প্রত্যাবর্তন
হারান চন্দ্র মিস্ত্রী
প্রতি বছর একবার কোথাও না কোথাও বেড়াতে যায় সৌমেন। গ্রামের লোকে তাকে ভ্রমণ বাবু বলে ডাকে। আশেপাশের বিখ্যাত জায়গাগুলি তার বেড়ানো হয়ে গিয়েছে। সারাবছর ধরে সে কঠোর পরিশ্রম করে রোজগার করে। সেই টাকা সে সঞ্চয় করে রাখে। দুর্গা পূজার আগে নতুন জামা-প্যান্ট তৈরি করিয়ে নেয়। কিনে নেয় একজোড়া জুতো এবং একজোড়া নতুন চটি। কোলকাতার দুর্গাপূজা শেষ হলে সে বেরিয়ে পড়ে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। আগে থেকে সে ট্রেনের টিকিট কেটে রাখে না। যাত্রীবাহী ট্রেনের টিকিট কেটে এখানে ওখানে ঘুরে তবে গন্তব্যস্থলে পৌঁছায়। তাতে জায়গাগুলো সে নিখুঁতভাবে দেখতে পায়। এভাবে বহু মানুষের সঙ্গে তার জানাশুনো হয়ে গেছে। সমবয়সী বহু ছেলে তার বন্ধু হয়ে গেছে। কখনও তাদের কারও বাড়িতে তার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে যায়।
এবছর সৌমেন সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে কোনো রাজ্যে বেড়াতে যাবে। রাজ্যটি বেশি দূরেও নয়। বেশকিছু জায়গা ঘুরে দিন পনেরোর মধ্যে ফিরে আশা যাবে। তাতে বেড়ানো হবে, তাড়াতাড়ি এসে কাজে যোগদান করাও যাবে। কিন্তু অন্য রাজ্যে যেতে আগে থেকেই টিকিট কাটা উছিত মনে করে সে। এবছরে তার গন্তব্যস্থান দিল্লি। তাই দিল্লি যাওয়ার টিকিট কেটে নেয় সৌমেন।
নির্দিষ্ট দিনে ট্রেন ধরে নেয় সৌমেন। অনেকখানি পথ যেতে হবে তাকে। কিছু খাবার সঙ্গে নিয়েছিল সে। রাত ন'টা বাজতে খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ে। পাছে জিনিসপত্র কেউ নিয়ে চলে যায় সেই ভয়ে সে কিছুতেই ঘুমোতে পারছিল না। রাত গভীর হচ্ছে। পেটে খাবার পড়েছে। তাতে আছে রেলযাত্রার দোলন। কখন তার চোখ জুড়ে ঘুম এসেছে বুঝতে পারেনি সে। যখন তার ঘুম ভেঙেছে তখন ট্রেন যমুনা নদীর ব্রীজ পার হচ্ছে।
রাতের অন্ধকার কেটে গিয়ে ভোরের আলো ফুটছে। স্থির যমুনার জলে জেলেডিঙি কাগজের নৌকার মতো ভাসছে। দূরে বরফে আচ্ছাদিত পাহাড়ের চূড়ায় সূর্যের আলো পড়ে প্রতিফলিত হচ্ছে। সেই সময়ে পাহাড়ের দৃশ্য দেখে প্রশান্তিতে ভরে ওঠে সৌমেনের মন। শরতের আকাশে মেঘ তুষারে আবৃত পাহাড়চূড়াগুলি ছুঁয়ে যাচ্ছে।
ট্রেন এগিয়ে যায়। বেলা বাড়ে। গমের খেতে ময়ূর চরছে। গোরুর গাড়ি আখ বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কোথাও সাদা কাশফুল মাথা দোলাচ্ছে। রেলপথের পাশের খালে মাইলের পর মাইল জায়গা জুড়ে পদ্ম ফুটেছে। আকাশে অলক মেঘের দেখা মিলেছে। শরতের অপুর্ব প্রাকৃতিক শোভা সৌমেনকে মুগ্ধ করেছে।
ট্রেন দেরিতে চলছিল, সন্ধ্যার পরে গিয়ে থামল গন্তব্যস্থলে। স্টেশন চত্বর ছেড়ে বেরিয়ে আসতেই কালিঘাটের পান্ডাদের মতো পিছনে লেগে পড়ল ট্যাক্সি চালকের দল। প্রত্যেকে চায় তার গাড়িতে যেন সৌমেন যায়।
সৌমেনের যাওয়ার ঠিকানা ছিল না। সে হোটেলের খোঁজ করল। বিভিন্ন ভাড়ার আবাসিক হোটেলের খবর পেল সে। কেউ কেউ হটেলে ফোন করে ঘর খালি আছে কিনা জানাল। একজন ট্যাক্সি চালক তাকে দিল্লির বিখ্যাত কালীবাড়িতে থাকার পরামর্শ দিল। সৌমেন সেখানে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে গাড়িতে চেপে বসল।
পথভ্রমণের পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল সৌমেন। সে পথিমধ্যে একটি রেস্টুরেন্ট পেয়ে সেখান থেকে রুটি, তড়কা ও জল কিনে নিয়েছিল। কালীবাড়িতে পৌঁছে ঘর সংগ্রহ করার পর তার খাবার স্পৃহা ছিল না। শরীরের আলস্য তার দু-চোখ জুড়ে ঘুম এনে দিয়েছিল। কোনোক্রমে একটি রুটি, অল্প একটু তড়কা ও খানিকটা জল খেয়ে শুয়ে পড়ে সে।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল সৌমেনের। সকালে হাত-মুখ ধুয়ে বেরিয়ে পড়ল টিফিনের সন্ধানে। রাস্তায় নেমে আসতেই সে অবাক। কাকে দেখছে সে! ভুল দেখছে না তো!
উল্টো দিক থেকে এগিয়ে আসা মেয়েটি তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। সৌমেন তাকে ভদ্রভাবে জিজ্ঞেস করল,"কিছু বলবেন?"
মেয়েটি বলল,"না। আমি যাকে চিনতাম সে আপনি নন।"
সৌমেন বলল,"তুমি অর্চনা না?"
মেয়েটি বলল,"চিনতে পেরেছ তাহলে?"
"এই দিল্লির বুকে তোমাকে দেখে সন্দেহ হচ্ছিল বৈকি?" বলল সৌমেন।
"তোমাকে চিনতে আমার একটুও অসুবিধা হয় নি," অর্চনা বলল।
সৌমেন বলল,"তোমার এ কি চেহারা হয়েছে।"
"দিনে গাছের তলায় শুয়ে একটু ঘুমাই। রাতে হায়নার ভয়। রাস্তায় থাকি তো। তাই ঘুম হয় না। মাঝে মাঝে পালিয়ে বাঁচতে হয়। আমাকে না পেয়ে আমার অসুস্থ বাবাকে ফুটবল খেলে যায়," অম্লান বদনে বলে যায় অর্চনা।
"তোমার কোনো কথা বুঝতে পারছিনা," বলে সৌমেন।
অর্চনা বলে,"সবকিছু শুনে বোঝা যায় না। চোখে দেখে জানতে হয়।" তারপর সে বলল,"সকালে টিফিন করেছ?"
সৌমেন বলল,"না।"
অর্চনা বলল,"কোথায় উঠেছ?"
সৌমেন বলল,"কালী মন্দিরে।"
"তুমি আমার সঙ্গে চলো," বলে অর্চনা সৌমেনের হাত ধরে এগোতে যাচ্ছিল।
সৌমেন তাকে জিজ্ঞেস করল,"তুমি কি কাজে যাচ্ছিলে?"
অর্চনা বলল,"কাজে পরে গেলে চলবে। এখন তুমি আমার সঙ্গে চলো।"
সৌমেন জানে অর্চনা বরাবর এমন কাজই করে থাকে। যখন তারা কোলকাতায় থাকত, তখন অর্চনা অনেক ছোটো ছিল। মাঝে মাঝে তার বাবা খাবার আনলে সে সৌমেনের হাত ধরে তাদের বাড়িতে নিয়ে যেত। অর্চনার মা তাকে খাবার খেতে দিত।
সৌমেনের বাবা-মা মরে যাবার পর সে বেশ কিছু দিন কোলকাতায় থেকেছে। তখন সে চায়ের দোকানে কাজ করত। সেই চায়ের দোকানটা ছিল অর্চনার বাবার। অর্চনার সঙ্গে সৌমেনের গভীর মেলামেশা দেখে লোকে ঠাট্টা করে বলত,"এই ছেলেটা অর্চনার স্বামী হবে।"
পুরানো স্মৃতিগুলো সজীব হয়ে ধরা দিল সৌমেনের মনে। সে ভাবে, কী সুশ্রী ছিল অর্চনা। আজ বড়ো হয়েছে। আরো বেশি সুন্দরী হয়ে ওঠার কথা। অপুষ্টি আর ময়লা পোশাকে দুঃখিনীর চেহারা হয়েছে তার। এতখানি দুরবস্থা কেন হলো তাদের?
অর্চনা বলল,"চুপ করে আছো কেন? কিছু ভাবছ নাকি?"
সৌমেন বলল,"তোমার সঙ্গে আবার দেখা হবে, ভাবতে পরি নি।"
"ধরে নাও কাকতালীয় ঘটনা।" বলল অর্চনা। তারপর একটি বাসে উঠে পড়ল দুজনে। সৌমেন জিজ্ঞেস করল,"কোথায় যাব?"
"আমি যেখানে থাকি তোমাকে সেখানে নিয়ে যাব। আমার আস্তানা দেখলে তোমার ভালো লাগবে," বলে গাল ভরে হাসল অর্চনা।
গাড়ি এগিয়ে চলেছে। দুপারের বাড়িঘর পেছনের দিকে ছুটছে। কেউ এগিয়ে গেলে তার সাপেক্ষে থাকা মনুষেরা এভাবেই পিছিয়ে যায়।
সৌমেন ভাবে, অন্তত দশ বছর ধরে বছরে একবার বেড়াতে যায় সে। এভাবে কখনও পুরানো দিন ফিরে আসেনি তার কাছে। দিল্লির অভিজ্ঞতা তার আজীবন মনে থাকবে। ভ্রমণের সাথে সাথে অর্চনার সঙ্গে দেখা হওয়াটা তার কাছে অফুরন্ত আনন্দের অনুভুতি বয়ে নিয়ে এলো।
সৌমেন বলল,"কতদূর যেতে হবে আমাদের?"
অর্চনা বলল,"আর মাত্র দুটো স্টপেজ। এগিয়ে চলো, টিকিট কেটে নিই।"
সৌমেন এগিয়ে গিয়ে টিকিট কাটতে চাইল। অর্চনা বাধা দিয়ে বলল,"আমি তোমাকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি। টিকিট আমি কাটব।"
অর্চনার কথার কোনো প্রতিবাদ করেনি সৌমেন। সে তার এক সময়কার মালিকের মেয়ে। তার ইচ্ছার দাম দিতে চায় সে।
টিকিট কেটে গন্তব্য স্টপেজে নেমে পড়ে তারা। এগিয়ে হেঁটে চলেছে অর্চনা, তাকে অনুসরণ করে চলেছে সৌমেন। এক সময় একটি গাছের তলায় ফুটপাথের একপাশে গিয়ে দাঁড়ায় অর্চনা। তারপর সে বলল,"এই আমাদের বাড়িঘর।"
সৌমেন দেখল, ফুটপাথে প্লাস্টিক পাতা। তার উপর কম্বল। তার উপরে শুয়ে আছে তার চা দোকানের মালিক। গাছের ডালের ফাঁক ভেদ করে তার মুখে রোদ পড়েছে। সম্ভবত ঘুমিয়ে গেছেন তার বাবু। অর্চনা তার বাবাকে কয়েকবার ডাকতেই তিনি চেয়ে দেখার চেষ্টা করলেন। কিছুতে চোখ খুলতে পারছিলেন না।
সৌমেন মনে মনে খুব কষ্ট পেয়েছে। কোলকাতায় যার চায়ের দোকানে সাধারণ মানুষ থেকে কত বড় বড় রাজনীতিবিদ ঘন্টার পর ঘন্টা হত্যে দিয়ে চা খেত, তার চায়ের দোকান হয়ে উঠেছিল রাজনীতির পাঠশালা, সে কিনা আজ ভারতের রাজধানীর এক ফুটপাতে জীবন কাটাচ্ছে। ভাগ্যের কী নিষ্ঠুর পরিহাস। এজন্যই হয়তো নদীতে জোয়ার-ভাঁটা হয়। একবার জল ফেঁপে ওঠে তো পরেরবার জল নেমে যায় নদীর তলায়।
অর্চনা বলল," বাবা, চেয়ে দেখ কে এসেছে? তোমার দোকানের সৌমেন।"
তার বাবা অস্পষ্ট স্বরে বলল,"আমার দোকানের সৌমেন? আমার দোকান তো আর নেই?"
অর্চনা বলল,"দোকান নেই। সৌমেন আছে। সে এসেছে।"
অর্চনার বাবা প্রাণপণে উঠে বসার চেষ্টা করলেন। তিনি উঠতে পারছিলেন না দেখে সৌমেন তাঁকে ধরে বসতে সাহায্য করল। সৌমেনকে কিছুটা ঠাহর করতে পেরে অর্চনার বাবা বলল,"সৌমেন, তুমি অনেক বড় হয়েছ। তোমার মুখের আদল বদলে গেছে। তাছাড়া, আমার চোখের জ্যোতি কমে গেছে। তাই তোমাকে চিনতে আমার কষ্ট হচ্ছে।"
সৌমেন বলল,"তাবলে আমি আপনাকে অচেনা লোক ভাবতে পারব না। আপনি যে আমাকে ভীষণ যত্ন করতেন।"
অর্চনার বাবা বলল,"তুমি সে কথা মনে রেখেছ সৌমেন?" তাঁর চোখে জল এসে গেল। চেনা স্নেহের মনুষ সামনে এলে এমনই হয়। তিনি নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,"তুমি এসে আমার সাহস বাড়িয়ে দিয়েছ। আমি মেয়েটাকে নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারি না।"
সৌমেন বলল,"এভাবে রাস্তায় শুয়ে কেউ নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারে?"
তিনি বললেন,"এখানে মানুষ খেকো বাঘ আছে। আমার মতো বৃদ্ধকে তাদের পছন্দ নয়। আমার অর্চনা রাতে লুকিয়ে থাকে। ঘুমোতে পারে না। দুপুরে খাবার পর একটু ঘুমিয়ে নেয়।"
অর্চনার বাবার বার্তা বুঝতে পারে সৌমেন। শক্তপোক্ত মনের ছেলেটার হৃদয় নরম হয়ে এলো তাঁর কথায়। সে বলল,"আপনারা এখানে এলেন কিভাবে? আপনাদের এই অবস্থা হলো কী করে?"
অর্চনা এতক্ষণ চুপ করে শুনছিল। এবার সে নীরবতা ভঙ্গ করে বলল,"পরিস্থিতি আমাদের এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে।"
সৌমেন বলল,"কেমন করে?"
অর্চনা বলল,"বস। বলছি।"
মালিকের নোংরা বিছানায় বসতে তার কেমন লাগছিল। তার ইতস্তত ভাব দেখে অর্চনা বলল,"বসতে হবে না। দেখা তো হলো। এখন চলো তোমার আস্তানায় পৌঁছে দিয়ে আসি। আমাদের এর থেকে বেশি ভালো থাকার জায়গা নেই। তোমাকে বসতে দেব কোথায়?"
লজ্জিত হয়ে সৌমেন আলগোছে বসে পড়ল চা দোকানের মালিকের বিছানায়। অর্চনা তার পাশে বসে বলল,"আমার বাবার চায়ের দোকানের উপর এক প্রমোটার বিল্ডিং তৈরি করতে চাইল। বাবা তার ব্যবসা ছাড়তে চাইল না। তখন মাও মারা গেছে। আমি মনমরা ছিলাম। একদিন কলেজ থেকে ফিরে দেখি বাবা অসুস্থ হয়ে শুয়ে আছে। আমি বাবার কাছে জানতে চাইলাম বাবা দোকানে যায় নি কেন। উত্তরে বাবা তার জামা খুলে পিঠ দেখাল।" তারপর চুপ করে গেল অর্চনা।
সৌমেন তাকে জিজ্ঞেস করল,"তারপর।"
অর্চনা বলল,"বাবার পিঠে নারকেল তেল দিলাম। পুরো পিঠ আঘাতের দাগে লাল হয়ে উঠেছিল।"
সৌমেন বলল,"তোমরা কোলকাতা ছেড়ে চলে এলে কেন?"
অর্চনা বলল," বাবা আমাকে বলল-কাল আমরা কোলকাতা ছেড়ে চলে যাব। আমি বললাম-আমার পড়াশুনোর কি হবে? বাবা বলল-অন্যত্র গিয়ে পড়বি । তারপর বাবা আমাকে একটা টাকার ব্যাগ দিযে বলল- এতে দু'লাখ টাকা আছে। দোকান ছেড়ে দেওয়া আর মার খাওয়ার পর চিকিৎসার টাকা।"
পরের দিন কলেজ থেকে টিসি নিয়ে হাওড়া স্টেশনে এলাম। দিল্লির টিকিট কাটার পর হঠাৎ আমাদের টাকার ব্যাগ চুরি হয়ে গেল। আমরা দিশেহারা হয়ে পড়ি। আমি কোলকাতায় ফিরে যেতে চেয়েছিলাম। বাবা ফিরতে চায় নি। আমরা ট্রেন ধরে দিল্লিতে এলাম সহায় সম্বলহীন হয়ে। ফুটপাথে আশ্রয় নেওয়া ছাড়া আমাদের কোনো উপায় ছিল না।"
সৌমেন বলল,"তোমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারলে না কেন?"
অর্চনা বলল,"বাবা এতটা মার খেয়েছিল যে এখনো পর্যন্ত সুস্থ হতে পারে নি।"
কাহিনি শুনতে শুনতে সৌমেনের রক্ত টগবগ করে ফুটছিল। সে হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বলল,"আর এখানে তোমাদের থাকতে হবে না। সব গুটাও।"
অর্চনা বলল," না তা হয় না।"
সৌমেন বলল,"হতেই হবে। আমি তোমার কথা শুনব না। বাবু এভাবে রাস্তায় পড়ে থাকবে, আমি তা সহ্য করতে পারব না।"
সৌমেন নিজে সব গোছাতে লাগল। অর্চনা তাকে আটকাতে চেষ্টা করলো। সৌমেন তার মুখের দিকে তাকাতে হতবাক হয়ে গেল অর্চনা। এই সামান্য সময়ে এতটা চোখের জল ঝরিয়েছে সৌমেন! পাঁচ বছরের ফুটপাথ জীবনে এক ফোটা অশ্রু ঝরাতে পারেনি সে! মনের আবেগ আর বাঁধ মানল না। মূহুর্তে তার দুই চোখ দিয়ে ঝর্ ঝর্ করে জল গড়িয়ে পড়ল।
অর্চনার বাবা বলল,"আমার এখন শেষ অবস্থা। আমার অর্থ নেই, শরীরে শক্তি নেই। আমি তোমার সঙ্গে যাব। তুমি আমায় কথা দাও, আমার মেয়েকে তুমি গ্রহণ করবে? তাহলে আমি শান্তিতে মরতে পারব।"
অর্চন লজ্জা পেয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়াল। সৌমেন বলল,"আপনি যা চাইবেন তাই হবে বাবু। আগে আপনাকে আমার বাড়ি নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাই। সুস্থ মস্তিস্কে আপনি সিদ্ধান্ত নেবেন।"
সৌমেন ট্যাক্সি ডেকে মালপত্র গুছিয়ে অর্চনা আর তার বাবাকে নিয়ে মন্দিরে গেল। তিনদিনের মধ্যে টিকিট কেটে ট্রেনে চেপে কোলকাতার দিকে রাওনা দিল।
সৌমেন অর্চনাকে জিজ্ঞেস করল,"ভয় করছে নাকি?"
অর্চনা সৌমেনের বামহাত বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিয়ে তার কাঁধে মাথা রেখে বলল,"পাঁচ বছর পর আজ প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে পারছি।"
==================
___________
হারান চন্দ্র মিস্ত্রী
গ্রাম ও পো- আমতলা,
থানা-ক্যানিং,
জেলা-দক্ষিণ ২৪ পরগনা,
পশ্চিমবঙ্গ, ভারতবর্ষ,
পিন নং-743337
ঠিক
উত্তরমুছুন