান করে বাড়ি ফেরার পথে ফুটপাতে দেখলো একদল ছোট- ছোট ছেলে- মেয়ে।যাদের পরনে শত ছিন্ন পোশাক, জীর্ন- শীর্ন কঙ্কাল সার দেহ।মনে হয় এদের সবদিন খাবার জোটে না। দীপান্বিতার কিশোরী মনে সমবেদনার উদ্বেগ ঘটে।মনে- মনে ভাবে এদের জন্য কিছু একটা করতে হবে।
    বাড়ি ফিরে ফ্রেস হয়ে সে ছাদে উঠে যায়।শরতের আকাশে মেঘেদের লুকোচুরি খেলা দেখতে থাকে। কালো মেঘ ফুঁড়ে চাঁদকে দেখতে পায়।জ্যোৎস্নার আলোয় আঁধার কাটে,মনে পড়ে ফুটপাতের বুভুক্ষু শিশুদের কথা। তন্ময় হয়ে ভাবতে থাকে, ওদের জীবনের আঁধার কি কাটবে না! মায়ের ডাকে সম্বিত ফিরে পায়। নেমে আসে ছাদ থেকে নিচে।
 
 
 
   পরদিন দীপান্বিতা ওর সহপাঠী বন্ধুদের তাঁর মনের কথা এবং পরিকল্পনার খুলে বললো।দেখ আমরা প্রতি বছর পূজোয় কত- কত নতুন জামা- প্যান্ট পাই।সব পরা হয়না। নতুন কত জামা- প্যান্ট এই ভাবে ছোট হয়ে পড়ে আছে,আমরা যদি সেগুলো কালেকশন করে ঐ ফুটপাতের ছেলে- মেয়েদের হাতে তুলে দিতে পারি, তাহলে এই পূজোয় ওরা খুশি মনে ঠাকুর দেখার আনন্দের শরিক হতে পারে। বন্ধুরা সহমত পোষণ করে এবং একজন বলে যদি আমাদের হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে ওদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে পারি কেমন হয়! সকলে বলে ওঠে দারুন আইডিয়া।
   পরিকল্পনা মোতাবেক ওরা সকলে কাজ শুরু করে দেয়।
   কয়েক দিন পর হৈ- হৈ করে দীপান্বিতা তার দলবল নিয়ে,ব্যাগভর্তি জামা- কাপড় নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। দীপান্বিতার মা তো ওদের হট্টগোলের কোন কারণ বুঝতে পারে না। মা জিজ্ঞেস করে,এত খুশির কারন জানতে পারি কি? দীপান্বিতা মাকে দু' হাতে জড়িয়ে ধরে তার ইচ্ছার কথা বলে। ততক্ষণে বন্ধুরা নতুন জামা- প্যান্ট গুলো আলাদা করতে থাকে সাইজ অনুযায়ী।
   মা আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। তাঁর দু' চোখে ঝরে আনন্দের অশ্রধারা। খুশিতে বলতে থাকে আমিও আছি তোদের সাথে। আমি নিজের হাতে লুচি, আলুর দম আর মিষ্টি করে ওদের খাওয়াবো। সকলে সমস্বরে আনন্দে চিৎকার করে ওঠে- থ্রিচিয়ার্স ফর কাকিমা।
    রাতে সব কথা শুনলো দীপান্বিতার বাবা। এবং বলতে থাকে আমাদের মেয়েটা দেখো খুব বড় মনের মানুষ হবে।আর পাঁচটা মেয়ের মতো না,যে নিজের ছাড়া অপরের কথা ভাবে। আমার আশীর্বাদ ভালোবাসা ওর সাথে সব সময় থাকবে। মনটা আজ গভীর আনন্দে ভরে গেল।এই অন্ধকার সময়ে তাদের মেয়ে একবিন্দু স্ফুলিঙ্গ।
     পরের দিন মহাসপ্তমী। পূজা মন্ডপ সেজে উঠেছে।ঢাকের শব্দ মাইক্রোফোনের আওয়াজে চারিদিক গম- গম করছে। আকাশে- বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে আগমনী সুর। গঙ্গার ঘাটে- ঘাটে নবপত্রিকার স্নান পর্ব চলছে মহোল্লাসে।
     দীপান্বিতার বন্ধুরা এসে গেছে। দীপান্বিতার মা আজ ভোর- ভোর উঠে ওদের জন্য টিফিন প্রস্তুত করে রেখেছে। দীপান্বিতার মা বলে তোরা সকলে মিলে খাবার গুলো প্যাকেট করে ফেল, আমি স্নানটা সেরে নিই।
    ওরা সকলে সমস্ত গুছিয়ে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হবার সময় দীপান্বিতার বাবা একরাশ বেলুন, লজেন্স নিয়ে ওদের পিছু নিল। ভালো কাজে যে এত আনন্দ আজ ওরা সকলে উপলব্ধি করলো।
      সকলে মিলে পৌঁছে গেল ফুটপাতের সামনে। যেখানে শতছিন্ন ত্রিপলে ঢাকা আস্তানায় ওরা থাকে দিন- রাত। দীপান্বিতাকে দেখে ওরা দিদি বলে চিৎকার করে উঠল। কারন দীপান্বিতা ওদের পরিচিত, মাঝে- মাঝে লজেন্স- বিস্কুট ওরা পায় দিদির কাছ থেকে।
    দীপান্বিতা আর ওর বন্ধুরা সকলের হাতে নতুন জামা- প্যান্ট তুলে দেয়,ওর মা সবাই- এর হাতে - হাতে খাবারের প্যাকেট তুলে দেয়। এবং সবশেষে তার বাবা বেলুন আর লজেন্স দেয়।
    নতুন জামার ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌গন্ধ গায়ে মেখে,  খুশি আনন্দে সকলে আত্মহারা হয়ে  দীপান্বিতা ও তার বন্ধুদের জড়িয়ে ধরে।
   অনাবিল প্রশান্তি তে হৃদয় ভরে গেল সকলের।কানে ভেসে আসে সুর মুচ্ছর্না' বাজলো তোমার আলোর বেণু' ।
 
                                                        ----------------------- 
 
 


অশোক দাশ
ভোজান, রসপুর, 
হাওড়া, 
পশ্চিম বঙ্গ, ভারত



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.