অণুগল্প ।। সীমানার ইঁট ।। সৌমিক ঘোষ
শুচিবায়ুগ্রস্ত বউয়ের জন্য সকালবেলায় একটা রঙচটা গামছা পড়ে বাড়ির চারিপাশ জল দিয়ে ধোওয়া , ইন্দ্রনাথবাবুর অভ্যাস । বাইরের কলের জলে স্নান সেরে তুলসীতলা আর কলতলাতে আবার গঙ্গাজল ছড়িয়ে দেন । তুলসীমঞ্চের কুঠুরিতে বোতলে গঙ্গাজল রাখা থাকে ।
-কই হলো তোমার ? এখুনি কালোর মা এসে গেলে দাঁড়াবো কোথায় ? ভেতর থেকে চেঁচায় কাবেরী।
-এই তো আসছি ,- বলে ইন্দ্রনাথবাবু পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকলেন ।
সামনের দরজা খুলে দশাসই চেহারার কাবেরী তুলসীতলায় সূর্যপ্রণাম সেরে নিলেন । ইন্দ্রনাথবাবু ছাদে বউয়ের জামকাপড় কেচে মেলতে উঠেছেন । পাশের বাড়ির পিন্টুদা এইসময় ছাদে একটু শরীরচর্চা করেন । গলা খাঁকারি দিয়ে ইন্দ্রনাথবাবু বললেন – পিন্টুদা , দেখুন আপনার বেড়াটা কেমন হেলে আমার জমিতে এসে পড়েছে ।
পিন্টুদা হেসে বললেন – কাদায় কী খুঁটির জোর থাকে ? জমি ; আপনার-আমার ভেবে কী হবে ?
-না, না । তা বললে হবে না । সীমানা বজায় রাখতে হবে ।
-ধূর , সীমানা ? আপনার ঐ কাঁচা ড্রেনটা ঠিক করুন । ওটা তো খাল হয়ে আছে ।
-কী বলছেন ? ওটা পুরো ইঁট পেতে করা। মাপা আছে।
-ও পাতুন, মাপুন আপনি ওসব নিয়ে থাকুন; বলে পিন্টুদা নীচে নেমে রান্নাঘরে চা করছিলেন।
এমন সময়ে ইন্দ্রনাথবাবু চিৎকার করেন – পিন্টুদা, পিন্টুদা । এই দেখুন আমার সীমানা। সোনামন লেখা ইঁট।
পিন্টুদা বাইরে এসে চমকে যান। কোনরকমে বললেন – আরে ড্রেনের কালো নোংরা পাঁক ঘেঁটে আপনি সীমানার ইঁট খুঁজছেন ?
-------------------------------------
সৌমিক ঘোষ
৬৭/জি ; জি.টি.রোড (পশ্চিম)
শ্রীরামপুর – ৭১২ ২০৩ , হুগলী।