বিজ্ঞপ্তি
লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫
নভেম্বর ২১, ২০২৪
এবং মুখগুলি ....গোবিন্দ মোদক
অডিটোরিয়াম কানায় কানায় ভর্তি। ডায়াসে সপ্রতিভ সঞ্চালক অনুষ্ঠান পরিচালনা করছেন। একসময় তিনি বললেন – আমরা আমাদের মধ্যে উপস্থিত করতে চলেছি পৃথিবী বিখ্যাত মৃৎ-শিল্পী রাধু পাল মহাশয়কে। আসছেন সেই রাধু পাল – রাষ্ট্রপতি পুরস্কার যাঁর কাছে সামান্য, যে কোনও আন্তর্জাতিক পুরস্কারও যাঁর কাছে অত্যন্ত নগণ্য! যাঁর হাতে কাদা-মাটি কথা বলে সেই রাধু পাল আজ আপনাদেরকে একটি জাদু দেখাবেন। সেইজন্যেই অনুষ্ঠানটির নাম রাখা হয়েছে 'রাধুর জাদু'। প্রথমে ঠিক করা হয়েছিল অনুষ্ঠানটির নাম হবে "...এবং মুখগুলি"। কিন্তু কেন যে নামটিকে বদলে সেটিকে 'রাধুর জাদু' করা হলো তা আপনারা অনুষ্ঠানটি দেখলেই বুঝতে পারবেন। আসুন আমরা স্বাগত জানাই বিশিষ্ট মৃৎ-শিল্পী রাধু পাল মহাশয়কে।হল জুড়ে একটা বড়ো হাততালি। তারপরই স্টেজে আবির্ভূত হলেন রাধু পাল। অশীতিপর বৃদ্ধ। হাত দু'টি কাঁপা কাঁপা, একদম সাধারণ দেখতে। কোনও গ্রাম্য মানুষের সঙ্গে তার পোশাক-আশাক বা শারীরিক অবস্থার পার্থক্য নেই। সাধারণ একজন মানুষ যেন। দর্শকদের উদ্দেশে তিনি হাত জোড়া করে প্রণাম জানালেন। তার সামনে একজন এক তাল কাদামাটি রেখে গেল। তা থেকে খানিকটা মাটি নিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই একটি মুখ বানালেন – একটি সাধারণ মানুষের মুখ। তারপর সেটিকে চারটি আঙুলের চাপে এবং একটি নরুণের কারিকুরিতে করে তুললেন রবীন্দ্রনাথ। তারপর সেটিকে আলতো চাপ দিতেই সেটি হয়ে গেল লালন ফকির। আবার সামান্য একটু অদল-বদল করতেই সেটি হয়ে গেল ঋষি অরবিন্দ। আবার হাতের চাপ এবং সেটি সক্রেটিসের মুখাবয়বের আকৃতি লাভ করল। এভাবে সেই মূর্তি কখনও দানবের, কখনও দেবতার, কখনও নেতাজি সুভাষচন্দ্রের, কখনো বিবেকানন্দের, কখনও রামকৃষ্ণের, কখনও যীশুর, কখনও নানকের বা বুদ্ধের আবার কখনও বা ক্ষুদিরামের মুখ হয়ে গেল। মুহুর্মুহু হাততালিতে ফেটে পড়তে লাগলো অডিটোরিয়াম।সবার উদ্দেশ্যে প্রণাম জানিয়ে বর্ষীয়ান শিল্পী বললেন – আজকালকার যে সমস্ত শিল্পী মাটি নিয়ে কাজ করেন তাদের স্টুডিওতে গিয়ে দেখবেন অজস্র মুখোশের ছাঁচ রয়েছে এবং সেই সব ছাঁচে ফেলে তারা বিভিন্ন দেব-দেবতা বা বিখ্যাত মনীষীদের রূপ দেন। কিন্তু যাঁরা প্রকৃত শিল্পী তাদের কোনও ছাঁচ লাগেনা। তাদের হাতের দশটি আঙ্গুলের মধ্যে লুকানো রয়েছে হাজার হাজার মুখাবয়বের ছাঁচ। প্রকৃত শিল্পীর একটা প্রচেষ্টাই যথেষ্ট যার সাহায্যে একতাল কাদামাটি কখনও রবীন্দ্রনাথ, কখনও নজরুল, কখনও বুদ্ধদেব, কখনও যীশু, কখনও চৈতন্য, আবার কখনও বা লালন। তবে শুধু হাতের জাদু থাকলেই কিন্তু এটি সম্ভব নয়, দরকার হয় অন্তর্দৃষ্টির। আর সেই অন্তর্দৃষ্টি যাঁর থাকে, তিনিই প্রকৃত শিল্পী।আবার চটপট হাততালিতে হল ভেঙে পড়তে লাগলো যেন। একজন সাংবাদিক উঠে দাঁড়িয়ে বললেন অনুষ্ঠানটির নাম ".... এবং মুখগুলি" একদম ঠিকই ছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এক্ষেত্রে "রাধুর জাদু" নামটিই আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়েছে। আবারও হল হাততালিতে ফেটে পড়তে লাগলো, মুহুর্মুহু ক্যামেরার ফ্ল্যাশের ঝলকানিতে ভরে উঠলো অডিটোরিয়াম। রাধু পাল একবার মুখটা তুলে ওপর দিকে তাকালেন, তারপর কাঁপা কাঁপা দু'হাত তুলে নমস্কার জানালেন। বললেন – রাধুর জাদু বলে কিছু নেই, সবটাই এক তাল মাটি! আমি, আপনি, আপনারা সবাই ঐ এক তাল মাটি! আমরা সবাই মাটির রকমফের মাত্র। এই মাটি ছেনেই ঈশ্বর তৈরি করেছেন সবার মুখ। আবার সময় হলে সবাই-ই মিশে যাবে মাটিতে। মাটিই খাঁটি – আর এটাই হলো মাটির জাদু!
---------------------
প্রেরক: গোবিন্দ মোদক।সম্পাদক: কথা কোলাজ সাহিত্য পত্রিকা।রাধানগর, ডাক- ঘূর্ণি, কৃষ্ণনগর, নদিয়া।পশ্চিমবঙ্গ, ভারত, ডাকসূচক - 741103WhatsApp/ফোন: 8653395807/ 7044404333email id: modakgobinda001@gmail.com