সায়াহ্নের রাগ
সোমা চক্রবর্তী
[কালিম্পং। অভীকের বাড়ির বাইরের ঘর। ঝড়ের রাত। নিশ্ছিদ্র
অন্ধকার। বজ্র বিদ্যুৎ সহ প্রচন্ড বৃষ্টি পড়ছে বাইরে। লোডশেডিং এর মধ্যে
একটা মাত্র মোমবাতি জ্বলছে অভীকের ঘরে। কবিতার খাতা নিয়ে প্রৌঢ় অভীক
কল্পনা করছে তার না দেখা মানসীর। ঘরে বেলার প্রবেশ। সর্বাঙ্গ জলে ভিজে গেছে
বেলার। বৃষ্টির কারণে সে আশ্রয়ের খোঁজে এসেছে এখানে]
বেলা - ভেতরে আসতে পারি?
অভীক - (চমকে উঠে) কে?
বেলা
- (একটু অপ্রস্তুত ভাবে) আসলে সামনের রাস্তা দিয়ে বাজারের দিকে
যাচ্ছিলাম। এত বৃষ্টি... হঠাৎ করেই লোডশেডিং হয়ে গেল। (একটু থেমে, ইতস্তত
করে) আমি বেলা। বেলা সেনগুপ্ত। এখানকার কলেজে সমাজবিজ্ঞান পড়াই। এ শহরে
নতুন এসেছি। এখনও পথঘাট ভালো চিনি না.... তাই অন্ধকারে কিছুই ঠিক বুঝতে
পারছিলাম না। হঠাৎ আপনার ঘরের আলোটা চোখে পড়ল। ভাবলাম....
অভীক - (গলাটা পরিষ্কার করে নিয়ে) আসুন, আসুন। এ কি... আপনি যে একেবারেই ভিজে গেছেন।
বেলা - (আঁচল দিয়ে মুখটা মুছে নিয়ে) তার জন্য অসুবিধা হবে না। বৃষ্টিটা একটু ধরলেই আমি...
অভীক
- আপনার দ্বিধার কোনও কারণ নেই। আপনি নিশ্চিন্তে বসুন। ও, আমার পরিচয়টা
দেওয়া হয়নি। (দু'হাত জোড় করে নমস্কারের ভঙ্গিতে) আমি অভীক রায়। এখানে
একাই থাকি। একটু আধটু লিখি টিখি। আর সামান্য ছবি আঁকি।
বেলা - লেখেন? অভীক রায়.... আচ্ছা আপনিই কি কবি ঔপন্যাসিক অভীক রায়?
অভীক - (স্মিত মুখে মাথা নেড়ে) হ্যাঁ। আপনি ধরেছেন ঠিকই।
বেলা
- (খুশি হয়ে) আপনার লেখা তো আমি পড়েছি। আপনার কবিতা ভীষণ ভালো লাগে
আমার। এবারের বইমেলা থেকে আপনার নতুন উপন্যাসটাও কিনেছি। কি আশ্চর্য! এখানে
এভাবে যে আপনার সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে, ভাবতেই পারিনি।
অভীক - (মৃদু হেসে) ভালোই হলো। আপনার সঙ্গে গল্প করে খানিকটা সময় তবু কেটে যাবে।
বেলা - (প্রথমে গভীর ভাবে তাকিয়ে, তারপর হেসে) সময় কাটানোর জন্য আপনার বুঝি উপলক্ষ্য প্রয়োজন?
অভীক - (প্রথমে অপ্রস্তুত, পরে হেসে উঠে) তা আর নয়? একা মানুষ, আর দিনে চব্বিশটা ঘন্টা। সময় কাটানো একরকম ঝকমারি বই কি!
বেলা - কেন? চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে কোনও কাজ কি নেই আপনার?
অভীক - যেটুকু কাজ আছে, চব্বিশ ঘণ্টা তার জন্য অনেক বেশি বলে মনে হয়। অবশ্য আমি শুধুমাত্র ঘরোয়া কাজের কথাই বলছি।
বেলা - আর লেখা?
অভীক - লেখার জন্য সময় খুঁজতে হয় না। লেখা যখন আসে, সময়ও আসে। তবে, সবসময় লেখা আসে না, এই যা। আপনি চা খাবেন?
বেলা - (হাসিমুখে) এটিও কি সময় কাটানোর জন্য?
অভীক
- (ব্যস্তভাবে) একদমই তাই। তবে এর সঙ্গে সংযোজনটা হলো, আপনি খেলে আমিও
একটু খেতে পারি। অনেকক্ষণ থেকেই মনটা চা চা করছিল। কিন্তু শুধু নিজের জন্য
চা বানানোর আবেদন কেবলই খারিজ করে দিচ্ছিল অলস মন। এখন আপনি রাজি হলে তার
আর বেগড়বাই করবার সাহস হবে না।
বেলা - (এই প্রথমবার সপ্রতিভ ভাবে হেসে উঠে) তার মানে আমি দুটি বিষয়ের উপলক্ষ্য হলাম - সময় কাটানো আর চা খাওয়া।
অভীক
- (দরজা ফাঁক করে বাইরের দিকে দেখে) বৃষ্টি যদি এভাবেই চলতে থাকে, তাহলে
আরও অনেক কিছুর উপলক্ষ্যই হয়ে উঠতে পারবেন। তার জন্য বিশেষ কিছু তাড়া
নেই। এখন চা খাবেন কি না, বলুন।
বেলা
- বেশ তো! (একটু হেসে) তাই বলে ভাববেন না যেন, ভদ্রতা করে আপনাকে সাহায্য
করতে আমিও আপনার পিছু পিছু রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকব। গল্পের চরিত্ররা যেরকম
করে থাকে।
(দুজনে একসাথে হেসে উঠল)
অভীক - তাহলে একটুখানি বসুন। আমি যাব আর আসব।
(চলে
যেতে যেতে ফিরে তাকিয়ে) ততক্ষণে আপনি তাকের ওই বইগুলো দেখতে পারেন, অবশ্য
যদি ইচ্ছে করে। আবার ভেবে বসবেন না যেন, আপনাকে দেখানোর জন্য কবিতার
খাতাটা আমি ইচ্ছে করেই খুলে রেখে গেছি। গল্পের চরিত্ররা যেমন করে থাকে।
আপনি যে আসবেন, সত্যিই এ কথা আমার আগে থেকে জানার নয়।
[অভীকের
প্রস্থান। বেলা কিছু একটা ভাবতে ভাবতে চেয়ারে বসে বসেই এদিক ওদিক তাকিয়ে
ঘরের সাজসজ্জা দেখছিল। দুটি ধূমায়িত চায়ের কাপ হাতে অভীকের প্রবেশ।]
অভীক - (একটি কাপ বেলার সামনের ছোট টেবিলে রেখে) আমার একরকম করে এতেই চলে যায়। আপনার চলবে কি না, দেখুন।
বেলা
- (হেসে, কাপের দিকে তাকিয়ে) অন্ধকারে ঝড়বৃষ্টির রাতে, অজানা অচেনা
জায়গায় একটু আশ্রয়, আলো, বন্ধুর মতো একজন মানুষের সঙ্গ আবার গরম চা- এর
চেয়ে বেশি কিছু চলার জন্য প্রয়োজন নেই আমার।
অভীক - (হেসে, গাঢ় স্বরে) বলছেন?
বেলা - (হেসে, তরল স্বরে) নিঃসঙ্কোচে!
অভীক - তাহলে খেয়ে বলুন, কেমন হয়েছে।
বেলা - (চায়ের কাপে চুমক দিয়ে) হুম। চা করার অভ্যাস যে আছে, সেটা আমি আন্দাজ করেছিলাম।
অভীক - তার মানে নিতান্ত খারাপ হয়নি!
বেলা - (হেসে) তার মানে, রোজ যেরকম হয়, সেইরকমই হয়েছে।
অভীক - (কবিতার খাতার দিকে তাকিয়ে দেখে) খাতাখানা দেখেননি তাহলে!
বেলা - (দু'দিকে মাথা নেড়ে) না। অচেনা কবির কবিতার খাতা উপযাচক হয়ে দেখবার কৌতুহল নেই আমার।
অভীক - কিন্তু কবিতার বই তো পড়েন। সব কবি কি আপনার চেনা? তা তো নয়?
বেলা
- না। চেনা কেউই নয়। আসলে, কবিতার বই থেকে যে কবিতা পড়ি, সেই কবিতা
নিয়ে কবির সব ভাবনাচিন্তা শেষ হয়ে গেছে। সেই কবিতা তখন স্বয়ংসম্পূর্ণ
হয়ে উঠেছে। পাঠকের রসাস্বাদনের জন্য নিজেকে প্রকাশ করতে তখন সে প্রস্তুত।
সেই জন্যই কবি সেই কবিতাকে প্রকাশ করেছে ছাপার অক্ষরের মাধ্যমে। সেই কবিতা
পড়লে কবিতার মধ্যে ধরা অনুভূতিটুকু নিয়েই শুধু পাঠকের দিব্যি চলে যায়।
সেক্ষেত্রে কবির ব্যক্তিগত স্তরে তার না পৌঁছালেও চলে। কিন্তু একজন কবির
ঘরে ঢুকে এসে, তার অসম্পূর্ণ কবিতা তার অনুপস্থিতিতে পড়া চলে না।
অভীক - কেন?
বেলা - তাতে না হয় কবিতাকে জানা, না যায় কবিকে চেনা।
অভীক - (চিন্তিত ভাবে) বুঝলাম।
বেলা - সত্যিই বুঝলেন?
অভীক - বুঝেছি। কারণ, এ আমার অতি পরিচিত কথা।
বেলা - কি করে পরিচিত হলো?
অভীক
- (উদাস হয়ে) বললে বিশ্বাস করবেন না হয়তো, আপনি যেই মুহূর্তে ঘরে এলেন,
তখন থেকেই মনে হয়েছে, আপনি আমার চেনা, ভীষণ চেনা। হয়তো অনেক দিনের চেনা।
বেলা - (একটু হেসে) এটা কি সাহিত্যে অনেকবার ব্যবহার হয়ে যায়নি? মানে, গল্পের চরিত্ররা.....
অভীক
- (অত্যন্ত গম্ভীর গলায়) হয়তো গেছে। কিন্তু জীবনেও কি এর ব্যবহার হয়ে
গেছে? সেটা এখনও হয়নি হয়তো! আপনাকে দেখেই আমার মনে হলো, আজকের দিন, আজকের
এই সন্ধ্যাটুকুর জন্য আমরা দুজনেই যেন অপেক্ষা করে রয়েছি সারাটা জীবন।
সত্যি করে বলুন তো, আপনার এইরকম কিছু মনে হয়নি?
বেলা - না। আমার সংকোচ হয়েছে, আপনি হয়তো বিরক্ত হবেন।
অভীক - আচ্ছা, ভয় হয়নি?
বেলা
- একেবারে যে হয়নি, সে কথা বলব না। তবে, মেয়েদের যে কারণে ভয়, সে দিন
আমার পার হয়ে গেছে। হঠাৎ করে এমন তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল যে, ছাতা
থাকা সত্ত্বেও পথ চলতে পারছিলাম না কিছুতেই। এখানে আমার চেয়ে কমবয়সী
মানুষদের দেখা পাব, এটা ধরে নিয়েই এসেছিলাম।
অভীক - কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, আপনার এই আসাটা বহুদিন ধরেই সুনিশ্চিত ছিল।
বেলা - ঠিক গল্পের চরিত্রদের ক্ষেত্রে যেমন হয়, তাই তো! আপনি লেখক মানুষ। কল্পনা আপনার সরেস তো হবেই।
অভীক
- কল্পনা বলে মনে হচ্ছে আপনার? বেশ। বৃষ্টি থামার কোন লক্ষণ তো দেখা
যাচ্ছে না। সেই অবসরে আমরা না হয় একটা খেলা খেলি। আমার কথা ঠিক কি না,
সেটাও নির্ধারিত হয়ে যাবে।
বেলা - খেলার মাধ্যমে?
অভীক
- ধরে নিন, আজ এই বৃষ্টির সন্ধ্যায় জীবনে প্রথমবার আমরা দুজনেই দুজনের
মনের মানুষের দেখা পেয়েছি। প্রথম দেখা নিয়ে আমাদের দুজনের মনে যে কল্পনা
আছে বা আজীবন ছিল, সেই কথাগুলো আমরা একে অন্যকে নিজেদের মতো করে বলে যাব।
কোনও স্ক্রিপ্ট নেই। কোনও রিহার্সাল নেই। শুধু সত্যি কথা, শুধু মনের
অনুভূতিটুকু আমরা বলব। যদি আপনার কথার সঙ্গে আমার কথা মিলে যায়, তাহলে
এটাই সত্যি বলে প্রমানিত হবে যে, আমাদের দেখা হওয়ার ছিল। আর তার জন্যই
প্রকৃতির এত আয়োজন। আর না হলে.....
বেলা - না হলে?
অভীক - না হলে আমি মেনে নেব, আপনার কথাই ঠিক। গল্পের চরিত্ররা যেমন গল্পের শেষে যে যার পথে চলে যায়, আমরাও তেমনই চলে যাব।
বেলা - বেশ। আমি রাজি। একটা নতুন অভিজ্ঞতা হবে।
অভীক - তাহলে শুরু করা যাক। (গলা পরিষ্কার করে নিয়ে)
আচ্ছা, কে শুরু করবে? আপনি না আমি?
বেলা
- (চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে, প্রথমে একটু উদাস হয়ে, তারপর কিছু একটা
ভেবে) কথা ছিল, যেদিন আমাদের প্রথম দেখা হবে, সেদিন বাইরে ঝড় উঠবে।
কালবৈশাখী...
অভীক - আর এও কথা ছিল যে, সেদিন, তখনও, তোমার বয়স আঠেরোয় দাঁড়িয়ে থাকবে। আর আমার একুশ।
বেলা
- বাইরে দুরন্ত ঝড় আর তার সঙ্গে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি। বারান্দায় শিল পড়ছে
টুপটাপ করে। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে ঘন ঘন। তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে
আমার মনে হবে, এই একটা মুখই আমি খুঁজে এসেছি এতদিন ধরে হাজার মানুষের
ভিড়ের মধ্যে। খুঁজে পাইনি...
অভীক
- আর তোমার মুখের দিকে প্রথমবার তাকিয়েই আমার মনে হবে, এই মুখ আমার চির
চেনা। জন্ম-জন্মান্তরের চেনা। এই মুখখানি দেখব বলেই এতদিন ধরে অপেক্ষা করে
বসে আছি। আজ সেই অপেক্ষার অবসান হলো!
বেলা
- বাইরে নিকষ কালো অন্ধকারে দৃষ্টি চলে না। কিন্তু আমাদের দু'চোখ ঘিরে তখন
হাজার হাজার আলো জ্বলছে। ক্ষয়ে গেছে মনের জড়তা। ঝরে পড়ে গেছে বয়সের
ভার। কত কথা... কত ব্যথা.... কত বিহ্বল মুহূর্ত কোথা দিয়ে পার হয়ে যাবে।
কথায় কথায় একাকীত্বের পাষাণ ভার গলে গলে পড়ে যাবে। হালকা হয়ে উঠবে মন।
কথা বলতে যে এত ভালো লাগে, এত কথা যে আজও বলার আছে, শোনার আছে, তা নতুন করে
যেন উপলব্ধি করব আবার।
অভীক
- জীবনের পথ পার হতে হতে ক্ষয়ে যাওয়া শরীরী প্রেম কবেই নোঙর করেছে
অনিচ্ছুক বন্দরে। কিন্তু মনের নৌকা সেদিন ভেসে যেতে চাইবে তেপান্তরের
উদ্দেশ্যে। হয়তো অতি সংকোচের সঙ্গে মনে মনে আবৃত্তি করব, 'উঠেছে আদেশ....
বন্দরের কাল হলো শেষ'। ঝলকে ঝলকে উঠে আসবে মনের কথা। এত কথা যে, শেষ হবে
কিনা সন্দেহ।
বেলা -
বাস্তবের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব পায়ের শিকল হয়ে ওঠে বার বার। আমি মনে মনে ভাবব,
ঝড় থামেনি বলেই এই আটকে পড়া। ঝড় থামেনি বলেই এত এত কথা বলে সময় পার
করা। তা না হলে কে আর প্রথম আলাপে অচেনা একজন মানুষের সঙ্গে এত কথা বলে!
বয়েস হয়েছে। মাথার চুলে পাক। এখন কি আর প্রগলভতা মানায়? ঝড় থামেনি বলেই
তো......
অভীক - আমিও সেই
রকম কিছু ভেবেই মনকে সান্ত্বনা দিতে চাইব হয়তো। ঝড়টা উঠল বলেই তো এই
অতিথি আপ্যায়ন! ঝড়টা উঠল বলেই তো কথার এত আয়োজন! কিন্তু মনে মনে যে
বুঝতে পারছি, ভালো লাগছে কথা বলতে। এত ভালো আগে কখনও লাগেনি। তবু, ওই...
অসঙ্গত মনে হওয়া! দ্বিধা, লজ্জা আর পরস্পরের কাছে ধরা পড়ে যাওয়ার
আশঙ্কা।
বেলা - কথায়
কথায় রাত বাড়বে। শেষ পর্যন্ত একটা সময় থেমে যাবে বেপরোয়া ঝড়। এসে
পড়বে বিদায়ের পালা। অবাক হয়ে দেখব, তখনও ফুরোয়নি কথা বলার তৃষ্ণা। আরও
যে অনেক কথা বলার ছিল! প্রথম আলাপে কত কিছুই বলা হলো না। বলা গেল না। বলা
যায় না হয়তো! বয়েস বেড়ে গেলেও না।
অভীক
- তুমি বিদায় নিয়ে ফেরার জন্য উঠে দাঁড়াবে একসময়। কিন্তু চলে যেতে
পারবে না চট করে। হয়তো মনে মনে কথা খুঁজবে, বিদায় বেলায় ঠিক কোন কথা
বললে মানায় তোমাকে। আমার মনে হবে, হয়তো নিজেকে লুকোতে চাইছো তুমি। হয়তো
বা চাইছো না। হয়তো ধরা দিতেই চাইছো। নাকি এ শুধুই মনের ভুল আমার? কি জানি!
বেলা
- তুমিও দাঁড়িয়ে থাকবে, একটু অপ্রস্তুত হয়ে। হয়তো মনে মনে যা বলতে
চাইছো, বলে উঠতে পারবে না প্রথম আলাপ বলেই। মনের বয়স আঠেরো হোক বা একুশ,
শরীরে দাঁড়িয়ে আছে এক প্রৌঢ় বয়স। মনের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে আজন্মের
সংস্কার, তার শাসনের বেড়ি হাতে নিয়ে। বড় কড়া সেই শাসনের ভার। সময় বয়ে
যাবে। রাত নিবিড় হবে আরও। যে কথাটা বলতে চায় মন, বলা হয়ে উঠবে না। তবু
একটা সময় বিদায় চাইব আমি। হয়তো আর অপেক্ষা করা শোভা পায় না বলে। তখনই
হঠাৎ করে সব আগল খুলে ফেলে হয়তো তুমি বলে উঠবে, "আবার আসবে তো?"
অভীক
- আমাকে উতলা হতে দেখে মুখ ফিরিয়ে মৃদু হাসবে তুমি। আবারও আমার মনে হবে,
এই ভঙ্গি আমার চিরকালের চেনা। তুমি বলবে, "আসতে যে হবেই। কত কথাই তো বাকি
রয়ে গেল।"
বেলা - এরপর আর
কথা হবে না কোনও। মুখ ফিরিয়ে নিয়ে, অন্ধকার পথে ছড়িয়ে পড়ে থাকা ঝরা
পাতার ওপর পা ফেলে ফেলে ফিরে আসব আমি। পেছনে ফেলে রেখে আসব আমার উন্মুখ মন
আর উদগ্রীব আকাঙ্ক্ষা!
অভীক
- আমি একা দাঁড়িয়ে থাকব আমার ঘরের দরজায়। আর তোমার পিছু নিয়ে, তোমার
সঙ্গে সঙ্গে যাবে আমার অবাধ্য মন, আমার না বলা কথার অঞ্জলী বয়ে নিয়ে। মনে
মনে আমরা দুজনেই জানব, আমাদের আবার দেখা হবে। মনে মনে তাই আর একটা ঝড়ের
দিনের অপেক্ষায় থাকব দুজনে!
___________________
সোমা চক্রবর্তী।
ঠিকানা: কালিকাপুর, বারাসাত,
উত্তর ২৪ পরগণা।